বিএনপিকে রাজপথেই মোকাবেলা: আওয়ামী লীগ

১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলার বার্ষিকীতে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ থেকে বিএনপিকে হুঁশিয়ার করেছে আওয়ামী লীগ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 August 2022, 03:50 PM
Updated : 17 August 2022, 03:50 PM

সরকার পতনে বিএনপি আন্দোলনে নামলে রাজপথেই তা মোকাবেলার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

দলের নেতারা বলছেন, হুমকি-ধমকি এবং বিদেশিদের কাছে নালিশ দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে নামাতে পারবে না বিএনপি। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে।

বুধবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেইটে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে এ কথা বলেন দলটির নেতারা।

১৭ আগস্ট দেশজুড়ে জেএমবির বোমা হামলার বার্ষিকীতে বিএনপি-জামায়াত জোটের দেশে ‘অস্থিরতা সৃষ্টির প্রয়াসের’ প্রতিবাদে এই কর্মসূচি আয়োজন করে আওয়ামী লীগ।

সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “আজকে বোমাবাজির দিন শেষ, গ্রেনেডবাজির দিন শেষ। আগুন সন্ত্রাস করে ক্ষমতায় আসার দিন শেষ। আপনারা অনেক দেশ প্রেমিক বীরের রক্তে হাত রঞ্জিত করেছেন।”

‘বাংলাদেশের জঙ্গিবাদের ঠিকানা ও পৃষ্ঠপোষক বিএনপি’ উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “এদের রুখতে হবে। মোকাবিলা করতে হবে এবং আগামী নির্বাচনে প্রমাণ করে দিতে হবে, এই দেশ বঙ্গবন্ধুর দেশ। এই দেশ মুক্তিযোদ্ধার দেশ। শেখ হাসিনার বাংলাদেশ।”

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলেন, “এই সরকারের অধীনে বিএনপিকে নির্বাচন আসতে হবে। শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

“২০১৫ সালে যেভাবে লেজগুটিয়ে খালেদা জিয়া বাড়ি ফিরে গিয়েছিল, আজকের সমাবেশ প্রমাণ করে আরেকবার বিএনপিকে আমরা ঘরে তুলে দেব। দেশের জনগণ আবারও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে।”

সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, “বিএনপির কিচ্ছু করার ক্ষমতা নেই। আওয়ামী লীগকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা রাজপথের দল।”

তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর কখনও আসবে না, আসতে দেওয়া হবে না জানিয়ে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, “ওরা বলে নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে আসবে না। আগামী নির্বাচন এই নির্বাচন কমিশনের অধীনেই হবে। সেই সরকারের প্রধান হবেন শেখ হাসিনা।

“নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলে যারা দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করতে চায় তাদের মোকাবিলায় নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত থাকতে হবে।”

বিএনপিকে রাজপথে মোকাবিলা করতে নেতা কর্মীদের শপথ নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, “আগস্ট মাসের পরে সেপ্টেম্বরে মাস থেকে সারা বাংলাদেশ থেকে জামায়াত, শিবির ও বিএনপিকে বঙ্গোপসাগরে ফেলব।”

বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকতে হাওয়া ভবন বানিয়ে দেশের সম্পদ লুট করেছে উল্লেখ করে দলের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, “আজকে আওয়ামী লীগের লাখ লাখ নেতা-কর্মী মাঠে নেমেছে। আমাদের লক্ষ্য একটাই, যেকোনো মূল্যে সব চক্রান্ত প্রতিরোধ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশকে উন্নয়ন অগ্রগতিতে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।”

আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা মাঠে নেমেছে জানিয়ে আরেক যুগ্মসাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, “পেট্রল বোমা বাহিনীকে (বিএনপি) আমরা জনগণকে সঙ্গে এ রাজপথ থেকে তাড়িয়ে দেব। আমাদের নেতা কর্মীরা বেঁচে থাকতে জনগণকে আবারও পেট্রল বোমা কেউ মারতে পারবে না।”

বিএনপি ‘বর্ষাকালের প্রথম বৃষ্টির পানির পুঁটি ও মলা মাছের মতো লাফাচ্ছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তাদের হাঁকডাক ওই বর্ষাকালের ব্যাঙের ডাকের মতো। জনগণের সহায় সম্পত্তি নষ্ট করার সুযোগ তাদের দেব না।”

আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার আয়োজনে এ সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, কামরুল ইসলাম, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান এবং সমাপনী বক্তব্য রাখেন দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী।

সভা শেষে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে প্রতিবাদ মিছিল হয়। মিছিলটি মৎস্য ভবন, প্রেসক্লাব, পল্টন, গুলিস্তান হয়ে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

আওয়ামী লীগের সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের কারণে রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।

বিক্ষোভ মিছিল বিকাল ৩টায় শুরুর কথা থাকলেও দুপুর ১২টার পরপরই ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগ, কৃষক লীগসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা শাহবাগ, দোয়েল চত্তর, শহীদ মিনার, মৎস্যভবন, কাকরাইল ও জিরো পয়েন্ট এলাকায় জড়ো হতে থাকে।

জনসমাগমের কারণে দুপুর ২টার পর গুলিস্থান থেকে মৎস্যভবন পর্যন্ত এবং সাইন্সল্যাব থেকে শাহবাগ হয়ে গুলিস্তান পর্যন্ত রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এছাড়া গুলিস্তান-পল্টন-কাকরাইল-শাহবাগ হয়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার রাস্তায় গাড়ি দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকতে দেখা যায়। যার প্রভাব পুরো রাজধানীতেই পড়েছে।