বিএনপির সময় বেঁধে দিয়ে আন্দোলনের ঘোষণা নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমি ফখরুল সাহেবকে বলতে চাই, আজ নয়-কাল এভাবে বলবেন না।”
Published : 18 Oct 2023, 08:23 PM
আগামী ২৮ অক্টোবর থেকে আন্দোলনের ‘মহাযাত্রা’ ঘোষণা করে বিএনপির সমাবেশের দিন আওয়ামী লীগ বিরোধী দলটিকে দিল ‘শেষ বার্তা’।
ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান শেখ হাসিনাই থাকবেন। ভোটে জিতে তিনি আবার প্রধানমন্ত্রী হবেন।
বুধবার রাজধানীর রায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগের এক সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে শেখ রাসেলের ৬০তম জন্মদিনে এই কর্মসূচির আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ।
একই দিন নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় ‘মহাসমাবেশ’ করার ঘোষণা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এই মহাসমাবেশ থেকে আমাদের মহাযাত্রা শুরু হবে। ইনশাআল্লাহ তারপরে সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা আর থেমে থাকব না।”
বিএনপির দাবি, নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনাকে সরে যেতে হবে, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে ভোট হতে হবে।
আওয়ামী লীগের সমাবেশ থেকে মির্জা ফখরুলকে উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমিও বার্তা দিয়ে দিচ্ছি, শেষ বার্তা। আপনি শেষ বার্তা দিয়েছেন ক্ষমতা ছেড়ে দিতে, আমি আপনাকে শেষ বার্তা দিচ্ছি, আগামী নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা নির্বাচনী সরকারের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন।
"বার্তা দিয়ে দিচ্ছি, নির্বাচনের পর আল্লাহর রহমতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে শেখ হাসিনা আবারও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদে বসবেন। এটাই আমাদের বার্তা। অন্যথা হবে না।”
‘অবরোধ করলে পাল্টা অবরোধ’
বিএনপি’র ‘ঢাকা অবরোধ’ কর্মসূচি দিলে আওয়ামী লীগ কী পদক্ষেপ নেবে, তা নিয়েও কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
দলের নেতা-কর্মীদের রাজপথে থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “অবরোধ করলে পাল্টা অবরোধ করুন। দাঁড়াতে দেব না।”
নেতা-কর্মীদের ‘উদ্যমী ও প্রত্যয়ী’ গতি ধরে রাখার আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, "এ স্পিরিট যেন থাকে। কেউ কেউ বলে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকলে স্পিরিট বাড়বে। সরকারি দলে থাকলে একটু নরম নরম। এখন তো দেখছি স্পিরিট আছে।"
শান্তিপূর্ণ নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন চেয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর বক্তব্য নিয়েও প্রতিক্রিয়া জানান তিনি। বলেন, “আমরা তো নির্বাচন চাই, আমরা কেন বাধা দেব? অবরোধ যারা করবে, ঢাকা অচল যারা করবে, তারাই বাধা দিচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে বন্ধুরা কী ব্যবস্থা নেয় আমরা তা দেখব।”
‘কেন, কার কাছে পদত্যাগ?’
বিএনপির সময় বেঁধে দিয়ে আন্দোলনের ঘোষণা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “আমি ফখরুল সাহেবকে বলতে চাই, আজ নয়-কাল এভাবে বলবেন না।
“কার কাছে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন? শেখ হাসিনা কোন দোষে পদত্যাগ করবেন? ম্যাজিক লিডার শেখ হাসিনা, বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট আট মিনিটে রাস্তা শেষ। এ হল ম্যাজিক লিডার। আট মিনিটে পদ্মাসেতুর এপার, ওপারে।”
বিএনপির আন্দোলন নিয়ে কটাক্ষও করেন আওয়ামী লীগ নেতা। বলেন, "মির্জা ফখরুলের পকেট গরম, মালপানি ভালো সরবরাহ, ভালো আসছে, পকেট গরম, ওনার কথাও গরম। আমাদেরকে ধমক দেয়, ভয় দেখায়।
“মির্জ ফখরুল পাঁচ তারা হোটেলের নাস্তা খেয়ে অনশন করেন তিন ঘণ্টা। আড়াই ঘণ্টা পরে বিদেশি জুস খেয়ে অনশন বন্ধ করে দেন। এ আন্দোলন তারা করছে আমাদের বার্তা দিচ্ছে, দিনক্ষণ বলে দিচ্ছে, কবে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে।“
বিএনপিকে ‘খুনির দল’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “এ অপশক্তির হাতে বাংলাদেশের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে পারি না।"
‘তত্ত্বাবধায়ক মরে গেছে’
তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর ফিরে আসবে না জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, "তত্ত্বাবধায়ক আজিমপুর গোরস্থানে চিরনিদ্রায় শুয়ে আছে। ওইটা আর ফিরে আসবে না। ওয়ান ইলেভেনের দুঃস্বপ্ন কি সফল হবে?"
‘পশ্চিমাদের সমর্থনে উৎসাহিত হচ্ছি’-বিএনপির মহাসচিবের এমন বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, "ফখরুল সাহেব, দুনিয়ার অবস্থা ভালো না। যাদের কথা বলছেন তাদের ঘর সামলানোই কঠিন হয়ে পড়েছে।
“যাদের কথা বলছেন তাদের চারপাশে অশান্তির আগুন, এ আগুন সামাল দিতে পারছে না। তারা ঘর সামলাবে না এখানে এসে আপনাকে উৎসাহ দেবে? সময় চলে গেছে। উৎসাহ দেওয়ার দিন চলে গেছে।"
সমাবেশে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের চিত্রও তুলে ধরেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, "নৌকা ছাড়া উপায় নাই। বাংলাদেশের শান্তি চাইলে নৌকা, সুখ চাইলে নৌকা, উন্নয়ন চাইলে নৌকা, মুক্তিযুদ্ধ চাইলে নৌকা, স্বাধীনতা চাইলে নৌকা।
“নৌকা ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র থাকবে না। গণতন্ত্র চাইলে নৌকায় ভোট দিতে হবে। সারা দেশে উন্নয়ন চাইলে শেখ হাসিনার নৌকায় ভোট দিতে হবে।”
‘আস্তে আস্তে মুদ্রাস্ফীতি কমছে’
জিনিসপত্রের দাম সারা দুনিয়ায় বাড়ছে দাবি করে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “দাম বাড়াচ্ছে বড় বড় শক্তি, আমরা তার শাস্তি পাচ্ছি। আস্তে আস্তে কমলেও মুদ্রাস্ফীতি কমে যাচ্ছে।”
দেশের মানুষকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আইএমএফের পরিচালক আজকে বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সঠিকভাবে চলছে। বাংলাদেশের ভবিষ্যত উজ্জ্বল, এটা আইএমএফ বলে গেছে।”
‘কোনো আলোচনা-সমঝোতা নয়’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, "ওরা (বিএনপি) যে অবস্থান ধর্মঘটের কথা বলছে, সেই অবস্থান ধর্মঘট ঢাকায় হবে না। আমরা সাধারণ মানুষ ওদের প্রতিহত করব।"
সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, "একাত্তরের-পঁচাত্তরের খুনি, ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলাকারীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হতে পারে না, কোনো সমঝোতা নয়। নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবিধানসম্মতভাবে নির্বাচন হবে। এক চুল ব্যত্যয় ঘটানোর সুযোগ নেই।”
সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মির্জা আজম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি, সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুর রহমানও এতে বক্তব্য দেন।