পুরান ঢাকার বেশ কিছু এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৬ আসনে এবার ১৫ বছর পর নৌকার প্রার্থী ভোটে লড়ছেন। তবে কার সঙ্গে লড়ছেন? সেটা যেন অস্পষ্ট।
Published : 28 Dec 2023, 10:43 PM
বঙ্গবাজার পার হয়ে ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের পাশ দিয়ে যেতেই সরু গলিটা ছেয়ে গেছে নির্বাচনি পোস্টারে। তবে সব পোস্টার কেবল একজন প্রার্থীরই। তিনি মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। ঢাকা সিটির প্রথম নির্বাচিত মেয়র প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফের ছেলে তিনি। পরে নিজেও মেয়র হয়েছিলেন খোকন।
এবারের সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেয়ে লড়ছেন তিনি। তবে কার সঙ্গে লড়ছেন? সেটা যেন অস্পষ্ট। কারণ বিএনপির বর্জনের এ ভোটে এ আসনে তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই বলেই মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
পুরনো ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকা নিয়ে গঠিত এ আসনে সরেজমিন ঘুরে কোথাও কোথাও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অল্পস্বল্প পোস্টার চোখে পড়েছে। বংশাল রোড দিয়ে থানার কাছাকাছি যেতে মূল সড়কে জাতীয় পার্টি-জেপির সৈয়দ নাজমুল হুদা (বাই সাইকেল) এবং ইসলামী ঐক্যজোটের রবিউল আলম মজুমদারের (মিনার) কিছু পোস্টার দেখা যায়। তবে তাদের কথা ভোটারদেরও জানা নেই।
এ চিত্রই বলে দেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাঈদ খোকন অনেকটাই অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তবে ভোটের মাঠে চূড়ান্ত বিজয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি নিজেকে নির্ভার ভাবতে চান না। প্রচারে নেমেছেন, সমর্থকদেরও সজাগ থাকার আহবান জানিয়েছেন।
স্লোগানে মুখর রূপলাল দাস লেইন
নৌকার প্রার্থী নিজেই জানালেন, সকাল থেকে রাত অবধি ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভোট চাইছেন তিনি। বক্তব্য দিচ্ছেন পথসভাসহ বিভিন্ন সামাজিক আয়োজনে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সূত্রাপুর এলাকায় গণসংযোগ করেন, আর বিকালে বক্তব্য দেন কাগজীটোলার রূপলাল দাস লেনের সমাবেশে।
দুপুর থেকে সাঈদ খোকনের সমাবেশকে ঘিরে মিছিলে প্রকম্পিত হয় পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের কাগজীটোলা এলাকা। বেলা আড়াইটায় বাহাদুর শাহ পার্ক মসজিদের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে সাঈদ খোকন সমাবেশে প্রবেশ করলে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
ব্যান্ড পার্টির বাদ্যের তালে স্লোগানে মুখর হয় রূপলাল দাস লেইন। সেখানে নৌকার সমর্থনে হয় সমাবেশ। এতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ এবং সংস্কৃতিকর্মীরাও অংশ নেন।
সমাবেশ নাচ পরিবেশন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন স্পন্দনের শিল্পীরা। পুরোটা সময় ব্যান্ড পার্টির বাদ্যের তালে পুরো এলাকায় বিরাজ করে উৎসবের আমেজ।
সমাবেশে সাঈদ খোকন বলেন, “এ সমাবেশ যেন জনসমুদ্রে রূপ নিয়েছে। আমরা ঢাকাবাসী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞ। আমরা বঙ্গবন্ধুর পথ ধরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছি।”
প্রতিদ্বন্দ্বীরা ‘অচেনা’, তবুও দুর্বল ভাবছেন না সাঈদ খোকন
বংশাল, কোতায়ালী, সূত্রাপূর, ওয়ারী ও গেন্ডারিয়া নিয়ে ঢাকা-৬ আসন। ২০০১ সালে আসনটি ছিল ঢাকা-৭। ২০০৮ সাল থেকে এ আসন পুর্নগঠন করে হয় ঢাকা-৬। ২০০৮ সালে এ আসনে জয়ী হন আওয়ামী লীগের মিজানুর রহমান খান। সেবার তিনি পরাজিত করেন সাদেক হোসেন খোকাকে।
সবশেষ দুই নির্বাচনে এ আসন জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ, যাতে জয়ী হন ফিরোজ রশীদ।
এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী দিয়েছে। অন্যদিকে নৌকার বিপরীতে ভোট করবেন না বলে সরে দাঁড়িয়েছেন ফিরোজ রশীদ।
সমাবেশে সাঈদ খোকন বলেন, “এ আসনে প্রায় ১৫ বছর নৌকা ছিল না। এবার জননেত্রী শেখ হাসিনা নৌকা দিয়েছেন। এজন্য তার প্রতি আমাদের ঢাকাবাসীর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই।”
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা দুর্বল হলেও তাদের দুর্বল ভাবছেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এ এলাকায় যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাদের অনেককেই আমরা হয়তো চিনি না। তবুও আমরা নির্বাচনে তাদের ছোট করে দেখতে চাই না। ৭ তারিখে ভোটের মাঠে, ভোটের যুদ্ধে নৌকার বিজয় নিশ্চিত না করা পর্যন্ত আমরা বসে থাকব না।”
সাঈদ খোকনের প্রতিদ্বন্দ্বীরা
ঢাকা ৬ আসনে এবার ভোটের মাঠে আরও আছেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবু হামিদুর রেজা খান ভাসানী (আম), জাতীয় পার্টি-জেপির সৈয়দ নাজমুল হুদা (বাই সাইকেল), গণফ্রন্টের আমিনুল ইসলাম সরকার (মাছ), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের আকতার হোসেন (ছড়ি), তৃণমূল বিএনপির কাজী সিরাজুল ইসলাম (সোনালী আঁশ), ইসলামী ঐক্যজোটের রবিউল আলম মজুমদার (মিনার)।
ভোটারদের কথা
কাগজিটোলার মোহিনী মোহন দাস লেইনের চা বিক্রেতা রাকিবের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। এলাকায় নির্বাচনের আমেজ কেমন, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, "এই এলাকায় তো সাঈদ খোকন ছাড়া তেমন কোনো প্রার্থী নাই। যারা আছে, তারা কেউ পাস করার মতো প্রার্থী না।"
পাশে থেকে ওমর শরীফ নামে একজন বলেন, "এবার তো নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী দেয় নাই। যদি সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন এই এলাকায় প্রার্থী হইতো, তাইলে নির্বাচন জমতো। এখন তো ভোট দেওয়ার মতো প্রার্থী একজনই। বাকি যারা আছে, তাদের তেমন কেউ চিনে না, তাদেরকে কেউ ভোট দিদে না।"
নদীর ওপারে কেরানীগঞ্জ থানার একটি গ্রামে থাকেন মোহাম্মদ জিল্লু। পুরান ঢাকায় রিকশা চালান তিনি। তার জন্মস্থান গাইবান্ধা হলেও কেরানীগঞ্জের ভোটার।
জিল্লু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "১৫ বছর আগে ফখরুদ্দীনের আমলে ভোটার হইছি। একবারই ভোট দিছিলাম। ওই সময় নৌকায় ভোট দিছিলাম।"
আপনি কি নৌকার সমর্থক? প্রশ্নে তিনি বলেন, "আমি লাঙল করি। ওই বছর তো লাঙল আর নৌকা একজোট আছিল। নসরুল হামিদ বিপু আমাদের এখানে এমপি হইছিল।"
ঢাকা ৬ আসনে কে পাস করবেন? জানতে চাইলে জিল্লু বলেন, "এখানে তো সাঈদ খোকনই পাস করবো। এবার ভোট দেওনের মতো প্রার্থীই তো নাই। ফিরোজ রশীদ থাকলে কিছু ভোট পাইত।"