কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদের রাজনৈতিক আদর্শ

তিনি সারাজীবন জেল-জুলুম-হুলিয়া মাথায় নিয়ে রাজনীতি করেছেন। কোনো প্রলোভন বা প্রাপ্তির মোহ কখনো তাকে আচ্ছন্ন করেনি। কোনো হুমকি ও নির্যাতন তাকে আদর্শ থেকে এক চুলও বিচ্যুত করতে পারেনি।

চিররঞ্জন সরকারচিররঞ্জন সরকার
Published : 9 Oct 2022, 07:11 AM
Updated : 9 Oct 2022, 07:11 AM

কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদ নামটি বাংলাদেশের অনেকের কাছেই অচেনা। বিশেষত বর্তমান প্রজন্মের কাছে ‘কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদ’ এক অচেনা নাম। এই ব্যক্তি বাংলাদেশের রাজনীতিতে কতটা মহীরুহে পরিণত হয়েছিলেন তা অনেকের কাছেই অজানা।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গণমানুষের নেতার নামটি বই-পুস্তকে, পত্রিকায়, টেলিভিশনে, রাজনৈতিক আলোচনায় কোথাও আর তেমনভাবে উচ্চারিত হয় না।

কমরেড ফরহাদ যে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন-বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি বা সিপিবি– সেই দলটিও বর্তমানে তেমন সুসংগঠিত নয়।

জাতীয় পর্যায়ে দলটির আর আগের মতো প্রভাব নেই। অথচ এই আশির দশকে দলটির কাণ্ডারি যখন ছিলেন কমরেড ফরহাদ, তখন অন্যরকম পরিস্থিতি ছিল। বলা চলে কমরেড ফরহাদের জীবদ্দশায় এটি ছিল দেশের অত্যন্ত সুসংগঠিত ও সুশৃঙ্খল একটি দল। এই দলের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবে বাংলাদেশে অজস্র প্রগতিশীল ধারার ছাত্র আন্দোলন, শ্রমিক আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন, ক্ষেতমজুর আন্দোলন, সাংস্কৃতিক আন্দোলন সর্বোপরি জাতীয় আন্দোলন পরিচালিত হয়েছে।

নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত এই দলটি ছিল বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের সাহসী ঠিকানা। আর এর সিংহভাগ কৃতিত্ব কমরেড ফরহাদের। নির্লোভ, নিরহঙ্কার মানুষ ছিলেন কমরেড ফরহাদ। সাদা পজামা-পাঞ্জাবী পরতেন। এত শান্ত-ধীর-স্থির নেতা বাংলাদেশে খুব কমই জন্মগ্রহণ করেছেন।

বিশ্বাস-আদর্শে, কথায়-কর্মে-আচরণে এমন আশ্চর্য মিল খুব কম মানুষের মধ্যেই থাকে। তিনি খুবই সাদা-মাটা জীবন যাপন করেছেন। প্রিয় খাবার ছিল সাদাভাত, আলু আর টাকি মাছের ভর্তা।

বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য তিনি যখন নিজ এলাকা পঞ্চগড়ের বোদায় যেতেন তখন তিনি নিজ মুখেই এই মেন্যুর কথা জানিয়ে দিতেন। তিনি মাঝে মাঝে ধূমপান করতেন– স্টার সিগারেট। সকালে ঘুম থেকে উঠে পত্রিকা পড়তে পড়তে চিনি কম বা চিনি ছাড়া এক কাপ আর একটা স্টার সিগারেটই ছিল তার নিত্যদিনের একমাত্র ‘বিলাসিতা।’

ছোটখাটো গড়নের এই মানুষটি কথা বলতেন আস্তে আস্তে, অত্যন্ত সাজিয়ে-গুছিয়ে, যুক্তি দিয়ে। তিনি জনসভায় কখনও ‘জ্বালাময়ী’ ভাষণ দিতেন না। বক্তব্য দেয়ার সময় মনে হতো তিনি যেন শ্রোতাদের সঙ্গে কথা বলছেন, এক ধরনের বোঝাপোড়া করছেন।

তার বক্তব্য শুনে গ্রামের নিরক্ষর মানুষও উজ্জীবিত হতেন। তিনি সবার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন, বলতেন সবার পরে। সব সময় ছিলেন ধীর-স্থির, সংযত। সহজেই আরেকজনকে জয় করে নিতে পারতেন। যতবড়ো ডাকসাইটে ব্যক্তিই হন না কেন, কমরেড ফরহাদের প্রখর ব্যক্তিত্বের সামনে সবাইকেই ম্রিয়মান মনে হতো। তাই তো প্রতিপক্ষের কাছেও তিনি ছিলেন সম্মানিত। বড়োরাও তাকে শ্রদ্ধা করতেন, সম্মান জানাতেন।

তিনি সারাজীবন জেল-জুলুম-হুলিয়া মাথায় নিয়ে রাজনীতি করেছেন। কোনো প্রলোভন বা প্রাপ্তির মোহ কখনো তাকে আচ্ছন্ন করেনি। কোনো হুমকি ও নির্যাতন তাকে আদর্শ থেকে এক চুলও বিচ্যুত করতে পারেনি। তার মতো উদার, সৎ, প্রকৃত দেশপ্রেমিক রাজনীতিক বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড়ো বেশি দেখা যায়নি।

একজন রাজনৈতিক নেতার মধ্যে কমরেড ফরহাদের মতো এতসব দুর্লভ গুণাবলি আমাদের দেশে সত্যিই বিরল। আদর্শ, সততা, মানুষের প্রতি গভীর অনুরাগ, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, মেধা, শ্রম, অনুশীলন, ধী-শক্তি– সকল গুণের সমাহার ছিলেন তিনি। আর এসব দুর্লভ গুণের সম্মিলনের কারণেই তিনি বাংলাদেশের মতো অশিক্ষা-কুশিক্ষা-কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মভীরু মানুষের দেশেও কমিউনিস্ট পার্টিকে গণ-মানুষের পার্টিতে পরিণত করতে পেরেছিলেন।

‘নাস্তিক’, ‘রাশিয়ার দালাল’ ইত্যাদি কঠিন অপবাদ-অপপ্রচারের মধ্যেও দলটি দেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়েছিল। এই কৃতিত্বও নিঃসন্দেহে কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদের। নিজগুণেই তিনি দলের পরিচয়কে ছাপিয়ে জাতীয় নেতার মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। দলকে পরিণত করেছিলেন জাতীয় রাজনৈতিক দলে।

পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার জমাদারপাড়া গ্রামে এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে তার জন্ম। তার কৈশোর কেটেছে দিনাজপুরে। সেখানেই তার রাজনীতির হাতেখড়ি। ছাত্রাবস্থাতেই তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত হন। নেতৃত্ব দেন বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে। দিনাজপুরে কলেজ জীবন শেষ করে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর ক্রমেই তিনি পরিণত হন পাকিস্তানের স্বৈরশাসনবিরোধী বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের প্রাণ-পুরুষে।

বাঙালি জাতির মুক্তির সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় সংঘটিত বিভিন্ন জাতীয় আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফার আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধ প্রতিটি ক্ষেত্রে কমরেড ফরহাদ ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায়। কখনও জেলে, কখনও আত্মগোপনে, কখনও সংগ্রামী মানুষের সঙ্গে থেকে তিনি আন্দোলন-সংগ্রাম সংগঠিত করেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন।

তিনি কমিউনিস্ট পার্টি বিস্তারের জন্য কাজ করেছেন। বিভিন্ন সময়ে কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ হওয়ায় সমমনা দলের মধ্যে থেকে কাজ করেছেন। আন্দোলনের জোট গড়েছেন।

দল ও জোটের রণনীতি ঠিক করেছেন। নির্ধারণ করেছেন ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা। এভাবে তিনি সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। আমৃত্যু। ব্যক্তিগত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, আরাম-আয়েশকে বিসর্জন দিয়ে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে।

প্রথাগত রাজনৈতিক দল ও রাজনীতি দিয়ে দেশ ও দেশের গরিব-মেহনতি মানুষের প্রকৃত মুক্তি সম্ভব নয়, এ জন্য প্রয়োজন গণমানুষের পক্ষের সাচ্চা দেশ প্রেমিকদের সংগঠন– এই উপলব্ধি থেকে স্বাধীনতার পর তিনি দলগড়ার কাজে মনোনিবেশ করেছেন। কিন্তু স্বাধীনতা উত্তরকালে বহুমুখী সংকট ও জাতীয়-আন্তর্জাতিক নানা ষড়যন্ত্র দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দেয়।

ওই সময় দেশের কল্যাণে সঠিক ভূমিকা নির্ধারণ বেশ জটিল এক বিষয়ে পরিণত হয়। জাতীয় জীবনের এই চরম সংকটকালে তিনি অত্যন্ত ধীর-স্থিরভাবে দলের করণীয় নির্ধারণ করেছেন। সে সময় উগ্রবাম ও কায়েমী স্বার্থবাদীদের হঠকারী কর্মকাণ্ডের মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টি দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে বঙ্গবন্ধু সরকারকে সমর্থন করার নীতি গ্রহণ করে। কিন্তু শাসক দলের অদূরদর্শিতা, কঠোর ও যথাযোগ্য ভূমিকা পালনে ব্যর্থতা এবং দেশের ভেতর ও বাইরের সাম্রাজ্যবাদী প্রতিক্রিয়াশীল অপশক্তির ষড়যন্ত্রে সকল ব্যবস্থাই অকার্যকর হয়ে যায়। সামরিক লেবাসে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ক্ষমতা কুক্ষিগত করে বসে। স্বাধীন দেশে জারি হয় সামরিক শাসন।

পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর দেশপ্রেমিক শক্তির ওপর নেমে আসে সীমাহীন দমন-পীড়ন নির্যাতন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের কারণে কমিউনিস্টদের আবার আত্মগোপনে চলে যেতে হয়। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও কমরেড ফরহাদ তার জাদুকরী সাংগঠনিক শক্তি দিয়ে রাজনৈতিক শক্তিকে আবারও সংগঠিত করার চেষ্টা চালান। তার ঐকান্তিক চেষ্টায় দেশের গণতান্ত্রিক ধারার রাজনৈতিক দলগুলোই শুধু ঐক্যবদ্ধ হয়নি, কমিউনিস্ট পার্টিও শক্তি সঞ্চয় করে।

কিন্তু সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমান কমরেড ফরহাদের এই তৎপরতাকে মেনে নিতে পারেনি। তিনি কমরেড ফরহাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার মিথ্যে অভিযোগ এনে তাকে জেলে নিক্ষেপ করেন। শক্তি দিয়ে কমরেড ফরহাদকে স্তব্ধ করার চেষ্টা করেন। যদিও সামরিক শাসক জিয়ার এই উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। জাতীয়-আন্তর্জাতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করে এক সময় কমরেড ফরহাদকে বেকসুর খালাস দিতে তিনি বাধ্য হন।

এরপর ক্ষমতার পালাবদলে আরেক সামরিক শাসক এরশাদের আবির্ভাব ঘটে। দমন-পীড়নের সঙ্গে সঙ্গে নানা রকম কূটবুদ্ধি দিয়ে তিনি রাজনৈতিক শক্তিকে ঘায়েল করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। ওই সময় কমরেড ফরহাদ বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিস্ময়কর সাফল্য দেখান। তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দল গঠন ও গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহের মধ্যে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলার কাজটি সুচারুভাবে সম্পন্ন করেন।

কৃষক, ক্ষেতমজুর, নারী, ছাত্র-যুবদের নিয়ে তাদের নিজস্ব দাবি-দাওয়ার ভিত্তিতে গড়ে তোলেন একের পর এক নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন। শাসকদের জন্য কমিউনিস্ট পার্টি ও কমরেড ফরহাদ এক ভীতিকর নাম হিসেবে দেখা দেয়। এ সময় কমিউনিস্ট পার্টি অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বিকশিত হতে থাকে।

পাশাপাশি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য গড়ে ওঠে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে এরশাদ আকস্মিকভাবে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে। তার ধারণা ছিল বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করবে, আর এই সুযোগে তিনি কিছু অনুগত দলকে সঙ্গে নিয়ে একটা পাতানো নির্বাচন করে বাজিমাৎ করবে। কিন্তু কমরেড ফরহাদ শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে সামরিক শাসন প্রত্যাহারের শর্তে তাৎক্ষণিকভাবে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেন।

কমরেড ফরহাদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকে ‘আন্দোলনের অংশ’ ঘোষণা করে একইসঙ্গে চমক এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন ইতিবাচক ধারা সৃষ্টি করেন। কমরেড ফরহাদের দূরদৃষ্টি, কৌশলের কাছে সামরিক শাসক এরশাদের রাজনীতি প্রচণ্ড মার খায়। ১৯৮৬ সালে ঐক্যবদ্ধভাবে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে উন্মোচিত হয় সামরিক শাসক এরশাদের প্রকৃত চরিত্র।

ভোট-ডাকাতি, কারচুপি, মিডিয়া ক্যু করে শেষ পর্যন্ত এরশাদ আওয়ামী লীগ, কমিউস্ট পার্টিসহ আটদলীয় জোটের বিজয় ঠেকিয়ে দেয়। কিন্তু এতে করে এরশাদ আরও বেশি কোণঠাসা হয়ে পড়েন।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ, কমরেড ফরহাদের নেতৃত্বধীন কমিউনিস্ট পার্টিসহ আটদলীয় জোট সংসদে গিয়ে সরকারের সমালোচনায় সোচ্চার হন। অন্যদিকে চলতে থাকে রাজপথের আন্দোলন। ‘সংসদের ভেতরে-বাইরে’ সরব হওয়ার এই রাজনীতির কাছে এরশাদের জনসমর্থন ক্রমেই কমতে থাকে।

এমন পরিস্থিতিতে ১৯৮৭ সালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ৯ অক্টোবর সোভিয়েত ইউনিয়নে চিকিৎসারত অবস্থায় কমরেড ফরহাদ মারা যান। থেমে যায় বাংলাদেশের রাজনীতির এক বিস্ময়কর প্রবাদপুরুষের কর্মযজ্ঞ।

কমরেড ফরহাদ যে দলের হয়ে রাজনীতি করেছেন, যে স্বপ্ন ও আদর্শ বাস্তবায়নের দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে রাজনীতি করেছেন তা বর্তমানে অনেকের কাছেই হয়তো অলীক মনে হতে পারে। সমাজ বিপ্লবের স্বপ্ন দেখা, নিজেকে ‘বিপ্লবী’ মনে করা এবং সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার কথা খুব সম্ভবত এখন পাগলামী হিসেবেই সমাজে পরিগণিত হবে। অথচ মাত্র দু-দশক আগে কমরেড ফরহাদের জীবদ্দশায় এটা ছিল দেশের লাখ লাখ তরুণের একান্তই স্বাভাবিক ও সঙ্গত স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন দেখার এবং দেখানোর মানুষ ছিলেন কমরেড ফরহাদ।

বইয়ের ভাষায় ‘সর্বহারার একনায়কত্ব’, সমাজতন্ত্র বা সাম্যবাদী ব্যবস্থা কায়েমের প্রশ্নটি হয়তো বাস্তব কারণেই ফিকে হয়ে গেছে। মার্কস-লেনিন যেভাবে সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন, কমরেড ফরহাদ আমৃত্যু যে চেতনা ধারণ করেছিলেন, বর্তমান সমাজ বাস্তবতায় তা অনুসরণ করা হয়তো পুরোপুরি সম্ভব নয়। জ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর বর্তমান মানুষের জীবনাচরণে বিস্ময়কর পরিবর্তন ঘটেছে। সমাজ, রাষ্ট্র বিন্যাস ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূল নীতিগুলোর দুর্বলতা কিন্তু এখনও রয়েই গেছে।

সমাজে ধনী-গরিবের মধ্যে ধনের বৈষম্য দিন দিন দিন বাড়ছেই। অল্প কিছু মানুষ সমাজের সব সম্পদ কুক্ষিগত করে রেখেছে। অথচ সমাজে বেশিরভাগ মানুষ গরিব। তারা শ্রম দেয়, কিন্তু শ্রমের ন্যায্য মজুরি পায় না। সমাজের সব সুযোগ-সুবিধা-অধিকার অল্প কয়েকজন মানুষের দখলে। তারাই আইনপ্রণেতা। তারাই শাসক। তাদের স্বার্থেই সব কিছু পরিচালিত হয়। তারাই নানা ফিকিরে আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যায়। তারাই প্রভু। তারাই দেবতা। বাকিরা তাদের সেবাদাস। যে সমাজে শোষণ-বঞ্চনা-মানবাধিকার লঙ্ঘন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা, সে সমাজে কমরেড ফরহাদের আদর্শ, তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রশ্নটি অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক এবং জরুরি।