রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো কি আদৌ সম্ভব?

যুক্তরাষ্ট্র ধাপে ধাপে কিছু রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং প্রথম ধাপে ২৪ জনের একটি দল সেখানে গিয়েছে। ১২ লাখ শরণার্থীর মধ্যে মাত্র ২৪ জনকে আশ্রয় দেওয়া পুরো সংকট সমাধানে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না কিন্তু এর একটা প্রতীকী মূল্য রয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় আয়তনে বড় এবং অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী পাশ্চাত্যের দেশগুলো এমনকি সচ্ছল মুসলিম দেশগুলোও যদি রোহিঙ্গাদেরকে তাদের দেশে আশ্রয় দেয় তাহলে এই রাষ্ট্রহীন জাতির মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকা সম্ভব হবে।

আমীন আল রশীদআমীন আল রশীদ
Published : 12 May 2023, 08:05 AM
Updated : 12 May 2023, 08:05 AM

জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা যে এখন বাংলাদেশের জন্য গলার কাঁটা বা বিষফোঁড়ায় পরিণত হয়েছে—সে কথা স্বীকার করছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরাও। গত ১৯ জানুয়ারি বাংলা একাডেমিতে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘বিভিন্ন ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া থাকলেও সেসব কাঁটাতারের বেড়া কেটে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার থেকে ইয়াবা নিয়ে আসছে। আমি বলছি তারা আমাদের জন্য বিষফোঁড়া হবে।’ (ঢাকা ট্রিবিউন, ১৯ জানুয়ারি ২০২৩)।

এরকম বাস্তবতায় সম্প্রতি রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখতে যান ২০ রোহিঙ্গাসহ ২৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে তিন নারীসহ ২০ জন রোহিঙ্গা, ছয়জন সরকারি কর্মকর্তা ও একজন অনুবাদক ছিলেন। গত ৫ মে সকালে কক্সবাজারের টেকনাফের ট্রানজিট জেটি ঘাট দিয়ে প্রতিনিধি দল মিয়ানমারের উদ্দেশে যাত্রা করেন। ওই দিনই বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে একই পথে টেকনাফে ফিরে আসেন তারা। 

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে দম বন্ধ করা পরিবেশ তথা অনিশ্চয়তার মধ্যে এই ঘটনা হয়তো কিছুটা ‘আইসব্রেকিং’। অন্তত বাংলাদেশ থেকে একটি প্রতিনিধি দলের মিয়ানমারে যাওয়া এবং মিয়ানমার সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে রাখাইন রাজ্যের ১৫টি গ্রাম ঘুরে দেখাকে সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্তে কিছুটা আলোর ইঙ্গিত বলেও মনে হতে পারে। কিন্তু দেশটির নাম যেহেতু মিয়ানমার এবং জাতিটির নাম রোহিঙ্গা—ফলে তাদের প্রত্যাবাসনে এখনও অনেক ‘যদি কিন্তু’ রয়ে গেছে।

গণমাধ্যমের খবর বলছে, চলতি মাসের মধ্যে চীনের মধ্যস্থতায় পাইলটভিত্তিতে প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। কিন্তু রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য সবচেয়ে জরুরি যে নাগরিকত্ব, সেই ইস্যুতে গলা ছেড়ে কাশছে না নেপিদো। অর্থাৎ মিয়ানমার তাদেরকে এনবিসি কার্ড (অতিথি কার্ড) দিয়ে নিয়ে যেতে চায়। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বলেছে, সেখানে যাওয়ার ছয় মাস পর নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু এই বাকির খাতায় রোহিঙ্গারা শূন্য দেখতে পাচ্ছে। তারা নগদ চায়। তারা মনে করে, নাগরিকত্ব ছাড়া তাদেরকে মিয়ানমারে পাঠানো হলে সেটিও একধরনের ক্যাম্পের জীবন হবে। অর্থাৎ জন্মভূমিতে থেকেও তারা হবে বিদেশি। বছরের পর বছর ধরে রোহিঙ্গাদের যে সংকট, তার মূলে রয়েছে এই নাগরিকত্বের স্বীকৃতি। যে কারণে তাদের বলা হয় ‘দেশহীন জাতি’। অর্থাৎ যেখানে তার জন্ম, সেই রাষ্ট্র তাকে নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না। করে না বলেই তার ওপর জাতিগত নিধন চালায়। 

