নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে খালেদা জিয়ার প্রস্তাব জানাতে রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎ চেয়েছে বিএনপি।
Published : 21 Nov 2016, 11:58 AM
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সোমবার সকালে সাংবাদিকদের কাছে এ কথা জানান।
তিনি বলেন, “সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠন করার দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির। সেজন্য দেশনেত্রীর প্রস্তাবটি অবশ্যই আমরা তার কাছে দেব। এজন্য গতকাল রাতে রাষ্ট্রপতির কাছে সময় চেয়েছি। এখন পর্যন্ত আমরা সময় পাইনি।
“আমরা আশা করছি, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে আমাদের এই প্রস্তাব তার কাছে উপস্থাপন করার জন্য তিনি আমাদেরকে সুযোগ করে দেবেন। সেই অপেক্ষায় আমরা আছি।”
কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদপূর্তি হচ্ছে আগামী ফেব্রুয়ারিতে। এরপর যে কমিশন দায়িত্ব নেবে, তাদের অধীনেই ২০১৯ সালে একাদশ জাতীয় নির্বাচন হবে।
এই কমিশন কেমন হওয়া উচিৎ সে বিষয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরতে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, ‘সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, অথবা স্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন সকল রাজনৈতিক দলের’ মতৈক্যের ভিত্তিতে নতুন ইসি গঠন করতে হবে।
তার প্রস্তাবকে ‘অন্তঃসারশূন্য’ বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, যারা সংসদের বাইরে রয়েছে, ইসি নিয়ে আলোচনায় তাদের কথা বলার কোনো অধিকার নেই।
খালেদা জিয়া এ যাবৎকালে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব দলকে রাখার কথা বলে কৌশলে জোটসঙ্গী জামায়াতকেও বৈঠকে চেয়েছেন বলে সমালোচনা হয়েছে দেশের প্রধান দুটি সংবাদপত্রে।
এর জবাবে মির্জা ফখরুল রোববার ওই দুই পত্রিকাকে ‘এক এগারোর সহায়ক শক্তি’ আখ্যায়িত করে বলেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও পত্রিকা দুটির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে এ অভিযোগ করছে।
সোমবার নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, সংবিধান অনুযায়ী কেবল রাষ্ট্রপতিই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার রাখেন।
“রাষ্ট্রপতি তো আওয়ামী লীগ দলভুক্ত নন। তিনি যেদিন রাষ্ট্রপতি হয়েছেন, সেদিন যে দলে ছিলেন, সেখান থেকে তাকে বিদায় নিয়ে আসতে হয়েছে। এখন তিনি সকলের রাষ্ট্রপতি।”
বিএনপিকে এর আগে আলোচনার সুযোগ দেওয়া হলেও তারা নেয়নি- প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল বলেন, “এখন তো অতীতচারিতা করে লাভ নেই। এখন যেটা সমস্যা আছে, তা সমাধান করার জন্য আমরা প্রস্তাব দিয়েছি। আশা করি, সরকার এই সুযোগটা গ্রহণ করবে।”
আরও পড়ুন ‘সব দলের’ মতৈক্যে নতুন ইসি চান খালেদা খালেদার ফর্মুলা অন্তঃসারশূন্য: কাদের |
খালেদা জিয়ার প্রস্তাব পরিবর্তনের সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, “আমরা বলেছি, এটা একটা প্রস্তাব। এটা ভিত্তি হতে পারে। আমরা মনে করি, দেশে একটা নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য। এই সুযোগটা সরকারের কাজে লাগানো উচিৎ, যদি তারা আন্তরিক হন।”
দেশে নির্বাচনী ব্যবস্থা ‘প্রায় ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে’ মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, সেজন্যই বিএনপিনেত্রী নতুন কমিশন গঠনের বিষয়ে প্রস্তাব তুলে ধরেছেন।
“রাষ্ট্রপতির যে দায়িত্ব রয়েছেন, তিনি রাষ্ট্রের অভিভাবক। তিনি দলভুক্ত মানুষ নন।... আমরা মনে করি, এ বিষয়টাকে বিবেচনায় নিয়ে তিনি দেশনেত্রীর প্রস্তাবটিকে গ্রহণ করবেন এবং এ সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।”
সব দলের কাছেই খালেদার এই প্রস্তাব বিএনপি পাঠাবে বলে আরেক প্রশ্নের জবাবে জানান ফখরুল।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসজ জ্যেষ্ঠ নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।