চট্টগ্রাম-২ আসন থেকে গত দুটি নির্বাচনে জেতা নজিবুল বশর বলেছেন, গত ৪ ডিসেম্বর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকেই তার আসনের ব্যাপারে বলা হয়েছিল।
Published : 15 Dec 2023, 02:05 PM
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের জোটের মধ্যে বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের জন্য কোনো আসন ছাড়ের ঘোষণা না থাকলেও নিজের ‘আসন নিশ্চিতের’ দাবি করেছেন দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী।
চট্টগ্রাম-২ আসন থেকে গত দুটি নির্বাচনে জেতা নজিবুল বশর বলেছেন, গত ৪ ডিসেম্বর গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শরিকদের বৈঠকেই তার আসনের ব্যাপারে বলা হয়েছিল।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় ধানমন্ডিতে তরীকত ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
নজিবুল বশর বলেন, “সেদিনই (৪ ডিসেম্বর গণভবনের বৈঠক) ৫/৬ টার কথা বলা হয়েছে৷ আমরা জানি, আমরা আছি। আমি জানি আমারটা আছে। আমাকে ৪ ডিসেম্বরই বলে দেওয়া হয়েছিল।
“৪ ডিসেম্বর আমরা গণভবনে যাই। আলোচনা হয়েছে৷ আমি বক্তব্য রেখেছিলাম। সেদিন কমিটিগুলো করা হয়। সেদিন ওবায়দুল কাদের সাহেব প্রকাশ্যে কয়েকজনের নাম বলে দিয়েছিলেন। বাকিগুলো আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শরিকদের ১৬টি আসনে ছাড় দেওয়া হলেও এবার তা কমিয়ে ৭টি করা হয়েছে। বর্তমান সংসদে প্রতিনিধিত্ব থাকা বিকল্প ধারা ও তরীকত ফেডারেশনকে ছাড় দেয়নি ক্ষমতাসীন দল।
গত ৪ ডিসেম্বর শরিকদের দেন-দরবার শুরুর পরে থেকে বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্ত জানানো হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।
সাতটি আসনের মধ্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদকে তিনটি করে এবং জাতীয় পার্টি-জেপিকে দেওয়া হয়েছে একটি আসন।
তবে শরিকদের আসন কমানোর সিদ্ধান্তকে ‘বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান’ করার কথা জানিয়েছেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, তারা আসন বাড়াতে বলেছেন। ছাড় দেওয়া আসনে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা যেন স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকেন, সেটিও নিশ্চিত করতে বলেছেন। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করার দাবি জানিয়েছেন।
নজিবুল বশরের চট্টগ্রাম-২ আসনে এবার আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছে সাবেক সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে খাদিজাতুল আনোয়ারকে।
সেখানে নতুন নিবন্ধিত দল বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) চেয়ারম্যান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আলহাসানী আল মাইজভান্ডারীও প্রার্থী হয়েছেন।
নজিবুল বশর ও সাইফুদ্দীন সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা। সেখানে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান মাওলানা এম এ মতিনও প্রার্থী হয়েছেন। এই তিনজনই সুন্নি মতাদর্শী।
ওই আসনের বর্তমান এমপি নজিবুল বশর নিজের আসন নিশ্চিতের কথা বললেও আগের দিন বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, “আমু ভাই যে ঘোষণাটি (আসন ভাগাভাগি) দিয়েছেন, সেটি আনুষ্ঠানিক না। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, উনার প্রতি আমার আস্থা অতীতেও ছিল, এখনও আছে। আমি আশা করছি গতবারের মত এবারও আসন পাব।”
চট্টগ্রাম-২ আসনে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মনোনয়ন নিয়ে এক প্রশ্নে মাইজভান্ডারী বলেন, “তিন মাস আগে নিবন্ধন পেয়ে যদি কেউ মনোনয়ন পায়, তাহলে রাজনীতির অবস্থান কোথায় যাবে? সুপ্রিম পার্টি তো জোটে নাই।
“তাদের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড কী? ক্যারিয়ার কী? হঠাৎ কেউ এল, দু-চারটা প্রোগ্রাম করল, বলে দিলেন আছে! এটা দেশের জন্য আগামী রাজনীতির জন্য অশনিসংকেত।”
তিনি বলেন, “বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ভালো না। বিএনপি জামায়াত রাজনীতির বাইরে। তারা সন্ত্রাসসহ আন্দোলন করে যাচ্ছে। বহির্বিশ্ব চুপচাপ। চুপচাপটা ভালো লক্ষণ না।”
লিখিত বক্তব্যে তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী বলেন, “গত ৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে গণভবনে ১৪ দলের বৈঠক হয়। প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, আমরা সে সিদ্ধান্তের ওপর অবিচল রয়েছি। জনগণের ভোটে, শেখ হাসিনা আবারও নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী হবেন, এ ব্যাপারে যেমন কোনো ভুল নেই, তেমনি বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন ১৪ দলীয় জোটের অংশ হিসেবে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবে এটিও নিশ্চিত।”
জোটের শরিকদের অনেক চাওয়া-পাওয়া থাকতেই পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা সম্মানজনকভাবে মূল্যায়িত হব বলে বিশ্বাসী। তবে সর্বোপরি ১৪ দলীয় জোট নেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী কৌশলের অংশ হিসেবে যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেই সিদ্ধান্তের সাথেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন প্রস্তুত।”
তরীকত ফেডারেশনের দলের ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ তৈয়বুল বশর মাইজভান্ডারী, ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু দাউদ মছনবী হায়দার, যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ আলী ফারুকী, বাকীবিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ আলী হোসাইন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন-