ভোটের আগে কারাগার থেকে ‘খালেদার বার্তা’

কারাগার থেকে পাঠানো এক বার্তায় ভোটকেন্দ্র ‘পাহারা দিতে’ বিএনপির নেতা-কর্মী-সমর্থকদের আহ্বান জানিয়েছেন খালেদা জিয়া।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আগের দিন শনিবার বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক সংবাদ সম্মেলনে দলীয় চেয়ারপারসনের এই বার্তা পড়িয়ে শোনান।

এই প্রথম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে বিএনপি; ফৌজদারি মামলায় দণ্ডের কারণে তিনি এবার নির্বাচনেও অংশ নিতে পারছেন না।

কারাবন্দি খালেদা জিয়া কয়েকদিন আগে বার্তাটি পাঠিয়েছেন বলে রিজভী জানালেও কোন মাধ্যমে তা এসেছে, তা জানাননি তিনি।

রিজভী বলেন, “তিনি বলেছেন, আগামীকাল আপনাদের সুযোগ আসবে স্বৈরশাসকদের হাত থেকে মুক্তিলাভের, দেশকে মুক্ত করার, সকল হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি উপেক্ষা করে দলে দলে ভোট কেন্দ্রে যাবেন। আপনাদের এক একটি ভোট নিশ্চিত করতে পারে জনগণের মুক্তি ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ।”

বার্তায় খালেদা জিয়া শনিবার বিকাল থেকে ভোট কেন্দ্র পাহারা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বলে জানান রিজভী।

“তিনি বলেছেন, আজ (শনিবার) বিকাল থেকেই পালাক্রমে ভোট কেন্দ্র পাহারা দেবেন। ফজরের নামাজ পড়েই ভোটের লাইনে দাঁড়ানোর জন্য আপনাদেরকে আমি অনুরোধ করছি। ভোট দিয়ে কেন্দ্রের আশে-পাশে থাকবেন।”

ভোটগ্রহণ শেষে গণনা শেষে কে কত ভোট পেল, তা নিশ্চিত না হয়ে বিএনপির পোলিং এজেন্টদের কোনো কাগজে সই না করার নির্দেশনা খালেদা জিয়া দিয়েছেন বলে রিজভী জানান।

“তিনি বলেছেন, কোনো অবস্থাতেই সাদা কাগজে সই করবেন না, প্রিজাইডিং অফিসারের সই ছাড়া সই করবেন না। ফলাফল নিয়ে প্রিজাইডিং অফিসারের সাথে রিটার্নিং অফিসার বা সহকারি রিটিার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে যাবেন।”

দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে খালেদা জিয়া এখন রয়েছেন কারাগারে

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি রায়ের পর থেকে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে একমাত্র বন্দি হিসেবে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা।

দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি এবার তার অনুপস্থিতিতে কামাল হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছে।

বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট শুরু থেকে অভিযোগ করে আসছে, ক্ষমতাসীনদের বাধার কারণে ধানের শীষের প্রার্থীরা প্রচার চালাতে পারেনি। তারা আশা করছে, রোববার জনগণ ‘নীরব ভোট বিপ্লব’ ঘটাবে।

ভোটারদের প্রতি রিজভী বলেন, “ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় জনগণ অগণতান্ত্রিক শক্তি, দুবৃর্ত্তদের প্রতিরোধ করা শুরু করেছে। জনগণের শক্তির কাছে দুর্বৃত্তরা পরাজিত হবেই, এটাই ইতিহাসের শিক্ষা।

“আমি শুধু এটুকুই বলতে চাই, এদেশ কাড়তে যেই আসুক, আমরা সাহসে বেঁধেছি বুক, আমরা নইকো ভীরুর জাত, দেবো নাকো হতে দেশ বেহাত।”

মওদুদ ও বুলুর ‘কাটপিস অডিও’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ ও ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলুর ফাঁস হওয়া অডিও সরকারের ‘অপপ্রচারের’ নজির হিসেবে দেখিয়েছেন রিজভী।

তিনি বলেন, “কণ্ঠস্বর কাটপিস করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বাংলা ইনসাইডারসহ কিছু কিছু ওয়েব পেইজ ও ফেইসবুক পেইজের মাধ্যমে এই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এই সমস্ত কথা শুধু মিথ্যাই নয়, বিভ্রান্তি তৈরি করার জন্য তারা (ক্ষমতাসীনরা) এসব করছে।”

এই ধরনের অডিও-ভিডিও থেকে বিএনপি নেতা-কর্মী-সমর্থকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান রিজভী।

সংবাদ সম্মেলনে ফেনী, নোয়াখালী, ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ কিশোরগঞ্জ, জয়পুরহাট, শেরপুর, নওগাঁ, গাইবান্ধা, রাজশাহী, পাবনা, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, সিলেটসহ সারাদেশে ধানের শীষের প্রার্থীদের বাড়িতে অবরুদ্ধ করে রাখা, নেতা-কর্মীদের উপর হামলার অভিযোগ তুলে ধরা হয়।

রিজভী বলেন, “গত ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পর থেকে ২৯ ডিসেম্বর ভোর পর্যন্ত মোট গ্রেপ্তার ১১ হাজার ৫০৬ জন, গায়েবী ও মিথ্যা মামলার সংখ্যা ৯৫৭টি। গতকাল এক দিনে বিভিন্ন জেলায় বানোয়াট মামলা দায়ের হয়েছে ৫৯টি এবং গ্রেপ্তার হয়েছে ১ হাজার ১৭৭ জনকে।”

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সহ দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ, সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, ঢাকা জেলা সাধারণ সম্পাদক আবু আশফাক খন্দকার।

রিট খারিজ, খালেদার প্রার্থিতা ফিরলো না