“অধিকাংশ মানুষের সামান্য প্রয়োজন মেটানোই যেন দুঃস্বপ্ন,” বলেন তিনি।
Published : 09 Apr 2024, 08:51 PM
ঈদের আনন্দ উদযাপনের এ সময়ে মধ্যবিত্ত ‘মুখ লুকিয়ে কাঁদছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
মঙ্গলবার দুপুরে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
তার অভিযোগ, “এই বছরেও জনগণের ভোটের অধিকার, গণতন্ত্র কেড়ে নেওয়ায় জনজীবনের এই উৎসব ম্লান হয়ে হয়ে গেছে। ডামি সরকারের রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি হরিলুট আর মহাদুর্নীতির কারণেই মানুষের শেষ হাসিটুকুও বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
‘‘দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতির কষাঘাতে জনজীবনে নিম্ন আয়ের মানুষের আর্তি শোনা যাচ্ছে। ঈদে আনন্দ উদযাপনের বিপরীতে মুখ লুকিয়ে কাঁদছেন মধ্যবিত্ত মানুষেরা। সমাজে তৈরি হয়েছে ধনী ও গরীবের বিশাল ব্যবধান। অধিকাংশ মানুষের সামান্য প্রয়োজন মিটানোই যেন দুঃস্বপ্ন।“
ঈদযাত্রায় ঘরমুখী মানুষের দুর্ভোগ, শ্রমিকদের বেতন-বোনাস না পাওয়া এবং বিরোধী নেতাকর্মীদের কারা নির্যাতনের বিষয়টিও তুলে ধরেন বিএনপির এই নেতা।
তার ভাষ্য, ‘‘ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় বাসের টিকিটের দাম আকাশছোঁয়া। বাস পরিবহন খাত আপাদমস্তক অনিয়ম দুর্নীতির কারখানা। ঈদ উপলক্ষে চলছে সড়কে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি। শ্রমিকলীগ-ছাত্রলীগের কালোবাজারি টিকিটের ব্যবসা নামে চলছে লুটতরাজ। ঈদ যাত্রায় এখন ব্ল্যাক টিকিটের চড়া দাম। জীবনের প্রতিশব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভোগান্তি আর হয়রানি।
‘‘অথচ সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলছেন, ‘সড়ক-মহাসড়কে কোনো যানজট বা হয়রানি নেই। মানুষ নির্বিঘ্নে বাড়ি যেতে পারছে।’ এ যেন ডামি দায়িত্বশীলের মুখে দায়িত্বজ্ঞানহীন তামাশার মন্তব্য।“
তিনি বলেন, ‘‘বিমানের ভাড়া কল্পনাতীত। ট্রেনে টিকিট পাচ্ছে না মানুষ। ট্রেনের টিকিট কাটার প্রক্রিয়াকে দিন দিন জটিলতর করা হচ্ছে। এতে ধীরে ধীরে এলিট শ্রেণির বাহনে পরিণত হচ্ছে রেলওয়ে। যারা তুলনামুলকভাবে পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক মানুষ, তারা আসলে অনলাইনের এই জটিল ব্যবস্থা বুঝতে সক্ষম নয়।“
রিজভী বলেন, ‘‘তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ৬০ শতাংশ কারখানার শ্রমিকেরা গত মার্চ মাসের বেতন গতকাল সোমবার বিকাল পর্যন্ত পাননি। ঈদের উৎসব ভাতা বা বোনাস পাননি ১৪ শতাংশ কারখানার শ্রমিক। শ্রমিকরা বেতন না পেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে। ওদের ঈদের আনন্দ চোখের পানিতে ভাসছে।”
বিরোধীদের ওপর সরকারের ‘চরম দমন-নির্যাতন’ অব্যাহত অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘‘প্রতিদিন আমাদের কেউ না কেউ হত্যা, না হয় গুম, না হয় জেলে বন্দি করা হচ্ছে, না হয় মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পযার্য়ের নেতাদের সারাদিন ধরে প্রায় প্রতিদিন আদালতে সময় পার করতে হচ্ছে। ফলে অধিকাংশ মানুষের চাকুরি নেই, বন্ধ হয়ে গেছে ব্যবসা। ১ লাখ ৫০ হাজারের ওপরে মিথ্যা মামলায় প্রায় ৫০ লাখ নেতাকর্মীর মধ্যে কেউ কারাগারে কেউ মানবেতর অবস্থায় ঘরছাড়া, বাড়িছাড়া হয়ে জীবনযাপন করছে।
“আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি, সীমান্ত অরক্ষিত, ভিন্ন রাষ্ট্রের সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশকে অভয়ারণ্য মনে করে। তাদের দ্বারা ব্যাংক লুট, থানা আক্রমণ এখন বাংলাদেশে নিত্যদিনের ছবি।”
ছয় বছর ধরে বন্দি রেখে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে তার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী।
দেশজুড়ে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সংকট চরমে ওঠার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘শুধু রাজধানীতেই ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা লোডশেডিং, আর গ্রামে-গঞ্জে ১৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। তাহলে বিদুৎ খাতের লাখ লাখ কোটি টাকা গেল কোথায়?”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালামসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।