“নির্বাচন বর্জন করতে চেয়েছিলাম; কিন্তু বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার লোকজন আমাদের অফিস ঘেরাও করে রাখে,” বলেন তিনি।
Published : 10 Sep 2024, 08:44 PM
জাতীয় পার্টি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে না চাইলেও আওয়ামী লীগ বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার লোকজন দিয়ে ‘নির্বাচনে যেতে বাধ্য করেছিল’ বলে মন্তব্য করেছেন দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
তিনি বলেছেন, “২০২৪ সালের নির্বাচন আমরা বর্জন করতে চেয়েছিলাম। আমাদের বাধ্য করা হয় নির্বাচনে যেতে, এটা সবাই জানে। জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগ জোর করে নির্বাচনে নিয়েছে। এতে জাতীয় পার্টি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
“গত ১৭ ডিসেম্বর ছিল প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন, আমরা সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার লোকজন আমাদের অফিস ঘেরাও করে রাখে। আমাদের সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জন করতে দেয়নি। জোর করে নির্বাচনে নেওয়ার কারণে আমাদের রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচন বর্জন করতে পারিনি।”
তুমুল গণআন্দোলনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আট মাসের মাথায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পতন ও অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর মঙ্গলবার নির্বাচন ও জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ নিয়ে এ কথা বলেন জিএম কাদের।
বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩ সদর আসন থেকে তিনি এমপি হন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার অংশ হিসেবে এ নির্বাচনে ২৬টি আসনে ছাড় পেয়েছিল জাতীয় পার্টি।
ঢাকার বনানীতে জাপা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে জাতীয় মহিলা পার্টি নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় কাদের বলেন, “জাতীয় পার্টিকে সব সময় ব্ল্যাকমেইল করা হয়েছে। ১৯৯০ সালের পর থেকে জাতীয় পার্টি নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে। সেই ষড়যন্ত্র এখনও চলছে।
“২০১৪ সালের নির্বাচন জাতীয় পার্টি বর্জন করেছিল। ৩০০ আসনের মধ্যে আমিসহ ২৭০ জনের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করা হয়েছিল। তখন আওয়ামী লীগ আমাকে মন্ত্রিত্ব দিতে চেয়েছিল, আমি রাজি হইনি। আমরা জনগণের কোনো ক্ষতি করিনি, জনগণের উপকার করতে চেষ্টা করেছি। ২০১৪ সালে যখন আমরা নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তখন আরেকটা গ্রুপ বানিয়ে তাদের লাঙ্গল মার্কা দিয়ে নির্বাচনে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল সরকার।”
গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগের পতন না হলে জাতীয় পার্টি বিলীন হয়ে যেত মন্তব্য করে তিনি বলেন, “পতন না হলে কোনো দলই বাংলাদেশে থাকত না। শুধু আওয়ামী লীগ থাকত। আমরা কখনোই আওয়ামী লীগের দোসর ছিলাম না, আমরা সবসময় জনগণের দোসর ছিলাম।
“অনেকেই বলেন, আমরা নাকি আওয়ামী লীগকে দানব বানিয়েছি। আমাদের সমর্থন না পেলে আওয়ামী লীগ দানব হত না? আমরা বিএনপিকে সমর্থন দিলে বিএনপি দানব হত না? আওয়ামী লীগ সুযোগ পেয়েছে দানব হয়েছে। আমরা কোনো দলকে দানব বানাতে সমর্থন করিনি। কোনো দল যদি দানব হয়ে থাকে, তাহলে তারা নিজেদের দোষেই দানব হয়েছে। আবার কোনো দল সুযোগ পেলে যে দানব হবে না, তা কি বলা যায়?”
নির্বাচন নয়, বরং দুর্নীতি ও দুঃশাসনের কারণে আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জিএম কাদের।
তার ভাষ্য, “বৈষম্য সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগ শোষণ, লাঞ্ছনা ও বঞ্চনা করে মানুষকে বিরক্ত করেছিল। নির্বাচনে বৈধতার জন্য আওয়ামী লীগের পতন হয়নি। শেখ হাসিনার গোঁয়ার্তুমির জন্য আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে। মানুষ বিরক্ত হতে হতে এমন অবস্থায় গেল যে জীবন দিতে হলেও ফিরব না।
“আমি সংসদে বারবার বলেছি, দেশের মানুষ বৈষম্যের বিরুদ্ধে যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে পারে। মুঘল, ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলেও বৈষম্যের বিরুদ্ধে এ দেশের মানুষ জীবন দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে।”
আওয়ামী লীগের পতনে কোনো রাজনৈতিক দলের কৃতিত্ব নেই দাবি করে তিনি বলেন, “অনেক দল তো নির্বাচন বন্ধ করতে চেয়েছিল, পেরেছিল? অনেক দল নির্বাচনে আসতে চেয়েছিল, কিন্তু সরকারই তাদের নামে বিভিন্ন মামলা দিয়ে নির্বাচনে থেকে দূরে রেখেছিল।
“নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের পতন হয়নি, আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে তাদের দুর্নীতি ও দুঃশাসনের জন্য। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে, এই কৃতিত্ব ছাত্র-জনতার।”
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, প্রেসিডিয়াম সদস্য নাজমা আক্তার ও দলের কেন্দ্রীয় নেতারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।