“আমরা মৃত্যুর মিছিলে দাঁড়িয়ে জীবনের জয়গান গাই। আমরা ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে সৃষ্টির পতাকা উড়াই।"
Published : 23 Jun 2024, 10:18 AM
ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন, অঙ্গীকার ও শপথ’ সামনে রেখে আওয়ামী লীগের সৃষ্টি হয়েছিল, ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে এ দল ‘সৃষ্টির পতাকা’ ওড়ায়।
রোববার আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এ কথা বলেন দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, "আওয়ামী লীগ এই দেশের বৃহত্তম ও প্রাচীনতম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। আমরা এক কথায় বলতে পারি, সংগ্রাম, সাফল্য ও সংস্কৃতির বর্ণিল প্রতিভাসের নাম আওয়ামী লীগ।”
ওবায়দুল কাদেরের ভাষায়, আওয়ামী লীগের এই সংগ্রাম, আন্দোলন, অর্জন, উন্নয়নকে যদি দুটি পর্বে ভাগ করা হয়, একটি অংশে থাকবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
“স্বাধীনতার অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পলাশীতে যে সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, ১৯৪৯ সালে সে সূর্য আবার উদিত হয়েছিল; উদিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন, অঙ্গীকার ও শপথকে সামনে রেখে।”
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা পায় বাংলাদেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া এ দলে এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন তার মেয়ে শেখ হাসিনা, যিনি টানা চার মেয়াদে সরকার পরিচালনা করছেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, "জনগণের কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হয়ে প্রতিরোধের দাবানল ছড়িয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনার নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আমরা মৃত্যুর মিছিলে দাঁড়িয়ে জীবনের জয়গান গাই। আমরা ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে সৃষ্টির পতাকা উড়াই।"
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, "সংগ্রাম, আন্দোলন, মুক্তি সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার হাতেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা। এরপর একাত্তরের ৭ মার্চ যা বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।”
মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি বিজয়ী হলেও চার বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশের যে উল্টোযাত্রা শুরু হয়েছিল, সে কথা তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, “মুক্তিযুদ্ধকে জিয়াউর রহমান নিঃশেষ করে দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ, স্বাধীনতার আদর্শ সব কিছুই আঘাতে আঘাতে জর্জরিত। ঐতিহাসিক ৭ জুন ছিল না, ৭ মার্চ ছিল না। বঙ্গবন্ধু ছিলেন নিষিদ্ধ। জয়বাংলা ছিল নিষিদ্ধ। তখন মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি ঘুরে বেড়াত বুক ফুলিয়ে, জিয়াউর রহমানের আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে। কারাগারে চার নেতার হত্যাকাণ্ডের মাস্টার মাইন্ড ছিলেন জিয়াউর রহমান।”
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী বছরগুলোর কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, "জিয়ার পরে এরশাদ, এরশাদের পর বেগম খালেদা জিয়া… একুশ বছর ধরে আমরা অন্ধকারে ছিলাম। একুশ বছর ধরে আমাদের গণতন্ত্র ছিল নির্বাসনে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল। বিজয় ও স্বাধীনতা দিবসে বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে বিজয়ের নায়ক, স্বাধীনতার স্থপিতকে বাদ দিয়ে উদযাপন করা হত।
“বঙ্গবন্ধুর হত্যার ছয় বছর পর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন অন্ধকারে আশার আলো হয়ে এসেছিল। শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন বলেই গণতন্ত্র শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছে। তিনি এসেছিলেন বলেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পুনরুত্থান হয়েছে। গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তন ঘটেছে। তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ছিল স্বাধীনতার আদর্শের প্রত্যাবর্তন।"
ওবায়দুল কাদের বলেন, “শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জন্য সারা পৃথিবীতে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় রচনা করেছেন। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্ব ব্যাংককে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন– ‘আমরাও পারি’। আমাদের সামর্থ্যের প্রতীক, আমাদের সক্ষমতার প্রতীক এই পদ্মা সেতু নিজের টাকায় করেছেন।
“ঢাকায় মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পায়রা সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর, স্যাটেলাইট, ৬৮ বছরের সীমান্ত সমস্যা, সিটমহল সমস্যার সমাধান এসব অর্জন বঙ্গবন্ধুকন্যার।"
৭৫ বছরে আওয়ামী লীগের অর্জন কী– এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "আমাদের অর্জনের কথা আমরা বলব না। ৭৫ বছরে আমাদের অঙ্গীকার হচ্ছে, আমরা আমাদের রক্তের মূল্যে অর্জিত বিজয়কে সুসংহত করব। আমাদের চলার পথে প্রধান বাধা বিএনপি, মুক্তিযুদ্ধের নামে এরা ভাঁওতাবাজি করে। সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী শক্তি আমাদের অভিন্ন শত্রু। এই অভিন্ন শত্রু বিএনপির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ।
“আমাদের আজকের শপথ, এই অভিন্ন শক্তিকে পরাজিত করতে হবে। পরাভূত করতে হবে। আমাদের বিজয়কে আমরা সুসংহত করব। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার অভিমুখে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ করব।"