প্রতিশোধ, নাকি সক্ষমতার পরিচয়পত্র

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাসকে একটি চিত্রকর্ম উপহার দিয়েছেন। চিত্রকর্মটি পদ্মা বহুমুখী সেতুর। কোনো কোনো গণমাধ্যমে এটাকে শেখ হাসিনার ‘মধুর প্রতিশোধ’ হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে।

বিভুরঞ্জন সরকারবিভুরঞ্জন সরকার
Published : 4 May 2023, 04:45 AM
Updated : 4 May 2023, 04:45 AM

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্ব ব্যাংকের সদর দপ্তরে ব্যাংকটির নির্বাহী পরিচালকদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময় শেষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাসকে একটি চিত্রকর্ম উপহার দিয়েছেন। চিত্রকর্মটি পদ্মা বহুমুখী সেতুর।

বাংলাদেশ ও বিশ্ব ব্যাংকের অংশীদারত্বের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট এ উপলক্ষে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।

চিত্রকর্মটি হস্তান্তরের ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। অনেকের মধ্যে এই উপহার নিয়ে বেশ উচ্ছ্বাসও লক্ষ করা গেছে। কোনো কোনো গণমাধ্যমে এটাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘মধুর প্রতিশোধ’ হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে। কেন এমন বলা হচ্ছে? আমাদের এটা জানা আছে যে ২০১২ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে ১২০ কোটি ডলারের ঋণ বাতিল করেছিল বিশ্ব ব্যাংক। কিন্তু বিশ্ব ব্যাংক তার দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। এ ছাড়া কানাডার আদালত ২০১৭ সালে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের কোনো প্রমাণ পাননি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার এ অভিযোগ মিথ্যা বলে এসেছেন এবং বিশ্ব ব্যাংক সরে যাওয়ার পর নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছিলেন তিনি। অনেক পণ্ডিত-অর্থনীতিবিদ প্রধানমন্ত্রীর ওই আশাবাদ নিয়ে বিদ্রুপ করতেও ছাড়েননি। কিন্তু বাংলাদেশ অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। সব প্রতিকূলতা-বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে পদ্মাসেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে। সেতুটি গত বছরের ২৫ জুন উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এখন প্রতিদিন ওই সেতু দিয়ে হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করছে। নিন্দুকদের থোতা মুখ ভোতা হয়েছে। পদ্মাসেতু বাংলাদেশের সাহস ও সক্ষমতার প্রতীক। আর এই সাহস ও সক্ষমতার লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন শেখ হাসিনা। বিশ্ব ব্যাংকের প্রধানের হাতে পদ্মাসেতুর ছবি তুলে দিয়ে শেখ হাসিনা কোনো মধুর প্রতিশোধ নিয়েছেন বলে আমি মনে করি না। বরং এর মাধ্যমে শেখ হাসিনা দেশের ও তার সরকারের সক্ষমতার পরিচয়পত্র তুলে ধরেছেন বিশ্ব ব্যাংকের সামনে। পদ্মাসেতু নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কের যে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছিল, তারও সম্মানজনক পরিসমাপ্তি ঘটেছে বলেও ধরে নেওয়া যায়।

বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস বাংলাদেশের পরিবর্তিত বাস্তবতাকে স্বীকার করে নিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন সাফল্য থেকে অনেক দেশ শিক্ষা নিতে পারে। রেকর্ড সময়ের মধ্যে দারিদ্র্য হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ন, দেশব্যাপী বিদ্যুতায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার উদ্ভাবনী পদ্ধতির জন্য স্বতন্ত্র।

বাংলাদেশ নজিরবিহীন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে উল্লেখ করে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, বৃহত্তম উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে আয় বৃদ্ধি ও দারিদ্র্য হ্রাসে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে আমরা স্বাগত জানাই।

ডেভিড ম্যালপাস বলেন, বেসরকারি খাতকে আরও শক্তিশালী করতে, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, করের ভিত্তি প্রসারিত, আর্থিক খাত শক্তিশালীকরণ এবং অর্থনৈতিক ও জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রতি বিশ্ব ব্যাংক তার সমর্থন অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্টের এসব ইতিবাচক বক্তব্যে কেউ কেউ হয়তো অখুশি হবেন। বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান যদি কোনো নেতিবাচক কথাবার্তা বলতেন তাহলে তা নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে যেভাবে গলা উঁচিয়ে কথা বলা যেত, এখন তা সম্ভব হবে না। যারা বাংলাদেশকে দেউলিয়া দেখতে চান, তারা হোঁচট খেয়ে এখন কোন ধারায় সমালোচনা শুরু করবে, দেখার বিষয় সেটাই।

