Published : 07 Jul 2021, 06:00 PM
হাজী গোলাম মোর্শেদ ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। যারা বঙ্গবন্ধুর সাথে রাজনীতি ও তার সরকারে কাজ করার সূ্যোগ পেয়েছেন তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে প্রবীণতম। এ মানুষটি গত ২৭ জুন রাত ১টা ১০ মিনিটে ধরিত্রীর মায়া ছেড়েছেন। তার মৃত্যুর খবর বাংলাদেশের প্রথমসারির সংবাদমাধ্যমগুলোয় আসেনি বললেই চলে।
এমন একজন ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির এতটা নীরবে বিদায় নিঃসন্দেহে মনোকষ্টের ব্যাপার। তিনি পরিণত বয়সেই মারা গেছেন। কিন্তু জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে সে খবরটি না আসা দুঃখজনক। অথচ প্রয়াত গোলাম মোর্শেদের চেয়ে অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ মানুষের মৃত্যুর খবর ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে, শোকবার্তার ছড়াছড়ি পড়েছে অতীতে।
আমি তার মৃত্যুর খবরটি প্রথম পেয়েছি লেখক হাসান মোর্শেদের ফেইসবুক পোস্টে। তিনি লিখেছেন, "হাজী গোলাম মুর্শেদ তাহলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ন্যূনতম কোন গুরুত্ব পান না? আজ তিনি মারা গেলেন যশোরে। যশোরের একটা অনলাইনে সে খবর পেলাম। বাংলাদেশের তথাকথিত জাতীয় গণমাধ্যমগুলোর কোন একটি এই মানুষটির মৃত্যু সংবাদ প্রকাশের দায়িত্ব মনে করলো না?"
পরে জনকণ্ঠে তার মৃত্যুর খবরটি দেখেছি। তারা লিখেছে, "জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী গোলাম মোর্শেদ বার্ধক্য ও শ্বাসকষ্টজনিত কারণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার (২৬ জুন) মধ্যরাতে ঢাকার হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন।" এছাড়া জাতীয় পত্রিকাগুলোতে তার মৃত্যুর খবর অনুপস্থিত।
জনাব মোর্শেদের সাথে আমার যোগাযোগ হয়েছিল ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে গবেষণার সূত্রে। তার সাথে কথা না হলে আমার গবেষণার একটি দিক অন্ধকার হয়ে থাকতো। বঙ্গবন্ধুর এই সহযোগীর টেলিফোন নম্বর আমার কাছে ছিলনা। কিন্তু তার সাথে কথা বলা আমার খুব জরুরী ছিল। প্রায় বছর খানেক চেষ্টা করে তার টেলিফোন নম্বর না পেয়ে শরণাপন্ন হয়েছিলাম বিডিনিউজের টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান চিত্রগ্রাহক মোস্তাফিজুর রহমানের, যিনি মুস্তাফিজ মামুন নামেই বেশি পরিচিত। যোগাযোগের একদিনের মাথায় তিনি ফোন নম্বর জোগাড় করে দেওয়ায় আমি সেদিন কী যে আনন্দিত হয়েছিলাম তা বোঝানো সম্ভব না। এই আনন্দের কারণ ছিল, ৭ মার্চ নিয়ে গবেষণায় দীর্ঘদিন লেগে থাকলেও কিছু প্রশ্ন ও দ্বিধার উত্তর গোলাম মুর্শেদ ছাড়া পাওয়া সম্ভব ছিল না। আমি অনেকগুলো নিবন্ধে এবং ভিডিও চিত্র দেখে ৭ই মার্চে তার ভূমিকা সম্পর্কে জেনেছিলাম। তখন আমার গবেষণার জন্য জরুরী হয়ে পড়েছিল তার সাথে কথা বলা।
তাকে প্রথম ফোন করেছিলাম ২০১৮ সালের ১৪ জুন। কথা বলে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। টেলিফোনে কথার মাঝেই তিনি আমাকে খুব আপন করে নিয়েছিলেন। অনুমতি দিয়ে দিলেন যখন প্রয়োজন আমি নিঃসঙ্কোচে ফোন করতে পারি। পাশাপাশি আমাকে তার বাসার টেলিফোন নম্বরও দিলেন। আর দিলেন তার ভাস্তের টেলিফোন নম্বর এবং ই-মেইল অ্যাড্রেস। জানিয়ে দিলেন কখন কোন নম্বরে পাওয়া যাবে। আমি কোন প্রয়োজনে তার সাথে যোগাযোগ করতে দ্বিধা করিনি কখনও। মনে আছে, অসুস্থ অবস্থায় একবার তাকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় গাড়ির মধ্যেই আমি ফোন করে বসি। তিনি তখনও আমার সাথে কথা বলেছেন, প্রথমে জানতেই দেননি তাকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। আমি যখন জানলাম দ্রুত ফোন ছেড়েছিলাম।
সদ্য প্রয়াত হাজী গোলাম মোর্শেদ সাহেবের সাথে আমার যত কথা হয়েছে তার রেকর্ড আছে সেগুলো এখন ইতিহাসের সাক্ষী হয়েই থাকবে। তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দিনে বিশেষ ভূমিকায় ছিলেন। সে তিনটি দিন হলো- ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ, ২৫ মার্চ, ১৭ ডিসেম্বর।
১৭ ডিসেম্বর সবাই যখন বিজয়ের আনন্দে বিভোর তখন তিনি ভোলেননি বঙ্গবন্ধুর পরিবারের কথা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন ধানমণ্ডির ১৮ নম্বরের সেই বাড়িতে যেখানে আটক রাখা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে। সেদিন ভোরে তিনি যখন সেখানে যান সাথে ছিলেন তার ফুপাত ভাই প্রকৌশলী ইলিয়াস মজিদ (বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী)। যখন তারা বাড়ির গেইটে পৌঁছান পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাদের বন্দুকের মুখে থামিয়ে দেয়। তারা ভাগ্যবান ছিলেন যে, কোনরকম দুর্ঘটনা ছাড়াই সেখান থেকে চলে আসতে পেরেছিলেন। যদিও ওই সেনারাই তাদের পৌঁছানোর ঠিক আগ দিয়েই গুলি করে দুইজনকে হত্যা এবং কয়েকজনকে আহত করেছিল।
সেখান থেকে তারা সোজা সার্কিট হাউসে যান, সেখানে কয়েকজন উচ্চপদস্থ ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। হাজী গোলাম মোর্শেদ বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের জীবন বাঁচাতে তড়িৎ ব্যবস্থা নিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল গনসালভেজকে অনুরোধ করেন। তখন জেনারেল তাদেরকে নিয়ে বিমানবন্দরে যান। সেখানে তিনি তার অধঃস্তন কর্মকর্তা মেজর অশোক তারাকে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করার ব্যাপারে নির্দেশ দেন। মেজর তারা হাজী গোলাম মোর্শেদ, তার ফুপাত ভাই এবং দুইজন জওয়ানকে সঙ্গে নিয়ে ধানমণ্ডির দিকে রওনা দেন।
ধানমণ্ডির ১৮ নম্বরের সেই বাড়িটি থেকে যখন তারা মাত্র একশো গজ দূরে, তখন এক বিশাল জনতা তাদের রাস্তা আটকায়। আর এগোতে বাঁধা দেয় জনতা। জানায় ওই বাড়িতে পাহারায় থাকা পাকিস্তানি সৈন্যরা কারণে-অকারণে গুলি ছোঁড়ে, তারা সব খুনে মেজাজের। যারাই ওই বাড়ির দিকে এগোচ্ছে, তাদের দিকে তারা গুলি চালাচ্ছে! একটু দূরেই পড়ে আছে একটা বুলেটবিদ্ধ গাড়ি আর ভেতরে একজন সাংবাদিকের টাটকা লাশ। এলাকার লোকজন দূর থেকে তাদের সেটা দেখিয়ে বলে, কয়েক মিনিট আগেই ওই বাড়িটির দিকে যেতে গিয়ে তার এই পরিণতি হয়েছে। এমনকি আরেকটু সকালের দিকে পাকিস্তানিরা আরও একটি স্থানীয় পরিবারের দিকেও গুলি চালিয়ে জখম করেছে।
