৪ জুলাই, ২০২১
এখন থেকে আর কোনও জন্মদিন শুভ নেই। অশুভের চাদরে ঢাকা পড়ে গেছে সব। কেমন একটা কঠিন সময় পার করছি আমরা । জোরে হাসিও না আজকাল । খিলখিল করে হাসতাম বলে জীবনে বকুনিও কম খাইনি। সেই হাসি ভুলতে বসেছি। ফোন এলে আতঙ্কিত থাকি সব সময়- কী অশুভ ঘটনা জানতে হবে! ঘুম ভেঙে কোন আপনজনের মৃত্যু সংবাদ শুনতে হবে সেটি নিয়েও থাকি উৎকণ্ঠিত। পরিবার, বন্ধু পরিচিত সবার কাছ থেকে ক্রমাগত কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার খবর আসছে ।
কি অসহায় আমি! দুই হাতে সরিয়ে দিতে চাই এ দুঃসময়কে । কিন্তু কিছুই করতে পারিনা । কখনো কি ভেবেছি কোভিড ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকবে এইভাবে ।
"গরমের দেশে করোনা হবে না, বয়স্করা ছাড়া কেউ মরবেন না"… এমন অনেক বক্তৃতা শুনেছি অনেকের কাছ থেকে । তাদের মধ্যে আবার চিকিৎসকও আছেন। নাম বলতে চাই না কিন্তু তারা আশ্বস্ত করেছিলেন। তারা বলেছিলেন- "বয়স্ক, যাদের ডায়াবেটিস , ব্লাড প্রেশার আছে তাদের মারা যাওয়ার আশঙ্কা বেশি। চিন্তার কিছু নেই।" কি অদ্ভুত কথা আমাদের মা বাবা, দেশের তাবৎ বুদ্ধিজীবী গুণীজন তারা তো বয়স্ক, তারা মারা গেলে ক্ষতি নেই? আমাদের শ্রদ্ধেয় স্যার আনিসুজ্জামান, কামাল লোহানি , মিতা হক, সৌমিত্র চট্টপাধ্যায় , কবরী আপা, মোস্তাফা কামাল সৈয়দ, বরকতুল্লা সাহেব করোনাভাইরাসে আক্রান্ত চলে গেছেন । আমার মাও চলে গেলেন । কোনও ক্ষতি হয়নি তাতে? কি সাংঘাতিক কথা বলে এরা ।
এ করোনাকালে আবার আমার জন্মদিন এসেছে। পৃথিবীর জন্য এমন কিছু করিনি যাতে আমার জন্মদিনে কারও কিছু এসে যাবে। কিন্তু নিজের কাছেতো অবশ্যই কিছু যায় আসে। আমার বাবা-মা আপনজনদের কাছেও হয়তো কিছু গুরুত্ব আছে। বাবা-মা তো আর নেই। আমার জন্মের দিনটি নিয়ে আব্বার ডায়েরির পাতায় এন্ট্রি আছে আজও। চকচক করছে আমার অস্তিত্বে । বিশে আষাঢ় জন্মে ছিলাম বলে নাম রাখা হয়েছিল বিয়াস বা বিপাশা।
আমার এক জন্মদিনে নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের সবচেয়ে বড় পার্কে বেড়াতে গিয়েছিলাম । সেখানে চায়নিজ এক বৃদ্ধা মাত্র দশ মিনিটে আমার একটা পেন্সিল স্কেচ করে দিয়েছিলেন। আব্বার কাছ থেকে জন্মদিনে বই উপহার পাওয়া ছাড়া এটাই ছিল আমার এ পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে ভালো উপহার। এখন শুধু একটাই উপহার সর্বাত্মকরণে আশা করি- করোনামুক্ত পৃথিবী। বুক বেঁধে আছি সেইদিনের অপেক্ষায়। ততদিন কোনও সেলিব্রেশন নয়, কোনও কেক কাটা নয়, কোনও উপহার নয়।