Published : 21 Aug 2021, 11:20 PM
নাইন ইলেভেনের পর থেকে সংগঠিত নিদারুণ রক্তক্ষয়ী এবং বিধ্বংসী দু দশকের যুদ্ধের সমাপ্তিতে তালেবানদের শেষ হাসিতে মানব সভ্যতার ভিত্তিপ্রস্তর কেঁপে উঠেছে। কেঁপে উঠেছে হিন্দুকুশ, পামির ও অন্যান্য পর্বতমালায় ক্ষত-বিক্ষত আফগানিস্তানের দুর্গম চড়াই-উৎরাই, চুনাপাথরের রহস্যময় গিরিগুহা, ও উদ্ভিদহীন রুক্ষ মরু প্রান্তর। বিশ্বজুড়ে আশঙ্কা কঠোর ধর্মান্ধ দলটির শাসনে আফগানিস্তানের দুঃখজনক নিয়তির নিম্ন গমন ঘটবে মধ্যযুগের অন্ধকার গহ্বরে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ বছরের প্রচেষ্টার এই করুণ পরিণতিতে অনেকে বিস্মিত হয়েছেন। আবার অনেকের মতে এটা ছিল অবধারিত।
বিদেশি 'সাম্রাজ্যের কবরখানা' নামে আফগানিস্তানের পরিচয় রয়েছে হাজার বছরের। বহিরাগত অথবা তাদের দোসরদের জন্য আফগানিস্তান শাসন করা দুরূহ ব্যাপার। ভীষণ শক্তিশালী অনেক সাম্রাজ্য সফলতা অর্জন করেনি। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে হিমশিম খেতে হয়। দেশটির অধিবাসীরা হল যুদ্ধে পারদর্শী বিবিধ স্বাধীনচেতা গোত্র। জাতিগত বিবেচনায় রয়েছে পশতুন, হাজারা, তাজিক, উজবেক এবং আরও অনেক ক্ষুদ্রতর সংখ্যার জাতি। অনেক সময় সংঘর্ষ চলে বংশ বংশান্তরে। ভৌগোলিক দিক থেকে খুবই দুর্গম। আফগানিস্তানের বিশাল অঞ্চল যেন দখল করে আছে হিন্দুকুশ ও পামির পর্বতমালা।
আড়াই হাজার বছর আগে এ অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত ছিল পারস্যের একামেনিড সাম্রাজ্যের পূর্বাঞ্চলে। তারপর গ্রিক গান্ধারা। ভারতীয় মৌর্য সাম্রাজ্য এক সময়ে এ অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তখন জনসংখ্যা ছিল খুবই সামান্য। মৌর্য শাসনের অবসানে এ দুর্গম অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত বিবিধ যুধ্বংদেহী গোত্রের মানুষ। ভাষা হিসেবে ক্রমশ প্রাধান্য পেয়েছিল পশতু (Pashto, an ancient Eastern Persian Language)। বার্তা বিনিময়ের বা সংলাপের মিশ্র ভাষা হিসেবে ব্যবহার হয় দারী নামে ফারসির কাছাকাছি এক ধরনের ভাষা। বাঙালিদের কাছে রবীন্দ্রনাথের 'কাবুলিওয়ালা' ছোট গল্পটি এবং তপন সিংহের চিত্ররূপ বহুল পরিচিত। হাজার যোজন দূরে জীবিকার জন্য স্বেচ্ছা নির্বাসিত কাবুলিওয়ালা মিনির প্রতি মায়াশীল। কিন্তু অযৌক্তিক ঋণ গ্রহণকারীকে চাকু মারাতে এক মুহূর্ত অপেক্ষা করেনি পশতুন জাতির কাবুলিওয়ালা রহমত।
অনেক বছর আগে পশতুনদের দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। ১৯৬৮ সালের অক্টোবর মাসে নিখিল পাকিস্তান টেলিভিশন কুইজ প্রতিযোগিতায় পূর্ব বাংলার রানার-আপ হিসেবে পুরস্কার নিতে গিয়েছিলাম পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে। অনুষ্ঠানের পর ভ্রমণের আয়োজন করা হয়েছিল পেশাওয়ার ও আফগানিস্তানের সীমান্তে অবস্থিত তুর্খামসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান। সে এক নিদারুণ অভিজ্ঞতা। পেশাওয়ারে খটক নৃত্যসহ উপজাতীয় উৎসব শেষে প্রত্যাগত পাঠান শিশুদের দেখলাম কাঁধে বন্দুক নিয়ে অবলীলাক্রমে লাফ দিয়ে উঠছে অপেক্ষমান ট্রাকে অথবা গরুর গাড়িতে। খাইবার গিরিপথ দিয়ে ভ্রমণের আগে জামরুদ কেল্লার কাছে আমাদের নথিতে সই করতে হল, যদি আমরা উপজাতীয় আইন ভঙ্গ করে সাজা পাই, সেজন্য পাকিস্তান সরকারের কোন দায়-দায়িত্ব থাকবে না। মনে হল পাকিস্তানের তখনকার 'লৌহমানব' আইয়ুব খানের অর্থাৎ পাকিস্তানের সার্বভৌমিক ক্ষমতা অনেকটা দুর্বল উপজাতীয় এলাকায়। তুর্খাম বাজারে দেখলাম প্রকাশ্যে বন্দুক বানানো ও বিক্রি হচ্ছে। তুর্খাম বাজারে আমি একটি জ্যাকেট কিনেছিলাম। পরে দেখলাম সেটা রুশ দেশে তৈরি। যদিও পাকিস্তানের সাথে রুশদের সম্পর্ক ততটা ভাল ছিল না। আমার কাছে মনে হয়েছিল গোটা পশতুন এলাকায়, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান জুড়ে, কোনও দেশের আইন তেমন বলবৎ নয়।