হাজী গোলাম মোর্শেদের সেদিনের তৎপরতার স্বীকৃতি মেলে মেজর অশোক তারার কণ্ঠেও। তিনি বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশী এ রাজনীতিবিদের (গোলাম মোর্শেদ) কথা উল্লেখ করেছেন। সাক্ষাৎকারটি বিবিসি বাংলা থেকে প্রকাশ হয়েছিল ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর।
১৯৭১ সালের ৬ মার্চ দুপুর দেড়টা থেকে দু-টোর সময় প্রচণ্ড রোদের মধ্যে, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার বাসভবনে দেখা করতে আসেন গভর্নর অ্যাডমিরাল আহসান। কোনেওরকম নিরাপত্তাকর্মী না নিয়ে তিনি নিজেই একটি ছোট মার্সিডিজ চালিয়ে এসেছিলেন। মাত্র ৫/১০ মিনিট স্থায়ী হয়েছিল সেদিনের সেই সাক্ষাৎ। সেই বিশেষ দিনটিতেও হাজী গোলাম মোর্শেদ ছিলেন বঙ্গবন্ধুর পাশে। গভর্নর আহসান বঙ্গবন্ধুকে বিমর্ষ হয়ে বলেছিলেন, "I could not do anything." এরপর আর মূলত কোন রাস্তা খোলা থাকেনা, বাঙালির নেতা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তাকে কী করতে হবে ৭ মার্চে।
৭ মার্চ কালো কাচে ঢাকা নিজের টয়োটা গাড়িতে (নম্বর ঢাকা-গ ১) চাপিয়ে ভাষণ দিতে রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যান হাজী গোলাম মোর্শেদ। গাড়ি চালাচ্ছিলেন নিজেই, তার বাম পাশে বসা ছিলেন বঙ্গবন্ধু। পেছনের আসনে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা মহিউদ্দীন আহমেদ এবং গাজী গোলাম মোস্তফা। বঙ্গবন্ধুর বাড়ির গেইট দিয়ে গাড়ি বের করে বাঁয়ে যেতে চাইলে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ডান দিক দিয়ে যাও। ডান দিক দিয়ে ৮নং ব্রিজ পার হয়ে ৭ নম্বর মসজিদ রোডে ওঠেন তারা। যখন আবুল মনসুর আহমদ সাহেবের বাড়ি অতিক্রম করছিলেন তখন হাজী মোর্শেদ বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, "আজ আপনি কী বলবেন?" তিনি তার মুখের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, "আল্লাহ আমার মুখ দিয়ে যা বলাবেন তাই বলবো।"
এরপর আসে ২৫ মার্চের গণহত্যার রাত এবং ২৬ মার্চের শুরু। সেদিনও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর একমাত্র সঙ্গী হিসেবে ধানমণ্ডির বাসায় শেষতক ছিলেন হাজী গোলাম মোর্শেদ।
২৫ মার্চ সারাদিন একের পর এক লোকজন আসা যাওয়া করেছেন বঙ্গবন্ধুর ধানমণ্ডির ৩২নং বাড়িতে। অন্যান্য দিনের মতো সকালেই হাজী মোর্শেদ সেখানে যান। সন্ধ্যা ৭-৮টার দিকে তিনি তার কাকরাইলের বাসায় রাতের খাবার খেতে ফেরেন। রাতের খাবার শেষ করে তিনি বাসা থেকে বের হন রাত ৯টার দিকে। পথিমধ্যে অনেকগুলো বাঁধা ডিঙিয়ে ধানমণ্ডির ৮নং ব্রিজ পার হয়ে পশ্চিম দিকে গাড়ি রাখেন। এটিই ছিল সেই ঐতিহাসিক গাড়ি যেটা ব্যবহৃত হয়েছিল সত্তুরের নির্বাচনের পুরো সময়। আর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে দিতে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু এ গাড়িতে চড়েই। এ গাড়িতে চড়েই বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুবের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন। ২৫ মার্চ রাতেই শেষবারের মত চড়েছিলেন জনাব মোর্শেদ গাড়িটিতে। এরপর আর ওই ঐতিহাসিক গাড়িটির কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেদিন রাতে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে পৌঁছাতে তার রাত ১০টা বেজে গিয়েছিল।
তিনি ধানমণ্ডির ৩২ নং বাড়িতে ঢুকে দেখেন সব খালি, কোথাও কেউ নেই। বঙ্গবন্ধুর সাথে শয়ন কক্ষের দরজায় দেখা হয়। তার দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, "আমরা স্বাধীন হয়ে গেলাম। They are comming to arrest me. I have decieded to stay." বঙ্গবন্ধু তাকে বলেন, "তুই চলে যা।" কিন্তু তিনি সেদিন বঙ্গবন্ধুর কথা শোনেননি, তিনি ৩২ নম্বরে থেকে যান। তিনি ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি যিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে নেতার সঙ্গ ছাড়েননি।
১৯৯০ সালে দৈনিক দেশ পত্রিকার স্বাধীনতা দিবস সংখ্যায় হাজী গোলাম মোর্শেদ সাহেব এক স্মৃতিচারণে বলেন, "বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের সময় ৩২ নম্বরের বাসভবনে বেগম মুজিব, রাসেল, গৃহপরিচারিকা বুড়ি, কাজের ছেলে রহমান ও আমি ছিলাম। শেখ হাসিনা, জামাল ও রেহানাকে অন্য কোনো বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।"
সেদিন রাতে একটি কক্ষে বঙ্গবন্ধু আর জনাব মোর্শেদ, একের পর এক ফোন আসছিল। তিনি ফোন ধরে বঙ্গবন্ধুকে অবহিত করেছেন। মিসেস সিরাজুল হক, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদসহ অনেকেই ফোন করেছেন সেদিন। প্রত্যেকেই জনাব মোর্শেদকে অনুরোধ করেছেন মুজিব ভাইকে পালাতে বলেন। অনেকে জানতে চান তারা কী করবেন। রাতে অনেকের সাথে ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলামও এসেছিলেন। সর্বশেষ এসেছিলেন তৈয়বুর রহমান ছাত্রলীগ নেতা। তিনি বঙ্গবন্ধুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, "মুজিব ভাই পালান, ওরা আপনাকে মেরে ফেলবে।" বঙ্গবন্ধু ইংরেজিতে বলেন— "If they do not get me they will messacar all my people and destroy the city." তৈয়বুর রহমান চোখ মুছতে মুছতে চলে যান। এসব ঘটনার সাক্ষী ছিলেন হাজী গোলাম মোর্শেদ।
২৫ মার্চ রাত ১২টার পরে একটি ফোন আসে টেলিফোনের অপর প্রান্ত থেকে একজন বঙ্গবন্ধুকে জানাতে বলেন, 'তিনি বলধা গার্ডেন থেকে বলছেন। মেসেজ ট্রান্সমিটেড করা হয়ে গেছে। এখন তিনি কী করবেন?' জনাব মোর্শেদ বঙ্গবন্ধুকে জানালে তিনি বলেন, 'মেশিনটি ভেঙ্গে ফেলে পালিয়ে যেতে বলো।' ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামের লেখা থেকে জানা যায়, ইস্টার্ন ওয়্যারলেস ডিভিশনের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম নুরুল হক, যার বাড়ি ছিল কুষ্টিয়ায়, বলধা গার্ডেন থেকে সেদিনের সেই ফোনটি করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে স্বাধীনতার ঘোষণাটি তিনিই বলধা গার্ডেন থেকে সম্প্রচার করেছিলেন। এ গুরুত্বপূর্ণ টেলিফোনটির খবর বঙ্গবন্ধুকে জানিয়ে জনাব গোলাম মোর্শেদ একটি বিশেষ ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছেন।
সেদিন রাত ১টা ১৫ মিনিটে সবকিছু আলোকিত হয়ে যায় হঠাৎ। হাজী মোর্শেদ বুঝতে পারেন সেটি ছিল ট্রেসার বুলেটের আলো। তখনও তার কানে ফোন। বঙ্গবন্ধু নিচে নেমে এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, "কোন দিক থেকে গুলি আসছে?" তিনি দেখিয়ে দেন, তখনও তার কানে টেলিফোন। হঠাৎ আওয়াজ হল, 'হ্যান্ডস আপ', তারপরে আওয়াজ হল, 'মাত মারো।' কিন্তু পাক বাহিনী হাজী মোর্শেদের মাথায় আঘাত করে, তিনি জ্ঞান হারান। ১৯৭১-এ বঙ্গবন্ধুর পাশের বাড়িতে থাকতেন মোশাররফ হোসেন তিনি পরবর্তীতে বিএনপি সরকারের মন্ত্রী হয়েছিলেন। তিনি পরবর্তীতে হাজী মোর্শেদকে জানিয়েছিলেন, "তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় পাকিস্তান আর্মির গাড়িতে তোলার সময় বঙ্গবন্ধু চিৎকার করে বলেছিলেন- How dare you hit him, I want him alive.
জ্ঞান ফেরার পর গোলাম মোর্শেদ দেখেন তার মাথায় ব্যান্ডেজ। তাকে মাটিতে উপর করে হাত বেঁধে বর্তমান সংসদ ভবনের উত্তর পাশে একটি রুমে শুইয়ে রাখা হয়েছে। পানি চাইলে একজন বলে- পেশাব করে দেব। ফজরের আজানের আগে একটি ছোট গাড়িতে করে পেছনে হাত বেঁধেই উপর করে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে সিএমএইচ-এ ভর্তি করে। ১/২ দিন পরে সিএমএইচ থেকে ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে এয়ারফোর্স অর্ডিন্যান্স ডিপোতে এনে অনেক বন্দির সঙ্গে বসিয়ে রাখে। সেখান থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর সেন্ট্রাল জেলে নিয়ে যায়। এই ৬ মাস প্রতিদিন তাকে উলঙ্গ করে পিটিয়ে অজ্ঞান করত পাকবাহিনী। যে আসত সেই তাকে 'মুজিবকো সেক্রেটারি' বলে পেটাত। তার শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি হয়। তিনি ২৫ নভেম্বর সেন্ট্রাল জেল থেকে ছাড়া পান।
বঙ্গবন্ধুর জীবনের অনেক ঘটনার সাক্ষী তিনি, বঙ্গবন্ধুর জীবনের অনেক অনালোকিত বিষয় তার কাছ থেকে জেনেছি। মুগ্ধ হয়েছি তার কর্মে বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার ভালবাসায়। যশোরের এক ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান তিনি। জমিদার পরিবারের দৌহিত্র। ছোটবেলা থেকেই মানুষের সেবা করার মানসে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততা। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াবস্থায় পাকিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে যান তিনি। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পরিচয় ১৯৪০ সালে। ঘনিষ্ঠতার শুরু ১৯৫৩ সালে, ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সেটি অত্যন্ত দৃঢ় হয়।
হাজী মোর্শেদ ১৯৫০-৫২ সালে যশোর জেলা মুসলিম ছাত্রলীগের সম্পাদক, ১৯৫৩-৫৪ সালে যশোর জেলা সর্বদলীয় ভাষা সংগ্রাম পরিষদের কনভেনার, ৫৩-৫৮ সাল পর্যন্ত যশোর জেলা বোর্ডের সদস্য, ১৯৫৫-৬২ পর্যন্ত যশোর সদর মহকুমা আওয়ামী লীগের সম্পাদক, ১৯৫৩ থেকে ৬৩ সাল পর্যন্ত হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ঘনিষ্ঠ কর্মী এবং ১৯৫৩ সাল থেকে তিনি বঙ্গবন্ধুর অবৈতনিক সহযোগীর দায়িত্ব পালন করছিলেন। এরপর ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর তাকে অবৈতনিক কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগ পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেওয়ার পরও তার নিয়োগের ব্যাপারটি নিশ্চিত করে তাকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা আর আলোর মুখ দেখেনি, তার আগেই তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। জনাব মোর্শেদ ১৯৭২-৭৪ পর্যন্ত ডিজাবল ফ্রিডম ফাইটার্স রিহ্যাবিলেটশন সেন্টার অব বাংলাদেশ রেড ক্রস-এর সেক্রেটারির দায়িত্বও পালন করেন।
