সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় ১১১ বার পিছানো হয়েছে।
Published : 03 Jul 2024, 12:04 AM
এক যুগ আগে খুন হওয়া সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তে বিলম্ব দেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে ‘ক্রমাগত উপহাস’ বলে হাই কোর্টের একটি রায়ের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিদের কনডেম সেলে বন্দি রাখা যাবে না বলে দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছে।
গত ১৩ মে দেওয়া ওই রায়ের ৬৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে।
মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর এবং তার স্ত্রী এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রুনি ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে ভাড়া বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন।
সবশেষ গত ৩০ জুন পর্যন্ত এ হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় ১১১ বার পিছিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা। আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় বারবার পেছাতে সময় চাইছে শুরুর দিক থেকে এ মামলা তদন্তের দায়িত্বে থাকা র্যাব।
হাই কোর্টের এ রায়ে বলা হয়েছে, ”আমাদের দেশে হত্যার বিচার হতে কখনও কখনও ২০ বছরের বেশি সময় লাগে। এ ধরনের হত্যাকাণ্ডকে যদি কোনো রাজনৈতিক চেহারা দেওয়া হয়, তাহলে এর চেয়েও বেশি সময় লাগতে পারে।”
এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু হত্যায় এফআইআর (মামলা) দায়ের ২১ বছরের বেশি সময় লাগার বিষয়টি রায়ে তুলে ধরা হয়।
ইংরেজিতে লেখা এ রায়ে বলা হয়েছে, দুই সাংবাদিক সাগর-রুনির নৃশংস হত্যার ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। সে কারণে এটি এখনও বিচারের আলো দেখেনি।
”দুর্ভাগ্যবশত মামলাটি ক্রমাগত আমাদের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে উপহাস করে চলেছে এবং অপূরণীয় ক্ষতিগ্রস্ত করছে; বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলা দ্বারা যার কিছুটা প্রতিকার হয়েছিল।“
কনডেম সেলে রাখা নিয়ে ওই রায়ে বলা হয়, যাদের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে, কিন্তু আপিল বিচারাধীন আছে, তাদের অবশ্যই কনডেম সেলে রাখা যাবে না এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই ধরনের দণ্ডিতদের কনডেম সেল থেকে সাধারণ সেলে স্থানান্তর করতে হবে।
কারাগার কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে কনডেম সেল থেকে বন্দিদের সাধারণ কারাগারে ক্রমান্বয়ে স্থানান্তরের নির্দেশও দেওয়া হয় রায়ে।
মামলা চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হওয়ার আগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে কনডেম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেটের তিন আসামি।
রিট আবেদনকারী তিনজন হলেন-চট্টগ্রাম কারাগারের কনডেম সেলে থাকা সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের আব্দুল বশির ও কুমিল্লা কারাগারে থাকা খাগড়াছড়ির শাহ আলম।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এই তিন আসামির আপিল হাই কোর্ট বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিদের কনডেম সেলে বন্দি রাখা কেন বেআইনি হবে না এবং কেন জেলকোডের ৯৮০ বিধি অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে জারি করা রুলের শুনানি শেষ হয় ২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর।