Published : 24 Mar 2021, 08:36 PM
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে সন্মানিত অতিথি হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর মোদী ঢাকায় আসছেন। কিন্তু দেশের ইসলামি উগ্রবাদীরা তার এই আগমনকে ঠেকানোর জন্য হুমকি দিয়েছে। গত দুই বছর ধরে তারা যেভাবে বিভিন্ন ইস্যু সৃষ্টি করে সরকারকে এবং দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে, তারই সর্বশেষ অপচেষ্টার অংশ এটি। কিন্তু নিশ্চিত যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে উগ্রবাদীদের হুমকি মোকাবিলায় কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার।
কিছুদিন আগে, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়েও সুকৌশলে ভারত–বিদ্বেষী নেতিবাচক প্রচারণা ছড়িয়েছে বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলো। প্রথমে তারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে বলেছে যে, ভারত বাংলাদেশকে কখনোই এই ভ্যাকসিন দেবে না। মহামারি প্রতিরোধের মতো একটা জরুরি ইস্যুতেও তারা নোংরা রাজনীতি করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাদের প্রোপাগান্ডাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে মহামারি মোকাবিলায় ঠিকই প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে ভারত। সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির পর প্রথমেই বাংলাদেশের জন্য তা পাঠিয়েছে তারা। ফলে বিরোধীদের নেতিবাচক প্রচারণা হালে পানি পায়নি। এরপরও থেমে থাকেনি বিএনপি–জামায়াত ও তাদের সমমনা উগ্রবাদী গ্রুপগুলো। এবার তারা ভারতকে কটাক্ষ করে নতুন মিথ্যা ছড়ানাে শুরু করলো। তারা যৌথভাবে নতুন প্রোপাগান্ডা ছড়ানো শুরু করলো। তারা বললো: ভারত আমাদের গিনিপিগ বানাচ্ছে, ভারতের প্রশাসন ভ্যাকসিনের ভেতর দিয়ে আমাদের দেশের মানুষের শরীরে স্পাই ক্যাম (গোয়েন্দা ডিভাইস) পুশ করবে, ভারতের ভ্যাকসিন পানি ও গরুর প্রস্রাব দিয়ে তৈরি। মূলত পাকিস্তানি অর্থায়নে এবং তাদের দ্বারা নৈতিকভাবে মদতপুষ্ট হয়ে বাংলাদেশের উগ্রবাদী ধর্মব্যবসায়ী গ্রুপগুলোর নেতারা ফেইসবুক এবং ইউটিউবে এসব অপপ্রচার চালিয়ে সরলপ্রাণ সাধারণ মানুষকে বিভ্যান্ত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে।
প্রথমে তারা বলেছিল, ভ্যাকসিন আসবে না। পরে যখন তা মিথ্যা প্রমাণ হলো, তখন তারা ভ্যাকসিনের গুণমান এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে গুজব ছড়ালো।
তারা মূল টার্গেট ছিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারা চেয়েছিল, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যর্থ হলে সেই দায় তারা শেখ হাসিনার ওপর চাপাবে। এজন্য ধর্মের লেবাস পরে কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ সাধারণ মুসলমানকে তারা করোনার টিকা নেওয়া থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছে।
এমনকি তথাকথিত উচ্চ–শিক্ষিত বিএনপি নেতা ও দলটির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, "ভারতের ভ্যাকসিন দিয়ে বিরোধীদলের নেতাদের পঙ্গু করবেন শেখ হাসিনা।"
বাংলাদেশের জনপ্রিয়তম সর্বোচ্চ নেতা শেখ হাসিনার ইমেজ নষ্টের জন্য আদাজল খেয়ে নামে দলের অন্য নেতারাও। মহামারী নিয়ন্ত্রণে শেখ হাসিনার দূরদর্শিতায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তারা তাকে ঘায়েল করার জন্য শেষ অস্ত্র হিসেবে ভারতবিদ্বেষকে অস্ত্র হিসেবে বেছে নেয়। তারা নগ্নভাবে বলতে থাকে যে, শেখ হাসিনা ভারতের লোক! এই দেশবিরোধী কাজের অংশ হিসেবে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় তথাকথিত সিভিল সোসাইটির একটা অংশ এবং সাংবাদিকতার ঢাল ব্যবহারকারী কিছু মানুষ। তাদের সবার উদ্দেশ্য হলো, বাংলাদেশ–ভারতের বিকাশমান যৌথ সম্পর্কটাকে নষ্ট করে দেওয়া।
এদিকে, করোনা মহামারীর মধ্যে চীনের পরীক্ষামূলক পর্যায়ে থাকা সিনোভ্যাক ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়ায় সরকারের কঠোর সমালোচনা করে ঢাকার এক ইংরেজি পত্রিকার সম্পাদক। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এপি–কে দেওয়া ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহীর এক ইন্টারভিউকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে ফেসবুকে কঠোরভাবে বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে তিনি লেখেন, "ভারত আমাদের করোনার ভ্যাকসিন দিতে প্রত্যাখ্যান করেছে, অথচ আমরা বিকল্প একটি সুযোগ বাতিল করে দিলাম।" তার এই বক্তব্য লুফে নিয়ে হম্বিতম্বি শুরু করে বিরোধীপক্ষের লোকেরা। অথচ সময়মতো যখন ভারতের ভ্যাকসিন এসে পৌঁছালো, তখন তারা আশাহত হয়ে চুপ হয়ে গেলো।
এরপর এই অপপ্রচারকারী চক্রের আচরণে বিরক্ত আওয়ামী লীগ সমর্থকদের অনেকেই ইন্টারনেটে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিএনপি–জামায়াত ও তাদের উগ্রবাদী সঙ্গীদের উদ্দেশ্যে তারা বলেছেন, আপনাদের ভারতীয় ভ্যাকসিন নেওয়ার দরকার নাই। দয়া করে আপনারা ভ্যাকসিন নেবেন না। দেশের সাধারণ কর্মব্যস্ত মানুষদের এই ভ্যাকসিন বেশি প্রয়োজন, তাদের আগে নিতে দিন। কিন্তু এই দেশবিরোধী চক্রের লোকরা এতোটাই নির্লজ্জ যে, তারা ঠিকই নিজেরা কেন্দ্রে কেন্দ্রে গিয়ে ভ্যাকসিন নিলেন! তারা একইসঙ্গে ভ্যাকসিন নিলেন এবং অকৃতজ্ঞ ও বিবেকহীনের মতো সমালোচনাও অব্যাহত রাখলেন। এই চক্রের অন্যতম একজন হোতা শহীদুল আলম বাংলাদেশকে অবজ্ঞা করে বললেন, "ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্ক স্বামী–স্ত্রীর মতো। কখনো কৃপা, কখনো সহিংসতা।"
তাদের এসব অপপ্রচার ও ঘৃণা–ছড়ানো প্রতিটি এজেন্ডার বিরুদ্ধে সরকারের পাশাপাশি অব্যাহতভাবে শক্ত জবাব দিতে থাকে আওয়ামী লীগের ওয়েব টিম। এই টিমের পক্ষ থেকে কুচক্রীদের ভুল তথ্যের বিপরীতে নিয়মিতভাবে বাস্তব ও সত্য তথ্য–উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ এসব সত্য তথ্য পেয়ে একপর্যায়ে কুচক্রীদের মিথ্যা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ফলে তারা করোনা ও ভ্যাকসিন ইস্যুতে দমে যেতে বাধ্য হয় তারা। কিন্তু সম্প্রতি আবার নতুন করে নোংরা খেলায় মেতে উঠেছে এই দেশবিরোধী চক্র। ২১ মার্চ বিএনপি–জামায়াত ও উগ্র ধর্মব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে নতুন গুজব ছড়ানো হয়। ২৬শে মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হবে বলেও একটি ভুয়া ঘোষণাপত্র প্রচার করে তারা।
মজার ব্যাপার হলো, তাদের এই অপপ্রচারগুলো মূলধারার গণমাধ্যমে প্রচারে ব্যর্থ হয়। তাই তারা সংবাদজ্ঞান সম্পর্কে কম ধারণাসম্পন্ন জনগোষ্ঠীর এই দেশে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকেই তাদের নোংরা খেলার প্লাটফর্ম হিসেবে বেছে নিয়েছে। ফেইসবুক–ইউটিউব জুড়ে উগ্রবাদী ধর্মব্যবসায়ী ও তাদের পৃষ্ঠপোষক বিএনপির নেতাকর্মীরা সারাক্ষণ অপ্রচার ছড়াতে থাকে। তাদের অন্যতম একটি অপপ্রচারের বাণী হলো: ভারত বাংলাদেশকে আক্রমণ করবে! গত দুই বছর ধরে প্রবলভাবে এই ধরনের প্রচারণা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সাংবাদিকতার ছদ্মবেশে কনক সারওয়ার, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ও দুর্নীতির দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কর্নেল শহীদ (অব.), মেজর দেলোয়ার (অব.), বিএনপি সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান গংরা এই ঘৃণ্য অপপ্রচার ছড়ানোর কাজ করছে। বিদেশে বসে বিলাসী জীবনযাপন করে, ইউটিউব ও ফেসবুকের মাধ্যমে দেশবিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে এই চক্র। শুধু তাই নয়, এই উগ্রবাদীরা বিভিন্ন বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেশের গ্রামাঞ্চলের হিন্দু–মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে দিচ্ছে। পুলিশ বাহিনীর মাধ্যমে এসব দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ করা হলেও কুচক্রীদের ক্রমাগত অপপ্রচারের কারণে বারবার এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের শুরুতেও এই উগ্রবাদী ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্র সোশ্যাল মিডিয়ার অপপ্রচার ছড়িয়েছে। তারা তখন বলেছে যে, এটি ইসলামবিরোধী। এরই ধারাবাহিকতায় গত কিছু দিন ধরেই তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিচ্ছে। এমনকি করোনার নীতিমালা মানতেও অস্বীকার করেছে এই উগ্রবাদী অংশটা। তারপরেও সরকারের অদম্য প্রচেষ্টায় করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে, তারা তখন ফ্রান্সের ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশকে উত্তপ্ত করার চেষ্টা করেছে। এরপর সবশেষে, তারা শেষ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ভারত–বিদ্বেষ সেন্টিমেন্টকে। হ্যাঁ, ভারতবিরোধিতা করা তাদের অনেক পুরনো ও প্রিয় অস্ত্র। আর এ ব্যাপারে বিএনপি–জামায়াত–ছদ্মবেশী সাংবাদিক–নামধারী সুশীল ব্যক্তিরা সবাই একজোট, তাদের মূল লক্ষ্য আসলে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীঘ সরকারকে ধরাশায়ী করা। কারণ, বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের আজকের অবস্থান তাদের সহ্য হচ্ছে না। তারা কখনো বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াক, আপামর জনতা স্বাবলম্বী হোক, তারা কখনোই তা চায়নি। কারণ, এটি হলে তাদের ফাঁকা বুলি একসময় মানুষ আর শুনবে না। দেশ ও মানুষের জীবনমান যত উন্নত হবে, তাদের গোঁড়ামি ততই আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতায় দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় পর্যন্ত ইন্টারনেট পোঁছে দিয়েছে সরকার। ফলে কোটি কোটি মানুষ এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছে। একারণে করোনার মধ্য মোবাইল ফোনের মাধ্যমে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান ও আম–জনতার মধ্যে অর্থ বিতরণ করা সম্ভব হয়েছে। তবে ইন্টারনেটে প্রবেশ করা এই নতুন প্রজন্মকে ভুলভাল বার্তা দিয়ে, গুজব ছড়িয়ে, তাদের মিসগাইড করে, তাদের ব্যবহার করে হুটহাট বিভিন্ন অপকর্ম করানোর প্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে এই দেশবিরোধী চক্র।
ভারতকে জড়িয়ে আক্রমণ শানানোর আরো একটি অন্যতম কারণ হলো, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের অংশীদারিত্ব। বাস্তবতা হলো, ভারত এখন তথ্য–প্রযুক্তিতে বিশ্বের অন্যতম একটি শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। যন্ত্রপাতি উৎপাদন থেকে শুরু করে, সফটওয়্যার; এমনকি স্টার্ট–আপের ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সমতুল্য হয়ে উঠেছে দেশটি। এমনকি ২০৩১ সালের মধ্যে জিডিপির হিসেবেও তারা এই সুপারপাওয়ারদের ছাড়িয়ে যাবে। এদিকে ২০০৮ সালে নেওয়া ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণাটিও আর এখণ শুধু ধারণা নয়, আমরাও এটিকে বাস্তবে পরিণত করেছি। সাম্প্রতিক বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি ছিল একটি সাহসী পদক্ষেপ। মূলত এ কারণেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।
এই ডিজিটাল বাংলাদেশের স্থাপত্যে মূলত চারটি ভিত্তি রয়েছে:
১. উন্নত তথ্য–প্রযুক্তির সুবিধা সম্পন্ন শিল্প–অবকাঠামো
২. শিক্ষিত, দক্ষ ও ডিজিটাল মানবসম্পদ
৩. দেশের প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত ডিজিটাল সংযোগ
৪. ই–গভর্ন্যান্স এবং স্মার্ট পাবলিক সার্ভিস
এই ডিজিটালাইজেশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ–ভারত সহযোগিতামূলকভাবে কাজ করার সুযোগ অনেক। নিচের এমন কয়েকটি বিষয়ের অবতারণা করা হলো:
১. বাংলাদেশ–ভারতের মধ্যে অ্যাকাডেমিক পর্যায়ে নলেজ শেয়ারিং। ইতোমধ্যে বিশ্বের অধিকাংশ আইটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীর পদ অলঙ্করণ করেছেন ভারতীয়রা, তাদের অধিকাংশই আইআইটি থেকে লেখাপড়া করেছেন। এদিকে তথ্য–প্রযুক্তি শিক্ষার বিকাশের জন্য বাংলাদেশও একটি বিশেষায়িত ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করেছে। এবং শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টায়ার টেকনোলজিস নামে একটি বিশেষ ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে দেশের টেক–উদ্যোক্তা ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে। এর মাধেমে নতুন প্রজন্ম নিজেদের জন্য যেমন নতুন প্লাটফর্ম গড়ে তুলবে , তেমনি বিশ্বের বুকে এক অপার বিস্ময় হিসেবে বাংলাদেশকে দাঁড় করানোর সুযোগ প্রসারিত করবে।
২. উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য স্টার্ট–আপের পরিবেশগত কাঠামো বিকাশে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সহযোগিতার ক্ষেত্র বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ইতোমধ্যে টেকসই স্টার্ট–আপ পরিবেশ সৃষ্টির কাজ চলছে। সরকারের এমন উদ্যোগের অন্যতম উদাহরণ হলো: হাই–টেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইডিইএ প্রোজেক্ট, স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড, ডিজিটাল এন্টারপ্রেনারশিপ এবং ইনোভেশন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট ইত্যাদি। অন্যদিকে, ভারতের ব্যাঙ্গালুরে প্রতিষ্ঠিত স্টার্ট–আপ ইকোসিস্টেম ইতোমধ্যে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই এই ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে অভিজ্ঞতা ও নলেজ শেয়ারিং–এর সুযোগ রয়েছে, যা থেকে উভয় দেশই উপকৃত হতে পারে।
৩. জাতীয় স্কিল ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশনের মাধ্যমে বৈশ্বিক অতিমারী মোকাবিলায় তরুণদের প্রস্তুতকরণের ক্ষেত্রে দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কাজ করার সুযোগ অনেক। ভারত ইতোমধ্যে ই–স্কিলইন্ডিয়া নামে একটি প্লাটফর্ম তৈরি করেছে এবং সেখানে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের এক্সপার্টদের মাধ্যমে অনলাইনে মানুষকে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশও ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি নামে একটি প্লাটফর্মের যাত্রা শুরু করেছে। তরুণপ্রজন্মকে প্রস্তত করার জন্য বৈশ্বিকভাবে সহযোগী প্লাটফর্ম তৈরির মাধ্যমে ভবিষ্যতের যেকোনো অনিশ্চিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষেত্র দুই দেশের ভূমিকা পালনের বিস্তৃত সম্ভাবনা রয়েছে।
৪. স্থানীয় পণ্য উৎপাদনকারী কারখানাগুলোকে ডিজিটালাইজড করা এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রেও দুই দেশের সুন্দর ও স্বতন্ত্র সম্ভাবনার ক্ষেত্র রয়েছে।
ভারত ইতোমধ্যে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ হার্ডওয়্যার উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশও হাই–টেক ইন্ডাস্ট্রির জন্য বিশেষভাবে ইকোনোমিক জোন তৈরির কাজ করছে, যার বাস্তবায়িত হলে পণ্য আমদানির ক্ষেত্র কর ছাড় এবং শুল্কমুক্ত আমদানি সুবিধা পাওয়া যাবে। ভারত ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ১২টি আইটি পার্ক প্রতিষ্ঠা এবং দক্ষ ট্রেনার দেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছে। এর ফলে, দুই দেশের মধ্যে যন্ত্রপাতি উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশেষ অংশীদারিত্ব তৈরি হবে।
কিন্তু বাংলাদেশবিরোধী ও শেখ হাসিনা সরকারের বিরোধী চক্র এসব সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণাও ছড়াচ্ছে। তারা বলছে, এখানে এসে ভারত শুধু নিজেদের মুনাফা করবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এশীয়ার সেরা আইটি কোম্পানিগুলোই ভারতের। তারা যদি মোটা বিনিয়োগ নিয়ে বাংলাদেশে আসে এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তার তথ্য–প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নির্দেশনায় রূপান্তরিত ডিজিটাল বাংলাদেশে সৃষ্ট হওয়া সুবিধা ভোগ করে, তারা শুধু নিজেদের মুনাফাই করবে না, সেইসঙ্গে বাংলাদেশের আইটি সেক্টরের পরিধির বিকাশ ঘটাবে এবং বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধিতেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
এখনই সময়, পোশাকশিল্প এবং শ্রমিকনির্ভর রেমিট্যান্সের বলয় থেকে বের হয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য নিয়ে আসার। ভারতের প্রযুক্তি এবং বিনিয়োগ এই সেক্টরে আমাদের জায়ান্ট হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে, এটি দুই দেশের জন্যই লাভজনক একটি অবস্থান। ভারত যদিও এই সেক্টরে অনেকটাই এগিয়ে গেছে, তবুও এখনও তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ রয়েচে আমাদের। আমরা কেন পিছিয়ে থাকবো! অমরা অবশ্যই অগ্রসরমান জাতি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করবো।