“বিদেশিরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার কথা বলেছেন," বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
Published : 14 Jul 2023, 07:48 PM
বিএনপি ‘মিথ্যা তথ্য’ দিয়ে বিদেশিদের কাছে সমর্থন চেয়েছিল মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তাদের সেই চেষ্টা ‘ব্যর্থ হয়েছে’।
তার ভাষ্য, “বিদেশিরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার কথা বলেছেন। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। আমরা সংবিধানসম্মতভাবে নির্বাচন করব।"
শুক্রবার আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময়ের আগে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদের।
তিনি বলেন, "বাংলাদেশে আসা ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আমেরিকার প্রতিনিধিরা আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অভাব ও নিরপেক্ষ হবে প্রত্যাশা করেছেন। অংশগ্রহণমূলক কোনো নির্বাচনের কোনো কথা তারা বলেননি।"
দক্ষিণ এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে চারদিনের সফরে মঙ্গলবার ঢাকায় আসেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়া। নির্বাচন, মানবাধিকার, শ্রমিক অধিকার, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তার বিষয়গুলো রয়েছে তার আলোচ্যসূচিতে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধি দলও এখন বাংলাদেশ সফরে রয়েছে। আগামী নির্বাচনে সংস্থাটি পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি না, সেটি এ দলের প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করছে।
আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে পশ্চিমা দেশগুলোর নানা তৎপরতার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের এই সফরকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
এই বিদেশি প্রতিনিধিরা ‘বিভিন্ন কাজ নিয়ে’ বাংলাদেশে এসেছেন মন্তব্য করে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “এরা আসার আগে বিএনপি তাদের অপপ্রচারের মাধ্যমে যে আশঙ্কা, যে ধারণাটা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল যে, এবার আর সরকারের উপায় নাই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আমেরিকার প্রতিনিধিরা সরকারকে বিপদে ফেলবে। নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আসবে। হয়ত সরকারকে বলে দেবে, এইভাবে নির্বাচন কর। পার্লামেন্ট ভেঙে যাবে। জনমনে একটা ধারণা ছিল।
“শেষ পর্যন্ত কী হল? তারা মূলত বলেছে, একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন তাদের কাম্য। বন্ধু দেশ হিসেবে তারা বলেছে। ভিসা নীতি আসবে, এ ধরনের কোনো উক্তি তারা করেননি। সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা তারা বলেছেন। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়ে তারা কিছু বলেননি। এটাই ছিল তাদের বক্তব্যের মূল কথা।”
গত বুধবার ঢাকায় সমাবেশ করে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো আন্দোলনের যে এক দফা কর্মসূচি দিয়েছে, সে বিষয়েও কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, "বিএনপি আসলে দফা কয়টা তা জানে না। দল কয়টা সেটাও জানে না। এবার দেখলাম ৫৪টা, আবার ৩২টা। রাষ্ট্র মেরামতের জন্য ২৭ দল।"
আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ায় বিএনপির নেতাকর্মীরা ‘হতাশ হয়েছে’ মন্তব্য করে কাদের বলেন, "বিএনপি আসলে চিত্রটা বুঝে গেছে। তারা সেই ডিসেম্বর থেকে যে তোড়জোড়, গণঅভ্যুত্থান। এখন তো এটাই হল বাস্তবতা- গণঅভ্যুত্থানের ডাক দিয়ে সেখান থেকে পদযাত্রা। তার মানে তাদের কতটা মনস্তাত্বিক দিকটা সেটার অবনতি হয়েছে।
"ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে যে অপপ্রচার হয়েছে, তাতে মনে হয়েছে ঢাকা শহর তারা ঘিরে ফেলবে, আমরা পালাবার পথ পাব না। পরে দেখা গেল সব লাফ-ঝাঁপ গোলাপবাগের গরুর হাটে গিয়ে হোঁচট খেয়েছে।"
কাদের বলেন, "এ দফায় তারা এক দফার যে হাক ডাক দিল, নেতাকর্মীদের বোঝাতে চাইল– এবার সরকার পতন। আবারও তারা পদযাত্রায় গেল। এর কারণ কি? তাদের যে শক্তি সমাবেশ দরকার, তা তারা ঘটাতে পারছে না। এর কৃতিত্ব পুরোটা আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার। তার জনপ্রিয়তা বিরোধীদলের ভয়ের কারণ। তারা এই জনপ্রিয়তাকে ভয় পায়।"
নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে একগুচ্ছ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। এসব কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করা হয়েছে সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোকেও।
অগাস্টে শোকের মাসের কর্মসূচি জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, "ব্যাপকভাবে ‘শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ’ হবে। সেপ্টেম্বর মাসে নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা পর্যন্ত আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সতর্কতার সাথে রাজপথে আছি, থাকব। এটা হল অভিন্ন কর্মসূচি।
“আমরা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ প্রয়োজন। সে পরিবেশ আমরা রক্ষা করব।"
সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, "কারও কোনো প্রকার খারাপ আচরণের জন্য নির্বাচনের পরিবেশ যেন নষ্ট না হয়, এটা আপনাদের বলে দেওয়া প্রয়োজন।"
নির্বাচন সামনে রেখে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, "এমন কিছু করব না, যাতে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। নেতাকর্মীদের ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতার পরিচয় দিতে হবে।"
বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে যে দূরত্ব দেখা গেছে, তা সমাধানের তাগিদ দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সবাইকে ঐক্য ধরে রাখার তাগিদ দেন।
আগামী ১৮ জুলাই শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের প্রথম ধাপ শুরু হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেদিন মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট থেকে বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত শোভাযাত্রা হবে। পরদিন ১৯ জুলাই ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ সাত রাস্তা থেকে মহাখালী পর্যন্ত শোভাযাত্রা করবে৷
এ সব কর্মসূচি বিএনপির কর্মসূচির সঙ্গে যেন মুখোমুখি না হয়, তা নিশ্চিত করতে সংগঠনের নেতাদের নির্দেশ দেন ওবায়দুল কাদের।
অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃনাল কান্তি দাস, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদকিএস এম মান্নান কচি, দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।