“আমরা চাই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তন হোক। আমরা যৌক্তিক সময়ও দিতে চাই”, বলেন বিএনপি নেতা।
Published : 15 Aug 2024, 09:41 PM
মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার যতক্ষণ গণতন্ত্রের পক্ষে থাকবে বিএনপি ততক্ষণই তাদেরকে সমর্থন দিয়ে যাবে বলে জানিয়ে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার বিকালে নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এক অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি এই মন্তব্য করেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনা ও তার সরকারে থাকা ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে বিএনপির এই অবস্থান কর্মসূচিতে কাকরাইল থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিত হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, “এটা ছাত্র-জনতার সরকার, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল। আমরা তাদেরকে সহযোগিতা দেব যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা গণতন্ত্রের পক্ষে থাকবে, গণতান্ত্রিকভাবে তারা ক্ষমতা হস্তান্তর করবে।”
গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ-জামান ও পরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করে এসে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছিলেন ফখরুল। দুই দিন পর নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ থেকেও দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের দাবি করা হয়।
তবে ৮ অগাস্ট শপথ নেওয়া ড. ইউনূস সংবিধানের বিধান অনুযায়ী ৯০ দিনে নির্বাচন দেওয়ার বিষয়ে কোনো কথা বলছে না। সংস্কারের কথা বলছেন উপদেষ্টা। প্রাথমিকভাবে বেছে নেওয়া ১৭ জনের সরকারে সদস্য সংখ্যা আরও পাঁচ জন বাড়তে যাচ্ছে।
বিএনপিও দৃশ্যত ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের দাবি থেকে সরে এসেছে। তারা এই সরকারকে আরও সময় দেওয়ার কথা বলছে, তবে কীভাবে সংবিধানে থাকা ৯০ দিনের সময়সীমার বিষয়টি অগ্রাহ্য করা হবে, সেই ব্যাখ্যা কেউ দিচ্ছে না।
ফখরুল বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার একটু স্বস্তি ফিরিয়ে এনে একটা সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন দেবে। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ তাদের ভোট দিয়ে একটি নির্বাচিত সরকার গঠন করবে, আমরা সেটাই চাই।
“আমরা চাই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তন হোক। আমরা যৌক্তিক সময়ও দিতে চাই।”
গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নাই মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এই গণতন্ত্রের জন্য আমরা লড়াই করছি। আমরা লড়াই করেছি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে, তারেক রহমানের নেতৃত্বে।”
খালেদা জিয়া মুক্ত হলেও তারেক রহমান সাহেব এখনো মুক্ত হননি জানিয়ে তিনি বলেন, “তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মিথ্যা মামলা আছে তা প্রত্যাহার করতে হবে, কোনো মামলা থাকবে না।”
‘ঝামেলা করলে পরিণতি শুভ হবে না’
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ আবার ‘ঝামেলা’ করলে পরিণতি শুভ হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ফখরুল।
তিনি বলেন, “আমি আওয়ামী লীগারদেরকে বলছি যে, এখনও সময় আছে, আপনারা আর ঝামেলা কইরেন না। কারণ, ঝামেলা করলে আপনারা টিকতে পারবেন না।”
সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের অভিযোগকে ‘ষড়যন্ত্র’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “তাদের (হিন্দু সম্প্রদায়) ক্ষেপিয়ে তাদেরকে দিয়ে আবার ঢাল বানিয়ে আরেকটা কৌশল আবিষ্কার করে কীভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করা যায়, সেই চেষ্টা সেই কৌশল, সেই ষড়যন্ত্র আওয়ামী লীগ করছে।
“তাদের মূল টার্গেট হচ্ছে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে আবার যদি ভারতের সাহায্য নিয়ে ঢুকে পড়া যায়।”
১৯৫২ সাল, ১৯৬৯ সাল, ১৯৭০ সাল ১৯৯০ ও চলতি বছরের আন্দোলনের কথা তুলে ধরে বিএনপি নেতা বলেন, “দেখেছেন দেশের মানুষ কীভাবে জেগে উঠতে পারে, ফুঁসে উঠতে পারে, গর্জে উঠতে পারে, কোনো শক্তি তাদের কাছে দাঁড়াতে পারে না। সেটাই প্রমাণিত হয়েছে এবারও।”
আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাদেরকে ‘ষড়যন্ত্র’ না করে আত্মসর্পণ করার পরামর্শ দিয়ে ফখরুল বলেন, “যারা এখনও বাইরে আছেন, এদিক-ওদিক করছেন, তারা দেখেছেন গতকাল প্রবল প্রতাপশালী আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, প্রবল প্রতাপশালী উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে কী অবস্থায় নিয়ে গেছে কোর্টে।”
বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বার্ষিকীতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা জানাতে যাওয়া মানুষদের ওপর হামলা নিয়েও কথা বলেন বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, “চেষ্টা করেছিলেন যে আপনারা যাবেন, ৩২ নং এ গিয়ে ফুল দেবেন। কারও তো আপত্তি ছিল না।
“কিন্তু ছাত্ররা তা হতে দেয়নি, হতে দেয়নি কেন? এই মানুষটাকে (শেখ হাসিনা) কেউ দেখতে চায় না। সারা বাংলাদেশে যত আওয়ামী লীগার ছিল, তারা ক্ষুদে হাসিনা তৈরি হয়েছে, সারাদেশে অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে তারা।”
‘আন্দোলন এখনও শেষ হয়নি’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “অনেকে দেখি এত আনন্দে আছেন। তাদেরকে বলি, আন্দোলন শেষ হয়ে যায় নাই।
“এই দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, এ দেশের গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আমরা ১৭ বছর আন্দোলন করেছি। মনে রাখবেন আমাদের আরও কিছুদিন পরিশ্রম করতে হবে, কষ্ট করতে হবে, দলকে সুসংগঠিত ও সুশৃঙ্খল রাখবেন।”
বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর পরিচালনায় এই কর্মসূচিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, মহানগর দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, যুব দলের নুরুল ইসলাম নয়ন, কৃষক দলের শহীদুল ইসলাম বাবুল, সাবেক ছাত্রদল নেতা হাবিবুর রশীদ হাবিব ফজলুর রহমান খোকনও অংশ নেন।