হাজী গোলাম মোর্শেদ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে কর্মরত অবস্থায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন ১৯৭২ সালের ২৪ মে। টাইপ করেছিলেন, 'সকল পত্রের প্রাপ্তি স্বীকার করিতে হইবে। সচিব হইতে অধস্তনরা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সকল ফাইল ডিসপোজাল করিবেন। ফাইল আনা-নেয়ায় পিয়ন ব্যবহার করা যাইবে না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ফাইল আনা-নেয়া করিবেন।' বঙ্গবন্ধু দুইবার পড়ে তাতে সই করে দেন। অর্ডার নম্বর ১১৪ জারি হয়ে গিয়েছিল। সরকারি আমলারা যারা রক্ত চুষতে অভ্যস্ত, যারা দরিদ্র কৃষকের পয়সায় ফুটানি করে সেই কালকেউটেরা তার উপর ক্ষেপে যায়।
বঙ্গবন্ধু কোনেও সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলে তিনি কখনো তার পরিবর্তন করতেন না। ২০ জানুয়ারি ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু তাঁকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, চট্টগ্রামে এম এ আজিজের দাফন সম্পন্ন হবার পর বিমানে ঢাকা ফেরার ব্যবস্থা করতে। জনাব মোর্শেদ ও তাজউদ্দীন আহমদ বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে প্রস্তাব করেছিলেন সড়ক পথে বা ট্রেনে ঢাকায় ফেরার। তারা ভেবেছিলেন বিমানে যেকোনো স্যাবোটাজ ঘটতে পারে। সেদিন বঙ্গবন্ধু তাকে (হাজী মোর্শেদকে) বলেছিলেন, 'তুই আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ। আমি কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললে আর আমাকে কোনো অবস্থায় প্রভাবিত করার চেষ্টা করবি না।'
এই কাছের মানুষ হবার সম্মানটাও তিনি রেখেছেন। পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার খবর শুনে প্রথমে তিনি ঢাকা আসেন, তারপর ৩১ অগাস্ট ছুটে যান গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়। কিন্তু তাকে বঙ্গবন্ধুর কবরটি জিয়ারত করতে দেওয়া হয়নি। উল্টো ২২ দিন আটক করে রাখা হয়। জেল থেকে বেরিয়ে আবারও যান বঙ্গবন্ধুর কবরের পাশে। একটি বকুল চারা রোপণ করেন। বঙ্গবন্ধুর মাথার কাছে লাগানো বকুল গাছটিতে অনেক ফুল ধরত। সেই ফুল কবরে ছড়িয়ে দিয়ে পাশেই বসে থাকতেন তিনি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধুর মাজারটি পাকা করতে গিয়ে সেই বকুল গাছটি কেটে ফেলা হয়। তারপর থেকে প্রতিবছর ১৫ আগস্টে ছুটে যেতেন বঙ্গবন্ধুর মাজারে। ৯০ বছর বয়সেও সেটা অব্যাহত রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের এ সৈনিক।
হাজী মোর্শেদ ১৯৬৯ সালে হজে গিয়ে সমস্যায় পড়েন তাদের জাহাজ আটকে দিয়েছিল। তখন তিনি বঙ্গবন্ধুকে টেলিগ্রাম করেন। পরে পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে তাদের জন্য জাহাজের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। দেশে ফেরার পর বঙ্গবন্ধু তাকে তিরস্কার করে বলেছিলেন, "উহ! টেলিগ্রাম করেছে, টেলিগ্রামে ঠিকানা দিতে হয়। আমি উত্তর দেব কোথায়?"
