“আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, নতুন একটা সংবিধান আসা যুক্তিযুক্ত। শুধু আমার ব্যক্তিগত মতামত নয়, দেশের সকল মানুষ সিদ্ধান্ত নিক যে- এ ব্যাপারে কী করবে৷”
Published : 09 Sep 2024, 12:19 AM
জনগণের মতামত নিয়ে রাজনৈতিক দল গঠনের দিকে আগানোর কথা ভাবছেন ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক ও গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সভাপতি আখতার হোসেন। তবে তার আগে অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে রাষ্ট্র সংস্কারের পক্ষে তিনি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “এখনকার সময়টা রাষ্ট্র গঠনের সময়। রাষ্ট্র গঠনে আমরা যখন মনে করব কিছুটা হলেও সার্থক হয়েছি, তখন চিন্তা-ভাবনা করে জনগণের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে রাজনৈতিক দল গঠন করা যায় কিনা, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা যায় কিনা, সেই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া যাবে। এখনকার টোটাল ফোকাস বাংলাদেশের রাষ্ট্রগঠনের দিকে।”
ইতোমধ্যে তার প্রথম পদক্ষেপ দেখেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ‘পুনর্গঠন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন বাংলাদেশের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত সফল করার’ লক্ষ্যে আত্মপ্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি, যার সদস্য সচিব হিসেবে গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আখতার হোসেন।
ছাত্র-জনতার তীব্র গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন, যার এক মাস পার হয়ে গেছে। দেশ চালাচ্ছে অন্তবর্তীকালীন সরকার। সফল এই আন্দোলনে যারা সংগঠক হিসেবে কাজ করেছেন,তাদের মধ্যে অন্যতম ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক ও গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সভাপতি আখতার হোসেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বের অগ্রভাগে ছিলেন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির নেতাকর্মীরা। সংগঠনটির সদস্য সচিব নাহিদ ইসলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক আসিফ মাহমুদ ভূঁইয়া অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাও হয়েছেন, যাদের পরামর্শদাতা হিসেবে ভূমিকা রাখছেন আখতার হোসেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রাসেল সরকার ও মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার শাফাত রহমানকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে আন্দোলনের পূর্বাপর, গণআন্দোলন পরবর্তী রাষ্ট্রব্যবস্থা ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন এই তরুণ নেতা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনে আপনি ছিলেন সামনের সারিতে। আর ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনে আপনি ছিলেন সংগঠকের ভূমিকায়। দুই আন্দোলনের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?
আখতার হোসেন: দুই আন্দোলনের পার্থক্য হল- ওই আন্দোলনে আগে একটা সাংগঠনিক কাঠামো ছিল। কিন্তু এই আন্দোলনে শুরুতে তেমন বড় কোনো সাংগঠনিক কাঠামো ছিল না। ২০১৮ সালের আন্দোলনে একজন আহ্বায়ক ছিলেন, বাকিরা ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক।
এবারের আন্দোলনে সমন্বয়ক পরিচয়কে প্রধান করা হয়েছে। আন্দোলনের যারা প্রধান ফেইস, তাদেরকে যদি মারধর করে, নানাবিধভাবে প্রলোভন দেখিয়ে বা টর্চার করে নিবৃত্ত করা যায়, তাহলে আন্দোলনটা অনেক সময় দমে যায়।
আমরা এবার চেষ্টা করেছি, আন্দোলনে সমন্বয়ক থাকবে অনেকে। কোনো সমন্বয়ক যদি কোনো কারণে আন্দোলন থেকে পিছু হটতে বাধ্য হন, সেক্ষেত্রে অন্যরা যারা আছেন, তারা যাতে সেটা ক্যারি করতে পারেন। আপনারা দেখেছেন, যখন ছয়জন সমন্বয়ক ডিবি অফিসে ছিলেন, তখন পরের লেয়ারের সমন্বয়করা আন্দোলন চালিয়ে গেছে।
