“এখন আপনারা নির্বাচনে যাবেন না, ধমক দেন। কোনো লাভ নেই,” বলেন তিনি।
Published : 23 Apr 2025, 05:52 PM
‘নির্বাচন খুব তাড়াতাড়ি হবে কিনা’ তা নিয়ে নিজের সংশয় প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
বুধবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা হচ্ছে।”
এ সময় মির্জা আব্বাস নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিসহ কয়েকটি দলের বক্তব্যের সমালোচনাও করেন।
এছাড়া প্রধান উপদেষ্টাকে তার ডানে-বাঁয়ে খেয়াল রাখার জন্য আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।
গত ৫ অগাস্ট অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ার মধ্যে বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের দাবি তোলে।
প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দাবি তুলেও এনসিপি পুরোপুরি সংস্কারের পর নির্বাচনের কথা বলছে। জামায়াতও সংস্কার, ফ্যাসিস্টের বিচার ও ‘সঠিক’ নির্বাচন পদ্ধতি চালুর শর্তে আগামী ফেব্রুয়ারির আগে নির্বাচন কঠিন বলে জানিয়েছে।
নির্বাচনের ‘রোডম্যাপ’ বিএনপি ১৬ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বিএনপি সন্তুষ্ট হতে পারেনি, যান সাংবাদিকদের কাছে স্পষ্ট করেই তুলে ধরেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মুহাম্মদ ইউনূস বলছেন, কম সংস্কার হলে ডিসেম্বরে নির্বাচন হতে পারে। আর পুরোপুরি সংস্কার হলে আগামী জুনে নির্বাচন করতে হবে।
এদিন আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা হচ্ছে।
“আমি একটা কথা বলি, যেটা আমার নিজের কথা…এটা কিন্তু আমার দলের কথা না। ইংরেজিতে একটা কথা আছে, যার অর্থ দাঁড়ায় ‘ভালো কিছু আশা করো, খারাপ কিছু চিন্তা করো’।
“আমি ভালো কিছু আশা করি। খারাপটা ভাবি এভাবে- সম্ভবত নির্বাচন খুব তাড়াতাড়ি উনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) করবেন না। আমি তার কোনো লক্ষণ আমি দেখি না।”
নির্বাচন নিয়ে কেন সংশয় তাও তুলে ধরেন মির্জা আব্বাস।
তিনি বলেন, “ড. ইউনুস সাহেব বলেছেন, ডিসেম্বরে না হোক জুনে হবে। এই কথাটাই আপনাকে একটা বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। একবার বললেন ডিসেম্বর, আবার বললেন জুন। বিব্রতকর অবস্থার জন্য আপনি নন, এটার জন্য আপনি দায়-দায়িত্ব বহন করেন না।
“আপনি ভোট ডিসেম্বরে বলার পরপরই অন্য একজন বলে দিলেন জুনে। পরে এটা আপনিও বলেছেন।”
‘কয়েকটা দল যা শুরু করেছে’
মির্জা আব্বাস বলেন, “কয়েকটা দলে যা শুরু করছে- এইটা না হলে নির্বাচন হবে না, ওইটা না হলে নির্বাচন হবে না, যদি এগুলো হতে থাকে তাহলে নির্বাচনটা কেমনে হবে ভাই।”
তিনি বলেন, “কেউ কেউ বলেই ফেলেছেন যে, আমরা নির্বাচনে যাবো না। আরে ভাই, কয়েকদিন আগে হলে আপনারা নির্বাচনে গেলেই কি না গেলেই কি? আপনাদের চিনতো ক্যাডা বাংলাদেশে? এখন আপনারা নির্বাচনে যাবেন না, ধমক দেন। কোনো লাভ নেই।”
‘জনগণকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র চলছে’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “আমাদের দেশটা খুব খারাপ অবস্থায় আছে। আমাদের দেশের জাতির, জনগণের, দলের প্রত্যেকের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। যদি বাংলাদেশের জনগণকে বিভক্ত করার যায় তাহলে এদেশে আবারও ভারতীয় আধিপত্যবাদের হাতে চলে যেতে হবে।”
“সুতরাং যে দলই হোক বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ যত দল আছে.. মতবিরোধ থাকতেই পারে আমাদের। কিন্তু জাতীয় স্বার্থে, দেশের স্বার্থে আমাদেরকে একটা কথা মনে রাখতে হবে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’’
জুলাই-অগাস্টে যেমন দেশের মানুষের মধ্যে ঐক্য দেখা গেছে, ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কিছু লোক ছাড়া পুরো জাতি যে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, সেটিকে দেশের মানুষের একমাত্র ‘অস্ত্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি, যা দিয়ে ফ্যাসিস্ট ও হানাদারদের বিতাড়িত করা হয়েছে।
