Published : 21 Apr 2012, 09:16 PM
মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি অনেকটা অশান্ত হয়ে উঠেছে। ঠিক বোঝা যাচ্ছে না ঘটনা কোন দিকে গড়াবে। এমনকি দুই দলের সংঘাত-সংঘর্ষ কোন চেহারা ধারণ করবে সেটাও ঠিক নেই। এই পর্যন্ত আওয়ামী লীগকেই বলা যায় ক্ষমতার পরিসরে প্রধান উপস্থিতি কিন্তু বিএনপি ঘটনার কার্যকারণে হঠাৎ সবল হয়ে কর্মসূচী দিয়েছে।
এতে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পতন ও পূর্ণ উত্থান এবং ইলিয়াস আলীর অন্তর্ধান ভূমিকা পালন করেছে। "দেখা যাক কী হয়" এখন " কী হবে কে জানে"তে গিয়ে অবস্থা ঠেকেছে।
আওয়ামী লীগের সুরঞ্জিত গুবলেটটা তাদের ইমেজ সমস্যা তৈরি করেছে। যেভাবে তিনি ধরা পড়লেন সেটা যেমন কিছুটা আশ্চর্যজনক তেমনি দল কর্তৃক হাত পা গুটিয়ে তাকে ত্যাগ করাটা ছিল তেমনি কৌতুহল উদ্দীপক। বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোন 'মন্ত্রী' অসাধু প্রমাণ হলে কেউ হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে না কিন্তু যেভাবে সুরঞ্জিত দ্রুততার সাথে বর্জ্য পদার্থে পরিণত হলেন দল ও সরকারের কাছে সেটা ছিল বেশ চমৎকৃত হওয়ার মত। দলসমূহ তো সব সময় দলের মানুষকে রক্ষা করে যত অভিযোগই তার বিরুদ্ধে থাকুক কিন্তু "সুরঞ্জিত ত্যাগ" পর্ব দেখে অনেকের মনে হয়েছে "পাঠার বলি" তে তিনি পরিণত হয়েছেন দলের রাজনৈতিক সুবিধার বিবেচনায়।
একটি দলের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতাও যে কত একা হতে পারে সেটা ছিল দেখার মত। "বাবুর" বিরুদ্ধে তো কোন অভিযোগই প্রমাণিত হয়নি, তাহলে কেন তাকে এক প্রকার চাপ দিয়ে পদত্যাগ করানো হলো–এটাই ছিল সবার প্রশ্ন। আর এখন কেন দলের সবাই বলছে যে তিনি দোষী নন?।
এতদিন পরেও যে সুরঞ্জিতের কোন অবস্থান তৈরি হয়নি দলের ভেতরে, তার "প্রস্থানটা" ছিল এই বিষয়টির উৎকৃষ্ট উদাহরণ। আর যতই দক্ষতা থাকুক একজন সংসদবিদ হিসেবে, একজন মুক্তিযোদ্ধা যিনি ১৯৭০ এর নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের ঢলের বিপরীতে, তিনি সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ইত্যাদি কিন্তু এইসব কিছুই এসে যায়নি। ঘটনা ঘটার পর কোন সংকেত আসেনি যে তার দল সুরঞ্জিতকে রাখতে চায়। প্রধানমন্ত্রীর সাথে তার দেখা হ্ওয়ার পর পরই পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত হয়। তিনি একা একা চলে গেলেন। আবার একা একাই ফিরে এলেন সবাইকে বেশ "কী হচ্ছে কী হলো'র" মধ্যে ফেলে।
তার সমর্থনে কে এলো, কে তার হয়ে চাপ দিলো এটা বোঝা যায়নি তবে অনেকে বলছেন দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে এভাবে ঘায়েল করলে দলের কিছুটা হলেও রাজনৈতিক দাম গুনতে হতে পারে–এই কথাটা সরকারের উপলব্ধিতে এক সময় আসে। অনেকেই বলেছেন, বিশেষ করে ইন্টারনেট জগতে যে তার নাম সেনগুপ্ত না হয়ে আহমেদ হলে কি এই দশা হতো?
হিন্দু-খ্রীষ্টান-বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদও তাদের অসন্তুষ্টির বক্তব্য জানান। যেটাই হোক, বিষয়টি যেভাবে সামলানো হলো তাতে দলের বা সরকারের ইজ্জৎ বেড়েছে–এমন কথা সমর্থকরাও বলবে না।
এই ঘটনার প্রায় পরপরই ঘটেছে ইলিয়াস আলী'র অর্ন্তধান। বাংলাদেশে আইনরক্ষাকারী সংস্থার হাতে বা অন্য কারও হাতে বেহদিস হওয়া কোন বিষয় নয়। তবে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে সেটা ঘটে সাধারণ মানুষের জীবনে কিন্তু ইলিয়াস আলী বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক। তাই তার অন্তর্ধানের প্রভাব অনেক বড় এবং ফলস্বরূপ এই দলের প্রথম রাগী হরতাল।
এতে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি বেড়েছে সেটা কি বলা যায়? যেভাবে সরকার এই অন্তর্ধানের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তা পরিপক্ক ছিল কিনা সেটাও দেখার বিষয়। এই "মিলিয়ে যাওয়ার" সংস্কৃতির উদ্ভাবক হিসেবে বিএনপিকে গাল দিলেন শেখ হাসিনা যখন ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারের ব্যাপারে তার কোন বক্তব্য অনেক বেশী প্রধানমন্ত্রীসুলভ হতো।
তথ্যের খাতিরে এটাও বলা দরকার যে এই "সংস্কৃতি" স্বাধীনতার পরপরই চালু হয় এবং প্রথম জামানাতেই এটা "জনপ্রিয়তা" লাভ করে। সেটা কেবল সিরাজ শিকদারই নয় বরং আরও অনেকের কপালে জোটে।
সাহারা খাতুন বলেন যে তারা ইলিয়াস আলীকে খোঁজার চেষ্টা করছেন এবং বিএনপি'র উচিত হরতাল কর্মসূচী উঠিয়ে নেওয়া। এর জবাবে মির্জা আলমগীর বলেছেন যে তারা প্রয়োজনে আরও হরতাল দেবেন।
বিষয়টা এখন অস্থির এবং অনিশ্চিত। ঠিক বোঝা যাচ্ছে না বর্তমানের আইন শৃংখলা পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে কিনা। তবে সরকার, ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়, কিছুটা হলেও বেতাল-বেহাল অবস্থা বিরোধী দলের রাজনৈতিক পালে হাওয়া দিয়েছে।
তবে ঢাকার মানুষের অনেক ধরনের চিন্তাভাবনা রয়েছে যেটা বেশ গুজব তৈরি করছে যার মধ্যে প্রধান হচ্ছে এইসব ঘটনার পেছনে "তৃতীয় শক্তি" অর্থাৎ সেনাবাহিনীর সংস্থাদের হাত আছে। না বলে লাভ নেই, আমাদের মিলিটারি ভাইরা একটি রাজনৈতিক দলের মতই সুযোগ পেলে ক্ষমতায় যায় বা কাউকে যেতে সহায়তা করে। সেরকম গন্ধ কেউ কেউ পাচ্ছেন।
যেভাবে সুরঞ্জিত বিতাড়িত এবং পুনর্বাসন হলেন তাতে অনেকের মনেই এই সন্দেহ জেগেছে যে বিষয়টি কেবল চাকুরি যাওয়া ও আবার ফেরত পাওয়া নয়, এতে "নাটকীয়" কিছু আছে। ড্রাইভার গেল কই? এরকম ঘটনা এত দূর গড়ালো কেন যদি এর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র না থাকে?
ইলিয়াস আলীর ব্যাপারটা আরও জটিল কারণ এটা ঘটেছে ঢাকা শহরের প্রধান একটি সড়কে এবং যাকে পাওয়া যাচ্ছে না সে অন্য প্রধান দলের নেতা। তাকে "মিলিয়ে" দেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। এই দুঃসাহস কি সবার আছে? আর এই সব একসাথে কেন ঘটছে?
অবশ্যই এর কোন নিশ্চিত উত্তর নেই তবে এইসব প্রশ্ন যে শুরু হয়েছে সেটা থেকে মনে হয় মানুষের মনে অস্থিরতা বাড়ছে। অন্য সব বিষয় বাদ দিলেও আইনশৃংখলা পরিস্থিত অনেকের জন্য চিন্তার কারণ।
যেটা শুরু হয়েছে রুনী-সাগর হত্যাকান্ড দিয়ে সেটা এখন দাঁড়িয়েছে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে ইলিয়াস আলীর অর্ন্তধানের ঘটনায়। সরকার এই রকম দুই সাংবাদিকের চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড'র কোন হদিস করতে পারলো না। কোর্ট র্যাবকে এখন আদেশ দিয়েছে কিছু করার জন্য। যেখানে গুলশানের ড্রাইভার কর্তৃক গৃহকর্তীর খুনের গ্রেপ্তার ঘটেছে কয়েক ঘন্টার মধ্যে সেখানে এই যুগলের হত্যাকাণ্ডের সমাধান এতদিন লাগছে কেন?
সুরঞ্জিতকে ইস্তফা দিতে চাপ দেওয়া হলো আবার কোন চাপের মুখে তাকে পুণর্বহাল করা হলো? ইলিয়াস আলী'র অর্ন্তধান তার নিজের ঝামেলার কারণে না অন্য কিছু?
এই সব প্রশ্নের কোন উত্তর মিলছে না এবং সেই কারণেই ধাঁধার উত্তর খুঁজতে গিয়ে এত সব কথা-গুজব সৃষ্টি হচ্ছে। তবে অবশ্যই সরকারকে কিছুটা দুর্বল দেখাচ্ছে এবং যেভাবে তারা পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে নিজেরাই ঝামেলায় পড়ছে তাতে মনে হয় না এটা একটি আ্ত্ম-বিশ্বাসী সরকার।
সমস্যাটা সেখানেও। এছাড়া সমস্যা রয়েছে স্বচ্ছতার অভাবে, সমস্যা রয়েছে তাদের শাসন আমলে কোন সংকট তৈরি হবে না–এই ভ্রান্ত বিশ্বাসেও। কোনটা বলবো," দেখা যাক কী হয়? না "কী হবে কে জানে?"
২১-৪-২০২১
বি:দ্র: এই লেখাটি লিখতে লিখতে শোনা গেল ইলিয়াস আলীকে খুঁজে পাওয়ার জন্য অভিযান চলছে। দেখা যাক পা্ওয়া যায় কিনা। সুরঞ্জিত বিদায় হলেন আবার ফেরৎ আসলেন, এটাও কি তাই হবে?
ইলিয়াস আলীকে নিয়ে সর্বশেষ সংবাদ:
আফসান চৌধুরী: নির্বাহী সম্পাদক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।