“এটা আজকে স্পষ্ট হয়ে গেছে, ৭ জানুয়ারি কোনো নির্বাচন হয়নি,” বলেন এই বিএনপি নেতা।
Published : 11 Jan 2024, 05:57 PM
‘ভুয়া’ নির্বাচনে সরকার সংসদকে ‘কুক্ষিগত’ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতা মঈন খান।
বৃহস্পতিবার বিকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান বলেন, “এই সরকার, তারা সমস্ত সংসদকে নিজেদের ইচ্ছামত কুক্ষিগত করে নিয়েছে এই ভুয়া প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে। এটা আজকে স্পষ্ট হয়ে গেছে, ৭ জানুয়ারি কোনো নির্বাচন হয়নি।
“আজকে জাতীয় সংসদের তিনশ সিটের মধ্যে ২৯৯ সিটে কে বিজয়ী, কে বিজেতা, কে জয়ী, কে পরাজিত সেগুলো নির্বাচনে নির্ধারিত হয় নাই।… সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আগেই নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে কে কত ভোট পাবে, কে কত শতাংশ ভোট পাবে এবং কোন সিট থেকে কে নির্বাচিত হবে।”
এ বিষয়টি দেশে বিদেশে প্রমাণসহ ‘উদ্ভাসিত হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা মঈন।
তিনি বলেন, “এই সরকারের সবচেয়ে দুঃখজনক, লজ্জাজনক, কলঙ্কজনক বিষয় হচ্ছে, মানুষ ভোট চুরি করে গোপনে। এই সরকার ভোট ডাকাতি করেছে প্রকাশ্যে। তারা প্রকাশ্যে আলোচনা করেছে, সিট ভাগাভাগি করেছে, কে কোন সিটে নির্বাচিত হবে সেটা নির্ধারণ করেছে প্রকাশ্যে।”
ঢাকার নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে ৭৫ দিন তালাবন্ধ ছিল বিএনপি অফিস। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা বৃহস্পতিবার তালা ভেঙে কর্যালয়ে প্রবেশ করেন।
পরে বিকাল ৩টায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসে সংবাদ সম্মেলন করেন।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে দফায় দফায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি রেখে গতবছর আন্দোলন জমিয়ে এনেছিল বিএনপি। কিন্তু ২৮ অক্টোবর পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে গেলে ফিরে আসে সহিংসতা।
এরপর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত দফায় দফায় হরতাল-অবরোধ দিয়ে এসেছে বিএনপি। অসহযোগের ডাক দিয়ে ভোট বর্জনের আহ্বানে গণসংযোগও করেছে। ৭ জানুয়ারির ভোট ঘিরে ডেকেছে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল। শেষ পর্যন্ত সেই ভোটে জিতে টানা চতুর্থবারের মত সরকার গঠন করছে আওয়ামী লীগ।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ‘ভোট কারচুপির’ অভিযোগ এনে এ বিষয়ে বিএনপি একটি তথ্যচিত্র উপস্থাপন করা হয় বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে। দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনও সেখানে তুলে ধরা হয়।
‘কেন্দ্রীয় অফিস বেদখলে ছিল’
মঈন খান বলেন, “দীর্ঘ ৭৫ দিন পরে আমাদের নয়া পল্টনের অফিস খোলা হয়েছে। আপনারা জানেন, ২৮ অক্টোবর ক্র্যাকডাউনের পরে বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসটি সরকার বেদখল করে নিয়েছিল। আজকে আমরা এখানে এসেছি জনগণের কথা বলার জন্য।
“আমরা রাজনীতি করি জনগণের জন্য, আমরা রাজনীতি করি জনগণকে নিয়ে এবং আমরা রাজনীতি করি জনগণের মঙ্গলের জন্য।”
তিনি বলেন, “আমরা জনগণর ভোটের অধিকার, জনগণের অর্থনৈতিক সাম্যের অধিকার এবং জনগণের গণতন্ত্রের অধিকার আমরা ইনশাল্লাহ জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেব। ভবিষ্যতে আমরা এমন একটি পরিবেশ বাংলাদেশে সৃষ্টি করব, সেখানে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা হয়।”
সরকারের সমালোচনা করে মঈন খান বলেন, “দেশের মানুষের কাছে এবং বিশ্ববাসীর কাছে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে এটা প্রমাণিত যে, এই সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, সরকার যেটাতে বিশ্বাস করে সেটা হচ্ছে একদলীয় বাকশালী শাসন। আমরা অতীতে বলেছি, এটা হচ্ছে অলিখিত বাকশাল। আজকে নির্বাচনের পরে যা দাঁড়িয়েছে সেটা অলিখিত বাকশাল ওয়ান।”
অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী. চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, জয়নুল আবদিন ফারুক, ফজলুর রহমান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, শিরিন সুলতানা, মীর নেওয়াজ আলী, সেলিম রেজা হাবিব, তাইফুল ইসলাম টিপু সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।