আরেকটা বিষয় হল, এবারের আন্দোলনে আমরা দেখেছি, দেশের রিকশাচালক, গার্মেন্ট শ্রমিক, একেবারে চাষাভুষা মানুষ তারা সবাই এ আন্দোলনে এসে শামিল হয়েছেন, যেটা ২০১৮ সালে তেমন দেখা যায়নি।
২০২৪ সালে যখন কোটা আন্দোলন শুরু হয়, তখন তারা (শাসকগোষ্ঠী) মনে করেছিল- ২০১৮ সালে যে চাপ ছিল, এখন আর তাদের চাপে ফেলার মতো সক্ষমতা শিক্ষার্থীদের নেই। এ কারণে তারা কোর্টকে ব্যবহার করে কোটাব্যবস্থা ফিরিয়ে নিয়ে আসে। এখানে একটা দেখার বিষয় হলে- ২০১৮ সালের আন্দোলন ছিল সরকারের একটি নীতির বিষয়ে একটি আন্দোলন; যেটা সরকার চাইলে যে কোনো মুহূর্তে সংশোধন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন করতে পারত। সরকারের হাতে সবকিছু ছিল।
কিন্তু ২০২৪ সালে সরকার খুবই ধূর্ত একটি কৌশলের আশ্রয় নেয়। তারা গোটা বিষয়টাকে সাব-জুডিস ম্যাটার হিসেবে উপস্থাপনের একটা পাঁয়তারা করে। আমি একেবারে শুরু থেকে বলে আসছি, ২০১৮ সালে যে প্রজ্ঞাপন আছে, যেটার ভেতর দিয়ে কোটা বাতিল হল, ওই প্রজ্ঞাপনটুকু শুধু সাব-জুডিস ম্যাটার হতে পারে। কিন্তু গোটা চাকরি ব্যবস্থাপনায় কোটা সাব-জুডিস ম্যাটার হতে পারে না।
আন্দোলনের শুরু থেকে শিক্ষার্থীরা যখন চার দফা দেয়, তখন কিন্তু তাদেরকে এই কনফিউশনের ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে যে, আমরা কি এটা কোর্টের মাধ্যমে সমাধান চাই নাকি এটা সরকারের কাছ থেকে সমাধান চাই। সরকার নানাবিধভাবে ছল-চাতুরির আশ্রয় নিয়েছে। কোর্টে স্টে করার কথা, সেটা না করে তারা নানাবিধভাবে জিইয়ে রেখেছে।
কিন্তু তখন থেকে আমরা এটা স্পষ্ট ছিলাম, আইনের শিক্ষার্থী হিসেবে আমি এটা ভালো করেই জানি, বাংলাদেশের সংবিধান যেভাবে কোটা রিজার্ভেশনকে রেখেছে তা হল- সরকার চাইলে রাষ্ট্রের অনগ্রসর জনগোষ্ঠী পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্বের জন্য কোটা রিজার্ভেশন রাখতে পারে। তার জন্য অনুমতি আছে।
এটা সরকারের জন্য বাধ্যকর কোনো বিষয় না। এটা স্রেফ সরকারের একাট পলিসি ম্যাটার, এটায় কোর্ট জড়িত হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। কারণ ২০১৮ সালের আন্দোলনের আগে একটা রিট (মামলা) করা হয়েছিল। তখন কিন্তু কোর্ট সেটা আমলে নেয়নি। বলেছিল, এটা সরকারের নীতিগত বিষয়।
কিন্তু সরকার এখানে ছল-চাতুরির আশ্রয় নেয়, কোর্টকে ব্যবহার করে রায় পরিবর্তন করেছে। তাতে কিন্তু এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, সরকার কীভাবে কোর্টকে আন্দোলনের বিরুদ্ধে ব্যবহারের চেষ্টা করেছে। ২০২৪ সালের আন্দোলনে ছল-চাতুরি কাজে আসেনি। মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে, স্বৈরাচার বিদায় নিয়েছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে গণআন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতন হল। আন্দোলনের এই রূপান্তরকে গণঅভ্যুত্থান বলবেন নাকি বিপ্লব?
আখতার: এখন পর্যন্ত এই আন্দোলনকে আমি যেভাবে দেখি, সেটা হলো এই আন্দোলন ছিল একটা গণঅভ্যুত্থান; যে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারকে বিদায় নিতে হয়েছে। তবে এই আন্দোলনের মধ্যে বিপ্লবের একটা নির্যাস আছে। আমরা মনে করি, এই নির্যাসকে একটা পরিণত রূপ দিতে আমাদের রাজপথে থাকতে হবে। অভ্যুত্থানকে বিপ্লবে রূপান্তর করতে হবে।
যদি বিপ্লব বলেন, এর মধ্য দিয়ে গঠিত সরকারকে- আপনাদেরকে সমর্থনকারী বুদ্ধিজীবীদের কেউ কেউ বিপ্লবী সরকার বলতে নারাজ– আপনার মতামত জানতে চাইছি।
আখতার: এই সরকার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এসেছে। কিন্তু বিপ্লবী সরকারের যে চরিত্র বা যে জায়গাগুলো থাকে, সেই জায়গা কিছুটা আসলে পার্থক্য আছে। কিন্তু এটা সত্য- এই আন্দোলনে একটা গণঅভ্যুত্থান যেভাবে সংঘটিত হয়েছে, একইসঙ্গে বিপ্লবের একটা নির্যাস আছে। আমরা মনে করি একটা পরিপূর্ণ বিপ্লবী চরিত্র দেওয়ার কাজটা চলমান রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ গঠিত হয়। এটাকে স্থায়ী রূপে দেখা যাবে? নাকি এই প্লাটফর্মের যাত্রা এখানেই শেষ?
