জাতীয় পার্টি থেকে এবার অব্যাহতির আদেশ পেলেন রওশন এরশাদের পাশে দাঁড়ানো সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। তার কো-চেয়ারম্যানসহ দলের সব পদ কেড়ে নিয়েছেন চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
রওশনকে সঙ্গে নিয়ে আগামী ৯ মার্চ দলের কাউন্সিল ঘোষণার সিদ্ধান্ত জানানোর কিছুক্ষণের মধ্যে রোববার দুপুরে জাতীয় পার্টির জি এম কাদের এই সিদ্ধান্ত জানান।
তার নিয়ন্ত্রণে থাকা দলের দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলের চেয়ারম্যান হিসেবে গঠনতন্ত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জি এম কাদের। সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে।
জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব নিয়ে রওশন এরশাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের মধ্যে এর আগে কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদসহ সভাপতিমণ্ডলীর কয়েকজন সদস্য ও ভাইস চেয়ারম্যানকে দল থেকে অব্যাহতি দেন জি এম কাদের।
গত ৭ জানুয়ারির ভোটের কিছু দিন পর রওশন নিজেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করে জি এম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নুকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা বলেন।
চুন্নু অবশ্য ওই ঘোষণাকে পাত্তা দিচ্ছেন না; বলেছেন, রওশনের এ ঘোষণা দেওয়ার কোনো অধিকার নেই।
জি এম কাদের সংসদে জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিত্ব করছেন। তিনি সংসদে বিরোধীদলীয় নেতাও হয়েছেন। আর চুন্নু সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপের পদ পেয়েছেন।
এর মধ্যে রোববার কাজী ফিরোজ রশীদ ও সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা গুলশানে রওশন এরশাদের সঙ্গে দেখা করেন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বাবলাকে ঢাকা-৪ আসনে দলের মনোনয়ন দিয়েছিলেন জি এম কাদের। ফিরোজ রশীদকে প্রার্থী করা হয় ঢাকা-৬ আসনে। তবে আওয়ামী লীগ ছাড় না দেওয়ায় তিনি ভোটে লড়তে রাজি হননি।
আগের দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ছাড়ে সংসদ সদস্য হলেও বাবলা এবার হয়েছেন তৃতীয়। সেখানে নৌকা না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জিতেছেন ক্ষমতাসীন দলেরই নেতা আওলাদ হোসেন।
বাবলাকে অব্যাহতির বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি আসার আগে সকালে রওশন এরশাদ যে সংবাদ সম্মেলন করেন, তাতে এক পাশে বসা ছিলেন ফিরোজ রশীদ, এক পাশে ছিলেন বাবলা।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সম্মেলনের মধ্য দিয়ে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে ‘পচা মাংসের দলা ফেলে দিয়ে নতুন উদ্যোমে জাতীয় পার্টি তৈরি হবে’।
তিনি বলেন, “আমরা শুনেছি নিজের থেকে দল বড়, দলের থেকে দেশ বড়। আর এবার আমরা কী দেখলাম? দেশের চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে নিজে বড়, আর নিজের চাইতে স্ত্রী বড়। এইভাবে কোনো দল চলতে পারে না। তাই জাতীয় পার্টির প্রতি জনগণের যে প্রত্যাশা, তার প্রতিফলন এবার আমরা ঘটাতে পারব বলে আমি বিশ্বাস করি।”
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৮ আসনে জাতীয় পার্টির হয়ে লড়েছেন জি এম কাদেরের স্ত্রী শেরীফা কাদের।
প্রচার আছে, এই আসনে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ছাড় নিশ্চিত হওয়ার আগে জি এম কাদের ভোটে আসার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চাইছিলেন না। তবে ছাড় পেয়েও লড়াইয়ে আসতে পারেননি শেরীফা। ন্যূনতম ভোট না পাওয়ায় জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে তার।
ভোটে জাতীয় পার্টির ফল বিপর্যয়ের পর শেরীফার আসনকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টিতে বিরোধ চাঙা হয়।