জনাব মোর্শেদের সাথে আমার সম্পর্ক ছিল আত্মিক। তিনি আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। আমি তাকে 'চাচা' ডাকতাম। গতবার দেশে গিয়ে তার সাথে দেখা করেছিলাম। প্রথম দেখাতেই খুব আপন করে নিলেন। তিনি আমাকে গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। আমার মনেই হয়নি তিনি আমার আপন কেউ নন। আমি তার স্পর্শে কী যে আনন্দিত হয়েছিলাম তা বোঝাতে পারবো না। তখন কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিলাম ভাবছিলাম তার এই হাত কতবার বঙ্গবন্ধুর স্পর্শ পেয়েছে। আমি যেন তার মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধুর স্নেহ স্পর্শ পাচ্ছিলাম। সেদিন তিনি কত কথা শোনালেন। সব মুগ্ধ হয়ে শুনেছি। তিনি জানালেন, ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুর মাজারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা হয়েছিল। তাকে দেখে প্রধানমন্ত্রী কাছে গিয়ে সালাম দেন এবং তার খোঁজ খবর নেন। গণভবনে যেতে আমন্ত্রণ জানান এবং তার ব্যক্তিগত সচিবকে জনাব মোর্শেদের টেলিফোন নম্বর নোট করে নিতে বলেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী তার গুরুত্ব বোঝেন, তিনি ঠিকই তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
আমি যেদিন তার সাথে দেখা করতে যাই সেটি ছিল ২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর। আমার গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু পরদিন তিনি যশোর যাওয়ার কারণে ৭ ডিসেম্বরের সে অনুষ্ঠানে থাকতে পারেননি। তাকে একটা বইয়ের কপি দিলে তিনি খুব খুশি হয়েছিলেন। সেদিন আমার সাথে ছিল আমার দুই ভাগ্নে-ভাগ্নি। তাদের সাথে তিনি কত মজা করলেন। ভাগ্নিকে বললেন, "তুমি তো ভাই খুব সুন্দরী, তোমার মত সুন্দরীর কি পরে নানাকে মনে থাকবে? পরক্ষণে নিজের স্ত্রীর দিকে ইশারা করে বললেন তোমরা যত সুন্দরীও হও আমার চোখে সেরা সুন্দরী এ মহিলা। সেদিন তার সঙ্গ আমরা অত্যন্ত উপভোগ করেছিলাম।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়ে যাওয়ায় আমার ভাগ্নে-ভাগ্নিরা তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি তেমন। তবে এবছরেরই ৯ জানুয়ারি আমার ভাগ্নি আর ছোট বোন তার সাথে দেখা করতে গিয়েছিল। তারা জানিয়েছিল, হাজী গোলাম মোর্শেদের শারীরিক অবস্থা খুব ভাল না। কখন কী হয় বলা যায় না।
তিনি যে কোন সময় আমাদের ছেড়ে যেতে পারেন সে আশঙ্কা আমার ছিল। তবে এতটা নিরবে তার প্রস্থান আমাকে আহত করেছে। অথচ এ সংবাদমাধ্যম মুখোরচক খবর প্রকাশে যে গুরুত্ব দেয়, তা জাতিকে লজ্জায় ফেলে মাঝে মাঝে। সংবাদমাধ্যম এ রাজনীতিবিদের খবর প্রচার করুক বা না করুক, তার সরব উপস্থিতি থাকবে বাংলাদেশের ইতিহাসে।
