সংঘাতের পৃথিবী ও পরাশক্তির পুনর্মূল্যায়ন

বিশ্ব মোড়ল হিসাবে যারা পৃথিবীকে নিজেদের হাতের তালু মনে করছে তারা সংঘাত-সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দিচ্ছে।

সুরেশ কুমার দাশসুরেশ কুমার দাশ
Published : 2 Oct 2022, 01:06 PM
Updated : 2 Oct 2022, 01:06 PM

রাশিয়াকে নিয়ে যে আর বেশিদিন আগানো যাবে না, এটা রাশিয়ার মিত্র দেশগুলো বুঝে গিয়েছে। যুদ্ধের মাধ্যমে খাদ্য সঙ্কট সৃষ্টি করে বিশ্ববাসীকে বোকা বানাতে চেয়েছিল রাশিয়া। কিন্তু মুহূর্তে মুহূর্তে বদলে যাচ্ছে রাশিয়ার পরিস্থিতি। রাশিয়ার মতো পৃথিবীর অন্য একনায়ক কর্তৃত্বের রাষ্ট্রগুলোও দিন দিন বেসামাল হয়ে উঠছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘরে-বাইরে বিরোধিতার সম্মুখীন হচ্ছে। আগে বিরোধ ছিল শুধু বাইরে। এখন বিরোধ ঘরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। জাতীয়তাবাদের সেই মেকি আবেগ এখন আর উৎলানো যাচ্ছে না।

চীন-রাশিয়ার ‘নো লিমিট ফ্রেন্ডশিপ’-এর মধ্যেও চীন রাশিয়াকে একটি বার্তা দিয়েছে। উজবেকিস্তানের সমরকন্দে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা সম্মেলনে চীন প্রকাশ্যে রাশিয়ার সাত মাসের আক্রমণের বিষয়ে একটি অবস্থান নিয়ে বলেছেন, একে অপরের সীমানাকে সম্মান করা বেইজিংয়ের মূল বৈদেশিক নীতিগুলোর মধ্যে একটি।

একই ধরনের বার্তা দিয়েছে ভারতও। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে বলেছেন, এখন যুদ্ধের সময় নয়। মোদী প্রথমে এই সময় সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া খাদ্য সঙ্কটের কথা বলেন। তারপর সার ও জ্বালানি সঙ্কটের বিষয়টি তুলে ধরেন।

রাশিয়ার প্রধান মিত্র চীন। এরপর যদিও ভারতকে ধরা হয় তাহলে বোঝা যায় পুতিনের যুদ্ধে তার প্রথম দুই মিত্রই অখুশি। বন্ধুকে এছাড়া নিজের অসন্তোষের কথা বোঝানোর আর কোনো উপায় থাকে না। যেখানে চীনের সাথে ‘নো লিমিট ফ্রেন্ডশিপ’ রয়েছে।

যে শক্তিমত্তার দম্ভে রাশিয়া ইউক্রেইনে তথাকথিত ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ চালাচ্ছে তাতে কি মনে হয় না চীন যদি রাশিয়ার বিরুদ্ধ জোটে থাকত তাহলে তারা কি ইউক্রেইনকে সহযোগিতা করত না। কারণ রাশিয়া ইউক্রেইনের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদে যা শুরু করেছে তা অত্যন্ত অন্যায়। এই অন্যায় কখনো সমর্থন করা যায় না। এজন্য শি জিনপিং বলেছেন, একে অপরের সীমানাকে সম্মান করা হলো চীনের বৈদেশিক নীতিগুলোর মধ্যে একটি। আজ এই অন্যায়ের করাল গ্রাস গোটা পৃথিবীকে দিশেহারা করে তুলেছে। সবচেয়ে যা হয়েছে- কোটি কোটি মানুষের মুখে গ্রাস কেড়ে নিয়েছে রাশিয়া।

দাম্ভিক পুতিনের আজ ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা’ সেটা প্রকাশ্যে না হলেও ভেতরের আবেদন এটাই। রাশিয়াকে ইরান এবং কোরিয়া থেকেও অস্ত্র আনতে হচ্ছে। সিরিয়া যুদ্ধ থেকে রাশিয়া ধারণা করেছিল যে, পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় আনতে পারবে, তাদের ওই আত্মবিশ্বাস ইউক্রেইনের সাথে যুদ্ধে খান খান হয়ে পড়েছে। যে কারণে এখন পারমাণবিক শক্তির হুমকি দেওয়া ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই তাদের। দেশের বাইরের ভাড়াটিয়া সৈনিক দিয়ে যুদ্ধ সামাল দেয়ার ঘোষণা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। পুতিনের অযৌক্তিক কর্মকাণ্ডে দেশের মানুষ থেকে শুরু করে, দেশের রিজার্ভ সৈন্যরা পর্যন্ত নাখোশ। আসলে পুতিনের ইগো যে রাশিয়ার জাতীয়তাবাদী চেতনা নয়, সেটা জনগণের বিদ্রোহ থেকেই বোঝা যাচ্ছে।

