ইনসাফ কায়েম কমিটি

পরীক্ষায় পাশ-ফেলের সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু ফাঁকিবাজ ছাত্রেরা পরীক্ষাটাই বাতিল করতে চেষ্টা করে। দ্বিতীয় খণ্ডের উপখণ্ড এবং এর মুখপাত্র ফরহাদ মজহারের মূল উদ্দেশ্য হয়তো সেটাই।

শিশির ভট্টাচার্য্যশিশির ভট্টাচার্য্য
Published : 8 April 2023, 04:50 AM
Updated : 8 April 2023, 04:50 AM

বাঙালি ‘সংকর’ জাতি– বলা হয়ে থাকে প্রায়ই। কথাটা মিথ্যা নয়, তবে নেহায়েতই মামুলি বা (ইংরেজিতে বললে) ট্রিভিয়াল এই অর্থে যে পৃথিবীর সব জাতিই ‘শঙ্কর, কোনোটাই ‘মোহাম্মদপুর’ বা ‘ধানমন্ডি’ নয়। একাধিক জাতি-ধর্ম-বর্ণগোষ্ঠী নিয়ে গঠিত হয় একেকটি ‘জাতি’, ‘জাতিরাষ্ট্র’। জাতিরাষ্ট্রে রাজনীতির অন্যতম ভিত্তি সংখ্যার লঘু-গুরু। গুরু স্রেফ সংখ্যার বলে লঘুর ওপর অত্যাচার চালায় এবং জাতিরাষ্ট্রের সরকার হয় তাতে মদদ দেয়, নয়তো নীরব সম্মতি জানায়।

রাজনীতি কী? সম্প্রতি রাজনীতি বিষয়ে আমার উপলব্ধি এরকম– কেক ছোট, খানেওয়ালা বেশি। সুতরাং কেকের বেশির ভাগটা কীভাবে আমি নিজে খেতে পারি, আমার উত্তরপুরুষ খেতে পারে, আমার লোকজনদের খাওয়াতে পারি, যাতে তারা কেক-ছিনতাই অপকর্মে স্বেচ্ছায় আমার স্যাঙাৎ হয়– এক কথায় এই প্রক্রিয়াই আমার চোখে রাজনীতি। সমাজের আপামর জনগণ কীভাবে কেকের সমান ভাগ পেতে পারে, সেটাই রাজনীতি হওয়া শ্রেয় ছিল বটে। কিন্তু মানব সমাজে শ্রেয় যা তার কদর, প্রেয় যা তার চেয়ে কখনোই বেশি হয় না।

কোরবানির আগে আগে বাংলাদেশের সড়কে ‘গরু-গিজগিজ’ ট্রাকে যেমন দেখা যায়, যে কোনো জাতিরাষ্ট্রে একাধিক জনখণ্ড পরস্পরের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি, গুঁতোগুঁতি করতেই থাকে, না করে তার উপায় থাকে না। হিন্দু-মুসলমান, খ্রিস্টান-ইহুদি, মুসলমান-বৌদ্ধ, মুসলমান-ইহুদি, সাদা-কালো, বাঙালি-বর্মি বিরোধ প্রতিযোগী দুই জনখণ্ডের গুঁতোগুঁতির উদাহরণ। সংখ্যার গুরু ও লঘুর দ্বন্দ্বে দক্ষিণ এশিয়ার লঘুরা অন্য জাতিরাষ্ট্রে হিজরত করছে নিজেদের জান ও মাল বাঁচাতে।

ঊনবিংশ শতকের শেষ দিক থেকে বাংলা অঞ্চলে দুটি জনখণ্ড দানা বাঁধতে শুরু করেছিল; যার একটি বাঙালিবাদী এবং অন্যটি বাঙালিবিদ্বেষী। দ্বিতীয় জনখণ্ড নিজেদেরকে ইসলাম ধর্মের ধারক-বাহক মনে করে। আসলেই তারা ইসলামের ধারক-বাহক, নাকি ইসলামের বিশেষ একটি মাজহাবের ধারক-বাহক, নাকি সবই মূলত তাদের ভণ্ডামি, যেনতেন প্রকারে ক্ষমতা জবর দখলের রাজনৈতিক কৌশল মাত্র, সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। তবে বাঙালি সংস্কৃতিকে তারা যে মন থেকে ঘৃণা করে, এমনকি বাংলাভাষাকে অগত্যা সহ্য করে, তাতে নিঃসন্দেহ হবার অবকাশ রয়েছে।

দ্বিতীয় জনখণ্ডটি পাকিস্তান প্রস্তাব করেছিল, পাকিস্তান আন্দোলন করেছিল, পাকিস্তান কায়েমও করেছিল। পাকিস্তানে তারা রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ করেছিল, সংখ্যাগুরু বাঙালির মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করেছিল। ওই অপকর্মে ব্যর্থ হয়ে তারা আরবি অক্ষরে বাংলা লেখাতে চেয়েছিল, আরবি-ফার্সি শব্দবহুল নতুন এক বাংলা ভাষা সৃষ্টি করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিল। ‘পরীক্ষা’ শব্দের পরিবর্তে ‘ইমতেহান’, ‘দাঁত’-এর পরিবর্তে ‘দান্দান’, ‘রক্ত’-এর পরিবর্তে ‘লোহু’ শব্দের ব্যবহার এই ব্যর্থচেষ্টার নমুনা। একইভাবে ভারতে হিন্দিভাষায় আরবি-ফার্সি শব্দের পরিবর্তে সংস্কৃত-তৎসম শব্দ ব্যবহারের চেষ্টা অধ্যাবধি চলমান। বাংলাদেশে এই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, ভারতেও ব্যর্থ হবে, কারণ বাংলা ও হিন্দির শব্দকোষগত প্রকৃতির মধ্যে তফাৎ রয়েছে: বাংলা ভাষা সংস্কৃতমূল শব্দের প্রতি এবং হিন্দি-উর্দু আরবি-ফার্সিমূল শব্দের প্রতি পক্ষপাত দেখায়।

পাকিস্তান রাষ্ট্র পূর্ববঙ্গে সর্বতোভাবে ব্যর্থ হবার পর পূর্ব পাকিস্তানকে শেষ রক্ষা করতে ১৯৭১ সালে দ্বিতীয় খণ্ড প্রথম খণ্ডের ওপর নির্মম অত্যাচার চালিয়েছিল। খুন হয়েছিল ত্রিশ লক্ষ বাঙালি, নির্যাতিত হয়েছিল বহু লক্ষ নারী। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর প্রথম খণ্ড চিরকালের মতো জয়ী হয়েছে ভেবে আহ্লাদে অষ্টখণ্ড হয়েছিল। কিন্তু মুখ্যত নানা ভূরাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, গৌণত প্রথম খণ্ডের বিবিধ ভুল সিদ্ধান্ত ও অবিমৃষ্যকারিতার ফল ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় খণ্ড প্রথম খণ্ডকে আবারও প্রায় দুই দশকের জন্য ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করেছিল।

১৯৯৬ সালে একবার পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতা হাতে পেলেও, ক্ষমতা অনেক দিনের জন্যে প্রথম খণ্ডের হাতে আসে আরও বছর পাঁচেক পর। তখন থেকে অদ্যাবধি কাগজে-কলমে ক্ষমতার রাশ প্রথমখণ্ডের হাতে। ইতোমধ্যে প্রথম খণ্ড ১৯৭১ সালে দ্বিতীয় খণ্ডের যুদ্ধাপরাধী এবং জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার করে শাস্তিপ্রদানে সক্ষম হয়েছে। সারা দেশে দৃশ্যমান ভৌত উন্নয়নও তারা করেছে। কিন্তু দুর্নীতি, অব্যবস্থা, অবিচার, স্বৈরাচার, বিদেশে মূলধনপাচার, ব্যাংক-দুর্নীতি ইত্যাদি নানা (অ)প্রমাণিত অভিযোগ প্রথম খণ্ডের বিরুদ্ধে আছে। প্রথম খণ্ডের অবিমৃষ্যকারিতা, অবহেলা কিংবা গোপন মদদের কারণে মৌলবাদ ধীরে ধীরে গ্রাম ও নগরবাংলার মন ও পোশাকের দখল নিয়েছে– এই অভিযোগও অমূলক নয়।

