উন্নয়নের জোয়ারেই আবার ভাসবে নৌকা: জয়

বাংলাদেশে মানুষ উন্নয়নের জন্য ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকেই ক্ষমতায় রাখবে বলে দৃঢ় আশাবাদী প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়।

গোলাম মুজতবা ধ্রুব  নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Dec 2018, 07:16 PM
Updated : 29 Dec 2018, 04:51 AM

নির্বাচনের ফল নিয়ে যে জরিপ চালিয়েছেন, তা তার এই আশায় ভিত্তি দিয়েছে বলে ভোটের আগে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থাকা জয়ের এই সাক্ষাৎকারটি শুক্রবার সময় টিভিতে প্রচারিত হয়।

সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে জয় যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামের নেতাদের ধানের শীষ প্রতীক দেওয়া এবং তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের এক সময়ের নেতাদের যোগ দেওয়ার সমালোচনাও করেন।

আগামী রোববার একাদশ সংসদ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন।

আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে যাওয়ায় আশাবাদী; অন্যদিকে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা বলছেন, উন্নয়নের কথা বলে গণতন্ত্রহীনতাকে চাপা দিতে চাইছে ক্ষমতাসীনরা, যার জবাব ভোটের মাধ্যমে জনগণ দেবে।

জয় বলেন, “আমার বিশ্বাস, মানুষের জীবনের উন্নয়ন আমরা করেছি। অর্থনৈতিক উন্নয়ন করেছি, সামাজিক উন্নয়ন করেছি, আমাদের দেশের অর্থনীতি এখন ফাস্টেস্ট গ্রোয়িং ইকোনমি, আমাদের সরকারের পরিশ্রমের কারণে হয়েছে। আজকে ডিজিটাল বিপ্লব হয়েছে।”

আওয়ামী লীগের ১০ বছরের শাসনে মাথাপিছু আয় তিন গুণ বৃদ্ধি, সরকারি কর্মচারী, পোশাক শ্রমিকদের বেতন চার গুণ বৃদ্ধি, প্রতিটি গ্রামে বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া, স্কুল শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই দেওয়া, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার তথ্য তুলে ধরেন তিনি।

“আমার বিশ্বাস, এই পরিশ্রমের ফলে মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে। কারণ তারা (মানুষ) চায়, এই উন্নয়নের ধারা চলতে থাকুক,” বলেন তিনি।

বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে পার্থক্য তুলে ধরে জয় বলেন, “কথা তো সবাই বলতে পারে। ওয়াদা তো সবাই দিতে পারে। ওয়াদা কে রেখেছে? একমাত্র আওয়ামী লীগ। আমরা যতগুলো কথা দিয়েছি, সেগুলো সম্পন্ন করেছি।”

বিপরীতে বিএনপি ক্ষমতায় থেকে দেশকে ‘দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন, ‘বোমা হামলা-হত্যাকাণ্ড’ ঘটিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আগামীতে ক্ষমতায় গেলে তরুণদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ জয় বলেন, উদ্যোক্তা তৈরি করার অনেকগুলো পরিকল্পনা তাদের রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “দুর্নীতি যে আছে, সেটা অস্বীকার করতে পারি না। কিন্তু ১০ বছর আগের সাথে তুলনা করলে আকাশ-পাতাল তফাৎ। ১০ বছর আগে বাংলাদেশে যেই দুর্নীতি ছিল, তার ধারে কাছেও নেই। 

“প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স পলিসি আছে। আমাদের মন্ত্রীবর্গের কারও সাহস নেই সরাসরি টাকা চাওয়ার। আওয়ামী লীগ সরকারের কারও নেই।”

এই নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন জনমত জরিপের চিত্র তুলে ধরে জয় বলেন, “জরিপ তো শুধু আমাদের না। মার্কিনরাও করেছে সেপ্টেম্বর মাসে। প্রতিটি জরিপেই দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে এগিয়ে আছে।”

এই বছরই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে চালানো জরিপের তথ্য মিলে যাওয়ার দিকটি দেখিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের জরিপ সঠিক। আমার মনের দৃঢ বিশ্বাস, আমরা যেই জরিপ করেছি, তার ফলাফলই আসবে।”

এবারের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টারকে (আরডিসি) দিয়ে একটি জরিপ করিয়েছেন জয়।  এতে তিনি দেখেছেন, আওয়ামী লীগ ১৬৮ থেকে ২২০টি আসনে জয়লাভ করবে।

যেসব নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হেরেছিল, তাতেও আসন কম হলেও ভোট বেশি পাওয়ার তথ্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রীপুত্র।

২০০১ সালের নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, “এটা একটা ভুল ধারণা যে মানুষ তখন আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়নি। মোট ভোটের সংখ্যা যদি দেখেন, তাহলে দেখবেন আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে।  ৯৬ সালের চেয়েও বেশি ভোট পেয়েছিল। যেটা হয়েছিল বিএনপি-জামাত জোট করে সিটের সংখ্যায় এগিয়ে গিয়েছিল। ভোটের সংখ্যায় তারা কিন্তু এগিয়ে থাকেনি।”

নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় জয় বলেন, পরাজয় আঁচ করতে পেরে তারা নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে চাইছে।

“তারা নমিনেশন দিয়েছে কাদেরকে? আসামিদের তারা নমিনেশন দিয়েছে, খুনের আসামিদের। তাদেরকে তো পুলিশ খুঁজবেই। তারা ২০১৩ থেকে ১৫ তে যেভাবে মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, তারপর থেকে তাদের জঙ্গি-সন্ত্রাসী বলব।

“বিএনপির এক প্রার্থী মালয়েশিয়ায় দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকার পর নির্বাচনকে ঘিরে দেশে এসেছে। পলাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিএনপি নমিনেশন দিয়েছে।”

ঐক্যফ্রন্টের উদ্যোক্তা কামাল হোসেনদের সমালোচনা করে জয় বলেন, “মানুষের চরিত্র ও নীতি বলে একটা কথা আছে। যার আত্মবিশ্বাস থাকে, সে কিন্তু সম্পূর্ণভাবে সেটা বাদ দিতে পারে না। একমাত্র তারাই বাদ দিতে পারে যারা সুবিধাবাদী।

“আপনারা যাদের নাম বললেন, কামাল হোসেন, আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না এখনও কিন্তু তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলছেন। তারা জোট করেছেন কাদের সাথে? যারা দুর্নীতিতে কনভিকটেড। তার মানে এরা সম্পূর্ণভাবে সুবিধাবাদী। এরা নিজেরা কোনো ভোট একা জিততে পারে না। শুধু ক্ষমতার লোভে যে কোনো মানুষের সাথে হাত মেলাচ্ছে।”

স্বাধীনতাবিরোধীদের বিএনপির পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেওয়াকে ‘লজ্জার বিষয়’ বলে মন্তব্য করেন জয়।

শৈশবে ঢাকায় স্কুলজীবনের বিরূপ অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “যখন আমরা স্কুলে পড়ি, এই যে যারা যুদ্ধাপরাধী, তাদের পরিবারের ছেলে-মেয়েরা, তাদের সাথে স্কলাসটিকায় আমাদের ক্লাস করতে হয়েছে।

“কিছু কিছু টিচার ছিলেন, যতই ভালো পরীক্ষা দিই মার্কস কেটে দিত।  যুদ্ধাপরাধীদের ছেলে-মেয়েরা আমাদের উপরও নির্যাতন করত। আমাকে পেটানোর চেষ্টা করত।”

জয় বলেছেন, এখনই সরাসরি রাজনীতিতে তিনি আসতে রাজি নন।

শৈশবে রাজনীতির কারণে মাকে ‘মিস’ করার অনুভূতির কথা কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনার ছেলে বলেছেন, মেয়ে যতদিন ছোট আছে, ততদিন পরিবারকেই বেশি সময় দিতে চান তিনি।