পরাশক্তির নামে দুরাচারীরা কেউ শান্তিতে নেই। কৌশল আপনা আপনি বাঁক নিচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ থেকে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান দোস্তি আরও গাঢ় হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের কাছে ধর্ণা দিচ্ছে। কিছুদিন আগে এই যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইমরানের পক্ষ হয়ে জিগির তুলেছে পাকিস্তান। এখন সরকার বদলের পর পাকিস্তানের হাত টেনে বগলের নিচে জড়িয়ে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এজন্য তাকে এফ-১৬ যুদ্ধ বিমান দিচ্ছে সন্ত্রাস দমনের জন্য। যুক্তরাষ্ট্র বোঝাতে চাইছে, পাকিস্তানের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড একটা ভালো প্রোডাক্ট। যেটা পাকিস্তান সৃষ্টি করতে পারে বলেই পাকিস্তানই একমাত্র যোগ্য বন্ধু। এটা একইসাথে যে কারণে ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন, পাকিস্তানকে তার প্রতিদানও।

আর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এত বলার পরও যুক্তরাষ্ট্রের মন গলাতে পারেননি। তিনি বলেছেন, দীর্ঘ প্রায় পাঁচ দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রকে সন্দেহের চোখে দেখে এসেছে ভারত। যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক পররাষ্ট্রনীতি গভীর সতর্কতার সঙ্গে মূল্যায়ন করেছে দেশটি। তারপর তিনি বলেছেন, কিন্তু এখন তাদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য রকম সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এটা বলার অর্থ তাদের সাথে রাশিয়ার বিশ্বাসের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু আজকে রাশিয়ার আর সেই ইমেজ নেই। যে কারণে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের প্রমাণ দিতে মরিয়া বিবৃতি দিয়েছেন। কিন্তু কাজ হয়নি। কারণ যুদ্ধের শুরু থেকে রাশিয়া আর ভারতের মাখামাখি যুক্তরাষ্ট্র অন্তর থেকে সাপোর্ট করেনি। পক্ষান্তরে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের প্রমাণ হাজির করতে ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। কথা তো মিছা নয়, পাকিস্তানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের দোস্তি বহু পুরনো। ভারতের আগে থেকে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের অবিশ্বাসের সবচেয়ে বড় সূচনা বিন্দু। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিলে ইন্দিরা গান্ধীর কূটনীতি। সম্ভবত ওই কারণে জয়শঙ্কর তাদের বিশ্বাসহীনতার জন্য অনুতপ্ত। কিন্তু কতটুকু কাজ দেবে? সময় এলে বোঝা যাবে।

আর যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে’ যে যুদ্ধ শুরু করেছিল সেই সন্ত্রাসীদের কারখানা ছিল পাকিস্তান। সেই কারখানার সন্ত্রাসী দিয়েই বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নামে তাদের শক্তিমত্তার জানান দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে লাদেনকে হত্যা করলেও পাকিস্তানের কিছু যায় আসে না। কারণ অভিন্ন স্বার্থে লাদেনকে আশ্রয়-প্রশ্রয় ও সুযোগ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান। আর শেষপর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র লাদেনকে মেরে দিলেও পাকিস্তান লোকদেখানো হাহুতাশ করেছে। এটা যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তানের সিক্রেট চুক্তির অংশ হতে পারে কেবল।

পাকিস্তানের আর যাই থাকুক না কেন এ রকম খেলায় তারা সবাইকে কনভিন্স করতে পারে। একই ভারসাম্যের সূত্রে চীন-পাকিস্তান সম্পর্কও। দুটোই ভারতের প্রধান মাথাব্যথা। ভারতের যুক্তরাষ্ট্রের দরজায় ধর্ণা দেবার সেটাও একটা কারণ।

ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধ আর করোনা মিলিয়ে চীন তার শক্তিমত্তার প্রমাণ দিয়েছে। রাশিয়ার পক্ষ নিলেও চীনের ব্যাপারে নাক গলানোর সুযোগ পায়নি কেউ। বরং তাইওয়ানে এসে যুক্তরাষ্ট্র নাক গলাতে চাওয়ায় কিংবা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করায় চীন তাদের এমন তাড়া দিয়েছে– যুক্তরাষ্ট্র যা বোঝার বুঝে গেছে।

