ভোটের নয় দিন আগে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে নির্বাচন স্থগিতে আদালতের আদেশের পেছনে সরকারের ষড়যন্ত্র দেখছে বিএনপি।
Published : 06 May 2018, 07:47 PM
রোববার হাই কোর্টের স্থগিতাদেশ আসার পরপরই গাজীপুরে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে থাকা বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান।
পরে ঢাকার গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিক্রিয়া জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, পরাজয় আঁচ করতে পেরে সরকার এই নির্বাচন স্থগিত করিয়েছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনে সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়নের ছয়টি মৌজা অন্তর্ভুক্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান এ বি এম আজহারুল ইসলাম সুরুজের এক রিট আবেদনে আদালতের এই স্থগিতাদেশ আসে।
আদালতের আদেশের পরপরই গাজীপুরে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রতিক্রিয়া জানান বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যিনি ভোটের প্রচারে ছিলেন সেখানে।
একই সময়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের টঙ্গীর বাড়িতেও সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়, যাতে দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ছিলেন।
আলাল বলেন, “এটা সরকারের ষড়যন্ত্র। ষড়যন্ত্র করে এ নির্বাচন বেশি দিন স্থগিত রাখা যাবে না। আমরা আদালতে যাব। আইনি লড়াইয়েও আমরা বিজয়ী হব, জনগণের সমর্থনেও বিজয়ী হব।”
মেয়র প্রার্থী হাসান সরকার বলেন, “হঠাৎ করে উচ্চ আদালতের রায় গাজীপুরবাসীকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে।
“জনগণ যাতে স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, তার জন্য আইনি লড়াই, মাঠের লড়াই, রাজনীতির লড়াই জনগণের পক্ষে করে যাব।”
আদালতের এই স্থগিতাদেশের পেছনে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের ‘চক্রান্ত’ রয়েছে বলে দাবি করেন আলাল।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “সরকার নির্বাচনের পরীক্ষা দিতে ভয় পায়।
“ষড়যন্ত্র করে এ নির্বাচন এখানে বেশি দিন স্থগিত করে রাখা যাবে না। আইনি লড়াইয়ে আমরা বিজয়ী হব। পুনরায় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না করা পর্যন্ত নিন্দা প্রতিবাদ অব্যাহত রাখব,” বলেন আলাল।
এদিকে টঙ্গীতে হাসান সরকারের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনের পর ফেরার পথে নোমানসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, “সরকার দেখেছে যে, এই নির্বাচনে একেবারে তাদের ভরাডুবি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তারা নিশ্চিত পরাজয় জেনে তারা তাদের লোক দিয়ে মামলা করিয়ে এবং কারসাজি করে গাজীপুরের নির্বাচনটিকে স্থগিত করিয়েছে।”
রিট আবেদনকারী আজহারুল সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক বলেও জানান তিনি।
ফখরুল বলেন, “এই নির্বাচন স্থগিত করানোর মধ্য দিয়ে সরকার প্রমাণ করেছে তারা সম্পূর্ণভাবে গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আমি এটুকু বলতে চাই যে, তাদের যে অপচেষ্টা, তাদের যে খারাপ কাজ এর পেছনে তাদের হীন উদ্দেশ্য কাজ করছে যাতে জনগণকে তাদের যে ভোট দেবার সাংবিধানিক অধিকার, সেই অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করা।”
ভোট স্থগিত হওয়াকেও ‘বড় বিজয়’ হিসেবে দেখছেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, “সরকার বাধ্য হয়েছে তাদের নিশ্চিত পরাজয় জেনে এটি বন্ধ করতে।”
ভোট স্থগিতের পর ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী হাসান সরকারের বাড়ি ঘেরাও এবং দলের ভাইস চেয়ারম্যান নোমান গ্রেপ্তারের নিন্দা জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, “সরকারের নির্বাচন ভীতি কাজ করছে বলে তারা এই নির্বাচন স্থগিত করিয়েছে। আমরা মনে করি সামনের যেসব নির্বাচন আছে সেগুলোর ভাগ্যেও একই অবস্থা হতে পারে।”
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, “আমরা বার বার বলে এসেছি, এই নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নয়। আমাদের সিনিয়র লিডার মওদুদ সাহেব দাবি করেছেন, এই কমিশন পুনর্গঠন হওয়া উচিত।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনের আগে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বৈঠকও করেন।