বিএনপির এক আলোচনা সভায় দলটির গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন আনার পরামর্শ দিয়েছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
Published : 27 Jan 2016, 11:07 PM
বিভিন্ন সময় খালেদা জিয়ার পাশে এক মঞ্চে বসে বক্তব্য রেখে আসা জাফরুল্লাহ বিএনপিতে গণতান্ত্রিক চর্চারও তাগাদা দিয়েছেন।
বিএনপির আসন্ন কাউন্সিলে দুই পদ চেয়ারপারসন ও মহাসচিব পদে নির্বাচন চেয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, এক ব্যক্তির ওপর ক্ষমতা ছেড়ে দেয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাসের উদ্যোগে জিয়াউর রহমানের ৮০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বক্তব্য দেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ।
বিএনপির গঠনতন্ত্র যুগোপযোগী করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “গঠনতন্ত্র যেটা আছে তা অনেক আগের। যুগ ও সময়ের পরিবর্তন হয়েছে। আপনাদের (বিএনপি) গঠনতন্ত্রেও পরিবর্তন আনতে হবে।
“আমাদের জ্ঞানী-গুণী অনেকে আছেন। যেমন এমাজউদ্দিন সাহেব, মাহবুবউল্লাহ, দিলারা চৌধুরী এরকম অনেকে আছেন। তাদেরকে ৭ দিনের জন্য দায়িত্ব দেন না, পড়ে দেখুক। কোথায় কোথায় পরিবর্তন দরকার।”
আগামী মার্চ মাসে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, “বিএনপির কাউন্সিল হবে। খুব সুসংবাদ। আমরা খুশি হচ্ছি। এত প্রতিকূলতার মধ্যেও করছেন। সেখানে নির্বাচন দেন। চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের পদে নির্বাচন দেন। এক ব্যক্তির ওপরে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।”
গণতন্ত্রের কথা বললে নিজেদের দলের মধ্যে তা আনতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকাকালে ১৯৮১ সালে সেনা সদস্যদের হাতে নিহত হওয়ার পর রাজনীতিতে আসেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। ১৯৮৩ সালে বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হয়ে স্বামীর গড়া দলের হাল ধরেন তিনি। এরপর থেকে কয়েক দফা কাউন্সিল হলেও চেয়ারপারসনের পদে কোনো নড়চড় হয়নি।
দলের মহাসচিবসহ অন্যান্য নেতৃত্বও তার হাত দিয়েই নির্ধারিত হয়ে আসছে।
খালেদা জিয়াকে কিছু বলতে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা ‘শরমিন্দাবোধ’ করেন বলে মন্তব্য করেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের উপস্থিতিতে ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আজকে শমসের মবিন দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। করতেই পারেন। এই সরকারের এতো অত্যাচার- অনাচার, তার ওপর চাপও ছিল। ইতালীয় নাগরিক হত্যা হয়েছে। ইতালীতে কবে তিনি (শমসের) রাষ্ট্রদূত ছিলেন, এর সঙ্গে যোগসূত্র করছে অথবা অন্যান্য।
“কিন্তু খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে আসার পরে উনি কী শমসের মবিনের সঙ্গে বসেছিলেন? আমি জানি না। যদি বসে না থাকেন তার জন্য খালেদা জিয়ার যতটা দায়িত্ব তার চেয়ে বেশি দায়িত্ব নজরুল ইসলাম খানসহ অন্য সিনিয়র নেতাদের।”
সম্প্রতি সুরকার খন্দকার নুরুল আলম ও সাংবাদিক আলতাফ মাহমুদের মৃত্যুর প্রসঙ্গ টেনে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, “খন্দকার নুরুল আলম সাহেবের মিলাদেও আপনারা কে কে গেছেন জানি না। জাসাসের কাউকে দেখি নাই আমি।
“সাংবাদিক আলতাফ মাহমুদ। কেন আপনাদের এই সংকীর্ণতা? কেন তাদের মৃত্যুতে শোকবার্তা দিলেন না। তাদের জানাজায় যাচ্ছেন না। আপনারা তো আওয়ামী লীগের মতো ব্যবহার করছেন।”
মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা নিয়ে বক্তব্যের জন্য খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার কঠোর সমালোচনা করেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, “শহীদের সংখ্যা এখন পর্যন্ত নিরূপন হয়নি। সেখানে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা আনা হয়।
“রাষ্ট্রদ্রোহ কিভাবে হয়, কোনভাবে হয়, কোন বিধিতে হয়- এর কোনো উল্লেখ না রেখে একজন ভদ্র মহিলা রাজনীতিক, একবারে নয়, তিনবার প্রধানমন্ত্রী হওয়া এই মানুষটির বাড়ির সামনে সমন লটকিয়ে দেওয়া আমার তো মনে হয় এটা অমার্জনীয় অপরাধ। এটা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।”
মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা নিয়ে খালেদার বক্তব্য সমর্থন করে তিনি বলেন, “খালেদা জিয়া তো বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে নিহত হয়েছেন কতজন এই সংখ্যা নিয়ে বির্তক আছে। আমি তো বলছি- বির্তক আছে।”