“এত ছাত্রলীগ জয়েন্ট সেক্রেটারি, ডিসি-এসপি হয় কী করে? এই প্রশ্ন ফাঁসের মধ্য দিয়ে এই সমস্ত কাজগুলো করা হয়েছে”, বলেন তিনি।
Published : 11 Jul 2024, 07:43 PM
শেখ হাসিনার আমলে ‘মেধাবীরা’ চাকরি পাচ্ছে না দাবি করে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দুই হাজার বছর পরও ‘কার্বন টেস্টে’ এ কথা জানবে সে সময়ের মানুষ।
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে ছাত্র আন্দোলন চলার মধ্যে বৃহস্পতিবার নয়া পল্টনে ছাত্রদলের সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন সংসদের বাইরে থাকা বিরোধী দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।
সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, সে প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি নেতা বলেন, “আজকে এক এক করে আপনি (শেখ হাসিনা) প্রতিযোগিতা, মেধা, ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট, এদের আপনি জাদুঘরে পাঠাচ্ছেন। দুই হাজার বছর পর তার বোনম্যারো টেস্ট করে দেখবে যে, শেখ হাসিনার আমলে ব্রিলিয়ান্ট ছাত্ররা চাকরি পেত না, রিকশা চালাত, সিএনজি চালাত। এখানে প্রতিযোগিতার কোনো দাম নেই।
“বাদবাকি কারা অফিসার হত, কারা ক্যাডার সার্ভিসে জায়গা পেত, কারা ডেপুটি সেক্রেটারি, ডিসি হত? প্রশ্নপত্র ফাঁস করার মধ্য দিয়ে… সেই প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা দিয়ে তারা ক্যাডার সার্ভিসে চান্স পেয়েছে।
“না হলে আমরা যেখানে শুনি, অমুক ডিসি অমুক বিশ্ববিদ্যালয়ের অমুক হলের সাধারণ সম্পাদক ছিল, অমুক এসপি আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ের... এত ছাত্রলীগ জয়েন্ট সেক্রেটারি, ডিসি-এসপি হয় কী করে? এই প্রশ্ন ফাঁসের মধ্য দিয়ে এই সমস্ত কাজগুলো করা হয়েছে।”
কোটা নিয়ে হাই কোর্টের রায় নিয়ে প্রশ্ন
২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্টের রায় নিয়েও প্রশ্ন তোলেন রিজভী। তিনি দাবি করেন, এমন রায় শেখ হাসিনার ‘চাওয়া ছিল’।
বিএনপি নেতা বলেন, “আপনি (শেখ হাসিনা) না পরিপত্র জারি করেছিলেন যে, কোটা থাকবে না। আবার আদালত থেকে এটা হল কেন?
“আমাদের কাছে তো মনে হয় যে, আওয়ামী লীগ সরকার, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যেন আদালতের একটা টেলিপ্যাথিক সম্পর্ক। অর্থাৎ শেখ হাসিনা যেটা ভাবেন আদালতের রায়ের মধ্য দিয়ে সেটা চলে আসে এই টেলিপ্যাথিক সস্পর্কটা হয় কী করে?”
কোটা সংস্কারের দাবি অন্যায় বা অন্যায্য কি না, সেই প্রশ্নও রাখেন রিজভী।
ছাত্রদল নেতাকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ
ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রদলের সহসভাপতি আতিকুর রহমান রাসেলের ‘নিখোঁজ হওয়ার’ বিষয়টি তুলে ধরতেই এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।
গত ১ জুলাই আজিমপুর এলাকা থেকে তাকে ‘সাদা পোশাকধারী’ সদস্যরা তুলে নেয় জানিয়ে বলা হয়, এরপর থেকে তিনি নিরুদ্দেশ।
রিজভী বলেন, “গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার বর্বর সংস্কৃতি তারা তৈরি করেছে। শুধুমাত্র শ্বেত পাথরের সিংহাসনকে রক্ষা করার জন্য আজকে তিনি গুম-খুনের পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন।
“অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে শেখ হাসিনার সব চাইতে বড় আতঙ্ক। এই আতঙ্ক থেকে নিজেকে নিরাপদ করার জন্য জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও গণতন্ত্রকামী নেতা-কর্মীদের তিনি গুম করাচ্ছে।”
রাসেল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আছে দাবি করে বিএনপি নেতা বলেন, “একটা টেনশন তৈরি করার জন্য, একটা শঙ্কা তৈরি করার জন্য,একটা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি করার জন্য বিএনপিসহ ‘গণতন্ত্রকামী’ ছাত্র সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে এটা পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে।
“সরকার আবারও পরিকল্পনামাফিক গুমের মত মানবতাবিরোধী, মনুষ্যত্বহীন এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছে।”
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম, সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান, ঢাকা কলেজ শাখার সভাপতি শাহীনুর রহমান শাহীন ও সাধারণ সম্পাদক জুলহাস মিয়া এবং নিখোঁজ রাসেলের বাবা আবুল হোসেন সরদারও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।