‘সংবিধানসম্মত সকল বিষয়ে’ আলোচনার জন্য কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Published : 30 Oct 2018, 07:52 AM
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী আবদুস সোবহান গোলাপ মঙ্গলবার সকালে ড. কামাল হোসেনের বাসায় গিয়ে তার হাতে আমন্ত্রণের চিঠি পৌঁছে দেন।
চিঠি হস্তান্তরের পর গোলাপ সাংবাদিকদের বলেন, “আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণপত্র ড. কামাল হোসেনের কাছে দিয়েছি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা উনাদেরকে আমন্ত্রণ করেছেন।”
প্রধানমন্ত্রীর প্যাডে শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে কামাল হোসেনকে উদ্দেশ করে লেখা হয়েছে, “সালাম ও শুভেচ্ছা নিবেন। আপনার ২৮ অক্টোবর ২০১৮ তারিখের পত্রের জন্য ধন্যবাদ। অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সংবিধানসম্মত সকল বিষয়ে আলোচনার জন্য আমার দ্বার সর্বদা উন্মুক্ত।
“তাই আলোচনার জন্য আপনি যে সময় চেয়েছেন, সে পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ০১ নভেম্বর ২০১৮ তারিখ সন্ধ্যা ৭টায় আপনাকে আমি গণভবনে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। “
“আমরা শুধু ৭ দফা নয়, অন্যান্য বিষয় ও বর্তমান যে বিষয়গুলো আছে সেই বিষয়গুলো নিয়ে দেশে একটা অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করার জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাব।”
“এর জন্য উনি যদি কোনো সাহায্য সহযোগিতা আমাদের কাছে চান, অবশ্যই ড. কামাল হোসেন সাহেব বিস্তারিত কথা বলতে পারবেন। যেহেতু উনি সংবিধান প্রণেতাদের অন্যতম, উনি এ ব্যাপারে ব্যাখ্যাটা দিতে পারবেন। এ বিষয়টি আমরা উনার উপরে ছেড়ে দিচ্ছি, উনি সংলাপের নেতৃত্ব দেবেন।”
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে গত রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে চিঠি দেন কামাল হোসেন।
দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি ২০১৪ সালের ওই নির্বাচনের পর থেকেই সংলাপের আহ্বান জানিয়ে আসছিল। কিন্তু তার কোনো প্রয়োজন দেখছিল না আওয়ামী লীগ।
দশম সংসদ নির্বাচনের আগে আলোচনার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করে শেখ হাসিনার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার কথাও বলে আসছিলেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়া এবং গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় খালেদার ছেলে তারেক রহমান দোষি সাব্যস্ত হওয়ার পর ‘খুনিদের’ সঙ্গে সংলাপে না বসার কথা আরও জোর গলায় বলছিলেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফায় খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি রয়েছে, যা বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী সম্ভব নয় বলে আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছেন।
এর মধ্যে রোববার সংলাপের আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে লেখা কামাল হোসেনের চিঠি পৌঁছে দেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।
সেই চিঠি পাওয়ার পর সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর শেখ হাসিনা আলোচনা করেন বলে কাদের জানান।
তিনি বলেন, “আজকে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর নেত্রী আমাদের নিয়ে অনির্ধারিত একটি বৈঠক করেন। উপস্থিত দলীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং সবার মতামত জানতে চান। অনির্ধারিত এ আলোচনায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর দরজা কারো জন্য বন্ধ নয়।”
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা সংলাপে নেতৃত্ব দেবেন এবং আলোচনার সময়, স্থান ও অন্যান্য বিষয় ‘শিগগিরই’ জানিয়ে দেওয়ার কথাও সংবাদ সম্মেলনে বলেন কাদের। এরপর মঙ্গলবার সাত সকালে কামাল হোসেনের বেইলি রোডের বাসায় প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে যায়।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবি আওয়ামী লীগ মানবে কি না- এ প্রশ্নের উত্তরে কাদের সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, আলোচনা যখন হবে, তখন তার ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করা উচিত।
কাদেরের এই সংবাদ সম্মেলনের পরপরই মতিঝিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদের চেম্বারে বৈঠকে বসেন ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্যরা। তারা সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান এবং সংলাপের আহ্বানে সাড়া পেয়ে ইসির কাছে যাওয়ার পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি বাতিল করেন।
সংলাপ নিয়ে আরও খবর