“আরে সংস্কার কি বিএনপির আগে আপনারা দিয়েছেন?’ বলেন বিএনপি নেতা।
Published : 09 Nov 2024, 11:32 PM
নির্বাচন কবে, এই প্রশ্নের জবাব না পেয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের তুমুল সমালোচনা করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
সরকারের তরফে যেসব বিষয়ে ‘সংস্কারের’ কথা বলা হয়েছে, সেগুলো বিএনপি আগেই দিয়ে রেখেছে মন্তব্য করে তিনি এও বলেছেন, “ওই সংস্কারে সবকিছু আছে, কিছু বাকি নেই। আপনারা (সরকার) যা বলেছেন, তাও আছে, তার বাইরেও আছে, আপনাদের চেয়ে আরও বেশি আছে।”
শনিবার বিকালে চট্টগ্রামের আলমাস সিনেমা হল মোড়ে বিএনপির এক সমাবেশে দলটির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পর্ষদের নেতা এসব কথা বলেন।
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের ঘটনাপ্রবাহে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসার স্মরণে চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর বিএনপি এই জমায়েত করে। পরে একটি মিছিল বের হয়।
দিনটিকে বিএনপি ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালন করে।
বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সরকার ‘নানা বয়ান’ দিয়ে দেশ চালিয়েছে বলে মন্তব্য করে আমীর খসরু বলেন, “এখন আবার আরেক বয়ান। বাংলাদেশে কখন নির্বাচন হবে তা এ বয়ানের মধ্যে নেই, বাংলাদেশের জনগণ কবে ভোট দিয়ে সরকার নির্বাচিত করবে সেই বয়ান নেই, বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেয়ে একটি গণতান্ত্রিক দেশ হবে-সেই বয়ান নেই।”
সংবিধান অনুসরণ ও সংরক্ষণের অঙ্গীকার করে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন প্রশ্নে কোনো সময়সীমার কথা বলছে না।
সংবিধানে উল্লেখ আছে, সংসদ ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ভোট হতে হবে, দৈব দুর্বিপাকে সেটা করা না গেলে আরও ৯০ দিন অপেক্ষা করা যায়।
এরই মধ্যে ৯০ দিন পেরিয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ একটি অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত করেছে, যাতে সরকারের মেয়াদ অনির্দিষ্ট রাখার কথা উল্লেখ আছে।
এতে বলা আছে ত্রয়োদশ সংসদ গঠন এবং নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণের দিন পর্যন্ত থাকবে এই সরকারের মেয়াদ।
আরও পড়ুন:
অন্তর্বর্তী সরকারের 'সব কাজ বৈধ', মেয়াদ অনির্দিষ্ট: অধ্যাদেশ হচ্ছে
সরকারের সব সিদ্ধান্ত ও আদেশ ‘বৈধ’ উল্লেখ করে খসড়া অধ্যাদেশে এও বলা হয়েছে, সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়া যাবে না, সুপ্রিম কোর্টও কোনো আদেশ অবৈধ ঘোষণা করতে পারবে না।
রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা জারি করতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার লিখিত পরামর্শ নিতে হবে, এমন কথাও বলা আছে।
সংস্কারের বয়ান কি বিএনপির আগে দিয়েছেন?
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আমীর খসরু বলেন, “আরে সংস্কার কি বিএনপির আগে আপনারা দিয়েছেন? ৬ বছর আগে বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন। আমরা জনগণের কথা বুঝেছি বলে আমরা দিয়েছি।
“যে কয়েকটি সংস্কার, জাতীয় ঐকমত্যের পরিপ্রেক্ষিতে হবে সেগুলো সহসা করে ফেলুন। এরপর নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যান এবং যে সংস্কারে ঐকমত্য হবে না, সেটা বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নেবে আগামী দিনে। নির্বাচনের মাধ্যমে যে সংসদ হবে তারা সিদ্ধান্ত নেবে, সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।”
এর বাইরে অনির্বাচিত কারও ‘কোনো অধিকার নেই’ মন্তব্য করে তিনি আবার বলেন, “জাতীয় ঐকমত্যের পরিপ্রেক্ষিতে যতটুকু হবে, সহসা সমাধান করে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
“গণতন্ত্রের মাধ্যমে দেশবাসী তাদের ভোটে যাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে, সংসদে যাবে, সরকারে যাবে, তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে, জবাবদিহি থাকবে।”
জনপ্রতিনিধিত্বহীন কোনো সরকার জনগণের কথা বুঝবে না মত দিয়ে তিনি বলেন, “তারা (অনির্বাচিত সরকার) জনগণের কষ্ট বুঝবে না। কারণ, বুঝতে হলে জনগণের কাছ যেতে হবে, জনগণের পাশে থাকতে হবে, জনগণের দুঃখ-দুর্দশা বুঝতে হবে।
“বিদ্যুতের বিল দিতে পারছে না, সেটা বুঝতে হবে, দুবেলা খেতে পারছে না সেটা বুঝতে হবে।”
২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের কথা স্মরণ করে বিএনপি নেতা বলেন, “এক-এগারো পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ‘কিছু লোকের মাধ্যমে মানুষের সকল অধিকার কেড়ে নিয়ে’ একটি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছিল।
“জনগণের ‘অধিকার কেড়ে নিয়ে’ দেশের ভেতরে ও বাইরের ‘ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে’ খালেদা জিয়াকে, বিএনপিকে তারা পরাজিত করেছিল। পরবর্তীতে ওই ‘স্বৈরাচারকে’ আবারও ক্ষমতায় বসিয়েছে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে।”
‘আন্দোলন তারেক রহমানের নেতৃত্বে’
সরকার পতন আন্দোলন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে হয়েছে বলেও দাবি করেন আমীর খসরু।
খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলের বলে তাকে কারাগারে যেতে হয়েছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আন্দোলন এবার তারেক রহমানের নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল সমস্ত দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে।
“ছাত্র-জনতা, সর্বস্তরের মানুষ তারেক রহমানের নেতৃত্বে একটি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে শেখ হাসিনাকে পরাস্ত করতে পেরেছিলাম। আমরা চাচ্ছিলাম, সবাই মিলে শেখ হাসিনাকে বিদায় করে দিতে, দেশে একটা গণতন্ত্রের অবস্থা ফিরে আসুন। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে তাকে আমরা পরাজিত করে পাঠিয়ে দিয়েছি।“
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের পরিচালনায় সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, এস এম ফজলুল হক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, হারুনুর রশীদ, মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনও বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের হয়। নগরীর আলমাস সিনেমার সামনে থেকে শুরু হয়ে কাজীর দেউরী, লাভ লেইন, জুবিলী রোড়, তিন পুলের মাথা, হয়ে নিউ মার্কেট মোড়ে গিয়ে শেষ হয় সেটি।