আমার জানামতে হাজী গোলাম মোর্শেদই একমাত্র ব্যক্তি যার সাথে বঙ্গবন্ধু তার ব্যক্তিগত জীবনের সুখ-দুঃখ নিয়ে আলাপ করেছেন। আমার সাথে তার কথকপোথনের রেকর্ড রয়েছে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত একটি নিবন্ধেও একবার সেসব কিছু কথা লিখেছি। বঙ্গবন্ধু একদিন তাকে বলেছিলেন, "তোর ভাবীকে (বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব) ডেকে দেইনি বলে আজ সেহরি খেতে পারিনি। তোর ভাবী খুব ঝগড়া করেছে।"
১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরলে তাকে বরণ করে নেওয়ার সময় নেতার সঙ্গে একই ট্রাকে ছিলেন হাজী মোর্শেদ। বঙ্গবন্ধু তাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন, যার কারণে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেও বঙ্গবন্ধু একদিন তার ব্যক্তিগত গাড়িতে উঠেন।
জনাব মোর্শেদ মনে করতেন- বঙ্গবন্ধু মূল্যায়নের ঊর্ধ্বে, তিনি তো কাসা, পিতল, সোনা আর রূপা নন যে তাকে সেভাবে মূল্যায়ন করা সম্ভব। জাতিরজনক তার কাছে শুধু ভিভিআইপি ছিলেন না, তিনি ছিলেন তার আরাধ্য।
গোলাম মোর্শেদ জানিয়েছিলেন, ১৯৭২ সালে জিয়াউর রহমান তার সঙ্গে দেখা করে সরকার কিভাবে চলছে তা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে শুনতো। জিয়া গুপ্তচরবৃত্তি করতো সেটা তিনি তখন বুঝতে পারেননি, সরল বিশ্বাসেই আলোচনা করতেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর সেটা অনুধাবন করে অপরাধবোধ অনুভব করতেন।
তিনি ছিলেন সোজা কথার মানুষ, ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে কথা বলতেন না। জানা থাকলে প্রশ্নের সোজা উত্তর দিয়ে দিতেন। না জানা থাকলে সোজা বলে দিতেন তিনি সে বিষয়ে কিছু জানেন না। কিন্তু না জেনে, কোন বিষয়ে জানার ভান করতেন না। ৯০/৯১ বছর বয়সেও তার স্মরণশক্তি ছিল প্রখর। কোন কিছু জিজ্ঞাসা করলে সাল তারিখসহ বলে দিতেন। ৭ মার্চ তিনি যে গাড়িতে করে বঙ্গবন্ধুকে রেসকোর্স ময়দানে নিয়ে গিয়েছিলেন সে গাড়ির নম্বরের কথা জিজ্ঞাসা করি, তিনি নম্বর তো বললেনই, তাছাড়াও জানিয়ে দিলেন সেই সময় এত গাড়ি ছিলনা। সর্বমোট ৯০০৮-টি গাড়ি ছিল তখনকার পূর্ব বাংলায় বেবি ট্যাক্সি, ট্রাক, বাসসহ।
গোলাম মোর্শেদ ছিলেন- অত্যন্ত সৎ, নির্লোভ, ত্যাগী ও সত্যবাদী একজন মানুষ। তার অভাব জাতি অনুভব করবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান নায়ক জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়েই স্বাধীন করেছেন এই দেশকে। ইতিহাসের অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী হাজী মোর্শেদ। বঙ্গবন্ধুর জীবনের ঘনিষ্ঠতাই তার জীবনের সর্বোচ্চ পাওয়া। যোগ্য ও সৎ মানুষ যোগ্যদের খুঁজে বের করতে পারেন, তাই বঙ্গবন্ধুর নির্বাচন হাজী গোলাম মোর্শেদের ক্ষেত্রে ছিল যথার্থ। তার মত ব্যক্তিত্বের বিশালত্ব একটি নিবন্ধে বলে শেষ করা দুষ্করই নয়, অসম্ভব।