‘যথাযথভাবে গঠনতন্ত্র ও প্রয়োজনীয় দলিলাদি না থাকায়’ নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায়নি মাহমুদুর রহমান মান্নার দল নাগরিক ঐক্য।
Published : 06 Jul 2018, 01:36 AM
এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছেন তিনি। নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত ‘পূর্বনির্ধারিত’ বলে অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে সোচ্চার মান্না।
এদিকে জোনায়েদ সাকি নেতৃত্বাধীন গণসংহতি আন্দোলনের নিবন্ধনের আবেদনও বাতিল হওয়ার খবরে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে স্মারকলিপি দিয়েছে দলটি।
এই দুই দলের সঙ্গে শরীফ নূরুল আম্বিয়া নেতৃত্বাধীন জাসদ একাংশের বাংলাদেশ জাসদ, ববি হাজ্জাজের এনডিএমও নিবন্ধনযোগ্য বিবেচিত হচ্ছে না বলে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
তারা বলছেন, সব মিলিয়ে নিবন্ধন পেতে আগ্রহী ৭৬ দলের মধ্যে দুটি ছাড়া বাকিরা ঝরে পড়েছে। ওই দুটির বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের তদন্ত চলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির উপ-সচিব আব্দুল হালিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাগুজে দলিলে বাংলাদেশ কংগ্রেস ও বাংলাদেশ গণ-আজাদী লীগ নামে দুটি দলের সার্বিক আবেদন যথাযথ রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে তদন্তের প্রতিবেদন আসতে শুরু হয়েছে।
“কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন কমিশনের কাছে উপস্থাপন করা যাবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে সিইসি ও চার কমিশনার। সেখানে ক্লিয়ার হলেই বিস্তারিত বলা যাবে।”
বাংলাদেশ গণ-আজাদী লীগ ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক। আর ২০১৩ সালে আত্মপ্রকাশ করা বাংলাদেশ কংগ্রেস এখনও কোনো জোটভুক্ত হয়নি। সর্বশেষ গত বছর কাউন্সিল করে তারা। দলটির সর্বশেষ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন উপস্থিত ছিলেন।
বৃহস্পতিবার এক ফেইসবুক পোস্টে নিবন্ধন না পাওয়ার খবর জানিয়ে মান্না লিখেছেন, “নাগরিক ঐক্যকে কেন নিবন্ধন দেওয়া হয়নি, সেটা জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের চিঠি আমার হাতে এসেছে। চিঠিটি পড়ে আমার মনে হয়েছে, এটা আমাদের নিবন্ধন না দেবার কারণকে আদৌ স্পষ্ট করেনি।
“আজ যখন আমাদের নিবন্ধন দেওয়া হবে না মর্মে নির্বাচন কমিশনের চিঠি পাই, তখন আমরা বুঝি, এই সবই পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্ত। আমরা আশা করেছিলাম, অন্তত নিবন্ধনের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ আচরণ করবে, কিন্তু এখানেও তারা তাদের দলদাসের মতো আচরণের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে।..নিবন্ধন পাবার জন্য প্রয়োজনীয় সব শর্ত নাগরিক ঐক্য পূরণ করেছে। কিন্তু এরপরও আমাদের দলকে নিবন্ধন না দেয়ার সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক। আমরা এই স্বৈরাচারী সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাই।”
গণ-আজাদী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ খান দাবি করছেন, নিবন্ধন পাওয়ার সব যোগ্যতা তাদের রয়েছে।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের নিজস্ব অফিস রয়েছে। ৩১টি জেলা ও ১১০টি উপজেলা কমিটি, অফিসের তালিকা দিয়েছি। তদন্তে গেলে আমরা নিবন্ধনযোগ্য হব। আমাদের প্রত্যাশা, দ্রুত কাজটি শেষ করবে ইসি।”
