নতুন অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাবের সমালোচনা করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
Published : 06 Jun 2017, 08:18 PM
মঙ্গলবার এক ইফতার অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি বলেছেন, এই বাজেটের মাধ্যমে সরকার মানুষের পকেটে হাত দিয়েছে।
ইস্কাটনের লেডিস ক্লাব মিলনায়তনে ২০ দলীয় জোটের শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) ইফতারে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন বিএনপি প্রধান।
গত ১ জুন ঘোষিত বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়, বছরের যে কোনো সময় ব্যাংক হিসাবে এক লাখ টাকার বেশি স্থিতি থাকলে আবগারি শুল্ক বিদ্যমান ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা করা হবে।
পাশাপাশি ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ১ হাজার ৫০০ টাকার বদলে ২ হাজার ৫০০ টাকা, ১ কোটি থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ৭ হাজার ৫০০ টাকার বদলে ১২ হাজার টাকা এবং ৫ কোটি টাকার বেশি লেনদেনে ১৫ হাজার টাকার বদলে ২৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
সাধারণ নাগরিকদের পাশাপাশি ব্যবসায়ী, ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরাও আবগারি শুল্ক বাড়ানোর এ সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক মনে করেছেন না। তারা বলছেন, শুল্ক বাড়লে লেনদেনের অবৈধ মাধ্যম উৎসাহিত হবে। জাতীয় সংসদে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলীয় কয়েকজন সাংসদও অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্যদিকে অর্থমন্ত্রী ২ জুন বাজেটপরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ব্যাংকে যাদের এক লাখ টাকা রাখার সামর্থ্য আছে তারা সম্পদশালী। তারা বাড়তি ভারটা বহন করতে পারবেন, সমস্যা হবে না।
বাজেটের সমালোচনায় খালেদা জিয়া বলেন, “এই যে বাজেট দিয়েছে, তারা মানুষের পকেটে হাত দিয়েছে। এখন ব্যাংকে যদি এক লাখ টাকা থাকে, তার মধ্য থেকে ৮০০ টাকা কেটে নেবে তারা। তাহলে থাকবে কী? তারপরও অর্থমন্ত্রী বলেন, অনেক টাকা থাকবে, যার এক লাখ টাকা আছে সে নাকি অনেক বড় লোক।
“অন্যদিকে তাদের (ক্ষমতাসীন) যে ব্যাংকে হাজার হাজার কোটি টাকা আছে, সেটা কিছু না। এই অবস্থা হচ্ছে দেশের অবস্থা।”
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন খালেদা জিয়া।
“আজকে প্রত্যেকটা জিনিসপত্রের দাম বেশি। তারপরে গ্যাসের দাম প্রতিনিয়ত বাড়িয়ে চলেছে, বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে, পানির দাম বাড়িয়েছে।”
বিদ্যুতের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “বিদ্যুৎ দেবে বলে বাংলাদেশ নাকি ঝলমল করবে। এখন ঢাকা শহরেই লোডশেডিং বেড়ে গেছে। এখন সারাদেশ ঝলমল নয়, সারা দেশ অন্ধকারে ডুবে গেছে। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগের উন্নয়নের নমুনা।
“আর একেকটা উন্নয়ন করে, কিছু ওভার ব্রিজ-ট্রিজ যা করে তার ব্যয় কত যে বাড়ে, ৩/৪ গুণ বেশি ব্যয় দেখিয়ে তারা এক একটা প্রকল্প করছে।”
দেশের বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আজকে দেশে আইনের শাসন বলে কিছু নাই। মানুষ কোনো ন্যায় বিচার পায় না। কারণ বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করে সরকার, এই আওয়ামী লীগ। এদের হাত এত লম্বা যে তারা কোথাও হাত দিতে কুন্ঠাবোধ করে না।”
ব্যাংকিংখাতের চরম অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “২০১৬ সাল ছিল আওয়ামী লীগের ব্যাংক চুরির বছর। ব্যাংকের টাকা প্রতিনিয়ত চুরি করেছে, চুরি করতে করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে চুরি করেছে, ব্যাংকের টাকা চুরি করে তারা পাচার করেছে।”
একাদশ নির্বাচনের প্রতি ইঙ্গিত করে খালেদা জিয়া আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ২০১৮ সাল হবে জনগণের বছর।
“ইনশাল্লাহ ২০১৮ সাল হবে জনগণের বছর আমরা বিশ্বাস করি। ২০১৮ সাল দেশের মানুষের বছর হবে এবং দেশ থেকে সকল অত্যাচার ও অত্যাচারি বিদায় নেবে। আমরা পবিত্র রমজান মাসে এই দোয়া করি।”
মূল্য মঞ্চে এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমেদ, মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জোট নেতাদের নিয়ে ইফতার করেন খালেদা জিয়া।
ইফতারে জোট নেতাদের মধ্যে ছিলেন কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, জামায়াতের অধ্যাপক মজিবুর রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা এম এ রকীব, খেলাফত মজলিশের মাওলানা সৈয়দ মজিবুর রহমান, জাগপার রেহানা প্রধান, খোন্দকার লুৎফর রহমান, এনডিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, এনডিপির খন্দকার গোলাম মূর্তজা, মঞ্জুর হোসেন ঈসা, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, হামদুল্লাহ আল মেহেদি, ন্যাপের জেবেল রহমান গনি, গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, বিজেপির আবদুল মতিন সউদ, মুসলিম লীগের এএইচএম কামরুজ্জামান খান, শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম, ডিএলে সাইফুদ্দিন মনি, ইসলামিক পার্টির আবুল কাশেম প্রমুখ।
এলডিপির কেন্দ্রীয় নেতা সাহাদাত হোসেন সেলিম, আবু ইউসুফ খলিলুর রহমান, আবদুল গনিসহ নেতৃবৃন্দ ইফতারে ছিলেন।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, খন্দকার মাহবুব হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, রুহুল আলম চৌধুরী, ইসমাইল জবিউল্লাহ, সঞ্জীব চৌধুরী, তৈমুর আলম খন্দকার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার প্রমুখ ইফতারে অংশ নেন।