প্রসঙ্গত, এখন পর্যন্ত প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ থেকে যে আট লাখ রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারে পাঠানো হয়েছে, তার মধ্য থেকে পাইলট প্রকল্পের আওতায় প্রথম ধাপে ১ হাজার ১৪০ জন রোহিঙ্গাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৭১১ জন রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সম্মতি পাওয়া গেছে। সুতরাং আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বাধ্য হয়ে কিংবা বহির্বিশ্বে নিজেদের ভাবমূর্তি বাড়ানোর উদ্দেশ্যে মিয়ানমার যদি পাইলট কিংবা প্রতীকী হিসেবে হাজারখানেক রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়ও এবং ধরা যাক তাদেরকে নাগরিকত্বও দিল (সম্ভাবনা কম), তারপরে প্রত্যাবাসনের এই প্রক্রিয়া কি অব্যাহত থাকবে? যদি থাকে তাহলে শেষ পর্যন্ত তারা কতজনকে ফেরত নেবে?

বলা হয়, এ মুহূর্তে বাংলাদেশে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা আছে। অনেকে ক্যাম্প থেকে পালিয়ে গিয়ে বাংলাদেশের মূল জনস্রোতে মিশে গেছে—এই খবরও নতুন নয়। আরও কী পরিমাণ লোক পালিয়ে গিয়ে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে মিশে যাবে এবং নানা কায়দা-কানুন করে জাতীয় পরিচয়পত্রও জোগাড় করে ফেলবে, তা বলা মুশকিল। কিন্তু তারা বাংলাদেশের মূল জনস্রোতে মিশে যাক বা না যাক, ক্যাম্পে থাকলেও সেটির বোঝা বাংলাদেশকেই বইতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা তাদের জন্য সহায়তা দিলেও এই বিপুল জনগোষ্ঠীর আবাসন তৈরির জন্য কক্সবাজারে যে পরিমাণ ভূমি ও বনজ সম্পদের ক্ষতি হয়েছে, ওই ক্ষতিপূরণ কে দেবে? মিয়ানমারের কাছ থেকে এই ক্ষতিপূরণ আদায় করা কি সম্ভব হবে? মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ গণ্ডগোলের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছে। এখানে বাংলাদেশের কোনো দায় নেই। অথচ বাংলাদেশ এখন সেই মানবকিতারই নিরীহ শিকার। বাংলাদেশ নিজেই যেখানে অধিক জনসংখ্যার চাপে ন্যূব্জ, সেখানে ১২ লাখ রোহিঙ্গা এবং প্রায় প্রতিদিনিই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নতুন শিশুর জন্ম হচ্ছে। যাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।

গত বছরের এপ্রিলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জন্মহার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। এ জন্য রোহিঙ্গাদের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে স্বাস্থ্য বিভাগ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে তিনি অনুরোধ জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতি বছর ৩৫ হাজার শিশু জন্ম নিচ্ছে। তার মানে ৫ বছরে দেড় লাখ রোহিঙ্গা বেড়েছে। (ডেইলি স্টার অনলাইন, ১০ এপ্রিল ২০২২)। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই তথ্য অনুযায়ী গত এক বছরে আরও ৩৫ হাজার রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম হয়েছে। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে আট লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্টের পরের কয়েক মাসে, রাখাইন রাজ্য থেকে। রোহিঙ্গা প্রবেশের ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। এর আগে চীনের মধ্যস্থতায় দুইবার প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি।

এখন আবার বিষয়টি সামনে আসছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো মিয়ানমার শেষ পর্যন্ত কতজনকে ফেরত নেবে? ৫০ হাজার, এক লাখ, দুই লাখ? তারপরেও বিপুল সংখ্যক মানুষ বাংলাদেশে থেকে যাবে। তাদের বোঝা বাংলাদেশ কতদিন বইবে? আর এরকম পরিস্থিতি আদৌ তৈরি করা যাবে কিনা যাতে মিয়ানমার সব রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে—সেটি বিরাট প্রশ্ন। বরং অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, মিয়ানমার আন্তর্জাতিক চাপে প্রত্যাবাসন ইস্যুতে কিছু টাল্টিবাল্টি করলেও আখেরে মুলাটা ঝুলিয়েই রাখবে।

প্রত্যাবাসন ইস্যুতে এখন প্রধান আলোচনা ঘুরপাক খাচ্ছে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের প্রশ্নে। অথচ রোহিঙ্গারা যে মিয়ানমারের নাগরিক, সেটি প্রমাণের কিছু নেই। কিন্তু ২০১৭ সালের জাতিগত নিধনের আগে থেকেই রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছে মিয়ানমার। মূলত তাদের দেশের জনগণের মনেও রোহিঙ্গাবিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়া এবং রোহিঙ্গা নির্যাতন জায়েজ করার ক্ষেত্রেও দেশটির সরকার এই অস্ত্রটিই ব্যবহার করে যে, তারা মিয়ানমারের নাগরিক নয়। সুতরাং এখন মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের ইস্যুতে যে নাগরিকত্বের প্রশ্নটি আসছে এবং মিয়ানমার যে প্রক্রিয়ায় নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে চায় (আসলে প্রমাণ করতে চায় না) সেটি বেশ জটিল। তাছাড়া রোহিঙ্গারা যখন জীবন নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে, তখন তারা পৈত্রিক সম্পত্তির কোনো দলিল বা সে দেশের নাগরিকত্ব-সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র সঙ্গে আনতে পারেনি। তাদের বাড়িঘরও জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। সুতরাং ওইসব কাগজপত্র তারা হয়তো কোনোদিন জোগাড়ই করতে পারবে না। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তাদের সেই সুযোগও দেবে না। উপরন্তু মিয়ানমারের যে রাষ্ট্রকাঠামো; সেখানে সেনাবাহিনীর যে বিপুল ক্ষমতা এবং রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের মূল অভিযোগটাই যেহেতু এই সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে—ফলে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব সমস্যার সুরাহা করে প্রত্যাবাসন শুরু করতে চাইলে সুড়কের শেষ প্রান্তে যে আলো আছে বলে মনে হচ্ছে, সেটিও নিভে যাবে। বরং মিয়ানমার যেহেতু আন্তর্জাতিকভাবে বহুমুখী চাপে আছে, ফলে তারা লোক দেখানোর জন্য কিছু রোহিঙ্গাকে হয়তো ফের নিয়ে বহির্বিশ্বে নিজেদের ভাবমূর্তি বাড়াতে চাইবে। কিন্তু সেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি কতদিন অব্যাহত থাকবে, তা নিয়ে সংশয়ের যথেষ্ট কারণ আছে। সুতরাং এখন প্রত্যাবাসনের কথা বলা মিয়ানমারের ‘ফাঁদ’ কিনা—সেটিও ভেবে দেখা দরকার। বরং এখন আন্তর্জাতিক পরিসরে রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধনের দায়ে মিয়ানমারের সামরিক জান্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিটা জোরালো করা দরকার।

যদিও মিয়ানমার বরাবরই আন্তর্জাতিক চাপ ও অবরোধ উপেক্ষা করে চলার নীতিতে থাকে। এর পেছনে হয়তো একটি কারণ এই যে, এই অঞ্চলে তার প্রধান বন্ধু চীন। মিয়ানমারে রয়েছে চীনের বিশাল বাণিজ্যিক স্বার্থ। মিয়ানমারে অবকাঠামো ও জ্বালানি খাতে চীনের ব্যাপক বিনিয়োগ রয়েছে। তাছাড়া চীনের বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হচ্ছে মিয়ানমার। দশকের পর দশক ধরে অর্থনৈতিক স্বার্থে চীন কখনো মিয়ানমারের সরকারের বিপক্ষে যেতে চায়নি। দেশটিতে যা কিছু ঘটুক না কেন বিনিয়োগ ও ব্যবসার স্বার্থে চীন সেগুলোর বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেনি। মিয়ানমারে সামরিক জান্তা ক্ষমতা নেয়ার পরবর্তী এক বছরে দেশটি ৩৮০ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ অনুমোদন করেছে। (বিবিসি বাংলা, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২)। সুতরাং মিয়ানমার যদি আন্তর্জাতিক দুনিয়াকে পাত্তা না দেয়, তাতেই বা কী হবে? সুতরাং বাংলাদেশের উচিত হবে প্রত্যাবাসন ইস্যুতে চীনের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা, তথা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি চলমান রাখতে চীন যাতে মিয়ানমারকে বাধ্য করে, সেটি নিশ্চিত করা।

এই অঞ্চলের আরেক শক্তিশালী রাষ্ট্র ভারতও রোহিঙ্গা ইস্যুতে যে শক্তভাবে বাংলাদেশের পাশে আছে, তা নয়। বরং এই ইস্যুতে ভারতের অবস্থান ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’। সুতরাং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে বাংলাদেশকে হয়তো একলাই চলতে হবে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর কিংবা নিরাপত্তা পরিষদও যদি মিয়ানমারের ওপর চাপ দেয়, ওই চাপও তারা কতটা আমলে নেবে এবং আমলে না নিলে কী হবে—সেটি বিরাট প্রশ্ন। তবে এটা ঠিক, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ইস্যুতে জাতিসংঘ যদি শক্ত ভূমিকা নেয়, তাহলে কিছুটা কাজ হবে। কিন্তু তারা যদি মিয়ানমারে যাওয়ার পরে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ও মানবাধিকারের প্রশ্নে কোনো সংশয় দেখে, তাহলে তারা চাইবে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশই থাকুক।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র কি কিছু করতে পারে? প্রশ্ন হলো, রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র কেনই বা বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়িয়ে এমন কোনো পদক্ষেপ নেবে যেটি এই অঞ্চলে চীনের সঙ্গে তার বৈরিতা আরও বাড়াবে? বরং সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের টানাপোড়েন বেড়েছে এবং সেটি বেশ প্রকাশ্য।

যদিও যুক্তরাষ্ট্র ধাপে ধাপে কিছু রোহিঙ্গাকে তাদের দেশে আশ্রয় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং প্রথম ধাপে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীর প্রথম দল। ওই দলে ছিলেন ২৪ জন। এটা ঠিক যে, ১২ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে মাত্র ২৪ জনকে আশ্রয় দেওয়া পুরো সংকট সমাধানে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। কিন্তু এর একটা প্রতীকী মূল্য রয়েছে এবং প্রক্রিয়াটি যে অন্তত শুরু হলো, সেটি আশার সংবাদ। ধারণা করা হচ্ছে, প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে ৩০০-৮০০ রোহিঙ্গা শরণার্থী যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসনের সুযোগ পেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র প্রতীকীভাবে ২৪ জন রোহিঙ্গাকে তাদের দেশে আশ্রয় দিয়ে যে মানবিক কাজের সূচনা করল, সেই ধারাবাহিকতায় আয়তনে বড় এবং অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী অন্যান্য দেশ যেমন কানাডা, রাশিয়া, জার্মানি এমনকি মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরব, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া যদি রোহিঙ্গাদেরকে তাদের দেশে আশ্রয় দেয় এবং তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করে, তাহলে এই রাষ্ট্রহীন জাতির মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকা সম্ভব হবে।