জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চাপ সৃষ্টি করে মামলা প্রত্যাহারে সাফল্য আসেনি বলেই কি এখন রাজপথে ‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের’ দাবিতে উচ্চকিত হওয়ার কথা বলা হচ্ছে?
Published : 05 Jan 2024, 07:12 PM
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রতি অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন, যা ইউনূস সেন্টারের ভেরিফায়েড ফেসবুকে প্রকাশ করা হয়েছে। শিরোনাম দেওয়া হয়েছে— ‘শ্রম আদালতের রায় নিয়ে প্রফেসর ইউনূসের বক্তব্য’।
শ্রমজীবী মানুষের অধিকার লঙ্ঘনের জন্য ড. ইউনূস দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ রয়েছে এবং তাঁর আইনজীবী এমনটি করা হবে বলে জানিয়েছেন।
মামলায় তিনি সেরা আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছেন। একইসঙ্গে বিচার চলাকালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদপত্রে তাঁর পক্ষে বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। একটি প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক মহল তাঁর পক্ষে অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে দোষারোপ করেছেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা দায়ের করার জন্য। যদিও মামলা বাংলাদেশ সরকার দায়ের করেনি। মূল অভিযোগ এসেছে তাঁর গ্রামীণ টেলিকম প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের তরফে। মামলার বিষয়বস্তু অভিন্ন, যদিও ক্ষুব্ধরা পৃথক পৃথক মামলা দায়ের করেছেন আইনগত কারণে— তবে বিষয়বস্তু অভিন্ন। ইংরেজি একটি ইংরেজি দৈনিকের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে— যিনি নোবেল পুরস্কারসহ অনেক আন্তর্জাতিক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন, তাকে কেন মামলার আসামি করা হলো।
বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলনে যুক্তদের অনেকেই মনে করেন, দেশ-বিদেশে সুপরিচিত ও সম্মানিত ব্যক্তিরা সাধারণত নিজ প্রতিষ্ঠানের কিংবা অন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন না। কোনো বিরোধ দেখা দিলে বরং নিজে যতটা সম্ভব ছাড় দিয়ে এমনকি আর্থিক ক্ষতি হলেও আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলেন।
প্রশ্ন সঙ্গতভাবেই ওঠে— এ ক্ষেত্রে কি মিডিয়া ট্রায়ালের চেষ্টা ছিল? এভাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কি চাপ সৃষ্টি করে মামলা প্রত্যাহার করতে সংশ্লিষ্টদের বাধ্য করার চেষ্টা ছিল? এতে সাফল্য আসেনি বলেই কি এখন রাজপথে ‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের’ দাবিতে উচ্চকিত হওয়ার কথা বলা হচ্ছে? দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজপথে ফয়সালা করার কথার সঙ্গে কি বিএনপি ও তাদের মিত্রদের নির্বাচন বর্জনের পাশাপাশি ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডাকার যোগসূত্র রয়েছে?
বাংলাদেশে শ্রম আদালত প্রতিষ্ঠা হয়েছে মূলত শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য। রাজনৈতিক দল থেকে অনেক সময় ‘রাজপথে সহিংস কিংবা অহিংস পন্থায়’ অনেক ইস্যুর নিষ্পত্তির কথা বলা হয়। তাদের নির্বাচন কিংবা আদালতের রায় বা অন্য আইনি প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা প্রকাশ করতে দেখা যায় না। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস কি রাজনীতিকদের পথ অনুসরণ করতে চলেছেন? আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স ২০০৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জানায়, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘নাগরিক শক্তি’ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন।
ওই সময়ে বাংলাদেশে জরুরি আইন বলবৎ ছিল। রাজনৈতিক তৎপরতার ওপর ছিল বহুবিধ নিষেধাজ্ঞা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, প্রকৃতপক্ষে তাঁর ‘নাগরিক শক্তি’ ছিল কিংস পার্টি, যার পেছনে ছিল নির্বাচনে অংশ না নিয়েই রাষ্ট্র ক্ষমতা কব্জা করা মহলটি। তবে রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়ে তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য ঘোষণা দিয়েছেন। তখন তিনি বলেছিলেন— ‘রাজনীতি আমার কম্ম নয়’।
১৬ বছর পর কি তিনি মত বদল করলেন? তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে বলেছেন। গণতন্ত্রের পক্ষে সোচ্চার হতে বলেছেন রাজপথে। শ্রম আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তিনি এ কথা বলেছেন, যার অর্থ দাঁড়ায়— আদালতের রায় তিনি গ্রহণ করতে পারছেন না।
আরও একটি বিষয় লক্ষণীয় যে তাঁকে শাস্তি প্রদানের নিন্দায় সোচ্চার হয়েছে যারা, তারা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল এবং শেখ হাসিনার সরকারকে নির্বাচনের মাধ্যমে নয়, রাজপথে শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে উৎখাত করতে সংকল্পবদ্ধ। জামায়াতে ইসলামী নামের যে দলটি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে গণহত্যা-ধর্ষণ-লুটপাটে সরাসরি জড়িত ছিল, যারা নারীর ক্ষমতায়নের বিরুদ্ধে (ড. ইউনূস যে ইস্যুতে বহু বছর সোচ্চার রয়েছেন), তারাও বলছে— শেখ হাসিনা নোবেলজয়ী ব্যক্তির প্রতি অন্যায় করছেন।
শ্রমিকের অধিকার বিষয়ে বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের নীতি অনুযায়ী বাংলাদেশের গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীদের পক্ষেই কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের থাকার কথা। ২০২৩ সালের ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশের সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর ছিল এভাবে: The US policy on global workers’ rights: Secretary of the US Department of State Antony J Blinken in his speech said those who threaten, intimidate, attack union leaders, labour rights defenders and labour organizations will be held accountable at the Rollout of the Presidential Memorandum on Advancing Worker Empowerment, Rights and High Labor Standards Globally.
১ জানুয়ারি ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের করা মামলায় গ্রামীণ টেলিকম চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছেন। সেই সঙ্গে প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। তবে রায় ঘোষণার পর উচ্চ আদালতে আপিল করার শর্তে চারজনই এক মাসের জন্য জামিন পেয়েছেন।
রায় প্রদানকালে বিচারক বলেছেন, এখানে নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের বিচার হচ্ছে না। ড. ইউনূস, যিনি গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান, তাঁর বিচার হচ্ছে। অন্যদিকে, রায় ঘোষণার পর সংবাদকর্মীদের ড. ইউনূস বলেছেন, যে দোষ করিনি, সেই দোষে শাস্তি পেলাম।
