দেশজুড়ে আলোচিত এই ঘটনা নিয়ে কোনো বক্তব্য না দেওয়ায় বিএনপি এবং সেলিম ওসমানের দল জাতীয় পার্টির সমালোচনা করেছেন তিনি।
দল দুটি একই ভাবধারার বলেও মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য।
শুক্রবার বিকালে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে এক আলোচনা সভায় নাসিম বলেন, “নারায়ণগঞ্জে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান স্কুল শিক্ষককে অপমান করে চরম খারাপ কাজ করেছে। এ অপরাধের ক্ষমা চাওয়ার পরিবর্তে উল্টো আঙুল তুলে হুঁশিয়ার করেছেন ওই সংসদ সদস্য। এই ঘটনায় একজন সাংসদ হিসেবে আমি চরম অপমানিত বোধ করছি।”
ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে একদল লোক মারধর করে। পরে তাকে কান ধরিয়ে উঠ-বস করান সাংসদ সেলিম ওসমান। এ সময় তার আশপাশ থেকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান শোনা যায়।
ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় তুমুল সমালোচনা। শিক্ষক ও আইনজীবীরা সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানসহ জড়িতদের ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান। সমালোচনায় মুখর হন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারাও। ১৪ দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই কাজ করে সেলিম ওসমান সাংসদ পদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছেন।
এ প্রেক্ষাপটে বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করেন নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সদস্য সেলিম ওসমান।
ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, এ ঘটনায় ফাঁসি হলেও তিনি আপত্তি করবেন না।
বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে সেলিম ওসমান
“আর বিএনপিও বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করলেও এই ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করছে না। কারণ দুটি দলই একই ভাবধারার, ‘চোরে চোরে মাশতুত ভাই’।”
বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী ‘ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ করে নাসিম বলেন, “কোনো চক্রান্তেই তিনি সফল হলেন না। এবার তার দলে উড়ে এসে জুড়ে বসা নেতা আসলাম চৌধুরীকে দিয়ে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছেন। আসলাম চৌধুরীকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই বের হয়ে আসবে মোসাদের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে কোন মি. রহমান ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা জড়িত।”
এই ঘটনায় জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়ে সরকারের এই মন্ত্রী বলেন, “অপরাধ করলে প্রধানমন্ত্রী কাউকে খাতির করেন না। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ায় তিনি মন্ত্রীকেও ছাড় দেননি। বিশ্বের নিকৃষ্ট গোয়েন্দা সংস্থা লাখো মুসলিমের হত্যাকারী ইসরায়েলি মোসাদকে নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করছেন তাদেরকেও বিচারের আওতায় আনা হবে।”
সমাবেশে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, “দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদানের জন্য ড. ইউনূসকে নোবেল দেওয়া হয়েছে। তিনি শান্তির জন্য কী করেছেন?
“বাংলাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যদি কেউ নোবেল পুরস্কারের যোগ্য হন, তারা হচ্ছেন শেখ হাসিনা ও সন্তু লারমা। দীর্ঘদিনের বিরোধের অবসান ঘটিয়ে তারা দেশের তিন পার্বত্য জেলায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছেন। তারা যদি নোবেল পুরস্কার না পান, তাহলে তাদের এ অবদান কোনো অবস্থায় খাটো হয়ে যাবে না।”
যুদ্ধাপরাধ ও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কতিপয় বিচারক এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। তাদের এমন আচরণে বিচার ব্যবস্থা কলঙ্কিত হয়েছে।
“শেখ হাসিনা দেশে প্রত্যাবর্তন না করলে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ঘৃণ্য ঘাতকদের বিচার হত না। তিনি এই বিচার করে বিচারিক প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করেছেন, জাতিকে করেছেন কলঙ্কমুক্ত।”
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এই সমাবেশে যুবলীগ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন।