“নির্বাহী বিভাগ সরকারি পরিপত্রের পক্ষে আদালতে লড়াই করছে এবং যে দাবির প্রতি সরকার আন্তরিক, সেখানে আন্দোলনকে প্রলম্বিত করা এক ধরনের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ছাড়া কিছু না,” বলেন সাদ্দাম হোসেন।
Published : 11 Jul 2024, 04:04 PM
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে যারা আন্দোলন করছেন, তাদেরকে ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে এ আহ্বান জানান ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।
তিনি বলেন, “যেখানে ২০১৮ সালে জারি করা প্রজ্ঞাপন পুনর্বহাল হয়েছে, সেখানে আন্দোলনকে আরও বেশি টেনে-হিঁচড়ে লম্বা করার প্রচেষ্টা এবং বিচার বিভাগের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখিয়ে এক ধরনের মব জাস্টিসের মতো নির্বাহী বিভাগের প্রতি আদেশ জানানো কোনো সুচিন্তিত পরিকল্পনা নয়।”
এ আন্দোলনে কোনো প্রতিপক্ষ নেই মন্তব্য করে সাদ্দাম হোসেন বলেন, কোটা ব্যবস্থার যৌক্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক, যুগপোযোগী ও টেকসই সমাধান প্রত্যাশা করে ছাত্রলীগ।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার।
ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। গত ৫ জুন কোটা পুনর্বহাল করে রায় দেয় হাই কোর্ট।
ওই দিনই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেন চাকরিপ্রত্যাশী তরুণরা। এরপর ১ জুলাই থেকে তারা লাগাতার কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন। এরইমধ্যে বুধবার সব পক্ষকে ৪ সপ্তাহ স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
সাদ্দাম বলেন, “কনস্ট্রাকটিভ পলিসি অ্যাডভোকেসির মাধ্যমে যেটির সমাধান করা সম্ভব, সেটি মব জাস্টিসের মাধ্যমে সমাধান করা সুসংহত নয়। বাংলাদেশে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ ব্যবস্থা চাই, যেখানে আমাদের সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা রয়েছে, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে, নারীদের সরকারি চাকরিতে অংশগ্রহণ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্ব আছে কি না, তাদের মতামতের তোয়াক্কা না করে একতরফাভাবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত প্রদান করা ছাত্র সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে বলে আমরা মনে করি না।
“যে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সুচিন্তিত মতামত প্রয়োজন, বিচার বিভাগীয় পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন, সেখানে যারা তাড়াহুড়ো করে নিজেদের রায়; গুটি কয়েকের মতামত ছাত্র সমাজের মতামত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে- তাদের উদ্দেশ্য শুভ বলে আমরা মনে করি না।”
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে টানা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির মধ্যেই বুধবার সর্বোচ্চ আদালত কোটা নিয়ে স্থিতাবস্থা জারি করলেও সংসদে আইন পাস করে কোটাব্যবস্থার ‘যৌক্তিক’ সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।
তাদের ভাষ্য, শুধু পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ কোটা রেখে সরকারি চাকরির সকল গ্রেডে সকল ধরনের কোটা বাতিল করতে হবে। সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেলে তবেই তারা আন্দোলন থেকে সরবেন।
আন্দোলনের কারণে জনদুর্ভোগের কথা তুলে ধরে সাদ্দাম হোসেন বলেন, “গত কয়েক দিন ধরে ঢাকা শহরের নাগরিকরা দুর্বিষহ যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বয়স্ক মানুষদের চিকিৎসা নিতে বের হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীরা নির্ধারিত সময়ে অফিসে যেতে পারছেন না, অফিস শেষে সুনির্দিষ্ট সময়ে বাসায় ফিরবেন সেই সুযোগও হচ্ছে না এবং বর্তমানে ১৫ লাখের বেশি শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে, তারা নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে পারবে কি না, নির্দিষ্ট সময়ে ফিরতে পারবে কি না তা নিয়ে এক ধরনের শঙ্কার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
“এটি এমন একটি আন্দোলন, যেখানে কোনো প্রতিপক্ষ নেই। বিচার বিভাগ রায় দিয়েছে, নির্বাহী বিভাগ সরকারি পরিপত্রের পক্ষে আদালতে লড়াই করছে এবং যে দাবির প্রতি সরকার আন্তরিক, সেখানে আন্দোলনকে প্রলম্বিত করা এক ধরনের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ছাড়া কিছু না।”
‘কোটা না মেধা’ স্লোগানটি একটি ভিত্তিহীন, কল্পনাপ্রসূত এবং উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা বলে মন্তব্য করেন সাদ্দাম হোসেন।
তিনি বলেন, “যেখানে সরকারি চাকরির প্রতিটি পরীক্ষার্থীতেই একজন পরীক্ষার্থীকে প্রিলি, লিখিত ও ভাইভা প্রতিটি ধাপ পার হয়ে আসতে হয়; তাই ‘কোটা না মেধা’ স্লোগানটি একটি ভিত্তিহীন ও কল্পনাপ্রসূত এবং উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা। এখানে মেধার বিপরীতে মেধার প্রতিযোগিতায় সমাজের অনগ্রসর অংশকে কিছুটা এগিয়ে দেওয়া হয়, যা পুরোপুরি ন্যায় এবং সংবিধান সম্মত।
“বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় সমন্বিত উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য জেলা কোটার প্রচলন হলেও কোটা তুলে দেবার পর তা থেকে বঞ্চিত হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। সমাজের পিছিয়ে পরা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনগোষ্ঠীর জন্যও এটি সত্য। কোটা বাতিলের পর ৩৯তম বিসিএসে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ২৪ জন সুপারিশ পেয়েছেন এবং ৪০ ও ৪১ বিসিএসে সুপারিশ পেয়েছেন মাত্র দুইজন।”
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।