“গণ-আজাদী লীগ ১৯৭৬ সালের পুরনো দল। লাঙ্গল, ঢেঁকি ও উড়োজাহাজ নিয়ে ভোট করেছি। সর্বশেষ জোটভুক্ত হয়ে ভোটে অংশ নিই। এবার নিবন্ধন পাওয়ার জন্যে উড়োজাহাজ প্রতীক চাওয়া হয়েছে।”
আর বাংলাদেশ কংগ্রেসের চেয়ারম্যান কাজী রেজাউল হোসেন বলেন, “আমাদের কেন্দ্রীয় অফিস রয়েছে নয়াপল্টনে। নিবন্ধন পেতে ৩১টি জেলা ও ১১৭টি উপজেলা কমিটির তালিকা দিয়েছি। সব ধরনের সংস্থা আমাদের খোঁজ নিচ্ছে। আমাদের কেউ ডাকেও নি। আশা করি, নিবন্ধন পাব। তবে আগাম কিছু বলতে পারছি না; শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় ইসি-তা দেখার অপেক্ষায়।”
বই প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার আবেদন জানিয়েছে দলটি।
নির্বাচন কমিশনকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করেছে গণসংহতি আন্দোলন। সেখানে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ছাড়াও দলের নির্বাহী সমন্বয়কারী (ভারপ্রাপ্ত) আবুল হাসান রুবেল, রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য তাসলিমা আখতার, ফিরোজ আহমেদ এবং সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভুঁইয়া, আবু বকর রিপন, জুলহাসনাইন বাবু বক্তব্য রাখেন। সমাবেশ শেষে গণসংহতি আন্দোলনের নেতাকর্মীরা মিছিল বের করে। মিছিলটি পুলিশি বাধার মুখে শাহবাগে এসে শেষ হয়। পরে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি পেশ করে।
“গণসংহতি আন্দোলন নির্বাচন কমিশনে যে কাগজপত্র দাখিল করেছে তাতে ১০৯টি থানায় কার্যালয় ও কমিটি থাকা, ২০০ এর অধিক ভোটার সদস্য থাকা, ২৮টি জেলায় জেলা কমিটি ও কার্যালয় থাকার প্রমাণপত্র দাখিল করা হয়। অর্থাৎ নতুন দল নিবন্ধন বিধি ৬ এর (ঞ) উপবিধির (ই) ধারা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের সকল শর্ত গণসংহতি আন্দোলন যথাযথভাবে পূরণ করেছে।
“শুধু সক্রিয়তার বিবেচনাতেই নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কাজের বিস্তারের বিবেচনাতেও আমরা নিবন্ধনের দাবিদার। আমরা আশা করি নির্বাচন কমিশন তার সিদ্ধান্ত পূণঃবিবেচনা করে গণসংহতি আন্দোলনের আবেদন মাঠ পর্যায়ে জরিপের জন্য প্রেরণ করবেন এবং নিবন্ধন বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্তে উপনীত হবেন।”
এদিকে জাতীয় সংসদে দুজন সংসদ সদস্য থাকার পরও নিবন্ধন না দিলে নির্বাচন কমিশন প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ জাসদ।
২০০৮ সালে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ব্যবস্থা চালুর পর ৩৮টি দল নিবন্ধিত হয়। এরপর নবম সংসদে দুটি এবং দশম সংসদে দুটি দল নিবন্ধন পায়। এছাড়া শর্ত পূরণ না হওয়ায় তিনটি দলের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যায়। সব মিলিয়ে এখন বাংলাদেশে ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে, যারা নিজস্ব প্রতীক নিয়ে দলীয়ভাবে নির্বাচন করতে পারে।
নতুন দল নিবন্ধনের জন্য গত বছরের ৩০ অক্টোবর দলগুলোর কাছে আবেদন আহ্বান করে ইসি। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ৭৬টি দল আবেদন করে। পাঁচ মাস ধরে এ নিয়ে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করে ইসি, যদিও নির্বাচনী রোডম্যাপ অনুযায়ী এপ্রিলের মধ্যে তা শেষ হওয়ার কথা ছিল।
এ বছরের শেষ ভাগে ৩০ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। ওই ভোটের ছয় মাস আগেই নিবন্ধন চূড়ান্ত করার কথা ইসির।