সরকারের যারা ভালো চায় না তাদের জন্য আরও খারাপ খবর হলো, বাংলাদেশকে ২২৫ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। আঞ্চলিক বাণিজ্য ও যোগাযোগ, দুর্যোগ প্রস্তুতি ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনার পাঁচটি উন্নয়ন প্রকল্পে এ ঋণ দেওয়া হবে।

১ মে বিশ্ব ব্যাংকের সদর দপ্তরে বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থার মধ্যে এ–সংক্রান্ত ঋণচুক্তিপত্র বিনিময় হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

ঋণচুক্তির পাঁচটি প্রকল্প হলো: পূর্ব–দক্ষিণ এশিয়ায় পরিবহন ও বাণিজ্য সংযোগ ত্বরান্বিতকরণ (অ্যাকসেস)-বাংলাদেশ ফেজ-১ প্রকল্প, যার মূল্য ৭৫৩ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

স্থিতিস্থাপকতা, অভিযোজন ও দুর্বলতা হ্রাসের জন্য ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার বিল্ডিং প্রজেক্ট (রিভার), যা বাংলাদেশের ডেলটা প্ল্যান ২১০০–কে সমর্থন করার জন্য প্রথম বড় বিনিয়োগ হবে। এটি অভ্যন্তরীণ বন্যার বিরুদ্ধে দুর্যোগ প্রস্তুতি উন্নত করতে সহায়তা করবে।

৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ফার্স্ট বাংলাদেশ গ্রিন অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট (জিসিআরডি), প্রকল্পটি এ ধরনের প্রথম ঋণ, যা দেশের স্থিতিস্থাপক উন্নয়নে রূপান্তরে সহায়তা করবে।

২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সাসটেইনেবল মাইক্রোএন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড রেজিলিয়েন্ট ট্রান্সফরমেশন (স্মার্ট) প্রকল্পের লক্ষ্য ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা খাতকে আরও গতিশীল, কম দূষণকারী, সম্পদ দক্ষ এবং জলবায়ু সহনশীল প্রবৃদ্ধি খাতে রূপান্তর করতে সহায়তা করা।

২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল সাসটেইনেবিলিটি অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (বেস্ট) প্রকল্পটি পরিবেশ ব্যবস্থাপনা জোরদার করতে এবং সবুজ বিনিয়োগে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করবে।

 দুই.

ঢাকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও কিছু দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের ঘন ঘন দেখা-সাক্ষাৎ, মতবিনিময়, তথ্যবিনিময় এবং কয়েকজন কূটনীতিকের কিছু প্রকাশ্যে মন্তব্যের কারণে কারো কারো মনে এমন ধারণা জন্মেছিল যে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনার সরকার বুঝি বড় চাপের মুখে আছে। যারা এমন মনে করতেন, তাদের জন্য দুঃসংবাদ হলো, জাতীয় নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ১ মে সোমবার দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উপপ্রধান মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল।

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন। আইএমএফ ও বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান বাংলাদেশের উন্নয়নে তাঁর নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন।

খুব শিগগির বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে রাজপথের বিরোধী দল এ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশের এই পরিস্থিতিকে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে দেখছে– জানতে চাইলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, নির্বাচন নিয়ে বলতে গেলে যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন চায়, যাতে বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হয়। এটি যেহেতু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ঘরোয়া নির্বাচন, তাই এর বাইরে আর কিছু বলার নেই।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র গত বছর সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করেছে। আমরা এ সম্পর্ককে আরও গভীর করার জন্য উন্মুখ। অনেক ক্ষেত্র রয়েছে, যেখানে আমাদের প্রচুর সহযোগিতা এবং সম্পৃক্ততার সম্ভাবনা আছে। জলবায়ু পরিবর্তন, অর্থনীতি, মানবিক সংকট মোকাবিলাসহ অনেক বিষয় রয়েছে, যেখানে দুই দেশ আরও কাজ করতে পারে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র যদি অন্য সুরে কথা বলতেন তাহলে দেশে শোরগোল পড়ে যেত। কিন্তু নির্বাচনকে যেহেতু তিনি ‘অভ্যন্তরীণ’ বিষয় বলে উল্লেখ করেছেন, সেহেতু এটা গুরুত্বপূর্ণ খবর হয়ে উঠতে পারেনি। খবরের কাগজগুলো এটা লুফে নেয়নি। বিশ্ব রাজনীতি যে বিএনপির স্টাইলে চলে না, সেখানে যে শুধু ‘না' দিয়ে সবকিছু সাজানো নয়, সবারই যে নিজস্ব অ্যাজেন্ডা ও স্বার্থ আছে – সেটা বিবেচনায় না নিলে চলবে কেন? বাংলাদেশে একটি অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন হোক – এটা সবারই চাওয়া। কিন্তু কীভাবে নির্বাচন অবাধ ও স্বচ্ছ হবে তা ঠিক করার দায়িত্ব বাংলাদেশের মানুষের, রাজনীতিবিদদের। চাপিয়ে দেওয়া সমাধান কে মানবে?

