Published : 06 Aug 2024, 08:53 PM
রাজধানীর বড় মগবাজারে প্রায় ১৩ বছর ধরে বন্ধ কেন্দ্রীয় কার্যালয় খুলে সেখানে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে জামায়াতে ইসলামীর আমীর দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ‘দুর্বৃত্তপনা’ কঠোর হস্তে দমন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘‘আজকে আমরা জাতিকে আহ্বান জানাব, যেখানেই এই দুর্বৃত্তপনা দেখবেন সেখানে কঠোর হস্তে ওদের দমন করবেন।
”আমরা কথা দিচ্ছি বিদ্যমান প্রশাসনকে আমরা এই বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত। ইতিমধ্যে সারাদেশে দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দকে নির্দেশ দিয়েছি তারা যেন প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করে আমাদের এই সদিচ্ছা ও অঙ্গীকারের কথা জনগণকে পৌঁছে দেবে।”
মঙ্গলবার সকালে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান নেতাকর্মীদের নিয়ে কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। দুপুরে তারা কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। পরে সংবাদ সম্মেলনে আসেন আমির।
এসময় কার্যালয়ের বাইরে শতাধিক নেতাকর্মী অবস্থান করছিল। রাজধানীর বড় মগবাজার রেল গেইটের কাছে জামায়াতে ইসলামীর এ কেন্দ্রীয় কার্যালয়।
প্রবল গণ আন্দোলন আর সহিংসতার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে সোমবার দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার দ্বাদশ সংসদ বিলুপ্ত করার ঘোষণা দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গড়ে ওঠা আন্দোলন সরকার পতনের এক দফায় রূপ নেওয়ার পরের কয়েকদিনের নাটকীয় ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে।
এমন প্রেক্ষাপটে সংবাদ সম্মেলনে এসে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেন, ‘‘আমরা ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর এখান (কেন্দ্রীয় কার্যালয়) থেকে বের হয়েছিলাম। এখন ঢুকলাম।”
অফিস খোলার মধ্য দিয়ে দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরুর বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘আমরা বলি যে, আমাদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, অধিকার দেওয়া হচ্ছে না।
‘‘আমরা কখনও কোনঠাসা ছিলাম না। আমরা আপনাদের পাশে ছিলাম, আপনাদের সাথে ছিলাম।”
সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের আমির বলেন, ‘‘এই ধরনের একটি পরিবর্তনের উষা লগ্নে কিছু সুবিধাবাদী দুর্বৃত্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় শহরে এবং গ্রামাঞ্চলেও সরকারি স্থাপনা, প্রতিপক্ষের বাড়ি-ঘর এবং ক্ষেত্র বিশেষে কিছু কিছু জায়গায় বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আঘাত হানেছে, কোথাও ভাংচুর করা হয়েছে, কোথাও লুটপাট হয়েছে, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
“এই কাজগুলো যাদের অন্তরে বিবেক আছে, মানবতা আছে তারা এগুলো করতে পারে না। এজন্য যে দুর্বৃত্তরা এই কাজ করছে তাদের ব্যাপারে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে দফায় দফায় কঠোর নিন্দা জ্ঞাপন করেছি।”
বিভিন্ন জায়গায় দলের কর্মীদের ‘পাহারাদারের’ ভূমিকা পালন করার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘যদি গোটা সমাজ এবং প্রশাসন আমরা একত্রে কাজ করতে পারি তাহলে অবশ্যই এই দুর্বৃত্তরা এই দুঃসাহস দেখাবে না। যারা এই ধ্বংসাত্মক কাজগুলো করেছে তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে।
”দেশে যখন স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসবে তখন তাদেরকে ছাড় দেওয়া ঠিক হবে না।”
রেমিট্যান্স পাঠানো প্রসঙ্গে শফিকুর বলেন, ”অস্থিরতার কারণে, মানুষের কষ্টের কারণে প্রবাসে যে ভাইয়েরা ছিলেন তারা অনেকেই রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন। কেউ কেউ ক্যাম্পেইনও করেছেন। এ ব্যাপারে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে কোনো কথা বলিনি। কারণ দেশ আমাদের সবার, দেশ বেঁচে থাকলে আমরা বেঁচে থাকব। দেশের অস্তিত্বই যদি না থাকে আমরা বাঁচব কী করে?”
কোটা আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষজনের হতাহতদের ‘শহীদ’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন জামায়াতের আমির।
আওয়ামী লীগের ‘ফ্যাসিবাদী’ সরকারের পতনে বিজয়ের জন্য দেশবাসীসহ শিক্ষার্থীদের মোবারকবাদ জানান তিনি।
দ্রুত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবি তুলে ধরে তিনি রাষ্ট্রপতিকে জনগণের সরকার ফিরিয়ে আনার পদ্ধতি শুরু করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘‘এই সরকারও (অন্তর্বর্তীকালীন) দীর্ঘায়িত না হয়ে স্বল্পতম সময়ের ভেতরে একটি অর্থবহ জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সত্যিকার অর্থে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় যাতে এগিয়ে আসে সেই আহ্বান আমরা জানাচ্ছি।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত আন্দোলনের পক্ষ থেকে নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনুসের নাম প্রস্তাবের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ছাত্ররা করতেই পারে। কারণ এই আন্দোলন তাদের চেষ্টার ফসল। তাদের আমরা সম্মান করি, তাদেরকে আমরা গভীর শ্রদ্ধার সাথে ধারণ করি।
”এখানে অনেক রাজনৈতিক দল আছে, স্টেকহোল্ডার সিভিল সোসাইটি আছে। রাষ্ট্রপতি তাদের কথাও শুনবেন বলে আমাদেরকে বলছেন।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সরকার পতনের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, ‘‘দেখুন নিবন্ধনের ব্যাপারটা আদালতের বিষয়। আদালতে অ্যাপিলেট ডিভিশনে যখন দেশে একটা ডেডলক চলছিল সেইসময়ে হেয়ারিং হওয়ার কথা ছিল আমাদের যিনি বিজ্ঞ সিনিয়র আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী (প্রয়াত) তিনি সময় চেয়েছিলেন। আদালত তাকে সময় দেয়নি। যার কারণে আদালত ডিফল্ট করে দিয়েছিল। এটা আইনের সুযোগ আছে।”
এখন জাতিকে আগে কীভাবে সুস্থ পরিবেশের দিকে নিয়ে আসা যাবে সেটাই মূল প্রসঙ্গ বলে তুলে ধরে তিনি বলেন, “আরেকটা প্রশ্ন করেছেন যে, আমাদেরকে বেআইনি ঘোষণা করেছে। আসলে সরকারই তো ইতিমধ্যে … আমি আর বললাম না।”
জামায়াতের আমির বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান।
সংবাদ সম্মেলনে দলের নায়েবে আমির মজিবুর রহমান, আনম শামসুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মা‘ছুম, সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা হামিদুর রহমান আজাদ, আবদুল হালিম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।