সম্পর্কের এই হিসাবনিকাশের মধ্যে রাষ্ট্রগুলোকে নিজেদের অভ্যন্তরীণ চাহিদাকে সামাল দেওয়ার বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। এই যুদ্ধ ও করোনা দিয়ে বিশ্বের পরাশক্তিগুলো নিজেদের ভবিষ্যত নতুনভাবে দেখছে। বিশ্বে আধিপত্যের ব্যাপারে নতুনভাবে বুঝছে। যুদ্ধ এবং করোনা মিলিয়ে ভারত একটা সক্ষমতার পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছে– সেটা নিজেদের অভ্যন্তরীণ চাহিদাকে সামাল দেওয়া। শুধু খাদ্য ও জনগণের চাহিদার দিক থেকে নয়, সামরিক শক্তির দিক থেকেও। আর কেবল খাওয়া-পরা সামাল দিলেই জনগণ যে রাষ্ট্রের জনগণবিরোধী আকাঙ্ক্ষা পূরণে এগিয়ে আসবে তা নয়। তারা এখন বিশ্বেও স্থিতিশীলতা চায়, বিশ্ব শান্তি চায়। সেটি রাশিয়াকে দিয়ে পরিষ্কার হয়ে গেছে। এজন্য একনায়ক শাসক পারমাণবিক শক্তির হুমকি দিয়েও সামান্য ইউক্রেইনকে মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছে। যেটা এখন পুতিনের জন্য ‘শাখের করাত’ হয়ে উঠেছে।

শেষ পর্যন্ত তাকে ইরানের একনায়ক খোমেনির কাছে ধর্ণা দিতে হচ্ছে। এর অর্থ ইরানে নারীদের ওপর চলমান জুলুমকে স্বীকৃতি দেওয়া, ধর্মের নামে তারা যে নাগরিকদের বিপক্ষ হয়ে উঠেছে– তাতে সায় দেওয়া। এ রাষ্ট্রগুলো জনগণের ইচ্ছা ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে গিয়ে নিজেদের মনমতো শাসনতন্ত্র কায়েম করেছে। এটা ইরানের জন্য সমর্থন হিসাবে দেখা দিয়েছে– নারী স্বাধীনতার বিরুদ্ধে আন্দোলনকে নিষ্ঠুরভাবে দমানোর।

তবে দেশের জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে বহিঃশক্তির সাথে লড়া কঠিন। সামনের দিনগুলোতে এই কঠিন বার্তা রাশিয়া পাচ্ছে, ইরানও পাবে। অন্যদিকে একই পন্থা অবলম্বনকারী দেশ মিয়ানমারকে রাশিয়া জোটবদ্ধ করেছে।

মিয়ানমারের জান্তা প্রধান রাশিয়ায় গিয়ে পুতিনের আশীর্বাদ নিয়ে এসেছেন। এসব দুর্বৃত্ত রাষ্ট্রপ্রধানরা জানে না জনগণের একটা নিরঙ্কুশ আস্থা অর্জন করতে না পারলে জাতিচেতনা নিয়ে তাদের যে কারবার সেটা বহুধা বিভক্ত হয়ে পড়বে। এবং গদি টালমাটাল হয়ে উঠবে। একই কারণে পুতিনের সেই জনগণের ভরসা আর আগের মতো নেই। যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো ঘটনা ঘটে গেলে অবাক হবার কিছুই থাকবে না।

তাতে অক্ষশক্তিগুলোর সম্পর্কে ফাটল ধরবে। ফাটলের মধ্য দিয়ে পুতিন ও পুতিনের মিত্রশক্তি দুর্বল হয়ে উঠবে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ঘায়েল করার জন্য যারা অপেক্ষা করছে তারা লাভবান হবে। তাদের বিরোধীপক্ষ শক্তিশালী হবে। ওই প্রেক্ষিতে চীন রাশিয়ার ইমেজ সঙ্কটের কারণে নিজের মতোই সব গোছাতে চাইবে। কারণ নিজের একক শক্তিতে বলিয়ান হওয়া ছাড়া উপায় নেই। অন্যদের সেইরকম ভাবে ভাবতে হবে।