তিন.

কিন্তু দেশে যে একটি রাজনৈতিক সংকট আছে, তা তো আর মিথ্যে নয়। মূল সংকট, দেশের রাজনীতি মোটা দাগে দুই ধারায় বিভক্ত। এক ধারার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, এখন ক্ষমতায় আছে। অন্য ধারার নেতৃত্বে বিএনপি, প্রায় দেড় যুগ ধরে ক্ষমতার বাইরে। ক্ষমতায় যেতে বিএনপি উদগ্রীব। কিন্তু তারা নিজেদের পছন্দের ছকে নির্বাচন চায়। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরও তো পছন্দ আছে। তারা কেন বিএনপির শর্ত মানবে? আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এই সংকট সমাধানের কোনো সুযোগ আছে কি? বলা হয়ে থাকে, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। তবে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

যুক্তরাষ্ট্র সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘কাদের সঙ্গে আলোচনা করব? এক তো সাজাপ্রাপ্ত আসামি, তারপর আবার আমার বাবা-মা ও ভাই-বোনদের খুনি, যুদ্ধাপরাধী। তারপরও দেশের স্বার্থে, দেশের গণতন্ত্রের স্বার্থে অনেক উদারতা দেখিয়েছি। তবে এখন আর তাদের সঙ্গে কথা বলার মতো কিছু নেই।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমার ২১ হাজার নেতাকর্মীকে তারা হত্যা করেছে, মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার করার পর সেসব মানুষের পরিবারগুলো যে কষ্ট পাচ্ছে। যারা পুড়েও বেঁচে আছে, তাদের সকলের চিকিৎসার ব্যবস্থা আমরা করেছি। পোড়া মানুষগুলোর কষ্ট দেখলে আর ওদের (বিএনপির) সঙ্গে বসতে ইচ্ছে হয় না। মনে হয়, ওদের সঙ্গে বসলে আমি পোড়া মানুষগুলোর গন্ধ পাই।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেছেন, ‘বিএনপির সঙ্গে বারবার আলোচনা করেছি। কিন্তু আসলে বিএনপি এমন একটি রাজনৈতিক দল যেটি সৃষ্টি করেছে একজন সামরিক শাসক। যে ১৯৭৫ সালে আমার বাবা, মা, ভাই, বোনকে হত্যা করেছে। একজন প্রেসিডেন্টকে হত্যা করে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। একজন সেনাপ্রধান নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে চেয়ারে বসল। বসে হ্যাঁ-না ভোটের নামে নাটক, সেখানে না নয়, সব হ্যাঁ ভোটই হয়ে গেল। পরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করল। এর পরে গিয়ে রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করল, ক্ষমতায় বসে থেকে। এ কথাটা সবাইকে মনে রাখতে হবে, অস্ত্র হাতে নিয়ে ক্ষমতা দখল করে, ক্ষমতায় বসে থেকে যে রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করা হয়েছে সেটাই হচ্ছে বিএনপি।’

ভয়েস অব আমেরিকার শতরূপা বড়ুয়াকে দেওয়া ভিডিও সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি সৃষ্টির পর ১৯৭৯ সালে যে নির্বাচনটা করল, সেটা কিন্তু সম্পূর্ণ ভোট কারচুপির যে দৃষ্টান্ত বলতে গেলে তারাই সৃষ্টি করল। হ্যাঁ-না ভোট, রাষ্ট্রপতি ভোট এবং জাতীয় সংসদের ভোট। এই যে আমাদের যে ভোট কারচুপির যে কালচারটা শুরু করল, সেটা কিন্তু বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার জন্য। আমাদের দেশের গণতন্ত্রের করুণ ইতিহাস। কারণ, আমি বলব সামরিক শাসকেরাই কিন্তু ক্ষমতা দখল করেছে। জনগণের সমস্ত ক্ষমতাটা সেনানিবাসেই বন্দি ছিল।’

সেনানিবাস থেকে গণতন্ত্র মুক্তি পেলেও ভোট নিয়ে বিতর্ক শেষ হয়নি। শেখ হাসিনা ‘আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো' স্লোগান দিয়ে ভোটের যে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন, তা কি বহাল আছে? আগামী নির্বাচনে প্রত্যেক ভোটার নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।