আখতার: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যখন কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে রাজপথে আসে, তখন তার দাবি ছিল সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা নিয়ে ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন পুনর্বহাল। কিন্তু আন্দোলন যখন সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে, তখন সেটা এক জায়গায় ছিল না। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের বিষয়টি মুখ্য ছিল না।
আন্দোলন যখন সফল হয় এবং একটি পরিক্রমার ভেতর দিয়ে যখন এক দফা আসে, তখন এই মেসেজটা স্পষ্ট ছিল যে, আমরা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ চাই এবং বাংলাদেশে একটা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত চাই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এখন এই দুটো বিষয় নিয়ে কাজ করতে পারে। কিন্তু সাংগঠনিক ফরম্যাট কী হবে, সেটা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যারা প্রধান ফেইস, তারাই এ সিদ্ধান্ত নেবে।
কিন্তু জনগণ এটা চায় যে, রক্তের বিনিময়ে, জীবনের বিনিময়ে যে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে, যে ছাত্ররা নেতৃত্ব দিয়েছে তারা যেন ঐক্যবদ্ধ থাকে এবং গণঅভ্যুত্থানের যে স্পিরিট, সেটা যেন বাংলাদেশে বাস্তব রূপদান সম্ভব হয়।
আপনারা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা বলছেন। সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আপনারা কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করবেন কি না?
আখতার: রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা আমরা দীর্ঘ সময় ধরে বলে আসছি আমাদের পরিসরে। কিন্তু এবারের যে আন্দোলন হয়েছে, সেখানে এ বিষয়টা জনগণের একটা চাওয়ার মধ্যে ছিল। মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে এখানে রাজনৈতিক নিপীড়নের মধ্য দিয়ে গেছে। আমাদের এখানে ত্যাগের অনেক ইতিহাস আছে।
কিন্তু জনগণের কাঙ্ক্ষিত মুক্তির জায়গাটি, সেটা অর্জিত হয়নি। সময় সময় এখানে স্বৈরাচারী, ফ্যাসিবাদী শাসন এখানে ফিরে এসেছে। নতুন যে রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা আমরা জনগণের পক্ষ থেকে আমরা বলছি, সেটা হলো এমন একটা ব্যবস্থা, যেখানে আর কোনো ফ্যাসিবাদী রেজিম প্রতিষ্ঠিত হতে না পারে।
এর জন্য অনেকগুলো কাজ করা দরকার; বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঠিকঠাক করতে হবে, মানুষের যে মনস্তত্ত্ব আছে, সেটা পরিবর্তন করা দরকার। আমরা কিছুটা এই জায়গায় খেয়াল করেছি, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমীকরণ অনেকটাই পাল্টে গেছে।
গতানুগতিক রাজনীতির যে ধারা বা কালচার, সেখানে মানুষ আর আবদ্ধ থাকতে চায় না। বিশেষত এখনকার যে নতুন প্রজন্ম, তারা নিজেদের আত্মসম্মানের জায়গায় খুবই অটল। ব্যক্তি-স্বাতন্ত্রের জায়গায় তারা ছাড় দিতে নারাজ।
সেই জায়গা থেকে নতুন যে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, আগে যেমন চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে অনেক কিছু ঘটত, সেগুলোর যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়। আমরা মেধাভিত্তিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের কথা বলেছি, সেটা যেন আমাদের এখানে হয়। সেই রকম একটা রাজনৈতিক বন্দোবস্ত আমাদের এখানে দরকার।
রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে বলা যায়, এটা এমন একটা প্রক্রিয়া, যার সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের একটা সুচিন্তিত মতামতের প্রয়োজন আছে। আমরা সসময় খেয়াল করেছি, বাংলাদেশের মানুষ তরুণদের নেতৃত্বে দল চায় । তরুণরা রাষ্ট্র পরিচালনা করুক- এটা চান তারা এবং এ ব্যাপারে আমাদের সঙ্গে অনেকে কথাও বলেন।
যারা সিনিয়র সিটিজেন আছেন, সমসাময়িক বয়সের আছেন, তারা আমাদের সঙ্গে এ বিষয়ে অনেক সময় আলাপ করেন। আমরা তাদেরকে এই মেসেজটাই দিতে চাই- এখনকার সময়টা রাষ্ট্র গঠনের সময়। আমরা এখন রাষ্ট্র গঠনের দিকে মনোযোগী।
রাষ্ট্র গঠনে আমরা যখন মনে করব কিছুটা হলেও আমরা সার্থক হয়েছি, তখন চিন্তা-ভাবনা করে জনগণের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে রাজনৈতিক দল গঠন করা যায় কি না, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা যায় কি না, সেই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া যাবে। এখনকার টোটাল ফোকাস বাংলাদেশের রাষ্ট্রগঠনের দিকে।
ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি করছেন শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ। ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে নেতৃত্ব তৈরি হবে কোথা থেকে? তাছাড়া গোপনে বিভিন্ন মৌলবাদী সংগঠনের তৎপরতা থাকবে, সেটা কীভাবে মোকাবিলা করবেন?
ছাত্র রাজনীতি হবে ছাত্র সংসদকেন্দ্রিক রাজনীতি। সেটা পূর্ণভাবে চালু হওয়া দরকার। আমি ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক ছিলাম। এই জায়গাটা শিক্ষার্থীদের জন্য কথার বলার একটা স্পেস তৈরি করেছিল। তেমনইভাবে দেশের সকল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ চালু হলে শিক্ষার্থীরা তাদের কথা বলার মত জায়গাটা বের করে নিয়ে আসতে পারবে।
এখন কথা হল বাকি যে ছাত্র সংগঠনগুলো আছে, তারা কীভাবে রাজনীতি করবে? এই জায়গাটাতে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করার দায়িত্ব ছাত্র সংগঠনগুলোর। ছাত্র সংগঠনগুলোকে অনেক রিফর্মের ভেতর দিয়ে যেতে হবে। তাদেরকে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করতে হবে যে, ‘আমরা নতুন বাংলাদেশে যে ছাত্র রাজনীতি করতে চাই, সেখানে কোনোভাবেই চাঁদাবাজি, হল দখলসহ বিভিন্ন অপকর্ম ফিরে আসবে না’।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্ন করবে না। শিক্ষার্থীদের যে অধিকারের জায়গা, সেটাকে ক্ষুণ্ন করবে না। এটা যদি তারা শিক্ষার্থীদের কনভিন্স করতে পারে এবং নতুন ছাত্র রাজনীতির রূপরেখা তাদের পক্ষ থেকে নিয়ে হাজির করতে পারলে, তাহলে এই জায়গায় একটা সুন্দর সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব।
কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে এই জিনিসটা চাই- ছাত্রদের মধ্যে স্বতন্ত্র অ্যাক্টিভিজমের ধারা চালু থাকুক। এটা ব্যক্তির মানস গঠন যেভাবে গুরুত্বপূর্ণ, তেমনইভাবে আমাদের রাষ্ট্রের যে সংকটগুলো বিভিন্ন সময় তৈরি হয়, সেটা মোকাবেলা করার জন্য অতীব জরুরি একটা বিষয়।
বাংলাদেশের ছাত্ররা সবসময়ই রাজনীতি সচেতন। কিন্তু এখানে একটা বড় বিষয় আছে, বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতির নামে বিগত সময়ে যা করা হয়েছে- চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ছিনতাই, সন্ত্রাসী, হল দখল, গেস্ট রুম ও গণরুম নির্যাতনের অমানবিক প্রথা এখানে চালু করা হয়েছে। আমি এই জিনিসটা আর চাই না। বুয়েটে আবরার ফাহাদকে সারারাত নির্যাতন করে মারা হল; আমি চাই না এই জিনিসটা আবার ব্যাক করুক।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংগঠিত হওয়ার আগে নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদসহ অন্যদের নিয়ে ছাত্রশক্তি বলে একটি ছাত্র সংগঠন করেছিলেন, সেই সংগঠনটি কি সক্রিয় রয়েছে?
আখতার: গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির যত নেতাকর্মী আছি, আমরা বৈষম্যবিরাধী ছাত্র আন্দোলনে একাকার হয়ে গেছি। আলাদা করে আমাদের খুঁজে পাওয়া কঠিন। গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি অনেক দিন ধরে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় আছে। আমাদের সদস্য সচিব নাহিদ ইসলাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক আসিফ মাহমুদ- তারা দুজন উপদেষ্টা হয়ে গেছেন।
আমাদের সংগঠনের নেতৃত্বের জায়গায় শূন্যতা আছে। কীভাবে এটা পরিপূর্ণ করা যায়, এটা সংগঠনের বাকিরা যারা আছে, তারাই সিদ্ধান্তগুলো নেবেন। মোটাদাগে সুপ্ত অবস্থা থেকে সক্রিয় অবস্থায় ফেরার বিষয়টা নির্ভর করছে ক্যাম্পাসে ছাত্র-রাজনীতির বন্দোবস্ত কীভাবে ঠিক হয়- তার ওপর।
সামনের দিনের গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি স্বনামে অথবা অন্য কোনো ফর্মে আসবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত আমরা এখন পর্যন্ত স্পষ্টভাবে নিইনি। সেটা এখন একটা সুপ্ত অবস্থায় আছে।
যেহেতু আমার ছাত্রত্ব নাই; গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির আহ্বায়কের যে পদ, সেটা থেকে আমি অব্যাহতি নেব। এটা আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত; কিন্তু সেটা দেশের বৃহত্তর রাজনীতির স্বার্থেই। এই সংগঠন কোনভাবে ফর্ম করবে, কীভাবে চলবে- সেটা যারা রানিং আছে, তারা সিদ্ধান্ত নেবে।
সংবিধান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আপনারা সংবিধান সংশোধন নাকি পরিবর্তন চান এবং সেটা কোন প্রক্রিয়ায় চান?
আখতার: বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধন করা দরকার, নাকি পুনর্লিখন করা দরকার তর্কটা কিন্তু এভাবে চলছে এখন। এখন যে সংবিধান আছে, সেটা কিন্তু চলে না। যদি চলত তাহলে সংশোধন বা পুনর্লিখনের কোনো আলাপই আসত না।
বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭- এ কিছু বিষয় বলে দেওয়া হল, এই এই বিষয় সংশোধন করা যাবে না। অর্থাৎ কোনো সংসদ তার সাকসেসর সংসদকে এটা বলে দিতে পারে না যে, আপনি এটা সংশোধন করতে পারেন না।
এই সংবিধান এমন করে রাখা হয়েছে, যেখানে একজন ব্যক্তি সবকিছুর কর্তা হয়ে বসে থাকবেন। তার বাইরে আর কোনো জায়গা এখানে নেই। এই সংবিধানে আর্টিকেল ৭০ এর মত একটা বিষয় আছে। আরও অসংখ্য দুর্বলতার জায়গা আছে।
ভালো জায়গাও আছে, এটা সত্য। কিন্তু দুর্বলতার যে জায়গাগুলো আছে, এটা এমন- এদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক স্পৃহা নষ্ট করে দিতে পারে। এখানে ফ্যাসিবাদকে আবার পুনরুজ্জীবিত করতে পারে।
মানুষের যে আকাঙ্ক্ষার জায়গাটি আছে, সেটা ধারণ করার জন্য সময় সময় আমাদের মনস্তাত্ত্বিক যে পরিবর্তনগুলো এসেছে, সেটাকে সংবিধান ধারণ করছে না। আমাদের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের বা ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া থাকার কথা এই সংবিধানে, তার কোনো কিছুরই উল্লেখ নাই। কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা এখান থেকে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। যে সরকার ক্ষমতায় থাকবে তার অধীনেই একটা নির্বাচন হবে। এরকম একটা বিষয় বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক যে পরিবেশ, তার জন্য একটা হুমকি।
সংবিধান ১৭ বার কাটাছেঁড়া হয়ে গেছে। সংবিধানের অনেকগুলো অনুচ্ছেদ বাতিল করা হয়েছে। সরকার আসে যায়, কাটাছেঁড়া হয়। যে আসে, সে তার মত করে একটা জিনিস করে নেয়। এমনটা হওয়ার দরকার নেই।
আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, নতুন একটা সংবিধান আসা যুক্তিযুক্ত। শুধু আমার ব্যক্তিগত মতামত নয়, দেশের সকল মানুষ সিদ্ধান্ত নিক যে- এ ব্যাপারে কী করবে৷
আপনার কথা মতে, নতুন সংবিধান যদি করতে যাই, সেক্ষেত্রে প্রক্রিয়া কী হবে? কীভাবে করতে হবে বলে আপনি মনে করেন?
আখতার: বাংলাদেশে এর আগে যখন সংবিধান হয়, তখন সেটা সভার মধ্যে দিয়ে হয়েছিল। তার পরও কিছু বিতর্ক থেকে গেছে। কারণ তাদের নির্বাচিত হয়ে আসার যে প্রক্রিয়া সেটা ছিল পূর্ববর্তী সময়ের নির্বাচন প্রক্রিয়া। সে তর্কে আমি যাব না৷
তবে এ আলাপটা আছে যে- সংবিধান করতে হলে গণপরিষদ করতে হয়৷ এটার ক্ষেত্রে মানুষের থেকে যাচাই করে নিতে হবে যে, এটা কী গণভোটের মাধ্যমে হবে নাকি অন্যকিছুর মাধ্যমে হবে৷ সে জিনিসগুলো আমরা তখন ঠিক করতে পারব।
আপাতত এটার প্রয়োজনীয়তা, যৌক্তিকতা- এই আলাপ-আলোচনা জারি রাখাটাই প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কবে নির্বাচন হতে পারে বলে মনে করেন? কী হলে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে মনে করবেন?
আখতার: এ সরকার অন্তবর্তীকালীন সরকার। আগের সময় বাংলাদেশে যে কেয়ারটেকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল, সেই সরকারের থেকে এ সরকারের ভিন্নতা আছে৷ কেয়ারটেকার সরকারের একমাত্র দায়িত্বেই ছিল একটা নির্বাচন উপহার দেওয়া৷ আর অন্তর্বর্তীকালীন যে সরকার গঠিত হয়েছে, সেটা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এবং জনগণের ম্যান্ডেটকে সাথে নিয়ে। সে সরকারের কাজ হল রাষ্ট্রকে গঠন করে দিয়ে যাওয়া, সংস্কার করে দিয়ে যাওয়া৷
তাদের অনেকগুলো জায়গা আছে, যেমন নির্বাচন কমিশন আছে। সেই নির্বাচন কমিশনই তো ’১৪, ’১৮ ও ’২৪ এর ভুয়া নির্বাচনগুলোকে মঞ্চায়ন করেছে৷ এ নির্বাচন কমিশনগুলো তো গণতন্ত্রকে চূড়ান্তভাবে হত্যা করবার সুযোগ করে দিয়েছে। সেই জায়গাগুলোতে সংস্কার প্রয়োজন।
নির্বাচনের যে আইনগুলো আছে, সেখানে সংস্কার প্রয়োজন। এরকম দেশের আরও প্রধান প্রধান যে অর্গানগুলো আছে- সেগুলোতে সংস্কার প্রয়োজন, স্বচ্ছতা প্রয়োজন। এর জন্য যত সময় দরকার, তত সময় এ সরকারের পাওয়াটা আমি প্রয়োজন বলে মনে করি৷
তড়িঘড়ি করে এ সরকার যদি নির্বাচন দিয়ে চলে যায়, তাহলে মানুষের যে আশা, আকাঙ্ক্ষা আছে তা নষ্ট হয়ে যাবে৷
আমরা মনে করি, এ গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দলগুলোর যে ভূমিকা আছে- তারা কখনো মানুষের বাইরে গিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে না৷ এ আবেদন আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি রাখতে চাই৷
মানুষের জানার আগ্রহ যে আসলে নির্বাচন দিতে কতদিন লাগতে পারে? আপনিও রাজনীতি করছেন, আপনি যে বিষয়গুলো বললেন- সেগুলো বাস্তবায়ন করতে কতদিন লাগতে পারে?
আখতার: এটা যারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আছেন, তাদেরই একটা সময়ের ফ্রেমে বেঁধে কাজ করা উচিত। কতদিন লাগতে পারে, তাদেরই ক্লিয়ার করা দরকার। আমরা যারা রাজপথে আছি, আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করতে চাই। সরকার নিজেরা আমাদের জানাক, কতটুকু সময় নিবে ও কতটুকু সময় লাগবে।
বিএনপি, জামায়াতের কর্মীরা এ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছে; আমরা যারা মাঠে কাজ করেছি তারা দেখেছি৷ আপনি যে পরিবর্তনগুলোর কথা বলছেন, সে পরিবর্তনগুলোর ক্ষেত্রে আপনি বিএনপি, জামায়াতকে কীভাবে চান এবং কোন ভূমিকায় চান?
