বিএনপি নয়া পল্টন নিয়ে অনড় অবস্থান নেওয়ার আগে জনসভার বিকল্প স্থান নির্ধারণে নমনীয় ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
Published : 26 Oct 2023, 03:31 PM
বিএনপি শনিবারের সমাবেশ নয়া পল্টনের বদলে অন্য কোথাও সরিয়ে নিতে রাজি না হওয়ায় আওয়ামী লীগও বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করতে অনড় অবস্থান নিয়েছে।
জমায়েতের দুই দিন আগে দলের এই সিদ্ধান্তের কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন ক্ষমতাসীন দলের ঢাকা দক্ষিণ কমিটির দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “অন্য কোনো ভেন্যুতে নয়, আমরা বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেইটেই শান্তি সমাবেশ করব, এই নির্দেশনাই আমরা পেয়েছি।"
বিকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, “বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট, অনলি ওয়ান ভেন্যু, আই মেনশন, আর দ্বিতীয় কোন কথা নয়। যেটা বলেছি সেটাই।”
সরকার পতন ও নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে বিএনপির কোনো বড় কর্মসূচি থাকলে একই দিন রাজপথে কর্মসূচি দিচ্ছে আওয়ামী লীগও।
এই ধারাবাহিকতায় বিএনপি ২৮ অক্টোবর ঢাকায় ‘মহাসমাবেশের’ ডাক দিলে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকেও জমায়েতের ঘোষণা দেওয়া হয়।
বিএনপি নয়া পল্টনে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে গত ২১ অক্টোবর ঢাকা মহানগর পুলিশকে চিঠি দেওয়ার আগের দিন চিঠি দেয় আওয়ামী লীগ। তারা বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে জমায়েতের কথা জানায়।
গত ১৮ অক্টোবরও দুই দল এই দুটি এলাকাতেই সমাবেশ করেছিল।
সেদিন বিএনপির সমাবেশ থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আগামী ২৮ তারিখ শনিবার আমরা ঢাকায় মহাসমাবেশ করব। এই মহাসমাবেশ থেকে আমাদের মহাযাত্রা শুরু হবে। ইনশাআল্লাহ তারপরে সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা আর থেমে থাকব না।“
২২ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বলেন, "২৮ তারিখ আমাদেরও কর্মসূচি আছে, এদিন ‘মহাযাত্রা’ আমাদেরও আছে। চট্টগ্রাম কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেলের মহাযাত্রা শুরু হবে। বিকেলে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে জনতার ঢল নামবে।"
একই দিন দেড় কিলোমিটারের ব্যবধানে দুই প্রধান দলের সমাবেশকে ঘিরে রাজনীতিতে উত্তাপের মধ্যে বুধবার ঢাকা মহানগর পুলিশ তাদেরকে চিঠি দিয়ে দুটি বিকল্প স্থানের প্রস্তাব দিতে বলে।
তবে বিএনপির পক্ষ থেকে পাল্টা সমাবেশে জানানো হয়, তাদের সব প্রস্তুতি শেষ, এখন সমাবেশের স্থল পাল্টানো সম্ভব নয়।
বিএনপি তাদের এই অবস্থান স্পষ্ট করার আগে আওয়ামী লীগের অবস্থান ছিল নমনীয়।
ডিএমপির চিঠি পাওয়ার পর রিয়াজ উদ্দিন সকালে বলেছিলেন, “গতকাল পুলিশের পক্ষ থেকে আরও দুটি ভেন্যুর নাম দেয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। কোথায় দেব (বিকল্প স্থান) তা কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করার মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে। আজকেই তাদের (পুলিশ) চিঠির জবাব দেওয়া হবে।”
পুলিশকে যা জানাল আওয়ামী লীগ
পরে পল্টন থানার ওসিকে দেওয়া চিঠিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়: “২৮ অক্টোবর শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আয়োজনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি (মঞ্চ নির্মাণ ও প্রচার প্রচারণার কার্যক্রম) ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এমতাবস্থায় স্বল্প সময়ের মধ্যে অন্য কোনো ভেন্যুতে নতুনভাবে সমাবেশের প্রস্তুতি গ্রহণ করা দুরূহ ব্যাপার।”
বুধবার সমাবেশের স্থান পরিবর্তনের বিষয়ে ডিএমপির সেই চিঠিতে আর যেসব বিষয়ে প্রশ্ন রাখা হয়, সেগুলোর জবাবে আওয়ামী লীগ জানায়: ১. তাদের সমাবেশ শুরু হবে সকাল ১০টায়, চলবে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত; ২. সমাবেশে জনসমাগম হবে দুই লাখ, ৩. সমাবেশটি বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট থেকে পল্টন মোড়, জিপিও মোড়, শিক্ষা ভবন, গোলাপ শাহ মাজার, নগর ভবন, নবাবপুর রোড, মহানগর নাট্যমঞ্চ সড়ক, দৈনিক বাংলা মোড় ও মতিঝিল সড়ক এবং স্টেডিয়াম সড়ক পর্যন্ত বিস্তৃত হবে; ৪. সমাবেশের প্রচারের জন্য এসব এলাকায় মাইক লাগানো হবে; ৫. সমাবেশে আওয়ামী লীগ এবং ভাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মী, সমর্থক, নারী সংগঠক, তরুণ প্রজন্ম ও সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেবে এবং ৬. সমাবেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হবে।