সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের প্রত্যয়নে; কিন্তু আকস্মিকভাবেই তাকে মহাসচিবের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ায় এখন লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীদের চূড়ান্ত মনোনয়ন কে দেবেন, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
Published : 04 Dec 2018, 05:43 PM
আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন আসনে জাতীয় পার্টির চূড়ান্ত প্রার্থী কে, সে সিদ্ধান্ত জানানোর এখতিয়ার কাগজে-কলমে হাওলাদারের কাছেই রয়ে গেছে।
গত ২৬ নভেম্বর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ইসিকে লেখা চিঠিতে জানিয়েছিলেন, দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীক বরাদ্দের বিষয়ে মহাসচিব (তৎকালীন) হাওলাদারই তার দলের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি।
তারপর ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত হাওলাদারের প্রত্যয়নেই রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন লাঙ্গলের ২৩৩ জন প্রার্থী; তারমধ্যে ১৫৫ জন ইসির বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
বিভিন্ন আসনে একাধিক প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত হওয়ার পর জাতীয় পার্টির চূড়ান্ত প্রার্থী কে থাকছেন, তা হাওলাদারেরই জানানোর কথা ছিল।
কিন্তু এর মধ্যেই মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠার পর নিজের ‘বিশ্বস্ত ও সন্তানতুল্য’ হাওলাদারকে মহাসচিবের পদ থেকে সরিয়ে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাকে সোমবার ওই পদে বসান এরশাদ।
জাতীয় পার্টির বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির উপসচিব আব্দুল হালিম খান মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের কাছে চিঠি দিয়ে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, রুহুল আমিন হাওলাদার ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি।
“নতুন মহাসচিব করার বিষয়টি আমরা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জানি না। মহাসচিবের স্বাক্ষরেই প্রত্যয়নপত্র রয়েছে মনোনয়নপত্রে। এখন চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষমতাও তারই।”
আগামী ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করে জানাতে হবে জাতীয় পার্টিকে। সেক্ষেত্রে ক্ষমতা এখনও হাওলাদারের কাছে রয়ে গেছে।
এখন হাওলাদারের ওই ক্ষমতা কেড়ে নিতে চাইলে তা ইসিকে জানাতে হবে জাতীয় পার্টিকে। ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম, পদবী ও স্বাক্ষর জমা দিতে হবে দলটিকে।
ইসির উপসচিব হালিম খান বলেন, “নতুন কেউ চূড়ান্ত মনোনয়ন দিলে সে বিষয়ে ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে জানাতে হবে।”
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ২০টিরও বেশি আসনে জাতীয় পার্টির একাধিক প্রার্থী রয়েছে। ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় পার্টি চূড়ান্ত প্রত্যয়ন না দিলে এসব আসনে দলটির সবার মনোনয়নপত্র বাদ পড়বে। তবে একক প্রার্থী যেখানে রয়েছে, সেখানে নতুন করে চূড়ান্ত করার দরকার পড়বে না।
ইসির উপসচিব বলেন, “জাপার চেয়ারম্যানই দলটির প্রধান। তিনি নিজেই চূড়ান্ত মনোনয়ন দিতে পারেন; নতুন কাউকে দায়িত্বও দিতে পারেন; বিষয়টি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগে জানাতে হবে। তা না হলে সমস্যা হতে পারে।”
খেলাপি ঋণের কারণে হাওলাদারের নিজের প্রার্থিতাও বাতিল হয়ে গেছে। পটুয়াখালী-১ আসনের বর্তমান সাংসদ হাওলাদার ওই আসনেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তবে প্রার্থিতা ফিরে পেতে মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনে আপিল করেছেন হাওলাদারের পক্ষে তার আইনজীবী।
জাতীয় পার্টির এই জটিলতার বিষয়ে দলটির কোনো বক্তব্য এখনও পাওয়া যায়নি। দলের চেয়ারম্যান এরশাদও অসুস্থতার কারণে প্রকাশ্যে আসছেন না।
মুসলিম লীগও একই জটিলতায়
বাংলাদেশ মুসলিম লীগেরও মহাসচিব নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছিল।
উপসচিব হালিম বলেন, “আমরা জানার পর ইসির সিদ্ধান্ত রিটার্নিং কর্মকর্তাদের জানিয়ে দিয়েছি।”
ববি হাজ্জাজের সঙ্গে জোট করে প্রতীক দেওয়ার অপচেষ্টার অভিযোগে মহাসচিবের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছেন মুসলিম লীগের সভাপতি।
এরপর দলটির প্রতীক হারিকেনের চূড়ান্ত প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে দলটির সভাপতিকে ক্ষমতা দিয়ে ২ ডিসেম্বর সিদ্ধান্ত দিয়েছে ইসি।
রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো চিঠিতে ইসির উপসচিব হালিম জানান, মুসলিম লীগের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক আলাদাভাবে মনোনয়ন দিয়ে থাকলে দলটির চূড়ান্ত মনোনয়নে সভাপতির মনোনয়নকে চূড়ান্ত বিবেচনা করতে হবে।
মুসলিম লীগের সভাপতি জুবাইদা কাদের চৌধুরী সম্প্রতি কমিশনের কাছে অভিযোগ দিয়ে দলটির চূড়ান্ত মনোনয়ন ক্ষমতা তাকে দেওয়ার অনুরোধ জানান।
জুবাইদা কাদের লিখেছেন, “দলটির মহাসচিব ধুরন্ধর আবুল খায়ের আমার অনুমতি ছাড়া ধনাঢ্য মুসা বিন শমসেরের ছেলে ববি হাজ্জাজের সঙ্গে জোট করেছেন, যা অনৈতিক কাজ ও আমাদের প্রতীক ব্যবহারের পাঁয়তারা করছে। তারা যেন আমার অনুমতি ছাড়া প্রতীক ব্যবহার করতে না পারে।”