‘‘খন্দকার মোশতাক ছবি নামিয়েছিলেন, জিয়াউর রহমান তুলেছিলেন,” বলেন তিনি।
Published : 12 Nov 2024, 03:08 PM
রাষ্ট্রপতির বাসভবন বঙ্গভবন থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি নামিয়ে ফেলা ‘উচিত হয়নি’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, “সরকারের একজন উপদেষ্টা মাহফুজ সাহেব (মাহফুজ আলম) জানিয়েছেন যে, বঙ্গভবন থেকে শেখ মুজিবের ছবি নামানো হয়েছে। দেখুন, এটা করেছেন ঠিক আছে…কিন্তু সময় তো সবসময় এক রকম যায় না।
“যার যতটুকু ইতিহাসে অবস্থান আছে- সেটা থাক। আমি মনে করি, তার (শেখ মুজিবুর রহমান) ছবিটা নামিয়ে ফেলাটা উচিত হয়নি।”
মঙ্গলবার দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি এই প্রতিক্রিয়া জানান।
রোববার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নতুন তিন উপদেষ্টার শপথ অনুষ্ঠানের সময় বঙ্গভবনের দরবার হলে তাদের পেছনে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছিল। এ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমালোচনার মুখে তা নামিয়ে ফেলা হয়।
রিজভী বলেন, ‘‘খন্দকার মোশতাক ছবি নামিয়েছিলেন, জিয়াউর রহমান তুলেছিলেন। ইতিহাস আপনার নির্ধারণ করবে, বিচার করবে; সেই বিচারের ভার থাকল- জনগণ বিচার করবে। কিন্তু আমাদের জাতীয় জীবনে, জাতির ইতিহাসে যার যতটুকু অবদান- সেটা স্বীকার করা হোক।
“আমরা (বিএনপি) আওয়ামী লীগের মতো সংকীর্ণ নই। আমরা ছোট মনে পরিচয় দেব না। এজন্য বলছি, শেখ মুজিবের ছবি নামানোটা উচিত হয়নি।”
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও রক্তদান কর্মসূচি উদ্বোধন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। ঢাকাসহ ৮টি বিভাগে একযোগে এ ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প হচ্ছে।
বিএনপি নেতা রিজভী বলেন, “শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল কায়েম করেছিলেন, গণতন্ত্রের হত্যার ধারা তার হাত দিয়ে এসেছে। স্বাধীনতার পর আমরা দেখেছি- তাদের হাত দিয়ে হত্যা-গুম-খুন, আমরা দেখেছি ওই সময়ে রক্ষী বাহিনীর অত্যাচার…’৭৫ এর ১৫ অগাস্ট ঘটল। খন্দকার মোশতাক আহমেদ বঙ্গভবন থেকে শেখ মুজিবের ছবি নামিয়ে দিয়েছেন।
“জিয়াউর রহমান ৭ নভেম্বরে সিপাহী-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতার পাদপ্রদীপের আলোয় তিনি উদ্ভাসিত হলেন; শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কিন্তু শেখ মুজিবের ছবি বঙ্গভবনে আবার তিনি পুনঃস্থাপন করলেন। আমরা স্বাধীনতার পরে শেখ মুজিবুর রহমানের অনেক অন্যায়, অনেক দুঃশাসন দেখেছি- তার পরেও ছবিটা ছিল।”
স্বাধিকার আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘ষাটের দশকে তিনি (শেখ মুজিবুর রহমান) স্বাধিকার আন্দোলন করেছেন। মানুষ তাকে বিশ্বাস করেছিল, মানুষ ভোট দিয়েছিল; কিন্তু তার অঙ্গীকার তিনি রক্ষা করতে পারেননি।
“কিন্তু জাতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম যেটা, সেটাতে তার যে স্বাধিকারের আন্দোলন- এখানে কিছু ভূমিকা রেখেছিলেন। তবে স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি কোনো ভূমিকা রাখেননি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানই মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে জনগণকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার ডাক দিয়েছিলেন।”
রিজভী বলেন, ‘‘দেশের চিকিৎসা অঙ্গনে ভালো ডাক্তার থাকা সত্ত্বেও শেখ হাসিনার শাসনামলে বিভাজন করা হয়েছিল। বিএনপির সাথে যুক্ত থাকার কারণে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি অনেককে। রাজনৈতিক কারণে বঞ্চিত করা হয়েছে তাদের। একই পদে ১৫ থেকে ১৬ বছর চাকরি করেছেন তারা।
‘‘আজকে যারা সচিব-স্বাস্থ্যমন্ত্রী হয়েছেন, তাদের কোনো অবদান নেই। তারা গণতন্ত্রের জন্য মিছিলও করেননি, বরং ঠেকানোর চেষ্টা করেছেন। ড্যাবের কোনো ডাক্তার ন্যায্য কথা বলতে গেলে তারা বিরক্ত বোধ করেন। আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন যেসব ডাক্তাররা, আজ শেখ হাসিনা টিকে থাকলে তাদের চাকরি থাকত না।”
তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অনেক ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়েছে, মারা গেছে। চিকিৎসকরা রাতের পর রাত জেগে থেকে চিকিৎসা করেছে, ময়নাতদন্ত করেছে। আমরা হাসপাতাল ঘুরে-ঘুরে তাদেরকে দেখতে গিয়েছি।
‘‘আপনারা (উপদেষ্টা ও সচিব) ক’জন হাসপাতালে গিয়েছেন? আর আজকে অহংকার করেন, কথা বলতে চান না। আমরা আপনাদের চিনে রাখছি। আপনারা কারা? আপনারা শেখ হাসিনার দোসর।”
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক এ কে এম আজিজুল হক, অধ্যাপক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, স্বাস্থ্য সম্পাদক রফিকুল ইসলামসহ ড্যাবের নেতারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।