”গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনব এই হোক আজকে মে দিবসে আমাদের অঙ্গীকার,” বলেন তিনি।
Published : 01 May 2024, 11:26 PM
শ্রমিকের অধিকার আদায়ে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে নামতে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার ঢাকায় মে দিবসের এক সমাবেশে সরকারকে উদ্দেশ্য করে তার অভিযোগ, “আজকে সমগ্র বাংলাদেশে এক লুটপাটের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে, ব্যাংকগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সমস্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে, সব ব্যবসা-বাণিজ্য কব্জা করেছে। এখন গ্রামের মধ্যে বিরোধী মত-পথের লোক আছে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সেগুলো গ্রাস করে ফেলেছে।“
এমন পরিস্থিতিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি আজকে এই মে দিবসে সকল রাজনৈতিক দল, মত-পথ-সংগঠন-ব্যক্তি বিশেষ করে শ্রমিক সংগঠনগুলোকে যে আপনারা সবাই ঐক্যবদ্ধ হউন। আপনাদের অধিকারগুলো ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলন-সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়েই আমরা আমাদের ঈপ্সিত লক্ষ্য জনগণের যে ভোটের অধিকার যে অধিকার ফিরিয়ে আনব, শ্রমিকদের অধিকার ফিরিয়ে আনব, গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনব এই হোক আজকে মে দিবসে আমাদের অঙ্গীকার।”
এদিন দুপুরে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির শ্রমিক সংগঠন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের উদ্যোগে মে দিবস উপলক্ষে এ সমাবেশ হয়।
‘মে দিবসের অঙ্গীকার রুখতে হবে স্বৈরাচার’ এ স্লোগানে তাপপ্রবাহের মধ্যেই দুপুর থেকে ঢাকার আশপাশের শিল্পাঞ্চলগুলো থেকে হাজারো শ্রমিক মাথায় লাল ফিতা বেঁধে লাল এবং দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে মিছিল সহকারে এ সমাবেশে যোগ দেয়। কাকরাইল নাইটিঙ্গেল রেস্তোরাঁর মোড় থেকে ফকিরেরপুল মোড় পর্যন্ত সড়কজুড়ে সমাবেশে ছিলেন শ্রমিকরা।
সমাবেশের পর বর্ণাঢ্য র্যালি বের করে শ্রমিক দল, সমাবেশস্থল থেকে ফকিরেরপুল পেরিয়ে আরামবাগের কাছে গিয়ে শেষ হয়।
দেশে ’এক দলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা’ সরকারের উদ্দেশ্যে বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘এদেশে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জোর পাঁয়তারা চলছে। এদের কৌশলটা হচ্ছে ভিন্ন। তারা আগের মত পার্লামেন্টে বিল পাস করে বাকশাল করতে চায় না। তারা গণতন্ত্রের একটা লেবাস রেখে দিয়ে, ছদ্মবেশ রেখে দিয়ে তারা গণতন্ত্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দিয়ে গণতন্ত্র দমন করে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়।”
চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সরকারের দমনপীড়নে বিএনপির নেতাকর্মীদের আত্মত্যাগ ও কারাবরণ, মামলা-মোকাদ্দমার পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি হচ্ছে সেই ফিনিক্স পাখির মতো সে সমস্ত ধ্বংসস্তূপ থেকে আবার জেগে উঠছে এবং জেগে উঠে আবার পাখা ছড়িয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম, স্বাধীনতা কথা, গণতন্ত্রের কথা সোচ্চার কণ্ঠে বলে।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘অনেকে বলে এটা বিএনপির সংগ্রাম। এটা বিএনপির সংগ্রাম নয়, এটা মানুষের অস্তিত্বের সংগ্রাম, তার যে অধিকার সেই অধিকার ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম। আমরা সেই অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি, আরো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত আছি।
”আমরা এমন এক সময় মে দিবস পালন করছি যখন বাংলাদেশের মেহনতি মানুষ তারা তাদের ন্যূনতম অধিকার থেকে বঞ্চিত, আমরা এমন এক সময় মে দিবস পালন করছি যখন গোটা দেশটা আমার মনে হয় যেন একটা দ্বৈত্য-দাণবের কবলে পড়ে সব কিছু তচনচ হয়ে গেছে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘আমার খুব দু:খ হয়, কষ্ট হয়, যখন আমরা দেখি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী তিনি বলেন, কি এমন ঘটল যে, বাংলাদেশে অতি বাম-অতি ডান একসাথে তারা আজকে এক সাথে অপেক্ষা করছে।
‘‘সমস্যাটা ওই জায়গাতে আপনারা বুঝতে পারেন না, কি ঘটেছে অতি বাম অতি ডান শুধু নয়, মধ্যপন্থি শুধু নয়, আজকে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ যে কোনোভাবে হোক তারা মনে করছে এই সরকার না সরলে তাদের ন্যূনতম যে অধিকার সেই অধিকার ফিরে আসবে না।”
বিকাল ৪টায় সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। সমাবেশের আগে জাসাসের শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক মঞ্জরুল ইসলাম মঞ্জুর যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও আবদুল মঈন খান, মহানগর বিএনপির আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় নেতা হুমায়ুন কবীর খান, ফিরোজ-উজ-জামান মামুনসহ শ্রমিক দলের নেতারা বক্তব্য দনে।
সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন মহানগর বিএনপির আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মীর সরাফত আলী সপু, আমিনুল হক, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, যুবদলের মোনায়েম মুন্না, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, তাঁতী দলের আবদুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের আব্দুর রহিম, ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন।