নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যে প্রস্তাব দিয়েছেন তাতে নতুন কিছু নেই বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
Published : 18 Nov 2016, 06:24 PM
তার এই বক্তব্যে জাতির সঙ্গে ‘তামাশা ছাড়া আর কিছু নেই’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
২০১৯ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ‘সব দলের’ মতৈক্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের প্রস্তাব করেছেন নির্দলীয় সরকারের অধীনে ভোটের দাবিতে গত জাতীয় নির্বাচন বর্জন করে আসা বিএনপির নেত্রী।
নির্বাচন কমিশন নিয়োগে বাছাই কমিটি গঠনের রূপরেখা, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের যোগ্যতা এবং ‘সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ’নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের কয়েকটি ধারা সংশোধনসহ ১৩টি প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার বিকালে খালেদা জিয়ার ওই প্রস্তাবের পর তার প্রতিক্রিয়া জানাতে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন সম্প্রতি দলের দ্বিতীয় শীর্ষ পদে আসা ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, “আজ বেগম জিয়া কর্তৃক তথাকথিত নির্বাচন কমিশন সংস্কারের ফর্মূলা অন্তঃসারশুন্য এবং জাতির সাথে তামাশা ছাড়া আর কিছু নয়। সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া দীর্ঘ ৪৫ মিনিট ধরে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে নতুন কিছু নেই।
“খালেদা জিয়া বলেছেন পুলিশ, বিজিবি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক কর্মকর্তা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বে থাকতে পারবে না। দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের উপর তিনি আস্থা রাখতে পারছেন না। এই বক্তব্য দিয়ে খালেদা জিয়া প্রমাণ করেছেন জনগণের প্রতি তার কোনো আস্থা নেই।”
কারা নির্বাচন কমিশনে আসতে পারবেন আর পারবেন না সে বিষয়ে একটি প্রস্তাব রেখেছেন খালেদা জিয়া। অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দায়িত্ব পালনকারী কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে আপত্তি জানিয়েছেন তিনি।
এছাড়া কোনো সরকারি কর্তৃপক্ষ বা প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগের চাকরি থেকে অবসর, পদত্যাগ বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ বা চুক্তি বাতিলের পর তিন বছর না পেরোলে তিনি নির্বাচন কমিশনের কোনো দায়িত্বে আসতে পারবেন না বলে খালেদার প্রস্তাব।
বিএনপির ভাষায় ‘সরকারের আজ্ঞাবহ’ বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কোনো সদস্যই সরকারি দায়িত্ব থেকে অবসরের তিন বছরের মধ্যে এখানে নিয়োগ পাননি। এদের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ২০০৩ সালে সচিব পদ থেকে অবসরে যান।
নির্বাচন কমিশনের সচিবের দায়িত্ব থেকে সরাসরি নির্বাচন কমিশনার হয়েছিল স ম জাকারিয়াকে ২০০৬ সালের ১৬ জানুয়ারি বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোট সরকার আমলে। সে সময় বিষয়টি নিয়ে বেশ সমালোচনাও হয়।
‘সব দলের’ মতৈক্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব করে খালেদা জিয়া বলেছেন, এই কমিশন হতে হবে ‘সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, অথবা স্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন সকল রাজনৈতিক দলের’ মতৈক্যের ভিত্তিতে।
তার প্রস্তাব, ইসি নিয়োগ প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি ঠিক করতে রাষ্ট্রপতি ‘প্রধান দুই রাজনৈতিক জোট’বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রতিনিধিসহ সব দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
এ আলোচনায় নাগরিক সমাজের মধ্য থেকে ‘সৎ, যোগ্য ও দল নিরপেক্ষ প্রতিনিধিদের’ও যুক্ত করা যেতে পারে বলে অভিমত তার।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকে সব দল পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি গঠনের জন্য প্রতি পদের বিপরীতে দুই জনের নাম প্রস্তাব করবে। সেখান থেকে সব দলের মতৈক্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি গঠন করবেন।
এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বিএনপি নেত্রী ‘সংবিধানকে অবজ্ঞা’ করেছেন অভিযোগ করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদের বলেন, “খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে সংবিধান অবজ্ঞা করার মত ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে আমরা সংবিধান মোতাবেক চলতে চাই।
“মহামান্য রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠন করে যেভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন, সে প্রক্রিয়া থেকে আমাদের সরে যাওয়ার সুযোগ নেই।”
২০১২ সালে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ‘সার্চ কমিটির’ মাধ্যমে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিয়েছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষে নতুন যে ইসি দায়িত্ব নেবে, তার অধীনেই ২০১৯ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে।
আগেরবারের মত এবারও ‘সার্চ কমিটি’ করে রাষ্ট্রপতি নতুন কমিশন নিয়োগ দেবেন বলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ইতোমধ্যে জানিয়েছেন।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া বলেন, গত দুটি জাতীয় নির্বাচন এবং গত কয়েক বছরে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের ‘প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা ও পক্ষপাতমূলক আচরণ’ জনগণকে ‘হতাশ, আস্থাহীন ও ক্ষুব্ধ’ করে তুলেছে।
এ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, “বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মিথ্যাচার নতুন নয়। তার ক্রমাগত ভুলের কারণে তার দল জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তারা বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে ভাবে না, বিদেশের কোনো দেশে কোনো দল ক্ষমতায় আসে, তা নিয়ে ব্যস্ত থাকে।”
খালেদা জিয়া ‘দেশের জনগণের ওপর আস্থা রাখেন না এবং ভোটে তার বিশ্বাস নেই’ বলেও দাবি করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
বিএনপি চেয়ারপারসনকে নিয়ে তিনি বলেন, “জাতির কাছে কোনো ধরনের ‘প্রেসক্রিপশন’ দেওয়ার আগে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় মানুষ হত্যার জন্য তাদের ক্ষমা চাইতে হবে। শোক দিবসে জন্মদিন পালনের জন্যও ক্ষমা চাইতে হবে।
“এখন যে তিনি (খালেদা) সুন্দর সুন্দর ভালো কথাগুলো বলছেন, এগুলো মাগুরা, ঢাকা-১০ এর উপ-নির্বাচনে কোথায় ছিল? নিজেরা যেটা প্রাকটিস করে না, সেটা অন্যকে বলাও ঠিক নয়।”
বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত ওই দুই উপ-নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ ওঠে।
খালেদা জিয়ার কোনো প্রস্তাব রাখা হবে কি না সে প্রশ্নের জবাবে ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, “তিনি আস্থাশীল নন। নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠনে যা করার তাই করবেন।”
“তবে খালেদা জিয়া যদি ভালো কোনো প্রস্তাব দিয়ে থাকেন সেটা আমরা দেখব। আমরাও তো ভালো কিছু চাই।”
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।