মির্জা আব্বাস বলেন, “এখনো এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, আমাদের বিপরীত শক্তি আমাদের দ্বিধা-বিভক্ত করার চেষ্টা করছে সেদিকেও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।”
‘আপনার ডানে-বায়ে আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট’
বিএনপির এই নেতা বলেন, “সুফিউর রহমান (প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী-পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়), এ তো আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট, আরও আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট আপনার ডানে-বায়ে আছে। আপনি (অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস) দয়া করে এদের থেকে সাবধান থাইকেন। ওরা কিন্তু আপনাকে বিপথে নিয়ে যাবে।”
সচিবালয়ে কয়েকজন সচিব, বাইরে একজন সাবেক সচিব এবং উপদেষ্টা পরিষদের কিছু লোক প্রধান উপদেষ্টাকে সঠিত রাস্তায় চলতে দেবে না বলে দাবি করেন তিনি। তবে মির্জা আব্বাস কারো নাম বলেননি।
তিনি বলেন, “আপনি নভেল লরিয়েট, সারা বিশ্বের মানুষ আপনাকে শ্রদ্ধা করে, আপনার সারা জীবনের অর্জন এরা শেষ করে দেবে।”
বিএনপি ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার সফলতা চান বলে দাবি করেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, “আপনার সফলতার ওপরে নির্ভর করছে আমার দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব।”
‘বিএনপির লোক প্রশাসনে বসে আছে’, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা আব্বাস বলেন, “বাচ্চাদের মত কথা বলতেছেন। বাচ্চাদের মত ওনারা বলছেন, আমি নির্বাচনে যাবো না। কেন যাবো না, প্রশাসনের বিএনপি বইসা রয়েছে।
“আরে ভাই, বিএনপি কোথাও নাই। এসব কথা বলবেন না। ১৬ বছর দেশের প্রশাসনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে, সচিবালয়ের ভেতরে ফ্যাসিস্টদের দোসর, দেশের শত্রুগুলো বসে আছে, আওয়ামী লীগের দালালরা বসে আছে।
“তাদের কেন আপনারা বের করেন না? আমি যদি বলি তাদের কাছ থেকে আপনারা অবৈধ সুবিধা পাচ্ছে?”
ঢাকা সিটি করপোরেশন এক করা প্রসঙ্গে
অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মির্জা আব্বাস বলেন, “আমি এক সময়ে অবিভক্ত ঢাকার মেয়র ছিলাম, এটা গর্বের বিষয়। আমার মনে হয়, আল্লাহর রহমতে খারাপ চালাইনি। এই ঢাকাকে দুই ভাগ করল আওয়ামী লীগ। কাজটা কিন্তু ভালো করে নাই।”
“অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। এখন যদি দুই ঢাকা যদি এক করে তাহলে প্রক্রিয়া আছে, শুধু এক করলে হবে না। এখন ঢাকা খুব বড় হয়েছে, এক করলেই হবে না। সুবিন্যস্ত একটা প্রশাসন তৈরি করতে হবে।”
তিনি বলেন, “এই ঢাকা মহানগরীর অধীনে পুলিশ থাকবে, ওয়াসা থাকবে, তিতাস গ্যাস, বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্থাৎ ঢাকায় যা কিছু আছে- এগুলো নগর সরকারের অধীনে থাকবে। এমন একটা সুপারিশ স্থানীয় সরকার কমিশন করেছে, যা আজকে পত্রিকায় এসেছে দেখলাম, সেজন্য আমি কিছুটা বললাম।”
মশা নিধনে কীটনাশক ঔষধ ও যন্ত্রপাতি আনার বিষয়টা তুলে ধরে সাবেক এই মেয়র বলেন, “এখন অনেকে জানে না, এখন যে দেখতেছেন, কামান দিয়ে মশা মারছে? এই কামান যদি ঢাকায় না থাকতো তাহলে কি হত?
“আজকে বলি, এই মশা মারার কামান কিন্তু আমি এনেছিলাম আমদানি করে।”
জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে গণতন্ত্র ফোরাম ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্র, সংস্কার ও বাস্তবতা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
গণতন্ত্র ফোরামের সভাপতি ভিপি ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন- বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ ও গণতন্ত্র ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমান টিপু।