ক্ষমতায় যেই থাক, খণ্ডগুলো কিন্তু অটুট থাকে। সত্তরের নির্বাচনে দ্বিতীয় খণ্ডের ভরাডুবি হয়েছিল, কিন্তু শতকরা কমবেশি ৩০ ভাগের মতো ভোট তারা পেয়েছিল বটে। তারাই তো রাজাকার-আলবদর হয়েছিল। তারাই তো জাতির পিতাকে হত্যা করেছিল, দ্বিতীয় খণ্ডের তৃতীয় মেয়াদে রাজাকারদের মন্ত্রী বানিয়ে তাদের সরকারি গাড়িতে সেই জাতিরাষ্ট্রের পতাকা উড়িয়েছিল, যে রাষ্ট্রের অস্তিত্বেই তারা কখনও মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেনি। এরা এখনও জাতীয় সংগীত বদলাতে চায়, নিদেনপক্ষে গাইতে চায় না।

গত প্রায় দেড় দশক যাবত দ্বিতীয় খণ্ড কাগজে-কলমে ক্ষমতার বাইরে আছে। ক্ষমতা হচ্ছে রাজনীতির রক্তপ্রবাহ। এই রক্তপ্রবাহ ক্ষীণ হলে, বন্ধ হয়ে গেলে সমর্থকদের দম বন্ধ হয়ে আসে। কত দিন আপনি খালি পেটে চোখের সামনে শত্রুকে গপাগপ কেক খেতে দেখতে চাইবেন? ক্ষমতাহীনতার তীব্র যন্ত্রণায় অসহ্য-অস্থির হয়ে দ্বিতীয় খণ্ড মতিঝিলে সমাবেশ, আগুন-বোমাসন্ত্রাস ইত্যাদি বিচিত্র অপকৌশলের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের মরিয়া প্রচেষ্টা চালিয়েছে, কিন্তু সফল হয়নি। দ্বিতীয় খণ্ডের প্রধান নেতা প্রবাসে, আপাতত তেনার দেশে ফিরে আসার কোনো উপায় প্রথম খণ্ড রাখেনি। বিলাত থেকে অনবরত তিনি কলকাঠি নাড়ছেন, বৈদেশিক টেলিভিশনকে দিয়ে প্রথম খণ্ডের অপশাসনের বিরুদ্ধে নানা প্রচারণাও চালাচ্ছেন। কিন্তু দৃশ্যত কলকাঠির কাঠিখানি ভাঙা এবং কলখানা বিকল। ‘তার এক’ সমস্যা, দেশের ‘অনেক’।

দ্বিতীয় খণ্ডের প্রতি সহানুভুতিশীলেরা বলছেন, প্রথম খণ্ড দ্বিতীয় খণ্ডকে রাজনীতি করতে দিচ্ছে না। রাজনীতি কে, কাকে, কখন, করতে দিয়েছে? রাজনীতি কি ছেলের হাতের লাড্ডু? রাজনীতি জোরের ব্যাপার। মারি অরি পারি যে কৌশলে! প্রথম খণ্ড ‘সোনার বাংলার’ স্বপ্ন দেখায় বটে, কিন্তু ‘সোনা-বাবা’ বলে সুস্বাদু ক্ষমতার কেকটা শত্তুরের মুখে কেউ তুলে দিয়েছে, এমন ঘটনা ‘শোনার বাংলা’-তেও বিরল। তুমি যদি কেক কেড়ে খেতে না পারো, তবে বুঝে নাও রাজনীতিতে আপাতত তুমি হেরে গেছ। অন্য কাউকে বা শত্রুকে কেড়ে খাবার সুযোগ করে দেবে– এমন ঘটনা অন্তত রাজনীতিতে ঘটে না। যদি ঘটে, তবে সেটা রাজনীতি নয়, অন্য কিছু। দ্বিতীয় খণ্ড যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন তারা কি প্রথম খণ্ডকে বিন্দুমাত্র রেয়াৎ করেছিল? নিজেদের শাসনামলে ২১শে অগাস্ট তারিখে গ্রেনেড হামলা করে দ্বিতীয় খণ্ড কি প্রথম খণ্ডকে ঝাড়ে-বংশে হাপিশ করে দেবার অপচষ্টা করেনি?

দ্বিতীয় খণ্ডের একটি উপখণ্ড খুল্লাম-খুল্লা নিজেদের প্রকাশ করে না, যদিও তাদের ভাষা-ব্যবহার দেখে বোঝা যায়, মনের কম্পাসের কাঁটা তাদের কোনো বিশেষ দিকে ঘুরে আছে। গভীর জলের মাছ তারা, একেক জন বর্ণচোরা আম। ‘ন্যায়বিচার’-এর পরিবর্তে ‘ইনসাফ’, ‘প্রতিষ্ঠা’-এর পরিবর্তে ‘কায়েম’, ‘অনুসন্ধান’-এর পরিবর্তে ‘তালাস’ তাদের পছন্দের শব্দ। এরাই পাকিস্তান আমলে নজরুলের কবিতায় ছুরি চালিয়ে পাঠ্যপুস্তকে ‘সজীব করিব মহাশ্মশান’ পঙতিটিকে ‘সজীব করিব গোরস্থান’ ছাপিয়েছিল। বাংলাদেশ আমলে এরাই রবীন্দ্রনাথের ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্পের শেষে ‘মঙ্গলালোক’ শব্দটি বাদ দিতে টেক্সটবুক বোর্ডকে বাধ্য করেছে। এইসব শব্দগত ‘ইশারা আকলমন্দ কি লিয়ে কাফিসে জ্যায়দা হ্যায়’।

এই উপখণ্ডটির অন্যতম প্রধান পুরুষ ফরহাদ মজহার, এক কালে যার নিজস্ব একটি গুরুকূল ছিল। প্রাক্তন শিষ্যেরা তাঁকে গুরু মানুক বা না মানুক, প্রথম খণ্ডের প্রতি তারা কেউই সহানুভূতিশীল নয়, প্রকাশ্যে না হলেও মনে মনে। সম্প্রতি তারা ‘ইনসাফ কায়েম’ কমিটির ব্যানারে শেরাটন হোটেলে এক ভোজসভার আয়োজন করেছে, যাতে দ্বিতীয় খণ্ডের সমর্থক বা নিদেনপক্ষে দ্বিতীয় খণ্ডের প্রতি সহানুভূতিশীল এমন অনেকেই যোগ দিয়েছেন। ফরহাদ মজহারের আরবি-ফার্সিমূল শব্দচয়ন দ্বিতীয় জনখণ্ডের প্রতি তাঁর আনুগত্য কিংবা সহানুভূতির ইঙ্গিতবহ। মজহারের এককালীন বিখ্যাত ভাবশিষ্যকে (ভাব নেয় যে শিষ্য– কর্মধারয় সমাস) সেখানে দেখা যায়নি বটে, কিন্তু প্রথম খণ্ডের সমর্থক প্রাক্তন এক উপাচার্য স্বশরীরে ভোজসভায় বহাল ছিলেন। ছিলেন একাধিক প্রাক্তন পুলিশ কর্মকর্তা।

নিজের বক্তব্যে ফরহাদ মজহার কোনো বিশেষ দলের সমালোচনার ঝুঁকি নেননি। তবে বর্তমান অপশাসন অবসানের লক্ষ্যে কমপক্ষে দুটি প্রস্তাব তিনি করেছেন: প্রথমত, দেশের সংবিধানের খোল-নলচে পালটে দিয়ে নতুন সংবিধান রচনা করতে হবে এবং দ্বিতীয়ত, বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার পর অর্থবহ একটি নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।

পরীক্ষায় পাশ-ফেলের সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু ফাঁকিবাজ ছাত্রেরা পরীক্ষাটাই বাতিল করতে চেষ্টা করে। দ্বিতীয় খণ্ডের উপখণ্ড এবং এর মুখপাত্র ফরহাদ মজহারের মূল উদ্দেশ্য হয়তো সেটাই। সরকার কিংবা প্রথম খণ্ড মজহারের মামার বাড়ির আবদারে ‘মজে’ যাবে না। দ্বিতীয় খণ্ড তেনার দাবিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতেও পারে, কারণ জলে নিমজ্জমান ব্যক্তি নাকি খড়কুটো আঁকড়ে ধরে হলেও বাঁচতে চেষ্টা করে।

দ্বিতীয় জনখণ্ড যে কিসিমের রাজনীতি করে, সেটা যদি জনগণের জন্যে মঙ্গলজনক হতো, তবে সেই রাজনীতি সমর্থন করতে আমাদের কোনোই দ্বিধা থাকত না। ধর্মান্ধতা, মৌলবাদ কিংবা কূপমণ্ডুকতা যদি দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারত, তবে এইসব ছাইপাঁশকে ‘জীবনের ধ্রুবতারা’ করা যেতেই পারত। কিন্তু পাকিস্তান-আফগানিস্তানের মতো রাষ্ট্র আজীবন ধর্মান্ধতা, মৌলবাদ ও কূপমণ্ডুকতার চর্চা করে বিশ্ব রাজনীতির পরিমণ্ডলে অনুকরণীয়-অনুসরণীয় হয়ে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে। ভূতের পা নাকি থাকে পিছন দিকে, সুতরাং এগোতে গিয়েও ভূত পিছিয়ে যায়। দ্বিতীয় খণ্ড এবং তাদের আদর্শিক দুই রাষ্ট্রের সবসময় ছিল এই ভূতের দশা।

প্রথম খণ্ডও যে শতভাগ সফল, সেটা বলা যাবে না। তবে বাঙালি সংস্কৃতি কিংবা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিপক্ষে অবস্থান নিতে তাদের এখনও দেখা যায়নি। প্রথম খণ্ডের বিরুদ্ধে অন্যতম প্রধান অভিযোগ, গত পনের বছরে দেশের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান তারা নিজেদের স্বার্থে ধ্বংস করে দিয়েছে। চেতনার দোহাই দিয়ে সারা দেশকে তারা নাকি এমন ত্যানা বানিয়ে দিয়েছে যে ‘দ্যাশ আর চ্যাতে না।’ সবচেয়ে ভয়ঙ্কর যা, অনেকেই যেমন বলে থাকে, দ্বিতীয় খণ্ডের বা দ্বিতীয় খণ্ডসুলভ মানসিকতার লোকজন প্রথম খণ্ডের ক্ষমতা-বলয়কে ঘিরে ফেলেছে। প্রথম খণ্ড এসব অভিযোগ যে পুরোপুরি অস্বীকার করে, তা কিন্তু নয়। তবে নিজেদের অসহায়ত্ব ও ব্যর্থতা ঢাকতে এই বলে তারা সাফাই দেয় যে, দ্বিতীয় খণ্ড থেকে আসা ‘কাউয়া’রা এই সব অপকর্মে লিপ্ত।

ঈশপের সেই গল্পটি দিয়ে শেষ করি যাতে অনেকগুলো জোঁক গর্তে পড়া এক ছাগলের গায়ের রক্ত চুষে খাচ্ছিল। পাশ দিয়ে যাওয়া এক শিয়াল ছাগলের কষ্ট দেখে দয়াপরবশ হয়ে ছাগলের শরীর থেকে জোঁকগুলো সরিয়ে দিতে উদ্যত হলে ছাগল শিয়ালকে বারণ করেছিল এই বলে: ‘আমার রক্ত খেয়ে খেয়ে এই জোঁকগুলোর পেট ফুলে এতটাই ঢোল হয়ে আছে যে নতুন করে তারা আর রক্ত খাচ্ছে না। তুমি এদের সরিয়ে দিলে নতুন জোঁকেরা আমাকে কামড়ে ধরে নতুন করে রক্ত চুষতে শুরু করবে এবং আমার কষ্ট তাতে বহুগুণ বেড়ে যাবে!’

প্রবন্ধের শেষ প্যারাটা পড়ে অনেক পাঠকের এই ভুল ধারণা হতে পারে যে বর্তমান লেখক সরকারি দলের অন্ধ সমর্থক। পাঠকের এই ‘প্যাড়া’-র উত্তরে আমার সাফাই হবে, মন্দের ভালোকে বেছে নেয়া চিরকালই যুক্তিশীল রাজনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য বটে।