বাস্তবতা হচ্ছে রাশিয়ার খনিজ জ্বালানি ও খাদ্যের উৎস না থাকলে অনেক দেশই তাদেরকে একঘরে করত। পুতিনের এক তরফা মাথামোটা সিদ্ধান্তের কারণে কেউ তো তার সাথে ঐক্য পোষণ করতে পারে না। কারণ এই যুদ্ধে খাদ্যকে ‘বড় অস্ত্র’ হিসাবে ব্যবহার করেছেন পুতিন। পুতিনের ইগোর কাছে হেরে গেছে মানুষ ও মানবতা। কোনো ধরনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা গ্রহণ না করে তিনি ইগোর বশবর্তী হয়ে একক সিদ্ধান্তে ইউক্রেইন আক্রমণ করেছেন। একই সাথে বিশ্বের একনায়ক ঘরানার শক্তিগুলোকে তার জোটে টানার চেষ্টা করেছেন। যে কারণে প্রত্যেক রাষ্ট্রের সাথে তাদের সম্পর্কগুলো পুনর্মূল্যায়ন হচ্ছে। প্রত্যেকের শক্তিমত্তার প্রমাণও সামনে আসছে। সুযোগমতো একজন আর একজনকে ঝুলিয়ে দিচ্ছে। এ থেকে ছোট রাষ্ট্রগুলোও রেহাই পাচ্ছে না।

এমন সময়ে বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমারের সম্পর্ককে আরও শত্রুতায় পর্যবসিত করতে সহযোগিতা করা হচ্ছে। যে কারণে সুদূর রাশিয়ার সমর্থন পেতে ছুটে গেছে মিয়ানমারের জান্তা সরকারপ্রধান। এই মিয়ানমারকে লালন-পালন করলে যেমন চীন-রাশিয়ার জোট ভারী হয়, তেমনি বাংলাদেশকে ব্যতিব্যস্ত রাখার ইচ্ছাও তাদের পূরণ হয়। চীন যে কৌশল অবলম্বন করে মিয়ানমারকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছে তার দীর্ঘমেয়াদি কৌশল হচ্ছে, বার বার চীনের কাছে বাংলাদেশের ধর্ণা দেওয়ার ফাঁদ তৈরি করা। ‘সর্প হয়ে দংশন করা আর ওঝা হয়ে ঝাড়ফুক’ করার জন্য এই ইস্যু থেকে জাতিসংঘকে বের করে দিয়েছিল চীন। আর তাদের ইশারা পেলেই মিয়ানমার বাংলাদেশের সাথে ঝামেলা বাধায়। এ কারণেই পুতিনের আশির্বাদ নিতে গেছেন মিয়ানমারের জান্তা প্রধান। এই আশির্বাদের জোরেই নিজের দেশের মানুষকে হত্যা করছে তারা। বাংলাদেশকে যুদ্ধেও উস্কানি দিচ্ছে। বাংলাদেশকে একটা যুদ্ধে জড়ানো গেলে তখন তো রোহিঙ্গা ইস্যু বিগত হয়ে পড়বে। তখন ইস্যু হবে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সংঘাত। কিন্তু মিয়ানমার জানে না পুতিনের বেলুন ফুঁটো হয়ে গেলে তার সামরিক জান্তার বন্ধু চীনেরও অঙ্গহানি হবে। শুধু পারমাণবিক অস্ত্র বড় কথা নয়, চীন ও পুতিন একই সাথে ইমেজ সঙ্কটে পড়বে। তখন মিয়ানমারের সন্ত্রাসী শক্তির বাড়বাড়ন্ত থেমে যাবে। এক পর্যায়ে ধরাশায়ী হয়ে পড়বে।

বিশ্ব মোড়ল হিসাবে যারা পৃথিবীকে নিজেদের হাতের তালু মনে করছে তারা সংঘাত-সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। এতে জনগণ রাষ্ট্রের কর্তাদের মতলব বুঝতে পারছে। সুতরাং বিশ্বকে খাদ্য সঙ্কটে ঠেলে দিয়ে, শুধু খাওয়া-পরা বা উন্নত জীবন নিয়ে তাদের জনগণ স্বস্তিতে আছে তা ভাবলে ভুল হবে। রাশিয়ার জনগণের বিক্ষোভ, মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি, চীনের উইঘুরদের দমন-পীড়ন, ইরানের বিক্ষোভ এসব রাষ্ট্রীয় অসুস্থতার লক্ষণ। এই অসুস্থতা সৃষ্টি করছে বিশ্ব মোড়লরা। একই সাথে দল ভারী করার জন্য নানা কায়দায় তারা সন্ত্রাসের দীক্ষাও দিয়ে যাচ্ছে।