ড. ইউনূস নারীর ক্ষমতায়নের জন্য বহু দশক ধরে কাজ করছেন। প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসহ সমাজের নানা ক্ষেত্রে এখন নারীর দৃপ্ত পদচারণা দেখছি। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের যে বিচারক ড. ইউনূসের শাস্তির রায় পাঠ করেছেন, তিনিও নারী। গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণের সুফলভোগীরা প্রধানত নারী। নোবেল পুরস্কার গ্রহণের সময় গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষে নরওয়েতে উপস্থিত ছিলেন একজন নারী, যিনি পরিচালনা বোর্ডের সদস্য।
বাংলাদেশে গ্রামীণ ফোন চালুর সময় খালেদা জিয়া একচেটিয়া ব্যবসা করার সুযোগ দিয়েছিলেন তাঁর দলের এক শীর্ষ নেতাকে। গলাকাটা ব্যবসা করেছে তারা। এ সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর শেখ হাসিনা গ্রামীণ ফোন প্রতিষ্ঠার জন্য সব ধরনের সুবিধা দিয়েছিলেন। নোবেল শান্তি পুরস্কার গ্রহণের সময় ড. ইউনূস বলেছিলেন, নরওয়ের টেলিনর নামের প্রতিষ্ঠানটি (যাদের দখলে গ্রামীণ ফোনের মালিকানার সিংহভাগ) গ্রামীণ ব্যাংককে গ্রামীণ ফোনের পূর্ণ মালিকানা দেবে বলে অঙ্গীকার করেছিল, এখন তা রক্ষার সময় এসেছে। বাস্তবে সেটা ঘটেনি।
শেখ হাসিনা দেড় দশক আগে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গঠনের যে স্লোগান সামনে এনেছিলেন, তার সফল রূপায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে মোবাইল ফোন। তিনি মুষ্টিমেয়র হাত থেকে মোবাইল ফোন ধনী-দরিদ্র সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
সেনাশাসক জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার শাসনামলে এক যুগের বেশি বাণিজ্য ও অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন এম সাইফুর রহমান। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকাণ্ডেের প্রশংসা করেছেন তাঁর ‘কিছু কথা কিছু স্মৃতি’ গ্রন্থে। তবে একইসঙ্গে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের দারিদ্র্য বিমোচনে গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মক্ষেত্র অত্যন্ত সীমিত। এ ক্ষেত্রে সরকারের কর্মক্ষেত্র অত্যন্ত ব্যাপক।’ [কিছু স্মৃতি কিছু কথা: পৃষ্ঠা ২০২]
তিনি লিখেছেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংক গরীবদের জন্য যে ঋণ দেয় তার চেয়ে অনেক বেশি ঋণ দেয় সরকার নিরাপদ বেষ্টনী কর্মসূচীর মাধ্যমে। ... বাংলাদেশে শত শত এনজিও মাইক্রোক্রেডিট প্রকল্পে কাজ করে। এই অর্থ দেয় পল্লী কর্মসংস্থান প্রকল্প ও বাংলাদেশ বাংলাদেশ ব্যাংক।’ [কিছু স্মৃতি কিছু কথা: পৃষ্ঠা ২০১-২০২]
সাইফুর রহমান প্রায় দেড় যুগ মন্ত্রী পদে নেই। এ সময়ে সরকারের সামাজিক নিরাপদ বেষ্টনী বা সোশাল সেফটি নেটওয়ার্ক ও ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি বহু গুণ বিস্তৃত হয়েছে। বেড়েছে ভাতার পরিমাণ ও সুফলভোগীর সংখ্যা। চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাবদ ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা আগের বছরের বাজেটের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি।
গ্রামীণ টেলিকম সংক্রান্ত মামলার পর ‘দৈনিক সংবাদ’ নামের পত্রিকার বার্তা বিভাগের প্রধান মোজাম্মেল হোসেন মন্টুর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুজনিত মামলার দুর্ভাগ্যজনক পরিণতির কথা বলেছেন এক প্রবীণ সাংবাদিক। ১৯৮৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়। কয়েকদিন আগে নয়া পল্টন এলাকায় তাকে একটি বেসরকারি কোমল পানীয় প্রস্তুতকারক কোম্পনির গাড়ি ধাক্কা দেয়। তিনি ট্রাফিক আইন মেনেই রাস্তা অতিক্রম করছিলেন। তাকে প্রকৃতপক্ষে হত্যা করা হয়েছে— এ অভিযোগ এনে ক্ষতিপূরণ মামলা হয় এবং আদালত ক্ষতিপূরণ প্রদানের রায় দেন। আপিল বিভাগ পর্যন্ত রায় দিয়েছেন তাঁর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের পক্ষে। কিন্তু প্রায় তিন যুগ চলে গেছে, মোজাম্মেল হোসেন মন্টুর পরিবার ক্ষতিপূরণের অর্থ পায়নি।
এ কেমন দীর্ঘসূত্রতা? গ্রামীণ টেলিকম সংক্রান্ত মামলার রায় প্রকাশের পর এটা প্রতিষ্ঠিত হলো যে শ্রমিকের পাওনা পরিশোধের জন্য ফৌজদারী মামলা হয়, কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হয়। আইন সবার জন্য সমান— এটাও আরেকবার প্রতিষ্ঠিত হলো। অনির্দষ্টকাল মামলা চলার ধারা থেকে আমাদের বের হয়ে আসার তাগিদও স্পষ্ট।
এ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকলে গ্রহণ করলেই মঙ্গল।
বাংলাদেশের শিল্পায়ন ঘটছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটছে। স্বাভাবিকভাবেই বাড়ছে শ্রমিক ও কর্মচারী সংখ্যা। বঞ্চনার ঘটনাও প্রচুর। যখন তখন ছাঁটাই, উপযুক্ত বেতন না দেওয়া, চাকরি থেকে বিদায় নেওয়ার সময় প্রাপ্য অর্থ পরিশোধ না করা— কত অভিযোগ। শ্রম আদালতে এর প্রতিকার সম্ভব। কিন্তু উপযুক্ত প্রমাণ থাকার পরও অনেকেই এ সুযোগ গ্রহণ করেন না বা করতে পারেন না। গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে শুনেছি— তারা প্রতিষ্ঠান থেকে বঞ্চনা ও হয়রানির শিকার হলেও মামলায় যান না। কারণ এক মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করে এমনকি জয়ী হলেও ভবিষ্যতের জন্য বিপদে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়। এক মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করা ব্যক্তিকে অন্য মালিকরা চাকরি দিতে নাও চাইতে পারেন। সব রসুনের গোড়া যে এক!
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের ঘটনা হয়ে আছে সাভারের রানা প্লাজা র্দুঘটনা। এক দশকের বেশি হয়ে গেল, পোশাক খাতের শ্রমিকরা (যাদের বড় অংশই নারী) এখনও বহু ধরনের বঞ্চনা-শোষণের শিকার। শিল্প মালিকরা বলেন— যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, কানাডাসহ উন্নত যে সব দেশ বাংলাদেশ থেকে পোশাক নেয়, তারা সেলাইয়ের জন্য মজুরি দেয় খুব কম। বাংলাদেশসহ অনেক স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ থেকে তারা সস্তা শ্রমের কারণে পোশাক আমদানি করে। এর পরিমাণ বাড়াতে বললে তারা বাংলাদেশ থেকে পোশাক না কেনার হুমকি দেয়। রানা প্লাজা বিপর্যয়ের পর ঢাকায় এক সেমিনারে ড. ইউনূস বাংলাদেশের পোশাক ক্রেতা উন্নত দেশগুলোর বড় বড় বায়ার প্রতিষ্ঠানের প্রতি আবেদন জানিয়েছিলেন— ‘দয়া করে প্রতিটি শার্টের জন্য ৫০ সেন্ট মূল্য বাড়িয়ে দেন, তাহলেই বাংলাদেশের শ্রমিকদের জীবন অনেক বদলে যাবে। তারা ভাল থাকবে।’
কিন্তু সে কথায় কেউ কান দেয়নি। বাংলাদেশ এক সময় আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে ঋণগ্রহীতা দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল । যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্ব এবং বিশ্বব্যাংকের মতো সংস্থা বলতে থাকে— তোমরা ঋণগ্রহীতা থাকবে না, ব্যবসা-বাণিজ্যে মনোযোগ দাও। বাংলাদেশ কিন্তু সেটা করতে পারছে সাফল্যে সঙ্গে। আমরা সস্তায় পোশাক সেলাই করে দিই, উন্নত দেশগুলোর বাজারে তা চড়া দামে বিক্রি হয়। আসল লাভ ওই সব দেশের বড় বায়িং হাউজগুলোর। কিন্তু এখন যুক্তরাষ্ট্রসহ কারও কারও ভিন্ন সুর— তাদের কথা অনুযায়ী না চললে, বিশ্বে তারা যে সব অন্যায় প্রতিনিয়ত করে চলেছে তার প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন না জানালে ‘স্যাংশন’ আরোপ করা হবে।
ড. ইউনূস কি উন্নত দেশগুলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ক্ষেত্রে যে অন্যায় করে চলেছে, তার প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাবেন? নাকি তিনি নিজেকে প্রমাণ করবেন বাংলাদেশের নয়, ‘তাদের লোক’ হিসেবে?