বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ইনডেমনিটি দিয়েছিল। তার প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি ইনডেমনিটি দিল দুর্নীতিবাজদের। পরম্পরা বটে! ঘোড়ার জন্য হাসির খোরাক মিলল বটে!
Published : 15 Sep 2022, 08:04 PM
ঘোড়া কি হাসতে পারে? ঘোড়া কি ডিম পাড়ে? এ সব প্রশ্নের উত্তর যাই হোক, এক সময়ে ঢাকায় জনপ্রিয় যান ঘোড়ার গাড়ির কোচোয়ানদের বুদ্ধিদীপ্ত ও সরস মন্তব্য নির্মল আনন্দের কারণ হয়ে উঠত। কেউ কোনও ঘোড়াকে দুর্বল বললে চালক বলে উঠতেন রেস কোর্সে ছেড়ে দেন, দেখবেন একেবারে পেছনে দৌড়াচ্ছে- কিন্তু আসলে সে বেবাক ঘোড়াকে তাড়িয়ে নিয়ে যায়। আবার যাত্রী কম ভাড়া বললে কোচোয়ান বলে উঠতেন- ‘ছাব আস্তে কন, হুনলে আমার ঘোড়া ভি হাসবো’।
বিএনপির নেতাদের কথা শুনলে অনেকে বলেই উঠতে পারেন- ‘আস্তে কন, হুনলে ঘোড়া ভি হাসবো’। কয়েকদিন আগে বিএনপির এক নেতা তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে ‘সফল রাষ্ট্রনায়ক’ আখ্যায়িত করেছেন, যিনি না-কি শতবর্ষ পরে বাংলাদেশ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটা নিয়ে সর্বক্ষণ ভাবেন। বিএনপির কয়েকজন নেতা সম্প্রতি আরও বলছেন- আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী দল নিয়ে একটি জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠার রূপরেখা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষণা করেছেন। এই রূপরেখায় জবাবদিহিতা নিশ্চিন্তে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের যে প্রস্তাব রয়েছে তা বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশে সুশাসন নিশ্চিত হবে এবং দেশ দ্রুত এগিয়ে যাবে।
বিএনপি নেতারা আস্তে কন না, সভা-সমাবেশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে জোর গলাতেই তাদের বক্তব্য বলে যাচ্ছেন। একইসঙ্গে অবশ্য বলছেন- বাংলাদেশে কথা বলার স্বাধীনতা নেই!
সামরিক দুঃশাসন ও মিথ্যাচার অবিচ্ছেদ্য। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, স্বাধীনতার পরের পাঁচ দশকের প্রায় তিন দশক শাসন ক্ষমতায় ছিল সরাসরি সামরিক শাসন কিংবা সামরিক শাসকদের গঠিত রাজনৈতিক দলকে সামনে রেখে পরোক্ষ শাসন। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি নামের দলটি গঠিত হয়। কয়েকদিন আগে দলটি প্রতিষ্ঠার ৪৪ বছর পালন করেছে। বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশের কয়েকদিন পর আমি চাঁদপুরের একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। আমার অবস্থানের পাশেই চলছিল সদ্য গঠিত বিএনপির একটি সমাবেশ। একসময় জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলামী ও মুসলিম লীগ করতেন, এমন কিছু লোক সেখানে সমবেত হয়েছিলেন। মেজর জলিল-আসম আবদুর রব-সিরাজুল আলম খানের অনুসারী (পেশাজীবীদের নিয়ে পার্লামেন্টের উচ্চককক্ষ গঠনের প্রস্তাব আশির দশকে এইচ এম এরশাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে তারা বলতেন), মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর অনুসারী, শ্রেণি সংগ্রামের মাধ্যমে ‘গলা কেটে’ সমাজতন্ত্র কয়েমে জীবনপাত করা একদল ‘ত্যাগী’ লোক- তারাও হাজির সমাবেশে। একাধিক সাংবাদিক জানালেন, প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং বিশেষভাবে গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা সক্রিয় ছিল এ সমাবেশ আয়োজনে। উদ্যোক্তাদের তরফে সমাবেশে হাজির থাকার জন্য প্রধান যে যুক্তি দেওয়া হয়েছে সেটা হচ্ছে, বিএনপি এখন ক্ষমতায়। জিয়াউর রহমান প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও রাষ্ট্রপতি। অন্য কোনো দল করলে আপনাদের জনগণের কাছে যেতে হবে, ভাল ভাল কথা বলে তাদের সমর্থন আদায় করতে হবে, ভোট আসলে ভোট চাইতে হবে। এ ধরনের রাজনৈতিক দল করতে হলে প্রয়োজনে নিজের পকেটের টাকা খরচ করতে হবে, ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। প্রয়োজনে জেলে যেতে হবে। কিন্তু জিয়াউর রহমানের দল ক্ষমতায় আছে। এ দলে যিনি যোগ দেবেন তিনি আপনা-আপনি, কষ্ট সহ্য করা ছাড়াই ক্ষমতাসীন দলের সদস্য এমনকি নেতা হয় যাবেন। আসুন, সকলে এই ক্ষমতাসীন দলে যোগ দিন, ক্ষমতাসীন দলে থেকে নানা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করুন। শত বর্ষে একবার এ সুযোগ আসে। হেলায় এ সুযোগ হারাবেন না।
‘শতবর্ষে একবার’ আসা এ সুযোগ হেলায় হারাতে চায়নি কিছু লোক। তারা বিএনপিতে যোগ দিয়ে আপনা-আপনি ক্ষমতাসীন দলের নেতা হয়ে গেছে, একাত্তরের গণহত্যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ঘৃণ্য সহযোগী হিসেবে কাজ করার পরও মন্ত্রিসভার সদস্য হয়েছে। অ্যান্থনি মাসকারেনহাস তার ‘বাংলাদেশ: রক্তের ঋণ’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘জেনারেল জিয়া তার দল বিএনপিতে সকল দল ও মতাদর্শের লোকদের একত্রে জমায়েত করেন। অসময়ে শেখ মুজিবের মৃত্যুতে সবচেয়ে লাভবান হয় বিএনপি। জিয়ার বিএনপি পাকিস্তানি দালালদের জন্য তার সবগুলো সদর দরজা খুলে দিয়েছিল। ১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে পদপ্রার্থীদের মধ্যে ২৫০ জনই ছিল ওই দালালগোত্রের রাজনীতিবিদ। তাদের অধিকাংশই শেখ মুজিবের আমলে পাকিস্তানি শাসকচক্র ও হানাদার বাহিনীর সঙ্গে দালালির অভিযোগে অভিযুক্ত হয় এবং সাজা ভোগ করে।’ [‘বাংলাদেশ: রক্তের ঋণ’, পৃষ্ঠা ১৬৩]
জিয়াউর রহমান কীভাবে বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের কাছ থেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদ কেড়ে নেন, তার বিবরণ রয়েছে ‘বাংলাদেশ: রক্তের ঋণ’ গ্রন্থে। এতে অ্যান্থনি মাসকারেনহাস লিখেছেন, ‘জিয়া ২৮ নভেম্বর (১৯৭৬) সিদ্ধান্ত নেন- প্রেসিডেন্ট সায়েমকে একসঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্বে রাখা তার জন্য বিপজ্জনক। তিনি ডেপুটি চিফ অব আর্মি স্টাফ জেনারেল এইচ এম এরশাদ, চীফ অব স্টাফ জেনারেল আবুল মঞ্জুর, নবম ডিভিশনের কমান্ডার জেনারেল মীর শওকত আলী, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধান এবং রাষ্ট্র্রপতির বিশেষ সহকারী বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে নিয়ে বঙ্গভবনে গিয়ে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদটি তার কাছে ছেড়ে দিতে বলেন। রাষ্ট্রপতি সায়েম এতে রাজী ছিলেন না। এক পর্যায়ে বিচারপতি সাত্তার বলেন- ভাই, জিয়া যখন সিএমএলএ পদটি চাইছে, পদটি আপনি তাকে দিয়ে দিন। রাত ১টার দিকে বিচারপতি সায়েম প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদ হস্তান্তরের কাগজে সই করেন।’ [পৃষ্ঠা ১৫৫-১৫৬]
বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম তার ‘বঙ্গভবনে শেষ দিনগুলি’ গ্রন্থে বেদনা ও ক্ষোভের সঙ্গে লিখেছেন, ‘আমি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদ ছেড়ে দিই উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জিয়াউর রহমানের হাতে। ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল তার হাতেই ছেড়ে দিই রাষ্ট্রপতির পদ।’ [পৃষ্ঠা ৩৫]
এ গ্রন্থেই বিচারপতি সায়েম জিয়াউর রহমানকে তুলনা করেছেন বাংলাদেশে গণহত্যার প্রধান হোতা জেনালের ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে। কারণ দু জনেই একইসঙ্গে সেনাবহিনী প্রধান, সশস্ত্র বাহিনী প্রধান, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। [পৃষ্ঠা ২২] বিচারপতি সায়েম লিখেছেন, ‘যেভাবে হঠাৎ এবং তড়িঘড়ি করে আমাকে বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে আসতে হয়েছে, সেজন্য এবং জিয়াউর রহমানের পক্ষে ওকালতির জন্যও আমার ওপর মানসিক চাপ বোধ হয়েছে, ক্ষোভ হয়েছে।’ [পৃষ্ঠা ৩৮]
বিচারপতি সায়েম লিখেছেন, ‘জিয়া আমাকে নিশ্চয়তা দিয়ে বলেন- তিনি নির্বাচন অনুষ্ঠান করবেন। কিন্তু আমি তখন ভাবতে পারিনি যে তিনি নিজেই সেনাপ্রধান থাকা অবস্থাতেই এবং সামরিক আইনের অধীনে প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক প্রশাসক পদে থেকে অর্থাৎ ক্ষমতাসীন থেকেই নির্বাচন করবেন।’ [পৃষ্ঠা ৩৬]
যে দলের প্রতিষ্ঠাতা এমন এমন প্রতারণা করতে পারেন, সে দলটি একের পর এক মিথ্যাচার করে যাবে, তাতে বিস্ময়ের কী আছে? কয়েকদিন আগে বিএনপির এক নেতার সঙ্গে একটি টিভি টকশোতে অংশ নিই। ওই নেতা বলছিলেন (বিএনপির আরও অনেক নেতা তোতা পাখির মতো একই কথা বলেন)- খন্দকার মোশতাক আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন এবং এ কারণে ১৫ অগাস্টের হত্যাকাণ্ডের সব দায় আওয়ামী লীগের। তাকে বলি- ১৫ অগাস্টের হত্যাকাণ্ডের পর খুনি মোশতাক শত শত আওয়ামী লীগ নেতাকে জেলে পাঠায় এবং নিজের জন্য সবচেয়ে বিশ্বস্ত ব্যক্তি হিসেবে জিয়াউর রহমানের হাতে সেনাবাহিনী প্রধানের দায়িত্ব অর্পণ করে। খুনিরা বঙ্গবন্ধুর জন্য কাঁদবে, এমন কাউকেও বাঁচিয়ে রাখেনি। খুনি মোশতাক ডেমোক্রাটিক লীগ নামের যে রাজনৈতিক দল গঠন করে তার নেতাদের তালিকায় জ্বলজ্বল করছে অলি আহাদ, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন প্রভৃতি নাম, যারা ১৫ অগাস্টকে ‘নাজাত বা মুক্তি দিবস’ হিসেবে পালন করত। জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু ও বন্ধ সংবাদপত্র চালু করেছে, এমন দাবির উত্তরে বলি- ১৯৭৬ সালের জুলাই মাসের শেষ দিকে বিচারপতি সায়েম প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও রাষ্ট্রপতি পদে থাকাকালেই বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত একটি সভায় রাজনৈতিক দলগুলোকে ঘরোয়াভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু করতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কয়েক মাসের মধ্যেই আওয়ামী লীগ, ন্যাপ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, ইউনাইটেড পিপলস পার্টি, মুসলিম লীগ, কমিউনিস্ট পার্টি প্রভৃতি দল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করে। আর ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন চারটি বাদে সকল পত্রিকা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত রদ হয়েছিল ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। একক রাজনৈতিক দল বাকশালের পরিবর্তে বিভিন্ন দলের নামে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু এবং বন্ধ সংবাদপত্রগুলো চালুর সিদ্ধান্ত যখন হয় তখন জিয়াউর রহমানের পদবী কেবল সেনাবাহিনী প্রধান। যদি ১৫ অগাস্টের পরের সকল কাজের ‘কৃতিত্ব’ জিয়াউর রহমানকেই বিএনপি নেতারা দেন, তাহলে ১৫ অগাস্টের নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের কৃতিত্বও জিয়াউর রহমানের বৈকি!
বিএনপি জবাবদিহিতামূলক রাষ্ট্র গঠনে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনোত্তর একটি জাতীয় সরকার গঠনের বিষয়ে নানাস্থানে ঘরোয়া আলোচনার আয়োজন করছে। সিলেটে এ ধরনের একটি সভায় বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘একজন রাজনীতিবিদ নির্বাচন নিয়ে চিন্তা করেন, আর একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক চিন্তা করেন ১০০ বছরে দেশকে কোথায় নিয়ে যাবেন, সেটা নিয়ে। তারেক রহমান ১০০ বছরে কোথায় নিয়ে যাবেন সে চিন্তা করছেন। কিন্তু তার দুর্ভাগ্য, আওয়ামী লীগের মতো একটি ফ্যাসিস্ট সরকারকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হচ্ছে, যে আওয়ামী লীগের হাতে ১৯৭৩ সালেই গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘটেছিল।’
রাজনীতির সামান্য জ্ঞান রাখে এমন যে কারও জানা যে কোনও দেশে ফ্যাসিস্ট শাসন থাকলে সেখানে কথা বলার সুযোগ থাকে না, প্রতিবাদের সুযোগ থাকে না। জিয়াউর রহমান একাত্তরের জল্লাদ ইয়াহিয়া খানের মতো সকল ক্ষমতার অধিকারী থাকার সময় রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ কার সুযোগ ছিল না, সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করা হয়েছিল। বেতার-টেলিভিশন ছিল সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। জিয়াউর রহমান তার শাসন নিরঙ্কুশ করা ও ‘বৈধতা’ প্রদানের জন্য ১৯৭৭ সালের মে মাসে যে গণভোটের আয়োজন করেন সে সম্পর্কে বিচারপতি সায়েম লিখেছেন, ‘সেই গণভোটে হ্যাঁ বাক্সে এত বেশি ভোট পড়ে যে জনগণ সেই ফলাফলকে হাস্যকরভাবে অবিশ্বাস করে।’ [বঙ্গভবনের শেষ দিনগুলি, পৃষ্ঠা ৩৭]
অন্যদিক, জিয়াউর রহমানের নিষ্ঠুর শাসন সম্পর্কে অ্যান্থনি মাসকারেনহাস লিখেছেন, ‘জেনারেল জিয়া ১৯৭৭ সালের ১ অক্টোবরের অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত সৈনিক আর এয়ারম্যানদের ওপর ইতিহাসের অন্যতম জঘন্য প্রতিশোধ নিয়ে তার মনে প্রজ্জ্বলিত প্রতিহিংসার আগুন নির্বাপিত করেন। সরকারি হিসাব মতে তিনি ১৯৭৭ সালের ৯ অক্টোবর পর মাত্র দু’ মাসের মধ্যে ১১৪৩ জন সৈনিককে ফাঁসির দড়িতে লটকিয়ে হত্যা করেন। বহু শত সৈনিককে দশ বছর থেকে যাবজ্জীবন পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড দেন’। [বাংলাদেশ: রক্তের ঋণ, পৃষ্ঠা ১৭৯]
আর শতবর্ষ পরের বাংলাদেশ নিয়ে যাদের দুঃশ্চিন্তায় ঘুম হারাম, সেই কুখ্যাত হাওয়া ভবনের হোতাদের প্রত্যক্ষ শাসনামলের আমলে বাংলাদেশ কেমন ছিল? কয়েকটি সংবাদপত্রের শিরোনাম দেখি: ‘শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যার চেষ্টা’- প্রথম আলো, ২২ অগাস্ট ২০০৪। ‘ইসলামী জঙ্গিবাদের আত্মপ্রকাশ- ৬৩ জেলায় বোমাবাজি’ প্রথম আলো, ১৮ অগাস্ট ২০০৫। ‘রাজধানীতে চার দিনে আটক আট হাজার’- প্রথম আলো ৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৬। ‘গণগ্রেফতার ৫ হাজার’- সমকাল, ১৫ জুন ২০০৬। ‘হরতালে পুলিশ মারমুখী’- সমকাল ৭ সেপ্টেম্বর ২০০৬। ‘ভোটার তালিকায় এক কোটি ২২ লাখ ভুয়া ভোটার: এনডিআই’- ডেইলি স্টার ৩ ডিসেম্বর ২০০৬। ‘রাজপথ সক্রিয় সেনাবাহিনী’- প্রথম আলো, ২২ ডিসেম্বর ২০০৬।
জিয়াউর রহমান একক কর্তৃত্ব রেখেছিলেন বিএনপি গঠনের সময়। এ দলের গঠনতন্ত্রের একটি ধারা (৭ ধারা) ছিল এভাবে- কোনো ব্যক্তি দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত হলে তাকে দলের কোনো পদে দায়িত্ব প্রদান করা যাবে না এবং জাতীয় বা স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনে দলের পক্ষ থেকে মনোনয়নও প্রদান করা হবে না। বর্তমানে বিএনপির শীর্ষ পদে দুই ব্যক্তি কেবল দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত হননি, সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক দণ্ডিতও বটে। কীভাবে এটা সম্ভব? শতবর্ষ পরে নয়, এখনই এ প্রশ্নের উত্তর কে দেবে? বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ইনডেমনিটি দিয়েছিল। তার প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি ইনডেমনিটি দিল দুর্নীতিবাজদের। পরম্পরা বটে! ঘোড়ার জন্য হাসির খোরাক মিলল বটে!