আখতার: ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল পক্ষকে আমরা চাই। বাংলাদেশের বর্তমান যে সংবিধান তা দিয়ে বিএনপি বা জামায়াত নির্বাচনে যেতে পারছে না৷ কেয়ারটেকার সরকারের যে ব্যবস্থা আন্দোলনের মাধ্যমে এসেছিল, সেটা আওয়ামী লীগ সরিয়ে দিয়েছে। তবে সেটা কোর্ট চাইলে এখন ফিরিয়ে আসতে পারে, যাতে বাংলাদেশের রাজনীতির একটা সুস্থ ধারা আসে। ক্ষমতার রদবদলের একটা শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়া থাকুক।
সেই জায়গাটাতে আমরা চাইব বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি, জামায়াত জনগণের প্রতি যে বার্তা, সেটা যেন ক্লিয়ার করে৷ ক্ষমতায় যাওয়ার আগে ও পরে তারা যেন মানুষের চাওয়াটা স্পষ্ট করেন এবং তারাও যেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে তাদের যে রূপরেখা আছে, সেটাও যেন স্পষ্ট করেন। পররাষ্ট্রনীতিসহ সবকিছুকে কেমন দেখতে চান, সবকিছু যেন স্পষ্ট করেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পর থেকে সারাদেশে চাঁদাবাজি, লুটপাট চলছে। তাহলে এ সরকারের হাত ধরে কী আগের মত একই সংস্কৃতি চলছে?
আখতার: অভ্যুত্থানের পরপরই আমরা দেখলাম একবারে ডাকাতি বেড়ে গেল। এ জিনিসটা যাদের হাতে অস্ত্র ছিল, তারা ডাকাতিতে লিপ্ত হয়েছে। আবার সে জিনিসটা কমে এল, কিন্তু এখন আবার চাঁদাবাজির একটা প্রকোপ দেখে যাচ্ছে। আমরা দেখলাম যে ছাত্রদলের একজন চাঁদাবাজি করাই ছাত্রদল নিজেই অ্যাকশন নিয়েছে এবং মামলা করেছে৷ এটা একটা ভালো বার্তা।
আমরা দেখছি, তরুণরা সংগঠিত হচ্ছে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে। এটাও ভালো বার্তা৷ কিন্তু এটার পরিবর্তে যদি তারা তাদের রাজনৈতিক কর্মীকে চাঁদাবাজির জন্য আশ্রয় দেন, তাহলে তারাও এ মানুষের রোষানলে পিষ্ট হবেন৷ চাঁদাবাজি করে তারা টিকতে পারবে, এটা যেন আশা না করে৷
এখন আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে ঢালাও মামলা হচ্ছে, যেমনটা আওয়ামী লীগের আমলে দেখেছে মানুষ। অনেকে বলছেন, সেই একই হিংসার রাজনীতি চলছে। আপনি কী বলবেন?
আখতার: এ আন্দোলনে সহস্র মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, সহস্র মানুষ আহত হয়েছেন, পঙ্গু হয়েছেন৷ এ সময়টাতে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের থানাগুলো ফাংশন করছে না৷ থানায় মামলা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কিন্তু মামলা হচ্ছে না৷ তাই আমাদের কাছে আসছে অনেকে।
আমাদের আহ্বান আওয়ামী লীগের যে গণহত্যা, তা যেন বাইরে না যায়। এ গণহত্যার সুষ্ঠু বিচার হলে আওয়ামী লীগের শাস্তি নিশ্চিত হবে। এর বাইরে গিয়ে মামলা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। মামলা হতে হবে কংক্রিট ও ফ্যাকচুয়াল। তাই এদেশের আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আমাদের উদাত্ত আহ্বান থাকবে, তারা যেন সবকিছুকে এ গণঅভ্যুত্থানের সময়ের মধ্যে ফ্রেমিং করে আইনি প্রক্রিয়ায় যান৷
শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে বিচার করার দাবি তুলছেন অনেকে, আপনারা কী চাইছেন?
আখতার: বাংলাদেশের মানুষ খুনি শেখ হাসিনার বিচার চায়, সর্বোচ্চ শাস্তি চায়; হাসিনার সেই শাস্তি কার্যকর করতে চায়৷ তার শাস্তি যদি এ জমিনে কার্যকর করা যায়, তাহলে সামনে যারা ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠবে, তাদের জন্য একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে৷
তাকে দেশে না আনা হলেও আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে তার শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তার হাতে যে মানুষের রক্ত লেগে আছে, তার যেন শাস্তি হয়।
তারেক রহমান দেশে ফিরবেন– সেই প্রত্যাশায় আছে বিএনপি। তার বিষয়ে আপনাদের ভাবনা কী?
আখতার: গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সকল রাজনৈতিক দলগুলো এক ব্যস্ত সময় পার করছে৷ তাদের রাজনীতি গোছাচ্ছে। আর বিএনপিতে তারেক রহমানের এক বিশাল অবদান আছে৷ তাই এটা বিএনপি ও তার কর্মীদের ব্যক্তিগত বিষয় যে কে তাদের রাজনীতি- কীভাবে গোছাবেন এবং ঢেলে সাজাবেন।
তবে আমরা ছাত্রসমাজ যেটা চাইব, সেটা হলো জনগণের পক্ষে যারা সবসময় অবস্থান করেন; তারা যেন বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে যে অর্জন ও মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার পক্ষে থাকেন৷
আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্র– এটি অনেকেরই জানা আছে। অধিকাংশের জানা নেই, এর আগে কোথায় পড়াশোনা করেছেন, আপনার শৈশব-কৈশোরের কথাও মানুষ জানতে চায়। পরিবার, মা-বাবা, ভাই-বোন সম্পর্কে কী আমাদেরকে জানাবেন? যতদূর জানি আপনি বিবাহিত, আপনার স্ত্রী কে এবং কী করেন?
আখতার: আমি নয় ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট। অনেক আদরে মানুষ হওয়া। ছোট বেলায় কেজি স্কুলে ভর্তি হওয়া। তারপর প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হওয়া। ষষ্ঠ শ্রেণিতে উঠে মাদ্রাসায় ভর্তি হই। দশম শ্রেণি পর্যন্ত সেখানে পড়াশোনা।
ইন্টার করতে আসি রংপুরে ধাপ সাতগাড়া মাদ্রাসায়। তারপর আলিম শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা৷ আমি যখন ক্লাস টেনে পড়ি, তখন আমার বাবা পরলোকবাসী হন৷ আমি বাবার খুব স্নেহের সন্তান ছিলাম৷ আমার জন্য অনেক দোয়া করে গেছেন বাবা।
বাবা শিক্ষক ছিলেন৷ আমি যে মাদ্রাসায় ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়েছি, সেই মাদ্রাসায় তিনি পড়াতেন। অবশ্য আমি সরাসরি তার ছাত্র হতে পারিনি। আমার বাবা এলাকায় সুনামের সঙ্গে তার জীবন অতিবাহিত করেছেন।
আমার দাদা, বাবা ও বড় ভাই তারা সবাই মসজিদে খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আমার মা গৃহিণী মানুষ। আমাকে মা কতটা আদর করে বলে বোঝাতে পারব না। মা সবসময় আমার জন্য দোয়া করে এবং ফোন দিলে এটাও বলে যে, ‘তোমার জন্য দোয়া করি; তোমার সাথে যারা আছেন, তাদের জন্যও দোয়া করি। এবার যারা মারা গেল, তাদের জন্যও দোয়া করি।’
বিয়েশাদি করলাম- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন ব্যাচ জুনিয়র আমার সহধর্মিণী। এই যে পুরো সময়টা, আমি যখন গ্রেপ্তার হই, সে সময়টাতে আইনজীবীদের সাথে যোগাযোগ, সাংবাদিকদের সাথে যোগাযোগ, আন্দোলনকারীদের সাথে যোগাযোগ; সবকিছু তাকে করতে হয়েছে।
আমি অবাক হই- একটা মাস হল গণঅভ্যুত্থানের পরে। আমি আমার আত্মীয়স্বজন, ভাই-বোন, শ্বশুর- শাশুড়ি কাউকে সময় দিতে পারিনি। কিন্তু তারা সবাই আমার প্রতি সন্তুষ্ট। তারা এতটুকু চান- যে সময় পেয়েছি তা যেন দেশের মানুষের কল্যাণে লাগাতে পারি৷