Published : 05 May 2022, 10:08 PM
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার (আরএসএফ) সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার যে সূচক এবার প্রকাশ করেছে, তাতে দশ ধাপ অবনমন ঘটেছে বাংলাদেশের। এনিয়ে ইতিমধ্যে নানা ধরনের আলাপ আলোচনা হচ্ছে। হওয়াটাই স্বাভাবিক। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রসঙ্গটি কোনওভাবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার আলোচনার বাইরে নয়।
এই দুনিয়ার বেশিরভাগ অংশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দেখা হয় পশ্চিমাদের চোখে। এটা দেখতে গিয়ে আমাদের নিজেদের মাথামুণ্ডু সব আমরা ভুলে যাই। আর এই ভুলে যাওয়ার কারণে আমাদের ঘরের খবর আমরা না জানলেও পরে জানে ঠিকই। আমরা হরেদরে পশ্চিমা সাদা চামড়ার কূটনীতিকদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরি। আমাদের নেতারা সুযোগ পেলেই তাদেরকে ত্রাণকর্তা সাজিয়ে ক্ষমতায় যাবার স্বপ্ন দেখেন। আমাদের গণমাধ্যমের বন্ধুরা সুযোগ পেলেই চুঙা হাতে তাদের দিকে আমাদের রাজনীতির ভুত-ভবিষ্যৎ আর নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করে বসেন। আমাদের গণমাধ্যম এই 'বেয়াক্কেল' সাংবাদিকতার হাতেখড়ি কোথায় কিভাবে পেল- আমার মাথায় আসে না। আমাদের সম্পাদকীয় নীতি বলে কি কিছু নাই?
বেশি ঘাটাঘাটির দরকার নেই, গুগলে তালাশ করে দেখুন, এইসব কূটনীতিকদের নিজ নিজ দেশের গণমাধ্যমে কয়জনের নাম ও ছবি খুঁজে পান।
আমাদের পত্রিকাগুলো পশ্চিমা কূটনীতিক পেলে একধরনের হামলে পড়ে। এর পেছনের কারণ কী? সম্পাদক মহোদয়রা কি একটু খোলাসা করবেন? অথচ এর বিপরীতে আমাদের মন্ত্রী, সরকার প্রধান, রাষ্ট্রপ্রধান ওইসব দেশে রাষ্ট্রীয় সফরে গেলে দুই-একটা ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সব ক্ষেত্রে ওইসব দেশের গণমাধ্যম বেমালুম এড়িয়ে যায়। আমার কাছে মনে হয়, পশ্চিমা গণমাধ্যমের এটা একটি বর্ণবাদী আচরণ। আর এরাই মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বড় বড় ছবক দিয়ে থাকে।
আমাদের দেশের মতপ্রকাশের চিত্র নিয়ে বিশদ বলার আগে পশ্চিমা দুনিয়ার মতপ্রকাশের হালহকিকত নিয়ে আরো কয়েকটি কথা বলে নিতে চাই।
পশ্চিমা গণমাধ্যম অনেক ক্ষেত্রে 'জোর যার মুল্লুক তার' সেদিকেই কি হেলে থাকে না? এই প্রেক্ষাপটে বড় দুইটি ঘটনা বলে নেওঊয়া দরকার। এর এর একটি ঘটনা, টেসলা মূসকের ব্লগপ্লাটফর্ম টুইটারের মালিক হয়ে যাওয়া, অন্যদিকে টুইটারে নিষিদ্ধ হওয়া সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডনাল্ড ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যাল বা 'সত্য সমাজ' নামে নতুন এক সামাজিক যোগাযোগ প্লাটফর্ম চালু করেছেন। ট্রাম্প এসেই ঘোষণা দিয়েছেন, 'আমি ফিরেছি' ।
উনারা এবার ফিরে এসেছেন। এবার উনাদের ঠেকায় কে? এই যে টাকার জোরে মুঘলঘিরি এটা কি নতুন কিছু? এই জারিজুরি চলেছে পিছিয়ে পড়া নবীন রাষ্ট্র ও জনগোষ্ঠীর স্বার্থের বিপরীতে, যুগ যুগ ধরে। নানাসময় নানা অজুহাত দাঁড় করানো হয়েছে দরকষাকষির ক্ষেত্রে। গণমাধ্যমের নানা দৃশ্যত ও অদৃশ্যত, নানা সাম্রাজ্যবাদী, বর্ণবাদী, এমন কি ফ্যাসিবাদী ভূমিকা রয়েছে। অনেক সময় আমাদের দেশের মতো নবীন রাষ্ট্রের সম্পাদক মহোদয়রা বিদেশি স্বার্থের প্রতিনিধি হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন। অনেকে আবার বিরাজনীতিকীকরণ প্রকল্পের অংশ হিসেবে সামরিক সরকারের হয়ে কাজ করেছেন, পদপদবী নিয়েছেন, মন্ত্রিত্ব পর্যন্ত করেছেন। এরাই পশ্চিমা দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে বলেন- আমাদের দেশে গণতন্ত্র নাই, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নাই।
অনেক সময় যুদ্ধ-বিষয়ক বা অন্য আন্তর্জাতিক গুরুত্ববহ খবর প্রকাশ করতে গিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো একটি পক্ষ হয়ে গিয়েছে। এই ক্ষেত্রে বিবিসি, সিএনএন, আল জাজিরার মতো গণমাধ্যমও অভিযোগ থেকে মুক্ত নয়।
পশ্চিমা দুনিয়ার বাইরের খবর প্রকাশ করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পক্ষের বক্তব্য ছাড়াই খবর প্রকাশ করার দৃষ্টান্ত রয়েছে। এই ক্ষেত্রে হাল আমলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আর সাবেক সেনাপ্রধানকে জড়িয়ে আলজাজিরার একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করা যায়। এই ক্ষেত্রে আল জাজিরা প্রধানমন্ত্রী বা সেনাপ্রধান তরফের কারো বক্তব্যই প্রকাশ করেনি আর প্রতিবেদনের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোও অপেশাদারী ও উদ্দেশ্যমূলক। এখানে প্রশ্ন, আল জাজিরা পশ্চিমের কোনো দেশের বিষয়ে কোনো সূত্র যাচাই ছাড়া এরকম খবর প্রকাশ করতে পারবে?
এবার পশ্চিমের একটি উদাহরণ দিতে চাই। সুইডেনের দূরদর্শনের জনপ্রিয় উপস্থাপক ও সাংবাদিক ফ্রেডরিক ভিরতানেনের বিরুদ্ধে এক নারী '#মি টু' আন্দোলনের অংশ হিসেবে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন। এটা নিয়ে খবর ছাপা হয়। ফ্রেডরিক সামাজিকভাবে নাজেহাল হন, কর্মক্ষেত্রে ক্ষতির সম্মুখীন হন। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি আদালতে মামলা ঠুকে দেন। স্টকহোমের একটি আদালত ফ্রেডরিকের পক্ষে রায় প্রদান করে আর #মি টু খ্যাত ওই নারীকে আর্থিক ক্ষতিপূরণের নির্দেশ প্রদান করে।
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে আসি। আমাদের গণমাধ্যম হরহামেশাই কোনও প্রমাণ ছাড়া, বিচারিক প্রক্রিয়ার বাইরে, কতজনের চোখেমুখে চুনকালি মেখে দিচ্ছে। কোনও প্রমাণ নাই, ভিত্তি নাই। কেউ একজন সংবাদ সম্মেলন করে দিলো আর যায় কোথায়- গুষ্ঠি উদ্ধার শুরু হয়ে গেল। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তার নাড়িনক্ষত্র ছাপানো শুরু হয়ে গেল। এটা কোন ধরনের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা?
আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো প্রায়ই সাংবাদিক সম্মেলন করে অভিযুক্ত হিসেবে নানাজনের নানাজনের ছবি ছাপাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে নিজেরাও অভিযুক্তের সঙ্গে ছবির অংশ হয়ে কৃতিত্ব জাহির করছে। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেকেই পরে নিরপরাধী প্রমাণিত হয়। তার বড় উদাহরণ ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত বহুল আলোচিত জর্জ মিয়া। আমরা কি এখন 'জর্জ মিয়া' কাহিনী থেকে মুক্ত হবো না?
পশ্চিমে খোঁজ নিয়ে দেখুন, বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলোতে, ওখানে জিডিপিআর বা সাধারণ তথ্য রক্ষা নীতিমালা বা জেনারেল ডেটা প্রটেকশন রেগুলেশন্স ২০১৬ অনুসারে কারো লিখিত অনুমতি ছাড়া তার ব্যক্তিগত বৃত্তান্ত বা ছবি ছাপার অধিকার কারো নাই। আর আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগে পুলিশ বা গণমাধ্যম কারোর সাধ্য নাই অভিযুক্ত হিসেবে কারো নাম বা তার ছবি ছাপাবার। আমাদের দেশের 'গণমাধ্যমের বিচারালয়' দেদারছে চলছে। কারো কোনো জবাবদিহিতা নাই।
এই ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনী ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গণমাধ্যমের সামনে আসার একধরনের প্রতিযোগিতা চলছে নাকি? ঘটনা যাই হোক, বিচারিক রায় ছাড়া কোনো নাগরিককে কেবল অভিযোগের অজুহাতে এমন কি হাজারটা প্রমাণ থাকলেও জনসমক্ষে চুনকালি মেখে দেয়ার অধিকার কারো কি আছে? আমাদের সংবিধান কি বলে? আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত মানুষেরা তো আর সংবিধানের উর্ধ্বে না। মতপ্রকাশের এই ধরনের স্বাধীনতা বন্ধ করা আবশ্যক। একই সঙ্গে দরকার জবাবদিহিতা। এই জিনিসটার বড় অভাব আমাদের দেশে।
এবার আমাদের দেশের ব্লগারদের নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই। অনেক ক্ষেত্রে লেখালেখির নির্ধারিত প্রক্রিয়ার ভেতরের দিয়ে না গিয়ে হুটহাট করে রাতারাতি নাম ফাটাবার খায়েশ থেকে ব্লগ একখান খুলে ব্লগার বা লেখক একজন হয়ে গেলেন। শুরু করে দিলেন রাজা উজির মারা। অনেকের উদ্দেশ্য থাকে কত সহজে আলোচনায় আসা যায়। আবার কেউ কেউ চান ব্লগের উছিলায় বিদেশে আশ্রয় খোঁজ করতে। এটা করতে গিয়ে আমাদের দেশে লেখক না হয়েও লেখক খ্যাতি নিয়ে একজন প্রকাশক পুরস্কার পর্যন্ত জিতেছেন।
এরকম 'মাজেজা'র অনেক ব্লগারমহোদয়গণ হরহামেশা বাংলাদেশকে কাঠগড়ায় দাঁড় করান। এর বিপরীতে উনারা যেসব দেশে থাকেন, ওইসব দেশের গণমাধ্যমে তাদের লেখা প্রকাশ করার কোনো নজির খুব একটা নেই। উনারা বিদেশে বসে নিজ দেশের কুৎসা রটিয়ে যতটা বীরত্ব দেখতে পারেন, তার ছিটেফোঁটা সুযোগ নাই ওইসব দেশের কোনো একটা বিষয়ে ওখানকার গণমাধ্যমে কথা বলার। আমি খোলা অনুরোধ দিয়ে রাখলাম। এরকম কৃতিত্ব কোনো ব্লগার দেখিয়ে থাকলে, তার লিঙ্ক পেলে বাধিত হবো।
এমন কি বিদেশে বসে ওইসব দেশের কোনও বিষয়ে বা কারও সম্পর্কে যা খুশি তাই ফেইসবুকে লিখতে পারবেন না। লিখলে খবর আছে, জরিমানা গুনতে হবে, নইলে গারদে ঢুকতে হবে। আমি একটা কথা বলি, আমাদের দেশে আদতে মতপ্রকাশের বিরামহীন স্বাধীনতা আছে, যদি কারো একটু ক্ষমতা থাকে আর মাত্রাজ্ঞানের অভাব থাকে। বাইরের দুনিয়ায় বরং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার একটু অভাব, তবে তাদের আছে কার্যকর জবাবদিহিতা !
এখানে একটি উদাহরণ দিতে চাই। ইউরোপের একটি দেশে বসে বাংলাদেশের একজন ব্লগার ব্রিটিশ এক নাগরিকের সঙ্গে যোগসাজশে আমেরিকার টাকায় একটি ব্লগ চালান। যার একমাত্র কাজ হলো বাংলাদেশ বিরোধী খবরাখবর ছাপানো। এই দুই মহারথীর কাছে আমার প্রশ্ন আপনারা পারলে ব্রিটেনের বিষয়ে বা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ যে 'ব্রিটিশ' আচরণ করলো, সেই বিষয়ে দুই একটা লেখা ছাপিয়ে দেখুন তো কয়দিন চালাতে পারেন আপনাদের ব্লগ? আর আমেরিকার টাকার জোগান কয়দিন থাকে আপনাদের?
একইভাবে আমাদের এক নির্বাসিত বোন দিল্লিতে বসে অনেকটা বিজেপির মুখপাত্রের মতো কথা বলেন, কলম চালান। উনার লক্ষ্যবস্তু যেন ইসলাম, পুরুষ আর বাংলাদেশ। উনি প্রধানমন্ত্রী মোদী বা বিজেপির সমালোচনা করে দেখান তো কয়দিন উনি দিল্লিতে থাকতে পারেন?
বিদেশে বসে আমাদের বাঙালি ব্লগার মহোদয়গণ ইসলাম ধর্ম, মসজিদ-মাদ্রাসা বা মহানবীকে নিয়ে যত আঁতলামি ফলান, তার কিছুটা ওইসব দেশের গির্জা বা পাদ্রীদের সম্পর্কে ফলিয়ে দেখান তো কয়দিন ওইসব দেশে থাকতে পারেন? বিদেশে বসে নিজের দেশ সম্পর্কে নিমকহারামী আচরণকে আর যাই হোক আমি বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বলতে নারাজ। এটা স্রেফ আঁতলামি আর ফটকাবাজি।
এবার পশ্চিমা দুনিয়ার দ্বিমুখী আচরণকে আরও পরিষ্কার করার জন্য উইকিলিক্স প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের প্রসঙ্গ সামনে আনতে চাই। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে শায়েস্তা করার জন্যে ইউরোপ-আমেরিকা মিলে উঠে পড়ে লেগেছে। অ্যাসাঞ্জের অপরাধ কী? উনি তো কোন ফৌজদারি অপরাধী নন। অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলতে যা বোঝায় তাই তিনি করেছেন। অ্যাসাঞ্জকে ঘিরে বহুল পরিচিত ব্রিটিশ পত্রিকা গার্ডিয়ানের ভূমিকাও আজ প্রশ্নবিদ্ধ।
অ্যাসাঞ্জের বিষয়ে পশ্চিমা দুনিয়া যা করলো বা করছে, একই আচরণ যদি বাংলাদেশ কারো ব্যাপারে করতো তাহলে কূটনীতিক থেকে শুরু করে সুশীল-কুশীল-দেশি-বিদেশি কতজনের আঁতলামি যে বেড়ে যেত। অথচ বিলেতে অ্যাসাঞ্জকে ঘিরে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া কি লক্ষ্য করা গেল? ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষকে কেউ কি কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন? যত ছবক বাইরের দুনিয়ার বেলায়। ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট এ ব্যাপারে কি কোনও বিতর্ক করেছে? বা কোনও ছবক দিয়েছে? অথচ বাইরের দুনিয়ার ব্যাপারে কত ছবক উনাদের। অ্যাসাঞ্জের কি মানবাধিকার থাকতে নাই? আর এই মানবাধিকার দেখার চোখ কি ইউরোপ-আমেরিকার নাই? আদতে পশ্চিমা দুনিয়ার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চলে তাদের পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে।
বাইরের দুনিয়ার চোখে নয়, আমাদের মতো করেই আমাদের গণমাধ্যমের উৎকর্ষতা সাধন করা সম্ভব। এই জন্যে দরকার মোটাদাগে আমাদের সম্পাদকমহোদয়গণের কাণ্ডজ্ঞানের অনুশীলন আর মালিকদের শুভবুদ্ধি। আমাদের দেশের মতপ্রকাশ আর গণমাধ্যমকে স্বচ্ছ নীতিমালার মধ্যে আনতে হবে। যা পেশাদারি রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে আর সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনবে। জবাবদিহিতা যেমন পুলিশের থাকবে, সেই সঙ্গে থাকতে হবে গণমাধ্যমের মালিক ও সম্পাদককে। জবাবদিহিতা দরকার মন্ত্রী-নেতা-আমলা-বিচারপতি সকলের।
সমাজ ও রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করলে সেখানে বিচ্ছিন্নভাবে গণমাধ্যমে শৃঙ্খলা প্রকাশ পাবে না। এই জন্য আমাদের দরকার নানা প্লাটফর্মে বেশি বেশি কার্যকর বিতর্কের উদ্যোগ আর গণমাধ্যমকর্মীদের রুটিরুজিকে পেশাদারি রক্ষাকবচের মধ্যে নিয়ে আসা।
পশ্চিমা দুনিয়ায় হরেদরে উচ্ছৃঙ্খলতার পক্ষেও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অজুহাত ব্যবহার করা হয়, বিশেষ করে মহানবীকে কটাক্ষ করতে কিংবা কোরান পোড়াতে। এই ক্ষেত্রে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, মতপ্রকাশের নামে ঘৃণা ছড়ানোর অধিকার কারো নাই। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ভোগের সঙ্গে দায়িত্বের প্রশ্নটিও অনিবার্য। শিষ্টাচার বলেও একটি কথা থাকে। কেউ যদি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নাম উলঙ্গ হয়ে নগরের পথে নামেন, সেটা নিশ্চয়ই কেউ চাইবে না। যে কারণে পশ্চিমের অনেক দেশে ব্লাসফেমি আইন বলবৎ রয়েছে দীর্ঘকাল ধরে। কিন্তু সেই সব আইন ইসলামকে কটাক্ষ করার সময় কি খুব কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে? এই প্রশ্নটি সামনে চলে এসেছে সুইডেনের মতো দেশে নতুন করে কোরান পোড়ানোর বাতিক সামনে চলে আসার কারণে?
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও ইসলামকে ঘিরে কয়েকটি প্রশ্ন সামনে রেখে লেখাটির পরিসমাপ্তি টানতে চাই। ইসলাম কি সংস্কারের উর্ধ্বে আদতে? এখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কি কোনো সুযোগ নাই? ফিকাহ শাস্ত্রের চার বিধান- কোরান, হাদিস, ইজমা আর কিয়াস কী বলে?