“এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে যে সিদ্ধান্ত তা হচ্ছে- শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে আমরা যাব না,” বলেন তিনি।
Published : 15 Apr 2024, 05:11 PM
উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তে বিএনপি অটল রয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, “আমাদের আগের সিদ্ধান্তই (উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেওয়া) বহাল আছে।”
সোমবার রাজধানীর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দলের অবস্থান আবারও স্পষ্ট করেন রিজভী।
গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর উপজেলা নির্বাচনও বর্জনের ঘোষণা দিয়ে রেখেছিল বিএনপি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, “আমরা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনই তো সুষ্ঠু হবে না বলছি। এখন পর্যন্ত আমাদের যে সিদ্ধান্ত, তা হচ্ছে- শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে আমরা যাব না। কারণ তার অধীনে কোনো নির্বাচন কখনো অবাধ সুষ্ঠু হয় না।
“সেই সিদ্ধান্ত আমাদের আগেই নেওয়া আছে। বিএনপি এখনও সেই সিদ্ধান্তেই অটল রয়েছে।”
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ৮ মে প্রথম ধাপে ১৫২ উপজেলায় ভোট হবে। এসব উপজেলায় তিনটি পদে মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন সোমবার। এরপর বাছাই হবে ১৭ এপ্রিল। ২২ এপ্রিল প্রার্থিতা প্রত্যাহার এবং ২৩ এপ্রিল প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। প্রথম পর্বের ভোট হবে ৮ মে।
দ্বিতীয় ধাপে ২৩ মে, তৃতীয় ধাপে ২৯ মে এবং চতুর্থ ধাপে ৫ জুন ভোট হবে।
‘দেশ শৃঙ্খলে বন্দি’
সরকারের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, “আমাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি সব কিছু ওরা (সরকার) ধ্বংস করে দিয়েছে। এমনকি কোথায় আমাদের স্বাধীনতা? একই দিনে ভারতের বোম্বে যে সিনেমা রিলিজ হয়, সেটা ঢাকাতেও রিলিজ হয়, এটা কি স্বাধীনতার নমুনা?
“ওবায়দুল কাদের সাহেবরা স্বাধীনতার কথা বলেন। আপনারা ক্ষমতায় আসার পর থেকে মনে হয়েছে যে, আমরা বোধহয় একটা পরাধীন দেশে বাস করছি, আমরা পরনির্ভরশীল একটা দেশে বাস করছি।”
‘বাঙালি জাতি সত্তাকে যারা অস্বীকার করে, বাঙালি সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধকে তারা অস্বীকার করে’–আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, “বাঙালি জাতি সত্তা বলতে আপনি কি বোঝাচ্ছেন। বাঙালি বাংলাদেশ ছাড়াও পার্শ্বর্বর্তী দেশে ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গে আছে। তারা কি মুক্তিযুদ্ধ করেছে? অন্যান্য দেশে যে বাঙালিরা বসবাস করেন, তারা তো মুক্তিযুদ্ধ করেনি, তারা তো ভাষা আন্দোলন, রাজনৈতিক সংগ্রাম করেনি। তাহলে আপনি (ওবায়দুল কাদের) কি বোঝাতে চাচ্ছেন?”
এই বিএনপি নেতা বলেন, “আমাদের জাতি সত্তার মধ্যে যে বাংলা ভাষা, আমরা সেটাকেই আপহোল্ড করব। আমাদের এই অঞ্চলের মধ্যে দীর্ঘদিনের যে সাংস্কৃতিক ধারা, আমরা সেটাকে লালন করি। আপনি তো বিভ্রান্তি তৈরি করছেন ওবায়দুল কাদের সাহেব। আপনি বাংলাদেশের মানুষের বাংলা ভাষা, কৃষ্টি-কালচার গুলিযে ফেলছেন। আপনি বির্তক তৈরি করার জন্য এই কথাগুলো বলছেন।”
রিজভীর তার দলের অবস্থান তুলে ধরে বলেন, “আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিএনপি বাংলাদেশে বিশ্বাস করে, বিএনপি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করে। পাসপোর্টের মধ্যে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ... এটা রাখা হয়েছে।”
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, “ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, তলে তলে আমরা আতাঁত করছি, ওমুক করছি। এই তলে তলের মধ্যে তাদের (আওয়ামী লীগের) অন্য উদ্দেশ্য আছে। ওবায়দুল কাদের সাহেবদের বক্তব্য উদ্দেশ্যেমূলক, বিভ্রান্তিকর, ইতিহাসবিরোধী, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিরোধী, দেশের গণতন্ত্র বিরোধী।”
বিএনপি যুব বিষয়ক সহসম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, ঢাকার সাবেক কমিশনার আনোয়ার পারভেজ বাদল, বিএনপি নেতা সাঈদ হোসেন সোহেল আদালতে আত্মসমর্পন করার পর তাদের জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নিন্দা জানান রিজভী।
তিনি বলেন, “সরকারের নানা ধরনের জুলুম নিপীড়নের যে নকশা, সেই নকশা অনুযায়ী তাদেরকে কারা অন্তরীণ করা হয়েছে।”
অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, আবদুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম ভুঁইয়া, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, স্বাস্থ্য বিষয়ক সস্পাদক রফিকুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।