এমনি এক স্বাধীনচেতা জাতিকে ইসলামী শাসন ও ধর্মীয় করণে লেগেছিল দু শ বছরেরও বেশি সময়। এ আফগানিস্তানের বামিয়ান (Bamiyan) উপত্যকায় যুদ্ধে নিহত হয়েছিল চেঙ্গিস খানের পৌত্র মুতুকান খান। প্রতিহিংসায় বামিয়ান উপত্যকাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছিল চেঙ্গিস খান। বর্তমানে তার বংশধররা বামিয়ান উপত্যকায় 'হাজারা' নামে শিয়া মুসলিম ফিকরায় বিশ্বাসী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। তালেবানরা 'হাজারা' সম্প্রদায়কে ঘৃণা করে। খালেদ হোসাইনির 'কাইট রানার' গ্রন্থে রয়েছে হাজারা সম্প্রদায় ভুক্ত হোসেনের করুন কাহিনী আসেফ নামে এক কুলাঙ্গার তালেবানের অত্যাচারে। আফগানিস্তান অনেক বছর মোগলদের অধীনে ছিল। কিন্তু আসল শাসক ছিল স্থানীয় যুদ্ধবাজ সেনা নায়করা। ১৭০৯ সালের আফগান বিদ্রোহ পারস্য দেশের সাফাবিদ সাম্রাজ্যের পতনের কারণ হয়েছিল। এর পর ব্রিটিশ এবং রুশরা আফগানিস্তান দখলের চেষ্টা করেছে। কিন্তু সার্থক হয়নি। গত কয়েক দিনে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ বছরের প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হল।
অভাবনীয় মূল্য দিতে হল যুক্তরাষ্ট্রকে। খরচ বাবদ দুই ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি গচ্ছা গেল। প্রায় দু হাজার চার শ আমেরিকান সৈন্যের জীবন দিতে হল আফগানিস্তানের বৈরি ভূখণ্ডে। জখমের সংখ্যা ছারিয়েছে বিশ হাজারেরও বেশি। সর্বমোট দশ লাখের মধ্যে আট লাখ আমেরিকান সৈন্য বিশ বছরের বিভিন্ন সময়ে আফগানিস্তানের যুদ্ধ ক্ষেত্রে যুদ্ধ করেছে। পাঁচ লাখের মত আফগান হতাহতের সংখ্যা, প্রধানত বেসামরিক জনসাধারণ, যুক্তরাষ্ট্রের গোলাগুলিতে। বিশ লাখ আফগান অন্য দেশে উদ্বাস্তু। গোটা দেশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হল। যেন বিশ বছরের অসহনীয় দুঃস্বপ্ন অবসানে বৃত্তের পরিধি রেখার যে বিন্দুতে শুরু হয়েছিল সেই একই বিন্দুতে পৃথিবীর ষাটটি দেশের Operation Enduring Freedom শেষ হল। তালেবানের কাছ থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়ে আবার তালেবানকে ফিরিয়ে দেওয়া হল।
জ্যঁ পল সার্ত্রে ও আলবে ক্যামু এর অস্তিত্ববাদী দর্শনের সার্থক নাট্য রূপায়ন- লাইফ ইজ আ সার্কেল। সবই অর্থহীন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, পোল্যান্ডসহ চল্লিশটি দেশের সেনারা এ যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। আরও বিশটি দেশ সেনা ছাড়া অন্যান্য সহযোগিতা প্রদান করেছে। এমনকি বাংলাদেশ দিয়েছিল সমুদ্র বন্দর ও বিমান বন্দর ব্যবহারের অনুমতি। বাংলাদেশের কয়েকটি এনজিও, বিশেষ করে ব্রাক, ছিল সবচেয়ে বৃহত্তর ও সক্রিয় উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান – Operation Enduring Freedom এর সহায়তাকারী হিসেবে।
এ সবের, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি যুদ্ধ, শুরু হয়েছিল ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আল কায়েদার জঘন্য সন্ত্রাসীদের টুইন টাওয়ার ও পেন্টাগন আক্রমণের পর। যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল ওই বছরের ৭ অক্টোবর। তখন আফগানিস্তানের শাসক ছিল তালেবান। তালেবানের ছত্রছায়ায় ছিল আল কায়েদার সন্ত্রাসীরা। তালেবানের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি ছিল আল কায়েদাকে পরিহার করা ও ওসামা বিন লাদেনসহ সন্ত্রাসীদের যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করা। তালেবানরা এ দাবি মেনে নেয়নি। অতএব যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ ঘোষণা করে। তালেবানরা পরাজয় বরণ করে পাকিস্তানে পালিয়ে যায়।
এর পর শুরু হয় আফগানিস্তানকে আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করার কর্ম যজ্ঞ। পাশ্চাত্য সভ্যতার ধাঁচে এক গণতান্ত্রিক আফগানিস্তান যেখানে নারী পুরুষ সকলের থাকবে সম-অধিকার। থাকবে ব্যক্তি স্বাধীনতা, রাজনৈতিক অধিকার, ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা। এ সব অধিকারসহ নারীদের জন্য নিশ্চিত থাকবে লেখাপড়া করা ও জীবিকা অর্জনের অধিকার। নাগরিক অধিকারে থাকবে না নারী পুরুষের কোন বৈষম্য। এসব অধিকারের ঘোর বিরোধী হলো তালেবান। তালেবানরা পাকিস্তানের আশ্রয় স্থল থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে ক্ষমতা পুনরায় দখলের জন্য শুরু করল গেরিলা যুদ্ধ।
অন্যদিকে, আফগানিস্তানে সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচন হলো, গঠনতন্ত্র কায়েম করা হলো, ও নারী মুক্তিসহ আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রায় সব অধিকার কায়েম হল। যুক্তরাষ্ট্র তার নিজস্ব তত্ত্বাবধানে তিন লাখ আফগানির এক বিশাল সৈন্য বাহিনী গড়ে তুলল। তাদের দেওয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের মতো অত্যাধুনিক অস্ত্র এবং প্রশিক্ষণ। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দেওয়া হলো আফগান বাহিনীকে এক স্বাবলম্বী সামরিক শক্তিতে পরিণত করার জন্য।
বিশ বছর দীর্ঘ সময়। আমেরিকানদের এখন ছিল ঘরে ফেরার পালা। সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তালেবানের সাথে দোহা শান্তি চুক্তি সম্পাদন করেন। ২০২১ সালের ১৪ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট বাইডেন আমেরিকার সেনা ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বিশ্বাস ছিল আশরাফ গানির সরকার তার বিশাল সেনাবাহিনী দিয়ে প্রতিহত করবে তালেবান। তখন হবে সমঝোতা। গড়ে তুলবে সুখী সমৃদ্ধ আফগানিস্তান।
মাত্র ৭০ হাজার সামান্য অস্ত্র সজ্জিত জোব্বা পরিহিত তালেবানের কাছে তিন লাখ আফগানির অত্যাধুনিক অস্ত্র সজ্জিত এক বিশাল সৈন্যবাহিনী কোন রকম যুদ্ধ ছাড়াই আত্মসমর্পণ করল। গানির সেনাদের সাথে ছিল অ্যাপাচি হেলিকপ্টার, বোমারু বিমান, যুদ্ধ বিমানসহ বিমান বাহিনী। তবু কেন এই লজ্জাজনক পরাজয়? এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে মনে হল দুইটি গল্প।
১৮১৮ সালে ইংরেজি লেখিকা ম্যারি শেলীর রচিত উপন্যাস Frankenstein or The Modern Prometheus প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞানী ভিক্টর ফ্রানকেনস্টাইন মৃত মানুষের শরীরের বিভিন্ন অংশ সন্নিবেশ করে এক অদ্ভুত দৈত্য বানিয়েছিল। যে দৈত্যের চিন্তা করার ক্ষমতা ছিল। অদৃষ্টের পরিহাস, ওই দৈত্যই ভিক্টর ও তার স্ত্রী এলিজাবেথকে হত্যা করে। ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত এক দশক ধরে Operation Cyclone নামে এক গুপ্ত কার্যক্রমের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ ও সৌদি আরবের General intelligence Directorate (GID) কোটি কোটি ডলার ক্যাশ এবং সামরিক সরঞ্জাম পাকিস্তানের আইএসআই-কে দেয়। উদ্দেশ্য কট্টর ইসলামপন্থি আফগান মুজাহেদিনদের জিহাদে সহায়তা করা। জিহাদ ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন সমর্থক আফগান সরকারের বিরুদ্ধে।
পাকিস্তানের সামরিক একনায়ক জিয়াউল হকের ক্ষমতার দোসর ছিল 'আইএসআই' প্রধান জেনারেল আখতার আব্দুর রহমান। যুক্তরাষ্ট্রের বিপুল অর্থ ও অস্ত্র সাহায্যের অভিভাবক হিসেবে জেনারেল আখতার আফগানিস্তানের ক্ষমতার দ্বন্দ্বে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ওসামা বিন লাদেন, মোল্লা ওমর, গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারসহ অন্যান্য ধর্মান্ধ জেহাদিদের যুদ্ধবিদ্যায় প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র ও অর্থ সরবরাহ করেছিল জেনারেল আখতার।
পরবর্তী সময়ে মোল্লা ওমর যুক্তরাষ্ট্রের বিপুল অর্থ ও অস্ত্র সাহায্যে এবং জেনারেল আখতারের সহায়তায় তালেবান নামে সংগঠন তৈরি করে আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখল করে। একইভাবে ওসামা বিন লাদেন গঠন করেছিল সন্ত্রাসী আল-কায়েদা। এ দুই ভয়ংকর দৈত্য পাকিস্তানের কুখ্যাত সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী 'আইএসআই' এর সক্রিয় সহায়তায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ ও অস্ত্র সাহায্যে বড় হতে থাকে। এ দুই দৈত্যই এদের সৃষ্টিকর্তা যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাদের প্রতীক স্তম্ভ টুইন টাওয়ার ধ্বংস করে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তির অহংকার পেন্টাগন আক্রমণ করে। ফ্রানকেনস্টাইন গল্পের যেন নগ্ন মঞ্চায়ন হল পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর দেশের বুকের মাঝখানে।
আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতির হ-য-ব-র-ল বুঝতে পাঠক চলুন ঘুরে আসি ক্যারিবিয়ান সাগরের দ্বীপ রাষ্ট্র হাইতি। দ্বিতীয় গল্পটির কেন্দ্রে রয়েছে হাইতির 'জম্বি' নামে এক ধরনের কাল্পনিক উদ্ভট জীব। অনলাইন অভিধান অনুযায়ী, জম্বি হল অতিপ্রাকৃত শক্তি প্রয়োগ করে প্রাণ পাওয়া একটি লাশ। ইচ্ছা শক্তিহীন এবং অপরের দ্বারা পরিচালিত। আফগানিস্তানের পলাতক প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি এবং তার সৈন্য বাহিনীর অবস্থা দেখলে মনে হয় এরা এক উদ্ভট জম্বি। যুক্তরাষ্ট্র কোটি কোটি বিলিয়ন ডলার খরচ করে তিন লাখের বেশি যোদ্ধার এ সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে, অত্যাধুনিক মরণ অস্ত্রে সজ্জিত করেছে, ব্লাক হকের মত হেলিকপ্টার সহ মারাত্মক যুদ্ধ বিমান ও বোমারু বিমান দিয়ে প্রস্তুত করেছিল বিমান বাহিনী। কিন্তু ব্যাপারটি কী ঘটল? অন্য পক্ষে মাত্র পঁচাত্তর হাজার তালেবান। অনেকেই মধ্য বয়সী, পেটে ভুঁড়ি, পরনে জোব্বা, মুখে অগোছালো দাড়ি, কাঁধে বন্দুক। এ তালেবানদের পঞ্চাশ কি একশ জনকে দেখে আধুনিক সামরিক পোশাকে সজ্জিত হাজার হাজার সৈন্য অত্যাধুনিক ট্যাঙ্ক, আরমার্ড পারসোনাল কেরিয়ার, এবং সুরক্ষিত বাঙ্কার ছেড়ে প্রাণ ভয়ে পালাল! এ উদ্ভট জম্বিরা তাদের চালক যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য বাহিনীর অবর্তমানে পুরোপুরি বিকল হয়ে পড়ল। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন লজ্জাজনক আত্মসমর্পণ আর কখনও ঘটেছে বলে মনে হয় না। রুশ গোয়েন্দাদের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি পালাবার সময় চারটি গাড়ি ও একটি হেলিকপ্টার বোঝাই করে ডলার নিয়েছে। নিমেষে পলায়নের জন্য ডলার ঠাসাঠাসি করে ভরতে গিয়ে নাকি মেঝেতে পড়েছিল অনেক ডলার। মনে পড়ছে কবি নজরুলের পঙক্তিমালা, 'থাকিতে চরণ মরণে কি ভয়, নিমেষে যোজন ফরসা'।