Published : 10 Mar 2013, 12:52 PM
বাংলাদেশে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি যে সহিংসতার সূচনা হয়েছে তা যে অভূতপূর্ব সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। রাজনৈতিক সহিংসতা আমাদের দেশে বিরল কোনো বিষয় নয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী বিয়াল্লিশ বছরের প্রায় পুরোটা জুড়ে আমরা কোনো না কোনো ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা প্রত্যক্ষ করেছি। এ সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতার চরিত্র ও প্রকৃতি দুই-ই বদলে গেছে। এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, এর প্রসারও ঘটেছে।
কিন্ত এ সব ইতিহাস ম্লান করে দিয়েছে গত ক'দিনের ঘটনাপ্রবাহ, বিশেষ করে ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত দেশজুড়ে আমরা যে ঘটনাবলি প্রত্যক্ষ করেছি। এসব সহিংস ও নাশকতামূলক ঘটনায় প্রকৃতপক্ষে ক'জনের প্রাণহানি ঘটেছে আমরা তার সঠিক হিসাবও জানি না। রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি।
শুধু তাই নয়, ৪ মার্চের পরও সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে এবং আগামী দিনগুলোতে তার যে পুনরাবৃত্তি ঘটবে না সে নিশ্চয়তা নেই। দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিতে এমন অনুমান করা ভুল হবে না যে ধরনের ঘটনা এ সহিংসতার সূচনা করেছিল তা আবারও দেশের জন্য অপেক্ষা করছে। এ সহিংসতায় জামায়াতে ইসলামীর নেতা ও কর্মীদের অংশগ্রহণ বিষয়ে গণমাধ্যমে বিস্তারিত প্রকাশিত হয়েছে, পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী বাহিনির গুলিতে নিহত হয়েছেন অনেকে, পুলিশবাহিনির সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে এবং এ বাহিনির বেশ ক'জন সদস্য নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি এটাও আমরা জানি যে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েছে।
বাংলাদেশের গণমাধ্যমে অধিকাংশ সহিংস ঘটনার, দেশজুড়ে চলা তাণ্ডবের বর্ণনা যখন প্রকাশিত হচ্ছিল তখনও সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো ভাষ্য প্রকাশ করা হয়নি। ৬ মার্চ সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে বিবৃতি দিয়েছেন তাতে বলা হয়েছে যে, ৪ মার্চ পর্যন্ত মোট ৬৭ ব্যক্তি মারা গেছেন।
একই সময়ে আমরা সংবাদপত্রে প্রকাশিত হিসেবে ৭৪ জনের মৃত্যুর কথা জানতে পেরেছি। প্রথম আলোতে প্রকাশিত হিসেব অনুযায়ী নিহত ৭৪ জনের মধ্যে ৩৮ জন জামায়াত-শিবিরের কর্মী, ৩০ জন সাধারণ মানুষ ও অন্য রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং ৬ জন পুলিশ। এরপরও পুলিশের একজন সদস্য এবং বেশ ক'জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যকে দায়সারা সরকারি বিবৃতির অতিরিক্ত কিছু মনে হয়নি। এটা দুঃখজনক, কেননা আমাদের চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বেশি বোঝার কথা যে এ সব ঘটনা আর দশটা ঘটনার মতো নয়। তিনি নিশ্চয়ই এটাও জানেন যে, রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী এমনকি অপরাধীদেরও জীবনের দায়িত্ব সরকারের।
কী পরিস্থিতিতে এত মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটল সেটা বিস্তারিতভাবে তদন্তের কোনো উদযোগ সরকারের পক্ষ থেকে যেমন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না তেমনি বাংলাদেশের মানবাধিকার সংঠনগুলোর পক্ষ থেকেও এ নিয়ে বিবৃতির অতিরিক্ত কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে ধংসাত্মক ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য ২৩৫টি মামলা হয়েছে এবং ১ হাজার ৫৭২ জনকে আটক করা হয়েছে। এ সব ব্যক্তিকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে এবং তাদের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হলে তারা সাজা ভোগ করবে।
দোষী ব্যক্তিদের সাজা পাওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কারও মনেই সংশয় নেই। কিন্ত তাতে কি আমরা আসন্ন পরিস্থিতি জানতে পারব? আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির এত দ্রুত অবনতি হল কেন তা কি আবিষ্কার করা যাবে? তাছাড়া বিচারপ্রক্রিয়া তো কালই শেষ হয়ে যাচ্ছে না।
আমরা জানি যে, পাঁচদিন ধরে কমপক্ষে ১৮ জেলায় এ তাণ্ডব চলেছে। কয়েকটি ঘটনায় পুলিশকে গুলি করতে হয়েছে, কী পরিস্থিতিতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তার একটা হিসাব সবার সামনে হাজির করা সরকারের দায়িত্ব বলেই বিবেচনা করতে হবে। সেক্ষেত্রে কেবল সংসদীয় বিবৃতি যথেষ্ট নয়। কথাটা এ কারণে আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে যে দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের এবং নাগরিকদের জানা দরকার যে তাদের নিরাপত্তার জন্য সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন। সরকারের কাজে ব্যত্যয় ঘটলে, দায়িত্ব পালনকালে ত্রুটি হয়ে থাকলে তা জানানোর দায়িত্ব সরকারের এবং জানার অধিকার নাগরিকদের আছে।
এসব ঘটনায় শিশু এবং নারীরা নিহত হয়েছেন বলে আমরা জেনেছি। রাজশাহীর গোদাগাড়ীর ৩ মার্চের ঘটনায় একজন শিশু নিহত হওয়ার খবরটি নিশ্চয়ই অনেকের চোখে পড়েছে। এ ধরনের ঘটনা একাধিক যেখানে মিছিলকারী কিংবা হামলাকারীদের মোকাবেলা করার সময় পুলিশ বা বিজিবির গুলিতে নিহত হয়েছেন পথচারী, আবার জামায়াতের কর্মীদের সহিংসতায়ও পথচারীর প্রাণনাশ হয়েছে।
জামায়াতের কর্মীরা একাধিক জায়গায় কেবল যে পুলিশ ও বিজিবির ওপর চড়াও হয়েছে তাই নয়, বেসামরিক সরকারি কর্মচারিদের ওপর হামলা চালিয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের পল্লী বিদ্যুত উপকেন্দ্রের কর্মচারিদের সরকারি আবাসে আগুন লাগিয়ে ৪৮ পরিবারকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা তার বড় প্রমাণ। একজন প্রকৌশলীকে বাড়ির ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
কিন্ত এ সব পরিস্থিতিতে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ যথেষ্ট ছিল কিনা সেটা জানা প্রয়োজন। পাশাপাশি এটাও নিশ্চিত করা দরকার যে সরকারের পক্ষ থেকে, আইন প্রয়োগকারী বাহিনির পক্ষ থেকে এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি যা নাগরিকদের জান-মাল-অধিকারের জন্য হুমকি ছিল। সেটা বুঝতে হলে এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে, মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে, এমনকি প্রয়োজন হলে বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে তদন্ত হওয়া দরকার।
মনে রাখা দরকার যে, তদন্ত মানেই কারও দোষ খুঁজতে যাওয়া নয়। তদন্ত হওয়ার মানে হচ্ছে জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা। তাহলে আমরা সম্ভবত এ-ও জানতে পারব যে এ ধরনের সহিংসতার প্রস্ততি যারা নিয়েছে তাদের শিকড় কতটুকু গভীরে, কী ধরনের প্রস্ততি তাদের ছিল।
সরকারের পক্ষ থেকে এটা বলা সম্ভব যে এ ধরনের সহিংসতার জন্য তারা প্রস্তত ছিলেন না। সেটা ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকেই সরকারের আচরণে স্পষ্ট। কিন্ত জামায়াতের কর্মী-সমর্থকরা যে এ বিষয়ে অনেক দিন ধরেই প্রস্ততি নিচ্ছিল সেটা তাদের চালানো তাণ্ডবের ধরন থেকেই বোঝা যায়। কিন্ত এর সামান্যও সরকারের জানা ছিল না দেখে আমরা কেবল বিস্মিত হতে পারি।
এ পরিস্থিতি দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দুর্বলতা প্রকাশ করে বললে সামান্যই বলা হবে, কার্যত গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ নিয়ে এ সরকারের আমলেই বড় দুটো সময়ে তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রমাণে ব্যর্থ হল। ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহের সময় যেমন অন্ধকারে থেকেছে সংস্থাগুলো, ঠিক এ ক্ষেত্রেও তাদের ভূমিকা হয়েছে সাধারণ নাগরিকদের মতো। তারা যে এরকম পরিস্থিতি আঁচ করতে পারল না সেটা কি কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে নাকি অন্য কোনো কারণে সেটা খুঁজে দেখা সরকারের জন্য খুবই জরুরি। কেননা তাদের এ দুর্বলতা বা ব্যর্থতা না থাকলে সম্ভবত অনেক প্রাণহানি ঠেকানো যেত।
প্রাসঙ্গিকভাবে বিভিন্ন পুলিশ স্টেশনে হামলার বিষয়টি সবার বিবেচনা দাবি করে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে ১ মার্চ সংঘটিত হত্যাকান্ডের যে বর্ণনা পাওয়া যাচ্ছে তা কেবল বেদনাদায়কই নয়, উদ্বেগজনকও। বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ উপপরিদর্শক আবু হানিফ সাংবাদিকদের বলেছেন যে, 'রেলস্টেশনে হামলার পর তিন-চার হাজার লোক তদন্ত কেন্দ্রে হামলা শুরু করলে আমরা তাদের থামতে বলি। তারা পাথর ছুঁড়ে মারতে থাকে। আমরা বলি, সামনে এগুলো আমরা গুলি করব। এ সময় তারা উল্টো গুলি ছোঁড়ে। পরিস্থিতি দেখে আমরা শটগান ও রিভলবারের ৩২টি ফাঁকা গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে নিরাপদে সরে যাই। তখন তারা নিরস্ত্র পুলিশ সদস্যদের পেটাতে শুরু করে। যে চারজন পুলিশ মারা গেছেন, তারা সবাই নিরস্ত্র ছিলেন।'
ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডু থানার ঘটনা ঘটে ৩ মার্চ। ওসি রেজাউল ইসলাম রেজার বক্তব্য অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদে ১৫ জন পুলিশ ডিউটিরত ছিলেন। দুপুর ১২টার দিকে জামায়াত শিবিরের কর্মীরা মিছিল নিয়ে এসে হরিনাকুণ্ডু উপজেলা পরিষদ ভবন ঘেরাও করে। তারা অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করতে থাকে। বাধা দিতে গেলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। এক পর্যায়ে হামলাকারীরা উপজেলা পরিষদ বাউন্ডারির ভিতরেই নির্বাহী অফিসারের অফিসের পেছনে কনস্টেবল ওমর ফারুককে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। হত্যার পর কনস্টেবলের শটগানটি তারা ছিনতাই করে নিয়ে যায়।
প্রাপ্ত ভাষ্য অনুযায়ী দেখা যায় দুটি ক্ষেত্রেই পুলিশ যথেষ্ট পরিমাণে সংযত আচরণ করেছে, কিন্ত এ পরিস্থিতি কি অন্য কোনোভাবে মোকাবেলা করে পাঁচটি প্রাণ রক্ষা করা যেত না? ওই পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অন্যদের যোগাযোগের ব্যবস্থা কী ছিল, কেন তাদের এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়তে হল সেটা পুলিশের কর্মকর্তারা নিশ্চয়ই বিভাগীয়ভাবে তদন্ত করবেন; কিন্ত যাদের কাছে নিরাপত্তার দায়িত্ব তাদের নিরাপত্তাহীনতা নাগরিকদের জন্য স্বস্তির বিষয় নয়।
পরিস্থিতি যে মাঠ-পর্যায়ের প্রশাসনের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে উদ্বেগের কারণ হয়েছে সেটা সম্প্রতি সংবাদপত্রের খবরে প্রকাশিত হয়েছে। ৪০ জেলা থেকে জেলা প্রশাসকরা এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাহায্য চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। কিন্ত এর জবাবে সরকারের চিন্তা-ভাবনা কেবলই প্রশাসনিক বলে প্রতীয়মান হয়। সরকার একটি বিশেষায়িত বাহিনি তৈরির কথা ভাবছেন বলে খবর বেরিয়েছে। বিরাজমান সমস্যাগুলো চিহ্নিত না করে, তার সমাধান না করে কেবল তাড়াহুড়া করে আরেকটা বাহিনি তৈরি করলেই সমস্যার সমাধান হবে মনে করার পেছনে আমি কোনো যুক্তি খুঁজে পাই না।
কেন এত দ্রুত সহিংসতা ছড়িয়েছে; কারা এবং কীভাবে এ সব কার্যক্রম সংগঠিত করেছে সেগুলো বোঝা খুবই জরুরি। সে জন্য দরকার যেসব এলাকায় সহিংসতার মাত্রা বেশি ছিল সেগুলোতে অত্যন্ত দ্রুত মাঠপর্যায়ে অনুসন্ধান চালানো এবং দেখা যে কেবল দলীয় সাংগঠনিক শক্তির জোরেই জামায়াতের পক্ষে এ ধরনের সহিংসতা চালানো সম্ভব হয়েছে নাকি এর পেছনে অন্য কোনো কারণ কাজ করেছে। বগুড়ায় হামলাকারীরা স্থানীয় নয় বলে যে খবর পাওয়া যাচ্ছে সেটা কি ভবিষ্যতের জন্য কোনো ইঙ্গিত?
এ মুহুর্তে এ সব প্রশ্ন তোলার কারণ একাধিক। প্রথমত, যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক ট্রাইব্যুনালের দেওয়া তৃতীয় রায়ের পর আমরা এ পরিস্থিতি দেখতে পেলাম। এখনও আদালতের সামনে অনেকগুলো মামলা রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর চেয়েও দলীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন জামায়াত নেতাদের মামলা রয়েছে। তাদের মামলার রায়ের পর পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের প্রস্ততি কতটুকু সেটা খুব স্পষ্ট নয়।
দ্বিতীয়ত, জামায়াতের পক্ষ থেকে সহিংসতা অব্যাহত রাখার চেষ্টা থাকাই স্বাভাবিক। কিন্ত তাকে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে মোকাবেলার বদলে, আগে থেকেই সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তার বিষয়ে অভিহিত ও প্রস্তত করার বদলে, সহিংসতা প্রতিবিধানের চেষ্টা করার পরিবর্তে কেবল পুলিশি ব্যবস্থা দিয়ে মোকাবেলা করলে তাতে সাধারণ মানুষের চেয়ে জামায়াতই বেশি লাভবান হবে বলে আশঙ্কা করা যায়।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে তাতে আগামী দিনগুলো নিয়ে সবারই আশঙ্কা ও উদ্বেগ আছে। সেটা কেবল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের মানুষের বা প্রবাসী বাংলাদেশিদেরই নয়; আন্তর্জাতিক সমাজেরও। সে অবস্থায় সরকারের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ হল আন্তর্জাতিক জনমত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে রাখা। সরকারের গত চার বছরের রেকর্ড মোটেই ভালো নয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির রেকর্ড তো অনেক নিচে। নির্বাচনের বছরে যে কোনো দেশে যে কোনো সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ সন্দেহের চোখে দেখা হয়ে থাকে।
ফলে সরকার যদি তার নিজস্ব বা দলীয় লাভের বিবেচনায় কোনো সিদ্ধান্ত নেয় এবং তার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে- তাতে কেবল সরকার বা ক্ষমতাসীন দলই নয়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া এবং সারা দেশই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
ইলিনয়, ৭ মার্চ ২০১৩
আলী রীয়াজ : যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনভার্সিটির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক।