অপরাধ ও অপপ্রচারের সঙ্গে সাংবাদিকতাকে না মেলানোর আহ্বান জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) ইফতার ও মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, "সাংবাদিকরা সমাজের অনুন্মোচিত বিষয় তুলে আনে, সমাজের তৃতীয় নয়ন খুলে দেয়। সাংবাদিকতা একটি মহৎ পেশা। অপরাধ ও অপপ্রচারের সঙ্গে সাংবাদিকতাকে মেলাবেন না।"
দৈনিক প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, "স্বাধীনতা দিবসের দিন জাতীয় স্মৃতিসৌধের সামনে একটি ১০ বছরের ছেলেকে ১০ টাকা দিয়ে ফুসলিয়ে তাকে দিয়ে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে কথা বলানোর চেষ্টা এবং সে না বললেও তার বক্তব্য হিসেবে সেটি প্রচার করা শুধু বাংলাদেশের সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতার পরিপন্থি নয়, সারাবিশ্বে যে সাংবাদিকতার নিয়ম-নীতি রয়েছে, সেগুলোরও পরিপন্থি।
"এখানে স্পষ্টত জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ লঙ্ঘিত হয়েছে এবং দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের প্রতি কটাক্ষ করা হয়েছে। এসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলেই মামলা হয়েছে, এর সাথে সাংবাদিকতাকে না মেলানোর অনুরোধ জানাই। তবে কারও কোনো হয়রানি যেন না হয়, সেদিকে আমরা নজর রাখছি।"
তিনি বলেন, "দ্রব্যমূল্য নিয়ে, সরকারের সমালোচনা করে প্রায় প্রতিদিন দেশের পত্র-পত্রিকায় লেখা হয়, টেলিভিশনে রিপোর্ট প্রচার হয়- এ নিয়ে কোনো মামলা তো দূরের কথা, কোনোদিন কাউকে সরকারের পক্ষ থেকে প্রশ্নও করা হয়নি।
“অথচ এই ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট পত্রিকা থেকে বিদেশি গণমাধ্যমে বলা হয়েছে যে, দ্রব্যমূল্য নিয়ে রিপোর্ট করার কারণে তাদের সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই বলে তাদেরকে উস্কানি দেওয়া হয়েছে। সম্পূর্ণরূপে বানোয়াট এই অসত্য অপপ্রচার আসলে দেশ বিরোধিতা।"
‘মাছ, মাংস ও চালের স্বাধীনতা’র বিষয়ে গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে ওই প্রতিবেদনের প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়। একটি মামলায় প্রথম আলো সম্পাদককেও আসামি করা হয়।
এ নিয়ে দেশ-বিদেশে বাদ প্রতিবাদের মধ্যে এসব কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিষয়ে অভিযোগ খণ্ডন করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, "এ ধরনের আইন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হয়েছে। যুক্তরাজ্যে সাইবার সিকিউরিটি ল’জ অ্যান্ড রেগুলেশন ২০২২, যুক্তরাষ্ট্রে সাইবার ল’ অ্যান্ড পানিশমেন্ট এবং এ ধরনের আইন বিশ্বের বহু দেশে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের অপরাধের শাস্তি হচ্ছে ২০ বছর কারাদণ্ড। এবং ডিজিটাল মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর কারণে যদি কারও মৃত্যু হয় তবে সেই অপরাধের শাস্তি হচ্ছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
“তারা আমাদের আইন নিয়ে বিবৃতি দেওয়ার চেষ্টা করে অথচ এ দেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য বহু দেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনেক বেশি কঠিন।"
তিনি ঢাকার পল্লবীতে শুক্রবার বিএনপির ইফতারের অনুষ্ঠানে সাংবাদিক নির্যাতনের নিন্দা জানান।
অনুষ্ঠানে ডিআরইউ সভাপতি মুরসালিন নোমানী ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল আহসান সোহেল শুভেচছা বক্তব্য রাখেন। সংগঠনের সহ সভাপতি দীপু সারোয়ারসহ অন্যান্য সদস্য এসময় উপস্থিত ছিলেন।