ভারত প্রকৃত তথ্যের বদলে উদ্দেশ্যমূলক, সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক অপপ্রচার চালিয়ে পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তুলেছে বলে বিবৃতিতে অভিযোগ করেছে জাসদ।
Published : 03 Dec 2024, 04:29 PM
ভারতে বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশনে হামলা, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে উভয় দেশের জনগণকে উগ্রবাদীদের ফাঁদে পা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ।
বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি জনাব শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান মঙ্গলবার এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, “আমরা দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছি যে, রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে ভারতের এক শ্রেণির ধর্মীয় উগ্রবাদী মহল বাংলাদেশ সরবকার ও জনগণের প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়াচ্ছে।”
“বাংলাদেশে এক শ্রেণির ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠী এখানে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পক্ষান্তরে ভারতীয় উগ্রবাদীদের হীন উদ্দেশ্য সাধনে সহায়তা করছে। আমরা বাংলাদেশ ও ভারতের গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল শক্তিসমূহকে উভয় দেশের সাম্প্রদায়িক শক্তির পাতা ফাঁদে পা না দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানচ্ছি।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণের বদলে তারা তাদের দেশের গণমাধ্যমে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার বিষয়ে প্রকৃত তথ্যের বদলে উদ্দেশ্যমূলক, সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক অপপ্রচার চালিয়ে পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তুলেছে।”
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিস্থিতি শান্ত করার পরিবর্তে বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর আবদার করে পরিস্থিতিকে আরো ঘোলাটে করতে সাহায্য করছেন বলেও মনে করে জাসদ।
সোমবার দুপুরের দিকের এ ঘটনায় বিক্ষোভকারীরা মিশনের প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ে হামলা চালায়। পরে তারা সেখানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলেছে বলে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়েছে। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়।
‘হিন্দু সংঘার্ষ সমিতি’ নামের ডানপন্থি একটি সংগঠনের আহ্বানে এদিন দুপুরে আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনে ব্যাপক বিক্ষোভের এ খবর দিয়েছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি সংবাদমাধ্যমও।
বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোর নিন্দা জানিয়ে ওই বিক্ষোভ হওয়ার কথা বলা হয় এসব খবরে।
এ ঘটনার পরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ বিষয়ক বিবৃতিতে বলা হয়, আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশন প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ার ঘটনা ‘গভীর দুঃখজনক’।
আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনে হামলার ঘটনাকে ‘পূর্বপরিকল্পিত’ হিসেবে অভিহিত করে এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ’নিষ্ক্রিয়তার’ অভিযোগ এনেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
এর আগে ২৮ নভেম্বর কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাই কমিশনের সামনে জাতীয় পতাকা এবং প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কুশপুত্তলিকা পোড়ানোর ঘটনায় কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী পাঠাতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিকে সোমবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে যোগ দিয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী পাঠাতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বানও জানান।
মমতার এই বক্তব্যের সমালোচনাও করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলো।