ফুলেল শ্রদ্ধা, আলোচনা সভা, কবিতা, প্রতিবাদী গান ও প্রদীপ প্রজ্বালনসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয় পাহাড়ি এই নেতাকে।
Published : 10 Nov 2022, 11:12 PM
পাহাড়িদের নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ (এমএন) লারমার মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে স্মরণ করা হল নানা আয়োজনে।
বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় তার প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা, আলোচনা সভা, কবিতা, প্রতিবাদী গান ও প্রদীপ প্রজ্বালনসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়।
‘মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটি' ব্যানারে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের শুরুতে সেখানে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার অস্থায়ী প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় বিভিন্ন সংগঠন।
এরপর আয়োজন করা হয় আলোচনা। সভার শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটির সদস্য ফারহা তানজীম তিতিল। আলোচনা সভা শেষে কবিতা আবৃত্তি ও প্রতিবাদী গানের আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হয়।
আলোচনা সভায় বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, বাংলাদেশের ৫০ বছরে পাহাড়ি সমস্যার যে রাজনৈতিক উপলব্ধি, সে উপলব্ধির অভাববোধের পাশাপাশি যড়যন্ত্রের কারণে পাহাড়ের সমস্যা এখনও একধরনের বড় সমস্যা হয়ে আছে।
“মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা তার জীবনে এই সমস্যার একটি সুষ্ঠু সমাধানের জন্য সেই ১৯৭২ সালে গণপরিষদে তার কথাগুলো তুলে ধরেছিলেন। তিনি বাংলাদেশের সেই সময়কার প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানকে কিছুটা হলেও সেই সময়ে সেই রাজনৈতিক উপলব্ধির জায়গায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে যেভাবে ষড়যন্ত্র করে হত্যা করা হয়েছিল, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমাকেও একইভাবে ষড়যন্ত্র করে হত্যা করার কারণে তার সেই প্রচেষ্টা আর সামনে অগ্রসর হয়নি।”
পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মেনন বলেন, “যে শান্তিচুক্তির জন্য শেখ হাসিনা ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন, সেই শান্তির জন্য আজকে আরেকবার সেই সমঝোতার রাজনীতির পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সংবিধানে আদিবাসীদের জায়গাকে নির্দিষ্ট করতে হবে।
“রাজনৈতিক, সাংগঠনিকভাবে সেখানের জনসংহতি সমিতির সাথে যে চুক্তি হয়েছিল, তার বাস্তবায়ন করতে হবে এবং পাহাড়ে যে নিপীড়ন চলছে, সে নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে৷ তাহলেই পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসবে এবং পাহাড় ও সমতলের মানুষ মিলে একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব।”
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল বলেন, “মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ’৭২ সালে সংবিধানে যে বিতর্ক নিয়ে এসেছিলেন, তার মর্মার্থ হল একটি দেশে বহু জাতির মানুষ থাকতে পারে কিন্তু ওই দেশের নাগরিকত্ব সবার একই। তিনি বলেছিলেন- এদেশে যেমন বাঙালি আছেন, তেমনি চাকমা, মারমা, খুমি, খিয়াং, ত্রিপুরাসহ অনেক জাতির মানুষ আছেন৷ কিন্তু আমরা সবাই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নাগরিক, আমরা বাংলাদেশি৷
“এই বাংলাদেশি জাতির কথা জিয়াউর রহমান প্রথমে বলেননি, বলেছিলেন মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা। কিন্তু মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ধারণা ছিল একটি নাগরিকত্বের ধারণা, আর জিয়াউর রহমানের ধারণা ছিল একটি সাম্প্রদায়িক ধারণা। জিয়াউর রহমান অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতিকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন৷”
আদিবাসী ফোরামের ভূমি ও আইনবিষয়ক সম্পাদক উজ্জ্বল আজিমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক সৌরভ সিকদার।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি উষাতন তালুকদার, জাসদের সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবির, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদা রেহেনা বেগম, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল দেবনাথ, দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক ও কবি সোহরাব হাসান, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহ সাধারণ সম্পাদক ডা. গজেন্দ্রনাথ মাহাতো, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলীক মৃ।
কবিতা আবৃত্তি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হেমা চাকমা, মেহেদী হাসান ও মুমতাহহীনা মাহজাবীন মোহনা৷ গান পরিবেশন করেন গানের দল মাদল ও কফিল আহমদ।
মৃত্যুবার্ষিকীতে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে আসে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, ঐক্য ন্যাপ, ওয়ার্কার্স পার্টি, সিপিবি, মহিলা পরিষদ, বাসদ, জাসদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, কাপেং ফাউন্ডেশন, এএলআরডি, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ, আরডিসি, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, জনউদ্যোগ, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, বাগাছাস, আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক, গানের দল মাদল, নাগরিক উদ্যোগ, আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠন।